somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহজাহান আলী
অামি শাহজাহান অালীnসবে মাত্র এমএসএস অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করলাম। ব্যাচেলার আছি। বর্তমানে ঢাকার একটি প্রাইেভট স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছি। গল্প, কবিতা, সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসি।

ইঁদুর বেড়ালের সমঝোতা, দোকানদারের বারোটা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক মুদি দোকানে বাসা বেঁধেছিল দুষ্টু কিছু ইঁদুর। রাতের বেলা দোকানদার বাসায় চলে গেলে ইঁদুরদের নাচানাচি লাফালাফির উৎসব শুরু হয়ে যেত। একটা যেত তেলের বোতলে হামলা চালাতে আরেকটা লাফাতো চালের বস্তার ওপর আর অন্যরা এভাবে চিনির বস্তা আটার বস্তাসহ বিভিন্ন প্যঅকেট আর বস্তা কাটার উৎসবে মেতে উঠতো। যা-ই সংগ্রহ করতো সেগুলো নিয়ে জমাতো গর্তের ভেতর তাদের থাকার ঘরে। অন্য ইঁদুরেরা বাদাম আখরোট ইত্যাদি যে যা পেত খেয়ে পেট ভর্তি করে নিতো। দোকানদার যতো অষুধ আর বিষই সেখানে ছড়াতো কোনো কাজই হতো না। দুই একটা হয়তো মরতো কিন্তু চারটা নতুন জন্ম নিতো।

বন্ধুরা যারা এ ধরনের সমস্যায় পড়েছিল তারা চমৎকার একটা বুদ্ধি দিলো। তারা বলল: ‘ওষুধ ফসুদে কোনো কাজ হবে না, এক কাজ করো, মোটা তাজা দেখে একটা বেড়াল এনে দোকানে রেখে দাও। দেখবে ইঁদুরের বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে’। দোকানদার অনেক ঘুরে ফিরে শেষ পর্যন্ত মোটাতাজা একটা বেড়াল পেল। বেড়ালটা দিনভর এটা সেটা খেয়ে দোকানের সামনেই ঝিমাতো আর রাত হলেই দোকানের ভেতর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতো। অপেক্ষায় থাকতো কখোন ইঁদুর বেরিয়ে আসে। ইঁদুর বের হলেই বেড়াল হামলা চালিয়ে কাজ সারা করে দিত। এভাবে বেড়ালের উপস্থিতিতে ইঁদুরেরা আর আগের মতো দোকানের বস্তা কাটার উৎসব পালন করতে পারতো না।

দোকানদার পরিস্থিতির উন্নতি দেখে খুব খুশি। এখন আর ইঁদুরের দল তার দোকানের মালামাল নষ্ট করে না বা নিয়ে যায় না। বেড়ালও দোকানদারের ওপর খুব খুশি কেননা সে তাকে দিনভর খাবার দেয়, বিশ্রামের সুযোগ দেয়। বেড়ালও সতর্কতার সাথে পাহারা দিয়ে দোকানদারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করলো। কিন্তু কোনো কোনো ইঁদুর বেড়ালের তন্দ্রার সুযোগ নিতে শুরু করলো। বস্তা কেটে নিজের জন্যে এবং অন্যদের জন্যেও খাবার নিয়ে যেতে লাগলো। দোকানদার এই দুই একটা চোর ইঁদুরকেও কীভাবে পাকড়াও করা যায় ভাবল। ভেবেচিন্তে সে দিনের বেলা বেড়ালটাকে কম খেতে দিতে শুরু করলো, যাতে রাতের বেলা বেড়ালের ক্ষিদে লাগে, আর ক্ষিদের কারণে রাতে বেশি বেশি ইঁদুর শিকার করে। দুই এক সপ্তাহ এই বুদ্ধিটা বেশ কাজে দিলো।

মোটাতাজা বেড়ালটি পেট পুরে খাবার খেতে না পেয়ে ধীরে ধীরে শীর্ণ হয়ে যেতে লাগলো। সেজন্যে রাতে অনেক বেশি বেড়াল শিকার করতে লাগলো। সে কারণে ইঁদুরগুলো আর দোকানের জিনিসপত্রের ওপর খুব একটা হামলা করতে সাহর পেলো না। দোকানদারও বেশ খুশি। কিন্তু বেড়াল খাবার না পাবার কারণে আগের মতো সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না। দোকানদারও তার দিকে আর নজর দিচ্ছে না। সে ও এখন ভাবতে শুরু করলো দোকানের খাদ্য সামগ্রীর ওপর হামলা করবে। বেড়ালের মনোভাব আর দোকানদারের ব্যাপারটা ইঁদুরগুলো লক্ষ্য করছিলো। তারা সবাই বৈঠকে বসলো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইঁদুরগুলো বস্তা, প্যাকেট, এটাসেটার ফাঁকফোঁকরে একসাথে লুকিয়ে সাহসের সাথে মাথাটা বের করলো। সাহসী ইঁদুর যেটা সে বেড়ালের উদ্দেশ্যে বলল:‘শোনো! আমার ওপর হামলা করার আগে এক মিনিটের জণ্যে আমার কথাটা শোনো। তুমি নিশ্চিত থাকো যে পালানোর পথ ঠিক করা আছে, তুমি আমার নাগাল পাবে না। তবে আমার কথাটা শুনলে তোমার উপকারও হতে পারে’।
বেড়াল চিন্তাভাবনা করে বলল: ঠিক আছে বলো!
ইঁদুর বলল: তুমি আসার পর থেকে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, না খেতে পেয়ে মরার মতো অবস্থা।
বেড়াল বলল: তাই তো হবার কথা.. তোমরা ভিন্ন কিছু আশা করছিলে...!
ইঁদুর বলল: না, তা না... তবে একটু ভেবে দেখুন.. দোকানদার হলো মানুষ আর আপনি এবং আমরা তো...

বেড়াল ভেবেছিল ইঁদুর তাকে ছোটো করার চেষ্টা করছে, তাই দ্রুত মাথা তুলতেই ইঁদুরটাও ঢুকে গেল বস্তার ফাঁকে। ঢুকেই বলল: তুমি আমার কথাটা শোনো..গত ২/৩ সপ্তা ধরে দোকানদার তোমাকে এতো কম খেতে দিচ্ছে যে কয়দিন পর হয়তো তোমার আর শিকার করার মতো শক্তিও থাকবে না..।
বেড়াল ভাবল ইঁদুর তো ঠিকই বলছে। সে একটু সংযত হলো। বলল: কী বলতে চাও তুমি...
ইঁদুর এবার একটু সামনে এসে বলল: ক্ষুধায় তোমারও তো নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে দোকানের মজার মজার খাবারগুলোর বস্তায় বা প্যাকেটে আঁচড় বসাতে..করছে না? নৈলে আমরা যদি অন্য কোনো গর্তে গিয়ে আশ্রয় নেই, তুমি তো মরে যাবে না খেয়ে..তাই আমাদের প্রস্তাব হলো তুমি রাতের বেলা ঘণ্টাখানেক একটু রেস্ট নাও, আমরা এই ফাঁকে আমাদের কাজটা সেরে নেবো..বিনিময়ে তোমার জন্যেও পর্যাপ্ত খাবার আমরা দোকানের এক কোণে জমিয়ে রাখবো.. তুমি তো আর তোমার ঐ ভোঁতা নখ দিয়ে বস্তা কাটতে পারবে না..তাইনা’?

বেড়াল মনে মনে সাতপাঁচ ভেবে ইঁদুরকে পরীক্ষা করার জন্যে বলল: আমি আজ ভীষণ টায়ার্ড, ঘুমাবো.. তোদের যা খুশি কর, যাহ।

ইঁদুরেরা বুঝল বেড়াল তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছে। গর্তে ফিরে গিয়ে সবাইকে নিয়ে রাতে হামলা চালালো যার যার পছন্দের খাবারের ওপর। ইচ্ছেমতো খেলো এবং নিয়েও গেল। আর কিছু খাবার রেখে গেল বেড়ালের জন্যে। ইঁদুরেরা চলে যাবার পর বেড়াল খাবারগুলো পেট ভরে খেয়ে দু হাতের ওপর মাথাটা এলিয়ে দিয়ে ঘুমালো। পরের কয়েক রাতেও ইঁদুর-বেড়াল পারস্পরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি ও কর্মসূচি ঠিকঠাকভাবেই বাস্তবায়িত হলো। এখন ইঁদুরেরাও খুশি বেড়ালও খুশি। কিন্তু বেচারা দোকানদার বুঝতেই পারে নি এভাবে ‘বেড়ায় ক্ষেত খেয়ে’ যাচ্ছে। এই ঘটনা জানাজানি হয়ে গেল নিমেষেই। তারপর থেকে যখনই দুই শত্রুর মাঝে সমঝোতা হয় কিংবা দুই শত্রুর পারস্পরিক মিল হবার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারা এই প্রবাদটি উচ্চারণ করে:

‘ইঁদুর বেড়ালের সমঝোতা, দোকানদারের বারোটা’। #
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×