somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার চিঠিঃ তারার পথে নিঃশব্দে যাত্রা

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রানপ্রিয় ফারজানা,

আমাদের এখানে এখন বৃষ্টি হচ্ছে । ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ । বৃষ্টিতে ভেজার খুব ইচ্ছা থাকলেও ডাক্তারের বারনে ভিজতে পারছিনা । আগে মেঘ দেখলেই মনে হত তারা আমার জন্য বৃষ্টিকে ডেকে নিয়ে আসছে । কতদিন ধরে ভিজিনা । সুন্দরী নার্স আপুটা চোখে চোখে রাখছে, না জানি আমি আবার বৃষ্টিতে ভিজি । আপুটা খুব ভালো আর লক্ষ্মী । বর্তমানে এরকম মানুষ খুব কমই দেখা যায়, আপন আপন মানুষ ।

ছোট্ট বারান্দাটা থেকে বাহিরে আকাশ দেখা যায় । খোলা মুক্ত আকাশ, ডানা মেলে ঘুরে বেড়াবার আকাশ , এখন মেঘে ঢাকা কালো আকাশ । ইচ্ছে করে আকাশের পানে চলে যাই , তারার কাছে চলে যাই । মিশে যাই বৃষ্টির জলে , আরো কত হাবিজাবি ইচ্ছে । হয়তো ইচ্ছেগুলো আর পুরন হবেনা । মানুষের সব ইচ্ছে পুরন হতে নেই , ছোটবেলার হাজারো ইচ্ছেগুলোও কখনো পুরন হয় নি । তারপরেও নতুন নতুন ইচ্ছেরা শুধু বেড়েই চলছে। বৃষ্টির কারনে বাতাসের আদ্রতা বেড়েছে । দমবন্ধ বিষাক্ত শহরের কালো ধোঁয়া চাপা পড়েছে জলের নিচে । আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেই , নিজেকে এখন আমাদের গ্রামের বিশাল বটগাছটার মত মনে হচ্ছে । যেটা শত বছর ধরে শত আঘাত বঞ্চনা সয়েও বেঁচে আছে ।

তোমাকে বহুবার একটা কথা বলতে যেয়েও বলতে পারিনি । আমি খুব দুঃখিত , আমি অসহায়, আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম । সম্ভবত তুমিও আমার প্রতি দুর্বল ছিলে, তাই তোমার জীবন থেকে আমি আস্তে আস্তে সরে গেছি । আমার মত মানুষের জন্য ভালবাসা মানে ভালবাসার অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয় । এখন তোমার ভালবাসা পাওয়ার ইচ্ছেও তাই আমার নেই । যদিও কখনো ভালবাসা পাওয়ার সৌভাগ্যও হয় , তবুও আমি পারবনা তোমার সাথী হতে।

আমি পারবনা তোমার জীবনটাকে নষ্ট করতে । এত সুন্দর চাঁদের মত জীবন আমি নিজ হাতে নষ্ট করতে পারব না । আমাকে যদি সত্যিই ভালবেসে থাকো তাহলে অন্য কাউকে জীবনসাথী করে তার মাঝেই আমাকে খুঁজে নিও । তোমার মন থেকে আমাকে হারিয়ে ফেলো না আমাকে ভুলেও যেওনা আমাকে মুছেও ফেলোনা । ভালোবাসি বলব বলে আমি কত রাত কত দিন আয়না আর ওয়েব ক্যামে রিহার্সেল করেছি ! অনেক কেঁদেছি , নিজে নিজেই নিঃশেষ হয়েছি , কাউকে জানতে দেই নি ।

তোমার কি মনে আছে আমাদের প্রথম পরিচয় হয় ঝগড়ার মাধ্যমে । তারপর তোমার সাথে আমার শুধু চ্যাটেই কথা হত । অনেকদিন পর তোমার অনেক জোরাজুরির কারনে স্কাইপে শুধু ভয়েস কল রিসিভ করেছিলাম । তুমি অনেক চেষ্টা করেছ কিন্তু আমি ভিডিও কল রিসিভ করিনি । তারপর আস্তে আস্তে তোমা থেকে হারিয়ে গিয়ে আমি অজানাতে চলে যাই । তোমার সাথে আর আমার যোগাযোগ থাকেনা ।

আমি আমার এড্রেস তোমাকে দিই নি , চাইনি কোন যোগাযোগ থাকুক । অকারনে তোমাকে কাঁদানোর কোন মানে হয় না । ভালোবাসা দিবসে তোমাকে দিব বলে একটা স্পেশাল কার্ড কিনেছিলাম , এটা খুললে লাল-নীল বাতি জ্বলে মিউজিক বাজে । পাছে ঠিকানা পাও তাই আর পাঠানো হয় নি । এখন এটা আমার মতই সব আলো হারিয়ে নীরব আর নিস্তব্ধ হয়ে গেছে, মিউজিক ও বাজেনা আর । ব্যাটারি পাল্টালে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে । আচ্ছা মানুষের জীবনটাও কি এভাবে ব্যাটারি দিয়ে পুনরায় সচল করা যায় না ?

তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার পর প্রতিদিন এই কার্ডটা দেখি । তুমি মেইলে যে দুকপি ছবি পাঠিয়েছ তোমার অনুমতি না নিয়েই তা প্রিন্ট করেছি । আমি ছবির সাথে কথা বলি , কার্ডের সাথে কথা বলি , মনে মনে তোমার সাথেও কথা বলি । মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে ছোট্ট দু-একটা স্বপ্নও দেখি । মজার ব্যাপার কি জানো তোমার ছবিগুলো খুব দুষ্ট , সবসময় শুধু বুকেই থাকতে চায় ।

বাহিরে বৃষ্টি থেমে গেছে , বাড়ছে মানুষের আনাগোনা । একটুপরেই শহর টা আবার কথার শহর হয়ে উঠবে , কথার বাজার বসবে । মানুষ কত সুন্দর ভাবে কথা বলে ! আমি প্রতিদিনই তাদের দেখি , প্রতিদিনই আমার অবাক লাগে ।

দূরের দোকানগুলুতে সন্ধায় এনার্জিলাইট জ্বালিয়েছে, কেউ কেউ ধূপের ধোঁয়া দিচ্ছে । তীব্র আলোর আকর্ষনে লাইটগুলোকে কেন্দ্র করে শত শত পোকা ঘুরপাক খাচ্ছে । তারা যেন সব একসাথে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আলো তাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে মোহগ্রস্থ করে অন্ধকার জগতে নিয়ে যাচ্ছে , অনেকটা আমার জগতে ।

এখন নিঝুম রাত , সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত পাখিরা সব ঘরে ফিরে গেছে । মা পাখিটা নিশ্চই বাচ্চাগুলোকে তার সারাদিনের বিভিন্ন মজার ঘটনা শুনাচ্ছে, বাচ্চারা হাসতে হাসতে চলে গেছে ঘুমের রাজ্যে , পরীর রাজ্যে । আমার না একটা পাখির মত সংসার সাজানোর ইচ্ছে ছিল । জন্মের কিছুদিন পরেই বাবা-মা অজানাতে চলে যাওয়াতে পাখির মত সংসার আমার কখনো দেখা হয় নি ।

রাত হলে খুব বিমর্ষ লাগে । মনে হয় সকাল আসেনা কেন ? পৃথিবীর সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায় আর আমি জেগে জেগে তারা দেখি , জেগে জেগে ঘুমিয়ে যাই , ঘোরের মধ্যে চলে যাই । বাতাসে গাছের পাতারা কেঁপে উঠে শব্দ করে । কখনো দূরে রাত জাগা পাখির ডাক শুনতে পাই । আমার নিঃসঙ্গ জীবনে তখন তীব্র আলোড়ন হয় । আমি চিৎকার দিয়ে ডাকতে চাই । সবাইকে বলতে চাই একদিন আমিও তোমাদের মত কথা বলতে পারতাম ।

আহা কতদিন ধরে আমার নিজের কণ্ঠস্বর শুনিনা । কেমোর অসহ্য যন্ত্রনা আর ভালো লাগেনা । পতঙ্গপালের মত কোথাও কোন উজ্জ্বল আলো চাই , যা আমাকে আকর্ষন করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ধীরে ধীরে নিয়ে যাবে সে নীরব নিস্তব্ধ শীতল জগতে যেখানে যেতে আমি খুব ভয় পাই ।

আগে জানতাম জীবনটা অনেক সুন্দর । তাই আমি আবার নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিলাম , তোমার সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলাম । যখন দেখেছি আমার বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম তখন সরে এসেছি । প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও । আমি জানি না বলে হঠাত করে নাই হয়ে যাওয়াতে তোমার মনে আমার প্রতি তীব্র ঘৃণা । আমি ঘৃণা ই গ্রহন করলাম, তোমাকে ভালবাসি তোমার ভালোর জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।

প্রিয় ফারজানা , তুমি ছাড়া আমার জীবনটা শূন্য । গত এক বছর আমি শূন্যতা নিয়ে বেঁচে ছিলাম । আর বেশিদিন হয়তো থাকব না । আমাকে ভুলে তোমার সুন্দর জীবনটাকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখ । তবেই আমি শান্তি পাব । আমি আমার প্রিয় তারার পথে নিঃশব্দে যাত্রা করব । মাঝে মাঝে জ্যোৎস্না রাতে বারান্দা কিংবা ছাদে তারাদের শুনিয়ে শুনিয়ে আমার প্রিয় গানটা গাইবে । এটাই আমার জন্য অনেক বড়পাওয়া হবে । হাত অসার হয়ে যাচ্ছে আর লিখতে পারছিনা ।

ইতি,
তোমার হাসান

[এ চিঠিটা তুমি যখন পাবে আমি সম্ভবত তখন থাকবনা । আমি একমাস ধরে অনলাইনে অনুপস্থিত থাকলে তোমার কাছে এ মেইলটি আসবে । নার্স আপু আর ভাইয়ার কাছেও আরেকটি মেইল যাবে । তুমি যদি আমাকে ব্লক করে রাখ তাই আমি তাদেরকে এ চিঠির প্রিন্ট, তোমার জন্য কেনা কার্ড, একটা নতুন ব্যাটারি আর তোমার ছবি দুটো প্যাক করে দিয়েছি । তারা তোমার ঠিকানা পেয়ে এ চিঠিটা পাঠাবে ।]

*খুব ইচ্ছে ছিল ভাইয়া বিয়ে করলে ভাবীর কোলে মাথা রেখে গল্প শুনব , খুব ইচ্ছে ছিল তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধার , খুব ইচ্ছে ছিল একটা পাখির মত সংসার গড়ার ।

বাংলাদেশ থেকে ফারজানার নামে একটা চিঠি এসেছে । চিঠিটার সাথে ভ্যালেন্টাইন দিবসের পুরনো একটা কার্ড সাথে পিচ্চি একটা ব্যাটারি আর ফারজানার দুকপি ছবি । চিঠি পড়ে ফারজানার মা কাঁদছেন । তার মেয়ে গত ছয়মাস ধরে কোন ইমেইলই চেক করেনি ।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×