somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবাজার - শেষ ট্যুর

১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাটা বছর ব্যস্ত সময় কাটাই । পড়াশোনা, ক্লাস, assignment , tutorial , পারিবারিক ঝামেলা সবকিছু মিলিয়ে প্রচন্ড বোরিং । দরকার ছিল একটু বিরতির । নিজের উপর পড়া মরিচা একটু দূর করার । কপাল ভাল , সুযোগও পেলাম । department থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজার যাওয়া হবে । ট্যুর আয়োজন করবে আমাদের ব্যাচের লোকজন । মূলত শরীফ আর আশীষ । কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে দু’জনেই যাওয়ার জন্য মানষিক প্রস্তুতি নিলাম । দু’জন মানে আমি আর আমার ইয়ে । ট্যুর নিয়ে আমরা খুবই excited ছিলাম । অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেনে ।

ট্রেন আমার দু’চক্ষের বিষ । সারাক্ষণ ঝালমুড়ির মত ঝাঁকাতে থাকে । কেন যে সবার ট্রেন জার্নি এত পছন্দ আল্লাহই জানে । অবশ্য আমার সাথে ক্লাসের সবার মতের মিল হবে না এটাই স্বাভাবিক । After all, I am the bloody me … যাওয়ার জার্নিটা মোটেও সুখকর ছিল না । একে তো স্টেশনে ৩ ঘন্টা অপেক্ষা , তার উপর সামনে এক মালগাড়ির accident এর কারনে ইমামবাড়ি স্টেশনে ৭ ঘন্টা বসে থাকা । তার উপর খাওয়া দাওয়ার সমস্যা । কুফা একটার পর একটা লেগেই আছে । চট্টগ্রাম থেকে যে বাসে বান্দরবান যাওয়ার কথা সেটাও মাঝপথে গেল নষ্ট হয়ে । অবশেষে বান্দরবান পৌছালাম সন্ধ্যা ৭ টায় । তখন দুপুরের ভাত খেলাম । আর সাড়ে ১১ টায় খেলাম রাতের ভাত । মোটা আমি হব নাতো হবে টা কে । রাতে যে ঘুমটা দিলাম তা ছিল ফাটা ফাটি । পরদিন সকালে বের হব ঘুরতে ।

এমনিতে ১ দিন নষ্ট হয়েছে । যেখানে ২ দিনে ৬টা যায়গা ঘোরার কথা সেখানে ১ দিনে ৬ যায়গায় ঘুরলাম । ৬ যায়গা মানে নীলগিরি, নিলাচল, স্বর্ণমন্দির, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড় আর মেঘলা । সারা গা এত ব্যাথা , মনে হচ্ছিল হরতালে পিকেটিং করতে গিয়ে পুলিশের ডলা খাইছি B-)। সেদিন রাতেই বাসে কক্সবাজার আসলাম । আসার জার্নিটাও যেরকম চেয়েছিলাম সেরকম হয়নি । তাই মেজাজটাও গরম ছিল । যার ফলাফল ভোগ করতে হয়েছে আমার হবু সহধর্মিনিকে ।

মানুষের অতীত কখনই তার পিছু ছাড়ে না । আমারও ছাড়েনি । এই ডিপার্টমেন্টে আমি অনেক কিছু সহ্য করেছি , suffer করেছি । সেই অতীত আমার জীবনে আবার ফিরে আসুক তা আমি কোন অবস্থাতেই চাই না । কিন্তু এই ট্যুরে তা আসার মৃদু একটা লক্ষণ দেখা দিয়েছে । আমি বরাবরই ভীতু টাইপের ছেলে । সেই ভয়ের কারনেই আমি এই ট্যুরে বেশ কিছু খারাপ সময় কাটিয়েছি । তবে যে ভাল সময়টা পেয়েছি তা তুলনাহীন । আমার অতীত আমার বর্তমানকে আক্রমণ করে আমার ভবিষ্যৎ কে নষ্ট করে নাকি সেটাই এখন দেখার বিষয় ।
কক্সবাজারে প্রথমদিন সকালে গেলাম কস্তুরঘাটে । পরে সবাই আসলে সেখান থেকে গেলাম মহেশখালি । আমরা ২জন মিলে । সময়টা খুবই ভাল যেত যদি না অতীতের ছায়া আমাদের পিছে লেগে থাকত । মহেশখালি থেকে ফিরে বীচে প্রায় ৩ ঘন্টা পানিতে দাপাদাপি করলাম । এটাই ট্যুরের সবচেয়ে ভাল সময়ের একটা । ভাল সময় কারন কিছুক্ষণের জন্য হলেও এসময় আমরা দুজনের মাঝখানে অতীত এসে interfere করেনি । সারা জীবন মনে থাকবে । হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে গেলাম বার্মিজ মার্কেটে । মহা শপিং করলাম । একটা শার্ট গিফট পেলাম । রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম । পরদিন ইনানী বীচ আর হিমছড়ি যাব ।

ওনার আবার ঠান্ডা লেগেছে । তাই ভাবলাম পানিতে নামব না । কিন্তু ইনানী বীচে গিয়ে পানিতে না নেমে মনটাও খারাপ হচ্ছিল । তার উপর বড় মুজিব স্যারের স্পষ্ট হুমকি, সবাই পানিতে না নামলে উনি পানি থেকে উঠবেন না । নামলাম । আরও একটা অসাধারণ সময় কাটালাম । ইনানী বীচে এক couple এর সাথে পরিচয় হল । তারা হানিমুনে এসছে । বলল তাদের ছবি তুলে দিতে । খুশি হয়েই দিলাম । ছবি তোলার পর তারা থ্যাংকস জানাল । আমি বললাম থ্যাংস এ কাজ হবে না । এর বদলে আমাদেরও ছবি তুলে দিতে হবে । তারাও আমাদের বেশ কিছু ছবি তুলে দিল । আমি এরকম হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত couple খুবই কম দেখেছি । আল্লাহ তাদের ভাল রাখুক । এরপর হিমছড়ি এসে হালকা কেনাকাটা করে হোটেলে ফিরলাম । আজই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিব । তাই সন্ধ্যায় আবার বীচে কিছু সময় কাটালাম একসাথে । আবার কবে এভাবে একসাথে সময় কাটানো হয় কে জানে । তাই যতখানি সম্ভব স্মৃতি জমা করে নেই ।

এবারের ট্যুরটা ভাল হয়েছে তার কারন এবারকার টীচাররা অনেক ভাল ছিল । আমাদের সাথে গিয়েছিল ছোট এবং বড় মুজিব স্যার আর এলমা ম্যাডাম । দুই মুজিব স্যারকে আমাদের সাথে দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তাঁরা আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় । আমাদের সাথে তাঁরাও যেন বাচ্চা হয়ে গিয়েছিলেন । বরং আমার তো মাঝেমাঝে মনে হচ্ছিল, তাঁদের চেয়ে আমার বয়স বেশী । এরকম ফ্রেন্ডলি টীচার আমি খুব কমই পেয়েছি আমার জীবনে । এরকম টীচার আরও পেলে এই ডিপার্টমেন্টটা হয়ত আমার কাছে এতটা অসহ্য লাগত না ।

মনে অনেক আনন্দ , স্মৃতি , একটু কষ্ট, হালকা ভয় আর সারা গায়ে অসম্ভব ব্যথা নিয়ে ঢাকায় ফেরত আসলাম । জানি , এটাই আমাদের ব্যাচের শেষ ট্যুর । আর কখনও এভাবে ঘুরতে যাওয়া হবে না । কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলেও , যে অসাধারণ সময়টা আমি ( অথবা আমরা ) কাটিয়েছি তার তুলনা হয় না । সেই ভাল সময়টুকুর জন্য কিছু খারাপ সময়কে মেনে নিতে রাজি আছি । অনেক কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি । কিন্তু জানি এরকম আর হবে না ।





৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×