পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে মানুষকে। কি সে কারন? হয়তোবা জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনায় পৃথিবীতে জীবেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান তৈরী করেছে মানুষ। হয়তোবা পৃথিবীতে সর্বোত্তম জীবনযাপন করে মানুষ।
শারিরীক গঠন, মানসিক বুদ্ধিদীপ্ততা, সামাজিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি মানুষের দ্বারাই সম্ভব । সে জন্যই হয়তো সৃষ্টিকর্তাও এ জাতিকে সৃষ্টির সেরা বলে অভিহিত করেছেন। একমাত্র মানুষই পৃথিবীতে সভ্য ভাবে বাস করে ।
সভ্যতা সৃষ্টি হয় মানুষের দ্বারা-ই। সভ্যতা মানে দামি দামি দালানকোঠা,কাড়ি কাড়ি টাকা-পয়সা আর চাকচিক্য নয়, সভ্যতা হল একজন মানুষের ভালোভাবে বেচেঁ থাকার নিশ্চয়তা।
মানুষ তার সামাজিক নিজস্ব আচার আচরন, কৃষ্টি-কালচার ধারন করে বেচে থাকে। কিন্তু অধুনা এদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে যে, সত্যিই কি আমরা সভ্য মানুষের দাবিদার হতে পারি কি না ! স্নেহময়ী মা কর্তৃক সন্তান হত্যা, হত্যার পর সে সন্তানের লাশ গুম করা, পিতা কর্তৃক পুত্র হত্যা, পুত্র কর্তৃক পিতা হত্যা-জখম, একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরূত্বর্পূন এবং অবলম্বন, যার জন্য পিতা-মাতা ছেড়ে আসে একজন নারী সেই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর উপর অকথ্য নির্যাতন, এসিড ঢেলে বা পুড়িয়ে হত্যা করা, যৌতুকের দাবিতে পা কেটে আলগা করে ফেলা, এসিড সন্ত্রাস ইত্যাদি সাম্প্রতিক বড় স্বভাবিক ঘটনায়(!) পরিনত হয়েছে।
অতি সাপ্রতিক নতুন এক পাশবিকতা এ জাতীকে তার রাহুগ্রাসে আচ্ছন্ন করে চলেছে, তা হলো আমাদের গ্লামারদের বিকৃত রুচিবোধ তথা অনৈতিক সর্ম্পকের ধারনকৃত ভিডিও প্রচার, তথাকথিত সুশীলদের (কিছু কিছু ক্ষেত্রে) বিকৃত রুচিবোধের ধারনকৃত ভিডিওর বহিপ্রকাশ, বন্ধু-বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকার অনৈতিক যৌনাচারের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভিডিও চিত্র ধারন ও তা সগৌরবে প্রচার, কখনও আবার ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ভিডিও ধারণ, আবার ধর্ষনের দৃশ্য ধারন করে তার নির্লজ্জ প্রচারনা কিংবা সর্বশেষ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর সাথে বাসর রাতের দৃশ্য ভিডিও করে বাজারে ছেড়ে আর কতটা নির্লজ্জতার প্রমাণ আমরা দিচ্ছি। বিশ্বস্ততা ভংগের প্রমান আমরা অনেক আগেই দিয়েছি, কিন্তু স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর সাথে বাসর রাতের দৃশ্যের ভিডিও ! তাহলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে ? মা তার যৌন আবেগের কলংক ঢাকতে গিয়ে সন্তানকে লাশ বানাচ্ছে! বাবা-মায়ের পর-ই শিক্ষকের অবস্থান। সেই শিক্ষক কর্তৃক সম্ভ্রম হারাচ্ছে ছাত্রী। আর লিখতে ভয় করছে, এও কি সম্ভব! এগুলো কি মানবতা বিরোধী অপরাধ নয়? হঠাৎ আমাদের মধ্যে কেন এসকল সমাজবিরোধী বিকৃত রুচিবোধ মহামারী আকারে দেখা দিচ্ছে? হত্যা-সন্ত্রাস-দূনীতি বন্ধে আমাদের নীতিনির্ধারকদের যতটা মাথাব্যথা, এর কিঞ্চিত পরিমান ও কি এই মহামারী রোধে ব্যয় করা উচিৎ নয় ? শুধু আইন করে কি এসব রোধ সম্ভব?
ইভটিজিংকে আইন করে যৌন নির্যাতনের মান দিয়ে নগদ শাস্তির বিধান করে ইভটিজিং কমেনি বরং বেড়েছে। কেউ একটা শিস দিলেও সেটাকে যৌন নির্যাতনের মান দেয়াটা নারীর জন্য অপমানজনক নয় কি? এসব যারা করছে তারা শিক্ষিত অশিক্ষিত নিবিশেষে নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছে। বরঞ্চ শিক্ষিত শ্রেনী যারা প্রযুক্তির সংস্পর্শে বেশী তারাই এখন আগ বাড়িয়ে এসব সমাজ গর্হিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।
তবে কি আমাদের গোড়ায় গলদ রয়ে গেছে ? আমাদের নৈতিক শিক্ষার চরম অবহেলা আমাদেরকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে হাযির করেছে। কি দিয়ে এ ধ্বংসকে আমরা ঠেকাবো? নাকি ঠেকানোর অনূভুতিটুকুও হারিয়েছি আমরা?