somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাগো বাংলাদেশ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকের লেখাটি ফেসবুক বন্ধুদের স্ট্যাটাস এবং প্রিয় ব্লগার “হরবোলা” ভাইয়ের সাহসী লেখা থেকে প্রণোদিত।

রাজাকার আলবদর আলশামস কসাইদের ফাঁসির দাবীতে বাংলাদেশের সাথে সারা দুনিয়া জেগে উঠেছে। নবজাগরণের উচ্ছ্বাসে জেগেছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, প্রজন্ম নবজাগরণের মঞ্চের শ্লোগানে শ্লোগানে চারিদিক যখন মুখরিত, ঠিক সেই সময় এই আন্দোলনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণটা জানতে ইচ্ছে করছে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা বাংলার প্রেমে আপ্লুত হয়ে, আবেগের জোয়ারে দেশের সব প্রতিষ্ঠান, দোকান পাঠ থেকে সব ইংরেজি লেখা নাম-ফলক ও সাইন বোর্ড নির্বিচারে ধ্বংস করেছে। তখন একবারের জন্যও ভাবেনি ইংরেজিকে বিসর্জন দিলে এর পরিণাম কি হবে।

চল্লিশ বছর পর বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা আবেগের তোড়ে ভেসে যাওয়া ইংরেজি ফলকগুলো বর্তমানে কতটা মূল্য দিতে হচ্ছে, এতদিন পর বুঝতে পারছে পরিণাম কতটা ভয়াবহ হয়েছে।

এখন তরুণ-তরুণীরা ইংরেজি শেখার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল আর চকচকে ইংরেজি সাইন বোর্ডের কোচিং সেন্টারগুলোতে দৌড়চ্ছে। পিতামাতা তাঁদের শিশুটিকে উন্নত মানের লেখাপড়া করানোর জন্য ছুটছেন ইংরেজি মিডিয়ামের স্কুলগুলোতে।

তরুণ তরুণীদের আবেগ যখন তুঙ্গে উঠে তখন তাঁদের মধ্যে যুক্তি, শৃঙ্খলা ও ধৈর্য কাজ করেনা। প্রবীণরা তখন তরুণদের আবেগকে যুক্তি, উপদেশ, আদর্শ, নৈতিকতা, ও ধৈর্য শৃঙ্খলার ছকে ফেলে তাঁদের আন্দোলনকে সফলতা ও ইতিবাচক পরিণতির দিকে এগিয়ে দেওয়ার দিক নির্দেশনা দেন।

কিন্তু এখন দেখছি দেশের প্রায় সকল টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্রসহ প্রবীণরাও যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন। তাঁরা শুধু জোয়ারের টানে ভাসছেন, তরুণদের সুরে নাচছেন। এ আন্দোলন কোথায় গিয়ে ঠেকবে তাঁরা যেন জেনেও না জানার ভান করছেন।

আমরা কি সব সময় সব কিছু এভাবে বারবার আবেগের জোয়ারে হারিয়ে দেশ ও জাতিকে অনিশ্চিত ও ভয়াবহ এক পরিণতির দিকেই নিয়ে যাব?

আমাদের তরুণ ও যুব সমাজ কি আজীবন আবেগ দ্বারাই তাড়িত হবে? যুক্তি, ধৈর্য, আবেগহীন চিন্তা চেতনার উন্মেষ কি তাঁদের মধ্যে কোন দিনও জাগ্রত হবেনা?

শাহবাগের প্রজন্ম নবজাগরণের এই আন্দোলন যদি নির্দলীয় হয় তাহলে জামাত-শিবিরের সহযোগী সকল অঙ্গ সংগঠনের সাথে সাথে জামাত-শিবিরকে রক্ষাকারী অন্যান্য দলকেও বয়কট করার ঘোষণা কেন আসছে না? বিএনপি, আওয়ামী লীগ যেভাবে বারবার জামাতকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছে, নবজাগরণের প্রজন্মের চোখে ওঁরাও কি সমান দোষে দুষ্ট নয়? যদি তাই হয়, তাহলে আন্দোলনে যেমন বলা হচ্ছে জামাতের সকল অ্যাফিলিয়েশন, সকল সহযোগী পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কট করতে তেমনি সবচেয়ে গুরুত্বর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিএনপি-আওয়ামী লীগকে কেন বয়কট করার ঘোষণা দেয়া হবেনা?

জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বৈধ করলে জামাত বাংলার মাটিতে বিএনপির সাথে প্রণয় সংসার গড়ে। এই সেই রাজাকার বাহিনীর দল যারা এখনও পর্যন্ত ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে গৌরব মনে করেনি, বাংলাদেশকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নেয়নি। জামাত, জিয়া ও হাসিনার স্বার্থে রাজনৈতিক পতিতা হিসেবেই এই দেশের রাজনীতি শক্ত ভীত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

আমাদের সেইদিনটি যেমন ভুলবার নয় যখন জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জামাতকে এদেশে প্রথমবারের মত রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে তেমনি দ্বিতীয়বার বর্তমান মহাজোট সরকারের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই দেশে রাজাকারের দল জামাতকে আবারও সেই অধিকার দেয়া হয়েছে। এই রাক্ষস কসাইয়ের দল দুই-দুইবার দেশের মাটিতে রাজনীতি করার বৈধতা পেয়েছে। জামাত এবং সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থানের ক্ষেত্রে বিএনপির জিয়াউর রহমান ও আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার মধ্যে লেশমাত্র তফাৎ নেই।

বাংলাদেশের এই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই বারবার তাঁদের স্বার্থে জামাতকে কাজে লাগিয়েছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ এই দুটি দলই অতিমাত্রায় জামাত-বান্ধব, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে যখন বিএনপি এবং জামাতের সুখের সংসার প্রথম ভাঙে, এরশাদ কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পরে, তখন জামাতের সাথে আওয়ামী লীগের সখ্যতা গড়ে উঠে, এই সখ্যতার প্রণয়ে এই দুই দল ৮৬’র নির্বাচন করে। কিন্তু ৮৬-এর সংসদ ভেঙে গেলে জামাত আবার বিএনপি’র সাথে তার পুরাতন প্রণয় গড়ে তুলে।

১৯৯০ নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোট জয়লাভ করে এবং সেই প্রণয় ‘৯৪ পর্যন্ত চলে। ১৯৯৪ সালে বিএনপি জামাতের প্রণয়ের দুর্বলতার সুযোগে আবার জামাত আওয়ামী লীগের বাহুতে ঢলে পরে, এবং সেই বার জামাত আর আওয়ামী লীগের প্রণয় চলে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত।

এভাবেই চলতে চলতে থাকে জামাত-বিএনপি-আওয়ামী লীগের ত্রিভুজ প্রেম। শেষতক, সুযোগের স্রোতের টানে আর ক্ষমতার পালা বদলের অংক কষে আবার বিএনপি বিশ্বস্ত প্রেমিক হিসাবে জামাতের বাহুডোরে বাঁধা পরে। সেই বাঁধন আজও অটুট আছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কাদের মোল্লার বিচারের রায়, জামাতের প্রতি সরকারের হঠাৎ প্রীতিপূর্ণ নমনীয় অবস্থানের ফলে ১৯৯৬-এর লীগ এবং জামাতের প্রেমের উপাখ্যানের নতুন সিক্যুয়ালের আভাস দেয়।

প্রজন্ম গণজাগরণের এই আন্দোলনকে যদি দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুম-হত্যা নির্যাতনের রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড় করানো না যায়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তিমিরে তলিয়ে যাবে। আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মনে করবে, তাঁদের নির্যাতনের বিচার করার ক্ষমতা এই দেশের গনমানুষের নেই। তাই তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, ভবিষ্যতে তাঁদেরকে আর কখনো সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যাবেনা। তাই দলীয় খোলস থেকে বেরিয়ে এসে সকলকে একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আওয়াজ তুলার এখনই সময়।

হে তরুণ-বৃদ্ধ, হে প্রবীণ
এখনই ভেঙে দাও
ভেঙে দাও, সকল কাল সাপের বিষ দাঁত,
রুখো জামাত, রুখো বিএনপি-আওয়ামী লীগ
আরও আছে যত হায়েনা, হাতে রেখে হাত।

এদেশ যেমন কোন ধর্মের নয়,
তেমনি নয় কারো বাপের অথবা স্বামীর
এদেশ আমাদের, আমরাই গড়বো দেশ আগামীর।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×