somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি বলা উচিৎ? বাণিজ্যর দালাল নাকি গুটিবাজ আইসিসি।

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগে ফেসবুকের কোন এক পোস্টে দালালদের দখলে আইসিসি কথাটি বলেছিলাম। কথাটি ক্ষোভের কারনের বলিনি সেদিন। কথাটি যে সত্য তা হয়তো ১৬ কোটি বাঙালিকে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে না। আমি কিন্তু এমন একটি ঘটনায় হতাশ হইনি। কারন ক্রিকেট কোন খেলার পর্যায় পরে না। এটাই এখন খেলার খোলসে বড় বাণিজ্যর জায়গায়। যে বাণিজ্যে আমরা হেরে চলছি দিনের পর দিন। তার স্বীকার আজকে তাসকিন ও সানি।

আরও কিছু কথা বলার আগে একটু যেনে নেই তাসকিনের সাথে কি ঘটেছে। যা হয়তো ফেসবুক ও সংবাদ মাধ্যম গুলোর কল্যাণে আমার বেশীর ভাগ মানুষ যেনে ফেলেছি।



১/ আইসিসির ইন্ডিপেন্ডেন্ট এসেসমেন্ট রিপোর্ট তাসকিনের Stock ডেলিভারি এবং Yorker ডেলিভারি নিয়ে অবৈধ কিছুই পায়নি [Stock ডেলিভারি হল একজন বোলারের সাধারণ ডেলিভারি, ভ্যারিয়েশন ছাড়া সাধারণ অবস্থায় একজন বোলার যেই ডেলিভারি দেয় সেটা]।

২/ তাসকিনকে ৩ মিনিটের মাঝে ৯টা ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বলা হয় যেটা কিনা ম্যাচেও হয়না। এই ৯টা বাউন্সারের মাঝে ৩টা বাউন্সারের একশান আইসিসির চোখে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল নেদারল্যান্ডের সাথে যেই ম্যাচে তাসকিন তার বোলিং এর জন্য রিপোর্টেড হন সেই ম্যাচে তাসকিন একটাও বাউন্সার দেন নি। যদি আমরা আইসিসির ২.২.৬ রেগুলেশানের দিকে তাকাই তাহলে দেখবেন একজন বোলার যেই বল করার জন্য ম্যাচ রেফারি/আম্পায়ার কর্তৃক রিপোর্টেড হয়েছেন সেই একই রকম বলই পরীক্ষার সময় তাকে করতে হবে। তাহলে এটা প্রমাণিত যে বাউন্সারের জন্য তিনি রিপোর্টেড হননি। তাহলে সব থেকে বড় প্রশ্ন, কেন তাসকিনকে বাউন্সার করতে বলা হল, তাও আবার ৩ মিনিটে ৯ টি।

৩/ রেগুলেশান ২.২.৬ অনুযায়ী যে রিপোর্ট দেওয়া হয় সেখানে নির্দিষ্ট করে কোথায় কোথায় সমস্যা তার উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু এখানে শুধু বলা হয়েছে সামগ্রিক ভাবে তাসকিনের বলিং একশন নিয়ে সন্দেহ আছে। আর এমন রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে পরীক্ষার জন্য করতে বলা হয়েছে বাউন্সার। একের পর এক ম্যাচ, দীর্ঘ ভ্রমন জনিত ক্লান্তি এবং মানুষিক চাপ সব মিলিয়ে একজন বলারের পক্ষে কখনই এক সাথে ৯ টি বাউন্সার সঠিক ভাবে করা সম্ভব হবে না। কাজেই ৯টা ডেলিভারির মাঝে ৩টা Illegal হওয়াটা খুব একটা গুরুতর কিছু নয়। অন্তত নিষিদ্ধ হওয়ার মততো নয়-ই।



৪/ আইসিসির রেগুলেশান ২.১.১ অনুযায়ী ম্যাচ রেফারি বা আম্পায়াররা যদি কোন বোলারের একশান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তবে অবশ্যই নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে ঠিক কোন বলের জন্য বা কোন কারণে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাসকিনের রিপোর্টে এসব কিছুই বলা নেই।

রেগুলেশান ২.২.১৩ অনুযায়ী কোন বোলার যদি তার Stock ডেলিভারী ব্যতীত অন্য কোন ডেলিভারির কারণে রিপোর্টেড হন তাহলে সে খেলা চালিয়ে যেতে পারবে ।সেই ক্ষেত্রে তাকে এই মর্মে ওয়ার্নিং দেওয়া হবে যে যদি সে ওই অবৈধ (এই ক্ষেত্রে তাসকিনের সেই অবৈধ ৩টা বাউন্সার) বোলিং ভবিষ্যতে আবার করে তবে আইসিসি তাকে আবার পরীক্ষার জন্য ডাকবে।

৫/ মানুষ যন্ত্র নয়। অথবা রোবটের মত করে সব কিছু মেপে মেপে করতে পারেনা। আর সেটা যদি হয় ক্লান্তি এবং মানুষিক চাপ মাথায় নিয়ে তাহলে কাজের ক্ষেত্রে যে একটু বাড়তি দুর্বলতা প্রকাশ পাবে এটাই স্বাভাবিক। বলিং একশান পরীক্ষা করার যদি সঠিক কোন পদ্ধতি থেকে থাকে তাহলে আইসিসির উচিৎ প্রতিটা দেশের বোলারদের এমন পরীক্ষার মাধ্যমে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া। যুদ্ধে নামার পরে হঠাৎ যদি বলা হয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা যাবেনা তাহলে সে যুদ্ধে যুদ্ধ করাটা কতটা সমানে সমান হবে? হ্যাঁ তাসকিন, সানিরা আমাদের অস্ত্র। অস্ত্র যদি যাচাই করার থাকে তাহলে সেটা যুদ্ধে নামার আগেই এবং সেটা সকল দেশের অস্ত্রকেই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়া উচিৎ। খেলার মাঝে এসে হঠাৎ ছন্দ পতন ঘটানোর কোন অধিকার আইসিসির থাকতে পারেনা।

৬/ নতুন নতুন দেশ ক্রিকেট খেলায় চলে এসেছে। সবাই যে ভালো করছে তা বলবনা। আবার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্থান দলের মত খেলাও সবার চোখে পরার মত। কিন্তু নতুন দেশ খেলায় আসলে কি হবে, ঐ যে নোংরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য। যার ফলে আগের সেই গণ্ডির বাহির থেকে কেও ভালো খেললেই তাকে পড়তে হবে তাসকিন অথবা সানির মত সমস্যায়। ফলে নতুন নতুন উদীয়মান দল গুলো এমন সব ঘোর প্যাঁচের মধ্যেই আটকে পরে খাবি খায়। আইসিসি যদি মনেই করতো নতুন দলগুলো আরো ভালো করুক তাহলে বাছাই পর্বের নাম করে নতুন দল গুলোকে আলাদা করে খেলাত না। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য তো একটাই। যদি অপেক্ষা কৃত দুর্বল দল গুলো ভালো দল গুলোর সাথে খেলতে থাকে তাহলে তারা তাদের দুর্বল জায়গা গুলো বেড় করতে পারবে এবং তা শুধরে নেবার চেষ্টা করবে। এভাবে দুর্বলতা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারলে যে পুরনো শক্তিশালী দল গুলোর একক আদিপত্ত্য কমে যাবে সেই ভয়েই দুর্বলদের জন্য আলাদা একটা চৌবাচ্চা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখায়েই তাদের দাপাদাপি, হাবুডুবু ও জয় পরাজয়। যেখানে শক্তিশালী দল গুলো অপেক্ষা কৃত দুর্বল দল গুলোকে কখনই খেলায় আমন্ত্রন জানায় না। দুর্বল দলের সাথে খেলায় বাণিজ্য নেই, খুব বেশী প্রতিযোগিতা হয়না, কিন্তু এসবের থেকেও বড় কারন হচ্ছে শক্তিশালী দল গুলো যদি সত্যি সত্যি দুর্বলদের সাথে হারতে শুরু করে তাহলে যে যুগের পর যুগে ধরে রাখা অবস্থানে টান পরে যাবে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কি পদক্ষেপ নেবে সেটা তারাই ভালো জানে। সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত The Court of Arbitration for Sport এর শরণাপন্ন হবে কিনা সেটাও বোর্ডের সিদ্ধান্ত। তবে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে ঐ বাণিজ্য। এবং তার সাথে সাথে ভালো খেলতে পারা। কারন এখন পৃথিবীর কোন কিছুই একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনা। এর সাথে একটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি, দেশের মানুষের মানুষিক শক্তি, বহির্বিশ্বে দেশিয় শক্তি সাথে যোগ হতে হয় প্রতিনিয়ত ভালো খেলার যোগ্যতা। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের কতটা শক্তি রয়েছে এবং আমরা তাকে কিভাবে ব্যবহার করতে পারি সেটা দেশের মোড়লদের সিদ্ধান্ত। আমার সাধারন মানুষ শুধু বলতে পারি এমন বৈষম্য মূলক আচরণ অনেকের সহ্য হলেও আমাদের সাধারণের সহ্য হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×