somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনাখা জং

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুনাখা জং (পুংতাং ডিছেন ফোটরাং জং হিসেবেও পরিচিত) যার অর্থ পরম সুখময় প্রাসাদ। জং অর্থাৎ বিভাগের প্রধান সরকারী এবং ধর্মীয় কার্যালয় । প্রাসাদটি ১৭৩৭-৩৮ সালে যাবদ্রারং রিনপোছে দ্বারা নির্মিত হয়েছিল যার স্থপতি ছিলেন নাগাওয়াং নামগিয়াল। এটি জং স্থাপত্যশিল্পের দ্বিতীয় পুরাতনতম এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাসাদ এবং তাদের নির্মিত রাজকীয় প্রাসাদগুলো অন্যতম একটি। জং এর এই প্রাসাদে তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের কাগ্যু গোত্রের দক্ষিণ দ্রুকপা বংশীয়সহ রাংজুং কাসারপানি বংশীয় সাধকদের দেহাবশেষ রয়েছে।

১৯৯৫ পর্যন্ত, যখন থিম্পুতে রাজধানী সরে আসে, পুনাখা জং ভূটান সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এটাকে ভুটানের ঐতিহ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউনেস্কো।


(২) রাজধানী থিম্পু থেকে এই ছোট্ট টেক্সিতে চড়ে আমাদের চারজনের টিম রওয়ানা হয়েছিলাম পুনাখা জং দেখার উদ্দেশ্যে।


(৩) থিম্পু থেকে পুনাখা যেতে মাঝপথে হয়ে যেতে হয় পাইন, ফারের ঘন অরণ্য বেষ্টিত ১০০০০ হাজার ফিটের দোচু লা পাসের দুর্গম আঁকাবাঁকা পথ। আর সেই উচ্চতা পাড়ি দিয়ে যখন নেমে এলাম সাড়ে চার হাজার ফিট উচ্চতায় পুনাখার কাছাকাছি তখন বাতাসের চাপের কারণে আমাদের কানে হচ্ছিল তীব্র ব্যাথা। তবু সামনে পুনাচু নদী ও তার আশাপাশের সৌন্দর্য্য দেখে সব ভুলে গেলাম।


(৪/৫) পথের ধারে কাটা ভড়া ক্যাকটাসের এমন চমৎকার ফুল আর ফল দেখে হারিয়ে গেলাম আমরা অন্য জগতে।




(৬) পুনাখাতে লাঞ্চ সেরে বেড়িয়ে পড়লাম, পুনাখা জং দেখতে। পুনাখা শহর থেকে আরও ২/৩ কিলোমিটার পরে পথের ডান দিকেই দু’টি নদীর সঙ্গমস্থল। পুনাখা-জংয়ের সামনে দিয়ে বয়ে আসা নদী পুনামোচু ও জংয়ের পাশ দিয়ে বয়ে আসা নদী পুনাফোচু (সংক্ষেপে মোচু (মাতা) ও ফোচু (পিতা))-র মিলিত ধারাই পুনাচু নামে প্রবাহিত হয়েছে ওয়াংদি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালিখোলাতে ভূটান – ভারত সীমা অতিত্রম করেছে এবং অবশেষে ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সেই মিলিত স্থলে দাড়িয়ে পুনাখা জং কে এমন চমৎকার রূপে দেখা যায়।


(৭) সামনে খড়স্রোতা নদী পুনামোচু, তার ওপাড়ে নীল পারদের ফুটে থাকা ফুল গাছগুলোর ভেতর দাড়িয়ে থাকা পুনাখা জং যেন একটা সত্যিকারের স্বর্গ।


(৮) জং এ প্রবেশ করতে হলে পুনামোচু নদীর উপরে এই চমৎকার ব্রীজটা পাড়ি দিতে হবে।


(৯) ব্রীজের ভেতরটা এমন।


(১০) ব্রীজে ঢোকার মুখেই দুইপাশে পড়বে এমন দুটো ঘুড়ির নাটাইয়ের মতো চাকতি, বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা এগুলো ডান দিকে ঘুরায় আর কিছু একটা জপে। এতে করে ওদের পাপ মোচন হয়।


(১১) প্রায় দোতলা সমান উঁচু সিমেন্ট আর কাঠের সিঁড়ি চড়েই জংয়ে প্রবেশ করতে হয়।


(১২/১৩) সিড়ি বেয়ে ভেতরে প্রবেশের শুরুতেই অনেকখানি উন্মুক্ত ও সুপরিচ্ছন্ন আঙিনা, সেখানে বড় একটি চোর্তেন ও ধর্মীয় তাৎপর্যবাহী একটি অশ্বত্থগাছ। আরও ভিতরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বিরাট হলঘর। সব শেষে সুসজ্জিত এক বুদ্ধমন্দির। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ডান পাশের দেওয়ালে রয়েছে ভুটানি লোকগাথায় ‘জীবনচক্র’-র ছবি। আর ভিতরে বুদ্ধদেবের বিশাল স্বর্ণমূর্তি ও অসীম নীরবতা।
আয়তন, নির্মাণশৈলী ও কাঠের নকশার নিরিখে পুনাখা-জং যেমন এক কথায় অনন্য ও যথেষ্ট সুপরিকল্পিত, তেমনই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণও বটে। ঐতিহাসিক ভাবেই ভুটানরাজের রাজ্যাভিষেকও হয় এই জংয়েই অবস্থিত প্রধান লামার দফতরে।




(১৪) ক্যামেরার পেছনে থাকতে আর ভালো লাগছিলোনা, তাই ক্যামেরায় টাইম সেট করে বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে একটা স্মতি রেখে দিলাম।


(১৫) জং এর পেছনের অংশ।


(১৬) জং এর পাশে একটা চালার উপর বসে থাকা এই পাখির নাম হুদহুদ বা মোহনচূড়া, পাখির পিছনে থাকা জিনিসটাকে কেউ আবার ডিম ভাববেন না যেনো, ওটা একটা পাথর ;)


(১৭) এটা পুনাখা জং এর পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী পুনাফোচু যার উৎপত্তি ভূটানের লিঘসি এবং লায়া পাহাড় থেকে। আর এর আশপাশের ছবি দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়, ইচ্ছে করে আর কটা দিন থেকে যাই এখানেই।


(১৮) পুনাফোচু ধরে জং থেকে আরো পিছনে এগিয়ে গেলে চমৎকার একটা ঝুলন্ত লোহার ব্রীজ যার ওপাশে ভুটানী গ্রামগুলোকে দেখতে ছবির মতো সুন্দর।


(১৯) সেই ঝুলন্ত ব্রীজের পাশে দাড়িয়ে পুনাখা জং এর পেছনের অংশটাকে এমনি দেখায়।


(২০) পুনাখা জং দেখা শেষ করে এক সময় আমরা ছুটে চললাম আমাদের পরবর্তি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
২২টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×