somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম

২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত দুইটা ছা‌ব্বিশ। শু‌য়েশু‌য়ে নাটক দেখ‌ছি। আবার দেখ‌ছিওনা। লেপট‌পে নাটক ছে‌ড়ে দি‌য়ে আ‌মি মোবাইল হা‌তে কিছু একটা লিখার চেষ্টা করছি ফেইসবুক পেইজে। ইমু চেক করলাম। দিয়া অফলাইনে। ভালই হল, কথা বল‌তে ই‌চ্ছে কর‌ছেনা এ‌তো রা‌তে। দিয়া শুন‌লে কষ্ট পা‌বে। কথাটায় অব‌হেলার ছাপ আ‌ছে। অথচ দু'দুটা গল্প পড়া শেষ করলাম। দিয়া গল্পের লিংক দি‌লে গল্পটা পড়ার বাধ্যবাধকতা অনুভব ক‌রি মন অজা‌ন্তেই।

নাটক শেষ হ‌য়ে গেল। ভাল লা‌গে‌নি। নাট‌কে গল্প ছিলনা। এমন গল্প লেখা ক‌ঠিন কিছু না। চাই‌লে বা ঠেকায় পড়‌লে আ‌মিও লিখ‌তে পারব। গল্পের বিষয়গুলো যেন রেডিমেইড। পাত্র পাত্রীর চরিত্রগুলো তৈরি করা হয়নি, তৈরি করাই ছিল, এমন বিষয়গুলো ভাল লাগেনা। একটা চরিত্র এর সাথে আরেকটা চরিত্রের সংযোগ হবে এবং সেই সংযোগ হবারও একটা প্রকৃয়া থাকা প্রয়োজন। হুট করে দুইটা চরিত্র ধরে এনে পুুতুল এর মতো বসিয়ে দিয়ে সেখানে আর কিছুই থাকেনা।

আমার আর দিয়ার ব্যাপারটাও এমন। কোন ঘটনা বা দূর্ঘটনা ছাড়াই আমাদের সংযোগটা হয়ে গেল। তায় আমাদের দু'জনেরই মন খারাপ। এভাবে একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে যাওয়া ঠিকনা। কোন রোমান্টিকতা থাকেনা। কেমন যেন রসকষহীন। কোন একটা কারনে বা প্রয়োজনে দেখা হবে, আবার দেখা হবে, আবার এবং আবার। এভাবে দুইটা মনে কিছু মেঘ জমবে। যে মেঘে বৃষ্টি হয়না। কেবল ভেসেই চলে যাবে। কিন্তু না, হঠাৎ বৃষ্টিটা হয়েই গেল। তার মানে তাদের একটা পরিচয় হয়ে গেল বা কথা বলার একটা উপলক্ষ্য হল, তারপর দুই মনে কিছুটা কিন্তু, কমা বা দাড়ি বা হষন্ত - বসন্ত কিছু একটা জন্ম নেবে।

সংযোগ হবার পর কিছুদিন যাবে ভালই তারপর মান অভিমান এবং তারপর পরিবার, সমাজ এসব বিধিনিষেধ এর ঝুট ঝামেলা, বন্ধন এর দড়িটা ছিড়ে যাবার উপক্রম, ঝুলে থাকা, ভুলে থাকা এসব না হলে সম্পর্কটা যেন জমেনা। অনেক ভেবে চিন্তে দিয়াকে একটা কথা বলব ভাবছিলাম কিন্তু বলব বলব করে বলা হয়ে উঠেনা। অবশেষে বলেই ফেললাম। আর দিয়া যে রাজি হবে সেটা ভাবতে পারিনি। না, রাজি হয়েছে সেটাও বলেনি তবে তার পর থেকে আমাদের আচরণগুলো অনেকটা চেন্জ হতে শুরু করল।

পু‌রো পু‌থিবী জু‌ড়ে ক‌রোনা আতংক। অথচ আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই যেন। আমরা আছি নিজেদের নিয়ে। এমনটা হওয়া ঠিকনা। অন্যদের নিয়েও একটু ভাবা প্রয়োজন। আমরাতো পৃথিবী বিচ্ছিন্ন নই। আমাদেরও কিছু দায় দায়িত্ব থাকে, কিছু করতে না পারি কিন্তু একটু চিন্তা হলেওতো করা যায়। শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবলে কী আর চলে? সব ভাল আমার চাই, আমিই কেবল ভাল থাকতে চাই এসব চিন্তায় একটা বড় ধাক্কা দিয়ে আসলো করোনা। অথচ শিক্ষাটা আমরা এখনো ধরতে পারছিনা যেন। আমরা এখনো চাইছি নিজে সেইফ থাকলেই হলো, অন্যরা মরে গেলে কিছু যায় আসেনা। আমার ঘরের বাইরে, সমাজের বাইরে, দেশের বাইরে কিংবা ধর্মের বাইরে কোন দূর্যোগ হয়ে গেলে একটু লোক দেখানো হায় হুতাস করবো অথবা শত্রু মরলে কিংবা ফাঁসিতে ঝুলাতে পারলে আনন্দ মিছিল এর রেওয়াজ আছে দেশে।

সোশাল মিডিয়ার এখন একমাত্র বিষয় করোনা। যে যেভাবে পারছে বলছে, লিখছে, শেয়ার করছে, স্পিচ দিচ্ছে। এমন দূর্যোগ কালিন সময়ে আমার খুব মায়া এবং হতাশ হই আলেম সমাজ এর প্রতি। তারা সারা জীবন যে পরিশ্রম আর সাধনা করে ধর্মকে ধারণ করে, চর্চা করে, তার শতভাগের এক ভাগও যদি চলমান বাংলা-ইংরেজী চর্চা করতো তাহলে খুব সহজেই বুদ্ধিজীবি কিংবা চাকরী ব্যাবসা করে অঢেল অর্থবিত্তের অধিকারী হতে পারতো।

চীনে করোনা হলো সেটা আল্লাহর অভিশাপ, উইঘুরে মুসলমান নির্যাতন। চিনে করোনা হল অথচ মুসলমান ইফেক্টেড হয়নি ইত্যাদি। এমনটা ওয়াজ হলে সবার মনে খুশির বন্যা বয়ে যায়। সেই করোনা আর চীনে থাকলনা, পুুরো বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছে। সেই করোনা দোর-গোড়ায়। করোনা থাকলনা অভিষাপ বৃত্তে। মাওলানারা অনেক গবেষণা করে ফেলেছে এতোদিনে, করোনার ব্যাপারে কোরান হাদিসে কী লেখা আছে, পৃথিবী ধ্বংস হবার কোন অবস্থানে বর্তমান বিশ্ব, আরো কতো কী! ধর্মটা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে বিজ্ঞান থেকে, যারা ধর্মিয় পন্ডিত হচ্ছেন তারা খুব জ্ঞানী হবার পরও বিজ্ঞান চর্চা না করে বিজ্ঞান নিয়ে যেসব কথাবার্তা বলতে চাইছেন সেখানে সাধারনরাই ভুল ধরতে পারছে এটা ভাবলেই আমার খুব খারাপ লাগে। কোন একটা ঘটনা ঘটে গেলে সেটার একটা ধর্মিয় ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হবে কিন্তু সমস্যাটা উৎপত্তি ও সমাধানে কোন বৈজ্ঞানিক অবদান নেই এই আলেম সমাজ কিংবা ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাবস্থায়। এ ব্যাপারে তারা পুরোটায় পরনির্ভরশীল। তার উপর অন্যের বেলায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের মৃত্যুতে স্বস্তি বোধ করাটাও আমার কাছে অমানবিক এবং কোথাও কোন ভুল চিন্তা আছে বলে মনে হয়।

লেপটপে মণিটরে চোখ পড়ল। ইউটিউবে যে নাটকটা দেখছিলাম সেটা কবে শেষ হলো জানিনা, এখন যে নাটকটা চলছে ভাল হবেই বলে মনে হচ্ছে। নাটক এর নায়ক এর নতুন টিউশানি, প্রথম দিন ছাত্রীর সাথে পরিচয় পর্ব চলছে সেই মুহুর্তে গল্পের নায়িকার চা-বিস্কিট সমেত প্রবেশ। দেখা যাক তাদের সম্পর্কের সূত্রপাতটা কেমন হয়। হাতের মোবাইল রেখে একটু মনযোগ দিলাম মণিটরে। ঠিক তখনই ইমোতে রিং বেজে উঠল। দিয়ার ফোন।

আমার আর দিয়ার সম্পর্কটা স্বামি-স্ত্রী। আমি থাকি প্রবাসে আর দিয়া দেশে। আমি দিয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি। দিয়া হা না বলেনি তবে সে হা বোধকেই আছে সেটা বুঝতে কষ্ট হয়না। এখন রাত তিনটা বত্রিশ এখানে। দিয়া ফজরের নামাজ পড়া শেষ করে আমাকে কল করেছে। রাতে ঘুমাবার আগে দুইটা গল্পের লিংক দিয়েছে সেগুলো পড়েছি কিনা একটু যাচাই করে দেখবে নিশ্চয়। না, নাটকটা আর দেখা হচ্ছেনা। আমরা এখন প্রেম করব কিংবা ঝগড়া।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:০৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×