somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহজাহান আলী
অামি শাহজাহান অালীnসবে মাত্র এমএসএস অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করলাম। ব্যাচেলার আছি। বর্তমানে ঢাকার একটি প্রাইেভট স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছি। গল্প, কবিতা, সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসি।

জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুরা, অত্যাচারির সামনে বুক টান করে দাঁড়াতে পারলে যে মজলুমদের পক্ষেই বিজয় আসে তা ইতিহাসে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। কেবল মানুষের মধ্যেই নয়, পশু-পাখির মধ্যেও এ বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এ সম্পর্কে বহু গল্পও তৈরি হয়েছে। আজকের আসরে আমরা এ সম্পর্কেই গল্প প্রচার করেছি। এ গল্পটি নেয়া হয়েছে তেরশ শতকের বিশিষ্ট ইরানী লেখক আহমদ বিন মুহাম্মদ শিরবানীর 'তোফহাতুল ইয়ামিন' গ্রন্থ থেকে। গল্পের থাকবে একটি ছড়াগান এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর গুহা আলী সাদর্ সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য।

এক বনে বাস করত এক ঝাঁক চড়ুই পাখি। তারা ঝুপড়িতে ডিম পাড়ত এবং বাচ্চা ফোটাত। ওই বনেই বাস করত একটি হাতি। একদিন ঝুপড়ির পাশ দিয়ে নদীতে পানি খেতে আসার সময় হাতির পায়ের নিচে পড়ে কয়েকটি চড়ুই পাখির বাচ্চা মারা গেল। চড়ুইরা এ খবর পেয়ে খুবই কষ্ট পেল। তাদের একজন এ ঘটনাকে ‘ভাগ্যের লিখন' বলে এড়িয়ে যেতে চাইল। কিন্তু কাকলী নামের এক চড়ুই প্রতিবাদ করে বলে উঠলে :
কাকলী: আমি এসব মানি না। হাতি বড় প্রাণী বলে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে তা হয় না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। নইলে এই বনে আমরা কেউ বাস করতে পারব না।
কাকলীর যুক্তি ও বলিষ্ঠ বক্তব্য অন্য পাখিরা সমর্থন করল। কিন্তু কেউই হাতির অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আগ্রহ দেখাল না। এর পরিবর্তে তারা ওই বন ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যাওয়ার পক্ষে মত দিল। কিন্তু কাকলী কিছুতেই তা মেনে নিতে রাজি হলো না। সে বলল : এ বন হচ্ছে আমাদের জন্মভূমি। শত্রুর ভয়ে আমরা যদি এখান থেকে চলে যাই তাহলে আমরা আমাদের জন্মভূমির মর্যাদা রক্ষা করব কী করে? তাছাড়া অপরাধ করেছে হাতি, চলে যেতে হলে তারই যাওয়া উচিত এখান থেকে।
কাকলির পক্ষে এ সময় মুখ খুল এক বুড়ো চড়ুই। সে বলল: ঠিক বলেছো তুমি। কিন্তু অধিকার আদায় করতে গেলে তো লড়াই করতে হবে। আমরা কি হাতির সাথে লড়াই করতে পারব?
কাকলী: কেন পারব না? আমরা সবাই যদি বুদ্ধি খাটিয়ে, নিজেদের সামর্থকে কাজে লাগাই তাহলে নিশ্চয়ই হাতিকে পরাস্ত করতে পারব। তবে লড়াইয়ে নামার আগে আমি হাতিকে শেষবারের মত সাবধান করতে চাই যাতে সে আর আমাদের ঝোপঝাড়ের কাছে না আসে।
বুড়ো চড়ুই: বেশ ভাল কথা। কিন্তু হাতি যদি না মানে তখন কী করবে?
কাকলী : হাতি যদি না শোনে তাহলে তাকে এমন শিক্ষা দেব যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।

এসব আলাপ আলোচনার পর কাকলী গেল হাতির কাছে। হাতিকে পেয়ে সে বলল: এই যে হাতি! তুমি আজ ঝোঁপের পাশ দিয়ে পানি খেতে যাওয়ার সময় আমাদের ক'টি বাচ্চাকে পায়ের তলায় পিষে মেরেছে। আমি জানতে এসেছি, তুমি কি ইচ্ছে করে এমনটি করেছ নাকি ভুল করে করেছ?
হাতি : আমি ইচ্ছে করে করি আর ভুল করে করি তাতে হয়েছেটা কী? না হয় ক'টা চড়ুইর বাচ্চা মারাই গেল, তাতে দুনিয়া উল্টে গেছে নাকি?
কাকলী: না, দুনিয়া উল্টে যায়নি। কিন্তু সবাই যদি আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে একে অপরের অনিষ্ট করে চলে তাহলে নিশ্চয়ই একদিন দুনিয়া উল্টে যাবে।
হাতি: ওসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে এখান থেকে চলে যাও। নইলে তোমাদের সবাইকে আমার পায়ের নিচে পিষে মারব। জেনে রেখ, তোমার মত হাজারটা চড়ুই'র দাম আমার এক পায়ের সমানও না।
কাকলী : তুমি অনেক বড় প্রাণী-এটা আমি মানি। তবে তুমি শুধু নিজের দেহটার দিকে তাকিও না। আমরা ছোট হলেও আমাদের প্রাণেরও দাম আছে। আর তাছাড়া আমরা যদি ইচ্ছে করি তাহলে তোমার অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে পারি।
হাতি: কী বললি আমার প্রতিশোধ নিবি তোরা? হা হা হা..। ঠিকাছে তোরা যা করতে পারিস করগে। তবে মনে রাখিস আমার নামও হাতি।
কাকলী: ঠিকাছে, যাচ্ছি। তবে তুমি তোমার অহংকার ও পাপের শাস্তি শিগগিরই পাবে।
এই বলে কাকলী নিজের আস্তানায় ফিরে এসে চড়ুইদের কাছে হাতির দুর্ব্যবহারের কথা জানাল। সব শুনে পাখিরা ভীষণ ক্ষেপে গেল এবং হাতিকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় তা জানতে চাইল।
কাকলী বলল আমরা শক্তিতে হাতির সাথে পারব না ঠিকই, তবে হাতি যেহেতু উড়তে পারে না সেহেতু সে আমাদের আকাশে পিষে মারতে পারবে না। বরং আমরাই উপর থেকে নখ ও ঠোঁট দিয়ে হাতির ওপর হামলা করব। আমরা যদি হাতির চোখ ফুটো করে দিতে পারি তাহলে তার পরাজয় নিশ্চিত।

যুদ্ধের কৌশল নিয়ে আলোচনার পর সবাই মিলে একযোগে হামলা শুরু করল হাতির উপর। তারা হাতির চারপাশ ঘিরে ধরল। হাতি প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগেই পাখিরা তার চোখ ফুটো করে দিল। কিছু দেখতে না পেয়ে হাতি পাগলের মতো ছুটাছুটি করতে লাগল। এ সময় কাকলী ব্যাঙদের ডাকল এবং হাতির অত্যাচারের কাহিনী শোনাল। তারাও হাতির অত্যাচারের শিকার। হাতিকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য তারাও শপথ নিল।

এদিকে, পাখিদের হামলায় চোখ হারিয়ে ছুটাছুটি করতে গিয়ে হাতির ভীষণ পিপাসা পেল। এ সময় কাকলীর নির্দেশে সব ব্যাঙ হাতির কাছে গিয়ে 'মেঘ হো', 'মেঘ হো' বলে ডাকাডাকি শুরু করল। ব্যাঙের ডাক শুনে হাতি ভাবল, ব্যাঙ যেহেতু ডাকছে সেহেতু খুব আশপাশে নিশ্চয়ই পানি পাওয়া যাবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। পানি পাবার আশায় ব্যাঙদের শব্দ শুনে শুনে হাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। এ সময় কাকলীর নির্দেশে ব্যাঙরা পৌঁছে গেল মস্তবড় এক গর্তের পাশে। সেখানে গিয়ে ব্যাঙরা 'মেঘ হো', 'মেঘ হো' বলে চিৎকার দিতে দিতে গর্তে লাফিয়ে পড়ল। ব্যাঙের ডাক অনুসরণ করতে গিয়ে হাতিও হুড়মুড় করে পড়ে গেল গর্তে। চোখে না দেখায় শত চেষ্টা করেও আর গর্ত থেকে বের হতে পারল না। এভাবে হাতিকে উচিত শিক্ষা দিতে পেরে চড়ুই আর ব্যাঙরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

বন্ধুরা, দেখলেতো ছোট্ট চড়ুই পাখি ও ব্যাঙ কিভাবে বিশাল হাতিকে জব্দ করল? সবাই একজোট হয়ে সাহস নিয়ে মোকাবেলা করার ফলেই কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে। মজলুম ও দুর্বল মানুষও যদি অত্যাচারিদের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ায় তাহলে তাদের বিজয়ও অবশ্যম্ভাবী।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×