somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আষাঢ়ে রচনাঃ পরিবর্তনের গল্প

০৭ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজা হইলো ফকির আর ফকির হইলো রাজা

এক দেশে এক রাজা ছিল । তার একটা মোটা সোটা নাদুস নুদুস কুকুর ছিল । রাজা কুকুর কে তার সন্তানের থেকেও বেশি ভালো বাসতেন । রাজা যেখানে যেতেন কুকুরটাও হেলে দুলে সেখানেই যেত ।

সেদেশে একজন চিকনা শুকনা ফকির ছিল । ফকিরটা সারাদিন রাজদরবারের রাস্তার এক পাশে বসে বসে ভিক্ষা করত আর সন্ধা হলে বাড়ি গিয়ে ভাত ফুটিয়ে ধোঁয়া উঠা গরম গরম ভাত খেত । ফকিরের সাথে ঝিমুতে ঝিমুতে তার প্রিয় মুরগিটাও ভিক্ষা করত । কেউ কিছু দিলে ফকির আর মুরগীটা মাথা উঠিয়ে উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত কিছুক্ষন । তারপর হাত উঠিয়ে দোয়া করে আবার ভিক্ষার কাজো মনোনিবেশ করত ।:)



অন্যান্য দিনের মতই রাজা তার নাদুস নুদুস কুকুরটাকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছে । সে সুযোগে পাহারাদারেরা কাজ কর্মে ফাঁকি দিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল । লুল সেনাপতিও দরবারের নর্তকীদের সাথে একটু রঙ ঢং এ ব্যস্ত ছিল । হঠাৎ চিৎকার , হতচ্ছরা বেরসিক রহিম চোরাটা রাজার মেয়ের নীলকান্তমনি হারটা নিয়ে চম্পট দিয়েছে । পিছনে পিছনে পাইক পেয়াদারা ছুটলেও চোরটা কিন্তু পগাড় পার । কাজের কাজ হিসেবে শুধু তীরের আঘাতে চোরের কানের একটা অংশ খসে পড়ে । সেটা নিয়ে অনেক টানাটানি করেও চোরের মাথা না পেয়ে পাইক পেয়াদারা কানটা নিয়েই রাজদরবারে ফিরে যায় । B-)

এদিকে হুড়োহুড়ির সময় হারটা থেকে এর মাঝখানের সুন্দর নীল রং এর হীরাটা খসে পড়ে। ফকিরের মুরগীটা কেউ দেখার আগেই খপ করে মসুরের দানার মত নীল বস্তুটা মুখে নিয়ে ক্যোঁৎ করে পেটে চালান দিয়ে দেয় । এত দামী হীরা খাওয়ার মজাই আলাদা !

ফকির অপেক্ষায় আছে কোনদিন তার মুরগীটা ডিম দিবে আর সে ডিম-ডাল দিয়ে ভুরিভোজ করবে । আহ খাবার কথা মনে আসলেই কেমন যেন ক্ষিদে ক্ষিদে লাগে , ফকির মুরগীর খাচায় গিয়ে ভালভাবে দেখে আসে ডিম পাওয়া গেল নাকি । ওম্মা একি ! এ তো দাদার জন্মেও কেউ কোনদিন দেখেনি , সোনালী ডিম । স্বপ্নে নয় বাস্তবে পাওয়া স্বর্ণের ডিম । এ ডিমকে খাওয়ার বহু চেষ্টা করেও খেতে না পেরে মন খারাপ করে বাজারে বিক্রি করে দেয় বেচারা । /:)

একসাথে এত টাকা পাবে কোনদিন ভাবেওনাই । একতারা হোটেলে গিয়ে তাই গরুভুনা সাথে দই মিশিয়ে টক করে পাঁচ প্লেট ভাত খায় সে । পরে একটা পেপসি আর একটা আবুল বিড়ি , পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি । বাসায় আসার আগে মনে করে মুরগীর জন্যও উন্নত মানের কুড়া নিয়ে আসে ফকির ।

সারারাত চিন্তায় চিন্তায় ঘুম আসেনা তার । একবার ভাবে মুরগীর পেট ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করে সব ডিম বের করবে , আবার ভাবে বিয়ে করে বউরে পুরা মুরগী ভাজাভাজা করে খাওয়াবে । তাতে যদি স্বর্ণের বেবি পাওয়া যায় ! এটা অনেক সময়ের ব্যাপার , তাছাড়া হিতে বিপরীতও হতে পারে । তাই পেট কেটে ডিম বের করার সিদ্ধান্তই নিল সে । একদিনেই সব ডিম বেঁচে বড়লোক হওয়া যাবে । :|

মায়া জিনিসটা শেখড়ের মত । দিন যত যায় তত গভীর থেকে গভীরে ছড়িয়ে পড়ে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে । আপন থেকে আরো আপন করে নেয় । উপড়ানোর চেষ্টা করলেও কখনো পুরোপুরি পারা যায় না । শেখড়টা ছিড়ে আসতে চায় না , আসলেও মনের ভেতর তার কিছু না কিছু অংশ থেকেই যায় । না ফকির পারেনি , মায়ার জাল ছিন্ন করে মুরগীটার পেট কাটতে পারেনি । তাই ধীরে ধীরে বড়লোক হওয়াটাই ভালো মনে করল সে ।

চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে । চোর পালানোর পরে হুট করে রাজদরবারের সবার বুদ্ধি বেড়ে গেল । বুদ্ধির ঠেলায় সবাই ফাঁকি দেয়ার নতুন নতুন পদ্ধতি বের করতে লাগল । নতুন করে ফন্দি-ফিকির শুরু করল । চোর যাতে হাটতে না পারে তাই রাজপথে কাঁটা বসাবার নাম করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিল সভাসদরা । তারপর নিজেরা হাটার জন্য স্টিলের জুতা কেনার কাজে চার নম্বরী করে দেশী-বিদেশী অনেকেই বিরাট অংক পকেটে তুলল । রাজাও বা কম যান কিসে , বুদ্ধি করে সব দামী দামী পাথর আর রত্ন লুইস ব্যাংকে জমা দিয়ে এসে নাকে তেল দিয়ে ঘুমালেন ;)



ফকিরের মুরগী তো আর বসে নেই । ডিম উৎপাদন চলছেই আর ফকির ফুলে-ফেপে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে । ফকির পুরনো জামা ছেড়ে এখন নতুন কোট , মাফলার , পায়জামা পড়ে বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে ডিম ফেরি করে বেচে । দুপুরে হোটেলে খেয়ে সুগন্ধী মিস্টি জর্দা দিয়ে খিলিপান চিবুতে চিবুতে বাসায় ফেরে সে । মাঝে মাঝে রাজকন্যার সাথেও ফেসবুকে মেসেজ আদান প্রদান হয় বলেও শোনা যায় । মুরগীর অবস্থাও ফিরেছে , তার খাবার বাসমতী চালের সাথে এখন দুধ কলা আর কোয়েল পাখির ডিম ও থাকে ।

এক কান দুইকান করে রাজা ফকিরের এ মুরগীর কথা শুনতে পারল । আর ফকিরও তিন কান চার কান করে রাজার দামী জিনিসপত্র লুইস ব্যাংকে রাখার কথা জানতে পারল । রাজা নানা-ফন্দি ফিকির করেও মুরগীটাকে বাগাতে না পারলেও ফকির কিন্তু লুইস ব্যংকের বড়রকমের শেয়ার কিনে ফেলল । প্রভাব খাটিয়ে রাজার সব সম্পদ জব্দ করে নিল । প্রতিশোধের চেষ্টা হিসেবে রাজা তার আদরের নাদুস-নুদুস কুকুরটাকে পাঠালো মুরগীটার ঘাড় মটকে কটকট করে চিবিয়ে আসতে X((

বাপরে বাপ , যে গরম । কুকুরটা জিভ বাহির করে হাফাতে হাফাতে ফকিরের বাড়ির দিকে চলল । প্রচন্ড তৃষ্ণায় কুকুরের জান যায় যায় অবস্থা । পানিও নাই আশে-পাশে । অন্য একটা কুকুর ড্রেন থেকে পানি পান করতে দেখে সেও এগিয়ে গেল । কিন্তু অভ্যাস না থাকাতে ধপাস । রাজা কুকুরের ফিরার অপেক্ষায় এদিক সেদিক পায়চারি করছে । দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এল এখনো আসছে না দেখে অনেক চিন্তিত /:)

দূরে কুকুরটার ছায়া দেখা যাচ্ছে । কুকুর অনেক কষ্টে ড্রেন থেকে উঠে এসেছে । শরীরের প্রতিটা পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যাথা । শরীরেও নোংরা ময়লা লেগে আছে । রাজা একটু এগিয়ে কুকুরের এ অবস্থা দেখে তো হতবাক । ময়লা পানিতে পড়ার কারনে শরীর ভীষন চুলকাচ্ছে । তাই দুটো কার্যকরী হাত থাকার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে করতে মনের অজান্তেই কুকুরটা তার শরীর ঝাড়া দিল । সামনে ছিল রাজা । সব ময়লা রাজার নাক , মুখ , জামা কাপড় সব নষ্ট করে দিল । রাজা প্রচন্ড ভাবে রেগে তার সর্ব শক্তি দিয়ে কুকুরটাকে একটা লাথি দিল । কুকুরটা কুই কুই করে কয়েকটা শব্দ করল । তারপর রাজার দিকে অবাক দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থেকে চুপ হয়ে গেল । তার আর কোন নড়া চড়া কিংবা শব্দ পাওয়া গেল না :((

রাজা সন্তানের মত কুকুরটার এ অবস্থা দেখে খুব অনুশোচনা করলেন আর ফকির বেশ নিয়ে বনবাসে চলে গেলেন । এদিকে ফকির তার ফেসবুক রিলেশনশিপ স্টাটাস সিঙ্গেল থেকে চেঞ্জ করল । কাছের বন্ধুরা রাজকন্যার ও স্টাটাস চেঞ্জ হতে দেখল ।

কয়েক মাস পরে ; লুইস ব্যাংক দুঃখ স্বীকার আর ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজার সব সম্পত্তি ফেরত দিয়েছে । রাজা বের হচ্ছেন , তার সাথে তার তার স্বর্ণের ডিম দেওয়া মুরগী । লুল সেনাপতি লুলামিতে ব্যস্ত , অন্য সবাই কাজ-কর্ম বন্ধ করে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল । চোর চোর চিৎকার , কান কাঁটা চোরটা এবার ও পালিয়ে গেল । সব কিছু প্রায় আগের মতই আছে । শুধু ফকিরের যায়গাটা এখন খালি , ওখানে আর কেউ বসেনা ।

কেন বসেনা জান ? কারন ঐ ফকিরই এখন রাজা হয়ে গেছে । তার ভিক্ষা করার দরকার নেই । আর আমাদের রাজা ফকির বেশে বনবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে । তার সম্পর্কে কেউ আর তেমন কিছু জানতে পারেনি ।

মরালঃ হে হে হে ! আষাঢ়ে গল্পের আবার মরাল ! :-/:-/ :P
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৩
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×