ফাইনালের আগে গতকাল প্রথম আলোর শিরোনাম ছিলো ‘সাম্বার জয় নাকি টিকিটাকার’? তা এই ব্রাজিলের ভেতর প্রথম আলো সাম্বা দেখলো কই?নেইমার-অস্কারদের কিছু ম্যাজিক টাচ বাদ দিলে এই ব্রাজিল রোনালদো-রবার্তো কার্লসদের সাম্বার ধার ধারে না, এরা খেলে খাম্বা ফুটবল।খাম্বার মতো ডিফেন্সে দাঁড়িয়ে থাকো, প্রতিপক্ষ এলে বল কেড়ে নিয়ে উইং ধরে ছোট রাগবী খেলোয়ারদের মতো।বল বাড়িয়ে দাও প্রতিপক্ষের গোলবারের সামনে খাম্বা হয়ে জটলা করা স্ট্রাইকারদের কাছে, গোল হলে হইলো না হইলো পশ্চাদ্দেশ বাচাতে (পড়ুন ডিফেন্স বাচাতে) আবার পেছনে ছোট।
তবে খাম্বা ফুটবলে আবার ফল পাওয়া যেতে পারে তাড়াতাড়ি।তাই বলে ব্রাজিল খেলার শূরুর মিনিটখানেক পড়েই গোল পেয়ে যাবে সেটা ভাবি নাই।ভোর চারটার সময় মাথার গোলপোস্ট বরাবর ঘুম বার শট নিচ্ছে, গোলকিপার হয়ে কোনমতে ঠেকিয়ে যাচ্ছি।টিভি চালু করতে করতে ভাবলাম শুয়ে শুয়ে খেলাটা দেখলে ভালো হয়।শোবার জন্য টিভির আশেপাশে জায়গা খুজছি, ওমা, টিভি অন হতেই দেখা গেলো জটলার ভেতর থেকে ফ্রেড শুয়ে শুয়ে গোল দিয়ে দিচ্ছে!’ওমা’ কথাটি থেকে মনে আসলো পাশের রুমেই ঘুমিয়ে ছিলেন আমার মা।তার কাছে ফুটবোল হলো একটা বল নিয়ে কতগুলো ব্যাটাছেলের অহেতুক লাত্থালাত্থি।ব্যাটাছেলেদের লাত্থালাত্থির আওয়াজে যাতে তার ঘুম না ভাঙ্গে সে কারণে টিভির ভলিউম মিউট করে দিয়েছিলাম।গোল দেবার পর তাই উল্লাসরত ব্রাজিল দল, স্টেডিয়ামে নৃত্যরত ব্রাজিল সমর্থক সবাইকে গোল উদযাপন করতে হলো বোবা কালা হয়ে।
ঘুম তাড়াতে আমার কিছু করা দরকার।বিস্কিটের ডিব্বা নিয়ে টিভির সামনে বসলাম।ভোর রাতের নীরবতা ছাপিয়ে মচ মচ করে বিস্কিট খেতে শুরু করেছি।ঐ মচ মচ শব্দেই মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।বিস্কিটের ডিব্বা বন্ধ করে, ঘুম তাড়াতে হাটাহাটি শুরু করলাম।এদিকে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে বিস্কিটের গুড়া।সেগুলো সংগ্রহ করতে এসেছে পিপড়ের দল।বিস্কিটের গুড়া দিয়ে পিপড়েদের সাথে ফুটবল খেলার চেষ্টা করতেই এক পিপড়ে কুটুস করে কামড়ে আমাকে ফাউল করে বসলো।
পিপড়ের ফাউলে ইনজুরিগ্রস্ত হয়ে চেয়ারে বসে খেলা দেখছি।স্পেইনও গোল খাবার পর ব্রাজিলকে ফাউল করা শুরু করেছে।ফাউল করে রামোস ও আরবেয়ালা হলুদ কার্ড দেখে স্পেনের ডিফেন্সে জন্ডিস বাধিয়ে ফেললো।রেফারিরই বা বার বার কষ্ট করে পকেট থেকে হলুদ কার্ড বের করার কি দরকার?যেকোন ব্রাজিলিয়ান হেলোয়াড়কে দেখে তার হলুদ জার্সি মেলে ধরলেই তো হয়। তবে রাজিলিয়ানরাও অভিনয় কম জানে না।যে যেখানে পারছে সেখানেই লুটিয়ে পড়ছে।ডাইভ দিতে দিতে মাঠটাকে পুরো সুইমিং পুল বানিয়ে ফেললো।এদিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে স্বয়ং নেইমআর।নেইমারের ডাইভ দেখে মনে হয় ব্যাটাকে দেই মার।আগের ম্যাচগুোলোতেও দেখেছি ডিফেন্ডাররা কাধে ধাক্কা দিলে উনি পা ধরে কোকাতে কোকাতে পড়ে যান।এভাবে ডাইভ দেয়ার অভ্যাস থেকে গেলে হয়তো ভবিষ্যতে তার গার্লফ্রেন্ড যখন ভালোবাসে চুমু খাবে তখন সে ৫ ফিট দূরে ছিটকে গিয়ে গড়াগড়ি খেতে থাকবে।
তারপরো ডাইভ দেয়া নেইমারকে হাই ফাইভ দেবো ৪৩ মিনিটে গোলটির জন্য।খাম্বা ফুটবলের মাঝে সাম্বা ফিরিয়ে এনে অস্কারের থেকে পাস নিয়ে চমতকার শটে ক্যাসিয়াসকে পরাস্তকরণপূর্বক স্কোরকার্ড ২-০ করে এই ছোকরা।সাম্বা ফুটবলের আগেকার ব্রাজিলকে দেখা যেতো অনেক সময় ২ গোল দিয়ে তিন গোল খেয়ে বসেছে ডিফেন্সের দোষে।খাম্বাদের ডিফেন্স এই টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে অটল ছিলো।তবে সেমিফাইনালে উরুগুয়ের সাথে উরু উরু মন নিয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে একটি গোল খেয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিলো।ডিফেন্ডারদের লম্বাচুলগুলো লক্ষ্য করেছেন তো?দান্তে, মার্সেলো আর ডেভিড লুইজ প্রত্যেকের মাথা যেন কাকের বাসা।এই কাকের বাসার ডিফেন্সে স্পেন আবার কখন কোকিল হয়ে ডিম পেড়ে দেয় (পড়ুন গোল দিয়ে দেয়) সেই অপেক্ষায় ছিলাম।৪০ মিনিটে পেদ্রো কোকিল হয়ে প্রায় ডিম পেড়েই দিচ্ছিলেন (মানে গোল দিয়ে দিচ্ছিলো) কিন্তু ডেভিড লুইজ ধূর্ত কাকের মতো গোল লাইন থেকে লাথি মেরে ডিম (বল) ক্লিয়ারেন্স করে।
হাফ টাইম দেবার পর ফেসবুকে ঢুকলাম।আমরা হইলাম দ্বিখন্ডিত জাতি।সবকিছুতেই দুইভাগে বিভাজিত হই।ফুটবলে ভাগ হই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার নামে।এই টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনাকে বেশ মিস করেছি।২০১১ সালের কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা যদি উরুগুয়ের কাছে কোপানি খেয়ে উরু না ভাংতো, তাহলে এই কনফেডারেশন কাপে তারাও খেলতে পারতো।ওয়ার্ল্ড কাপ ছাড়া একই টুনার্মেন্টে স্পেন ব্রাজিল ইতালি আর আর্জেন্টিনা থাকলে আর কী লাগে?যেহেতু কোপা আমেরিকা জেতা হয় নাই,তাই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের খোপা বেধে স্পেনকেই সাপোর্ট করার কথা কারণ বার্সোলনায় মেসির দুই পালক পিতা জাভি ও ইনিয়েস্তা যে আছে স্পেন দলে।অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাইরে গিয়ে স্পেনেকে সাপোর্ট করার একটা ট্রেন্ডও ইদানিং দেখা যাচ্ছে যেটা আমার কাছে বেশ ইতিবাচক।ফেসবুকে ঢুকে দেখি ব্রাজিলের খাম্বা ফুটবলের সমর্থকেরা হাম্বা হাম্বা করে ভরিয়ে ফেলেছে।স্পেনের সমর্থকদের রীতিমত গুগল সার্চ দিয়ে খুজে নিতে হচ্ছে।এক স্পেনের সমর্থকের কমেন্ট দেখা গেলো, “স্পেন তার সহজাত টিকিটাকা ফুটবল খেলছে না কারণ তারা টেকাটুকা খেয়ে নেমেছে।স্পেনের টেকাটুকার এন্তেজাম করতে গিয়ে ব্রাজিলের সরকার নিজ দেশের মানুষদের নাগরিক সুবিধা দিতে পারে নি।এটাই হলো ব্রাজিলে সাম্প্রতিক সময়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণ”।
ফেসবুকে ঢুকে নিউজফিড দেখে শেষ করতে পারিনি এর মধ্যে সেকেন্ড হাফের খেলার শুরুতেই স্পেনের পোস্টে বল ঢুকিয়ে দিয়ে স্পেনের বুক ভেঙ্গে দিলো ফ্রেড।৫৪ মিনিটে পেনাল্টি পেলো স্পেন।জাভি ইনিয়েস্তাদের বাদ দিয়ে পেনাল্টি নিতে পাঠানো হলো রামোসকে যে কিনা গতবছন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের হয়ে পেনাল্টি নিতে গিয়ে বল চাঁদে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।এবার বল চাঁদে না পাঠালেও পেনল্টি মিস করে ফাইনালে স্পেনের জয়ের সম্ভাবনাকে চাঁদে পাঠিয়ে দিলো রামোস।স্পেনের জয়ের আশা আরো ফিকে হয়ে গেলো যখন ৬৮ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করে লাল কার্ড পায় পিকে।পিকে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছে,ক্যামেরা ফোকাস করলো তার প্রেমিকা গায়িকা শাকিরার দিকে।ওয়াকা ওয়াকা গানের শিল্পী বোকা বোকা মুখে গ্যালারিতে বসে আছে।এরপর ফ্রেড গোলের আরেকটি সহজ সুযোগ পেলেও ক্যাসিয়াসকে ধোকা দিতে পারে নাই।
এরপর স্পেনের শুধু অপেক্ষা ম্যাচ কখন শেষ হবে।ঘুমে ঢলতে ঢলতে ভাবছি স্পেনের এই ম্যাচে ঘুমিয়ে পড়ার কারণ কি? কারণ অনেকগুলোই থাকতে পারে কিন্তু যারা সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে থাকে তাদের জেগে উঠতে বেশি সময় লাগে না।কিন্তু যারা ঘুমিয়ে থাকার ভাণ করে তাদের জাগাতে অনেক কাঠখোড় পোড়াতে হয়। খাম্বা খেলা ব্রাজিল মূলত সাম্বাকে ঘুমিয়ে রাখার ভান করে চলেছে।খাম্বা দিয়ে হয়তো কনফেডারেশন কাপের মতো ৮ দলের টুর্নামেন্ট জেতা যায় কিন্তু ৩২ দলের বিশ্বকাপে খাম্বার কারণেই চড়া মূল্য দিতে হতে পারে যেমনটা ব্রাজিল দিয়েছিলো ২০১০ সালে।কে বলতে পারে, মারকানা স্টেডিয়ামে উল্লাসে ভেসে যাওয়া ব্রাজিলের এই দলটিকেই হয়তো ২০১৪ বিশ্বকাপে মরা কান্নায় ভাসতে হবে। RIP samba.
সামুতে আমার বিগত পোস্ট ব্লগ নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ
কনফেডারেশন কাপ ফাইনালঃ ব্রাজিলের 'খাম্বা' ফুটবল বনাম স্পেনের টেকাটুকা (স্পোর্টস রম্য)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন