আমি সাধারণত বাসেই চলাফেরা করি, কিছুদিন ধরে একটা ব্যাপার চোখে পরছে । ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সী ছেলেরাই সাধারণত বাসের হেল্পার হয়ে থাকে । আমি বাসের হেল্পারদের মাঝে একটা কমন #যৌন-বিকৃতি দেখেছি । কোন মেয়ে যখন বাসে উঠবে সে বাসে তোলার ভঙ্গি করে মেয়েটার পিঠে বা কোমরে হাত দেবে, শুধু তাই না মেয়েটি বাস থেকে নামার সময়ও সে বাসের গেটে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং সে বাস থেকে নামানোর ভঙ্গি করে পিঠ বা কোমরে আবারও হাত দেবে । এছাড়াও ভাড়া কাটার সময় তারা গায়ে হাত দিয়ে ভাড়া চাইবার চেষ্টা করে ।
আমি যতদূর দেখেছি সবার চোখের সামনেই ব্যাপারগুলো ঘটছে, কেউ কিছু বলছেনা, এমনকি যে মেয়েটার গায়ে প্রতিদিন হাত দেয়া হচ্ছে সে ও মুখবন্ধ করে প্রতিদিন মেনে নিচ্ছে ।
বিকৃত-যৌনতা প্রতিদিন বাড়ছে, আর এর শিকার হচ্ছে এদেশের নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত নারীরা । আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মেয়েরা জন্মের পর থেকেই নানা রকম বিকৃত-যৌনতার মাঝ দিয়ে বড় হয়েছে, তাদের কাছে #যৌনতার মূল সংজ্ঞাটাই অজানা । আমি এর আগে একটা স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম “প্রতি বছর এদেশে যতগুলো ধর্ষণ হয় তার ৫% ও কেউ জানতে পারেনা ।”
এদেশের নম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের একটা বড় অংশ বয়ঃসন্ধিতে বড় কোনো ভুল করে বসে । হোম-টিউটর, স্কুল-টিউটর, খালাত-মামাতো ভাই, বখাটে, এলাকার গুন্ডা, হুজুর, প্রতিবেশী দ্বারা বিকৃত-যৌনতার স্বাদ পায় । এদেশের ৫০% এর বেশী নারীর কাছে যৌনতা মানেই বিকৃত কিংবা শুধুই শারীরিক সম্পর্ক, এমনকি এদেশের নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া একটা কথা হল “বাঙালি নারীরা বিছানায় বেশ নিরুত্তাপ ।”
এদেশে মেয়েদের খুব বাল্যবিবাহ দিয়ে দেয়া হয়, ১৫ কিংবা ১৬ বছরের তরুণীর উপর অজানা-অচেনা মধ্যবয়সী এক পুরুষ যখন কাম-নিবারণ করেন তখন নিশ্চয়ই আপনি এটাকে শুদ্ধ-যৌনতা বলবেননা । এটাও একধরণের বিকৃত-যৌনতা, ধর্ষণও বলতে পারেন । আমি গ্রামে আমার অনেক দূরসম্পর্কের নানি-দাদি দেখেছি যারা ৫০ বছর সংসার করেও তার স্বামীকে ভয়ে ভয়ে আপনি বলে ডাকছেন । তারা স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেননা ।
আপনি কি জানেন ?? এরকম হাজার হাজার নানি-দাদি আছেন যারা কেবল মাত্র #যৌন-শিক্ষার অভাবে সারা জীবনে কোনদিন পূর্ণ-যৌনতার স্বাদ পাননি ।
২০১৪ সালে বলিউডে @boyhood নামের একটা সিনেমা হয়, এটার একটা দৃশ্যে দেখা যায় বাবা তার কিশোর পুত্র এবং কিশোরী কন্যাকে #কনডম সম্পর্কেও বলে । এদেশে আজও বাবা-মা আমাদের বন্ধু হয়না, স্ত্রী স্বামীর better half হয়না । নারী তার উপর চাপিয়ে দেয়া বিকৃত যৌনতার প্রতিবাদও করতে পারেনা ।
আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের বন্ধু হই, রাগী বাবা-মা না । আসুন আমরা আমাদের বোন-স্ত্রীদের উপর চাপিয়ে দেয়া বিকৃত যৌনতার প্রতিবাদ করি । আপনার কন্যা-বোন-স্ত্রী ও বাসে চড়ে, একা একা স্কুলে-কলেজে-ভার্সিটিতে যায় । প্রতিটি নারীকেও তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, আপনি না জাগলে জাগবেনা কেউ । আপনি সচেতন হোন, আমরা পাশে আছি । ঘরে বসে না কেঁদে, ব্লেড দিয়ে হাত না কেটে, আপনিও কথা বলুন, কথার পিঠে কথা বলুন । জীবনটা কিন্তু আপনার, কারো চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে আপনি কেন চুপ থাকবেন !!
গর্ভপাত, আত্মহত্যা, ধর্ষণ না, প্রয়োজন যৌন শিক্ষা এবং নারী জাগরণ ।
#note- USA UK তে sex education আছে, তাও সেখানে ধর্ষণ হচ্ছে । sex education ধর্ষণ বন্ধ করতে পারেনি, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে এদেশে sex education থাকলে ধর্ষণ বন্ধ না হলেও ধর্ষণ কমবে, অন্তত শিশুটি তাকে রাক্ষা করার জন্য লড়তে জানবে, যে চিৎকারটি সে লজ্জায়-ভয়ে দিতনা, এবার সে চিৎকারটি দিবে ।