somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহজাহান আলী
অামি শাহজাহান অালীnসবে মাত্র এমএসএস অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করলাম। ব্যাচেলার আছি। বর্তমানে ঢাকার একটি প্রাইেভট স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছি। গল্প, কবিতা, সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসি।

নারঙ্গি কন্যা-১

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীনকালে এক বাদশা ছিল। তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিল না। অনেক চেষ্টা তদবির করেও কিছুতেই কিছু হলো না। শেষ পর্যন্ত মানত করলো: যদি একটা ছেলে সন্তানের বাবা হয় তাহলে পানির একটা হাউজকে মধু দিয়ে পূর্ণ করবে এবং আরেকটা হাউজকে পূর্ণ করবে তেল দিয়ে। যত ফকির গরিব আছে সবাই যত খুশি খাবে দাবে এবং নিয়ে যাবে। খোদার হুকুমে তার মানত কবুল হলো এবং সে একটা ছেলে সন্তানের বাবা হলো। বাদশার আনন্দ তো আর ধরে না। কী করবে না করবে ভেবে কূল পাচ্ছিল না। ছেলেকে ধাইমাদের কাছে দিয়ে দিলো ভালো করে লালন পালন করার জন্য। তার খেলাধুলার জন্য যত রকমের খেলনা দরকার ছিল সবই সংগ্রহ করে দিলো। সন্তান ঠিকঠাকমতো আদর যত্নে বেড়ে উঠলো।

এভাবে দিন যেতে যেতে শাহজাদা আঠারো বছর বয়সে উপনীত হলো। একদিন বাদশা প্রাসাদের ভেতর পায়চারি করছিল। হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়লো ছেলের ওপর। কেমন লম্বা চওড়া এবং স্মার্ট লাগছে ছেলেকে। তাঁর মনে পড়ে গেল মানতের কথা। মনে মনে বললো: আমি তো মানত করে এই সন্তানের বাবা হয়েছিলাম। কিন্তু সেই মানতের কথা বেমালুম ভুলে বসে আছি। বাদশা তাড়াতাড়ি আদেশ দিলো প্রাসাদের বাইরে বিশাল দুটি হাউজ বানানোর জন্য। বাদশার আদেশে হাউজ বানানো হলো এবং হাউজ দুটোর একটিতে মধু ঢালা হলো। মধুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল হাউজ। আরেকটি হাউজ ভর্তি করা হলো তেল দিয়ে। তারপর ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করে দেওয়া হলো: ‘বাদশা দুটি হাউজ ভর্তি করে মধু আর তেল রেখেছেন। যার যত দরকার খেয়েদেয়ে নিয়েও আসুন’।

এই ঘোষণার পর সবাই বাদশার প্রাসাদের সামনে এসে যার যত খুশি খেয়েদেয়ে নিয়েও গেল। একদিন এক বৃদ্ধ মহিলা এলো হাউজের কাছে। সে তার বাটিটা হাউজে ফেলার সময় বাদশার ছেলে ওই বৃদ্ধাকে দেখতে পেল। বৃদ্ধার পিঠ কুঁজো গিয়েছিল। এ বয়সের বৃদ্ধা একটু বেঁকে যাওয়ায় শাহজাদা তাকে দেখে হেসে দিলো। সে মজা করার জন্য ধনুকে একটি পাথর জুড়ে ছুঁড়ে মারলো। ওই পাথর গিয়ে আঘাত করলো বুড়ির বাটিতে। বাটিটা ভেঙে গেল এবং বাটির তেল ছিটকে পড়ে গেল। বুড়ি মাথা উঁচিয়ে বাদশার ছেলেকে দেখতে পেয়ে বললো: আমার মন সায় দিচ্ছে নো তোমাকে তিরস্কার করি, বদদোয়া দিই। কেননা তুমি বাদশার একমাত্র সন্তান। তবে তুমি নারঙ্গি কন্যার ফাঁদের যন্ত্রণা ভোগ করবে।

শাহজাদা এরকম নাম শুনে থমকে গেল। নারঙ্গি কন্যা আবার কে! তার যন্ত্রণা কেন ভোগ করতে হবে তাকে! এসব ভাবছিল। কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে সে বুড়িকে জিজ্ঞেস করলো: নারঙ্গি কন্যা কে আমি তো তাকে চিনি না। তুমি আমাকে একটু বলবে?

বুড়ি বললো: আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। যাও, যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো।
বুড়ির জবাব শুনে শাহজাদা হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে গেল তার মায়ের কাছে। মাকে জিজ্ঞেস করলো: নারঙ্গি কন্যা কে মা!
মা ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে ভাবলো- ছেলে এটা কোত্থেকে শুনলো। ছেলেকে জিজ্ঞেস করতেই ছেলে সবকিছু খুলে বললো মাকে।

অবশেষে রানি বললো: বাবা! এরকম বলতে শুনেছি যে, অনেক দূরের এক শহরে নাকি একটা বাগান আছে। নারঙ্গি বাগান। ওই বাগানে নাকি সবচেয়ে উন্নতমানের কমলা এবং মাল্টা পাওয়া যায়। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওই কমলা থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী কন্যার জন্ম হয়। কিন্তু শাহজাদা! এসব কথার কথা। কেননা; এ পর্যন্ত যে-ই ওই নারঙ্গি কন্যার খোঁজে গেছে সে আর ফিরে আসে নি, এসেছে তাদের মৃত্যুর খবর।

শাহজাদা বুড়ির কথায় থমকে গেলেও এখন মায়ের কথা শুনে নারঙ্গি কন্যার পিছু নেওয়ার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠলো। মাকে সে বললো: যে করেই হোক আমি যাবো এবং ওই কন্যাকে নিয়ে আসবো।
মা এখন অনুতাপ বোধ করতে লাগলো কেন সে ছেলেকে বলতে গেল। বললো: বাবা! এ কাজ খুবই ভয়ংকর। এ পর্যন্ত যারাই গেছে ফেরে নি। তোমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী বীর পালোয়ানও গিয়ে আর ফিরে আসে নি। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। ছেলে মানলোই না।

নাছোড়বান্দা ছেলে নারঙ্গি কন্যার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো। মা অগত্যা বাদশাকে গিয়ে ছেলের অবস্থার কথা জানালো। বাদশা ছেলেকে ডেকে যতভাবে সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ছেলে বাবার কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো। বাদশাহ চিন্তায় পড়ে গেল। এই ছেলেকে কীভাবে দমানো যাবে ভাবতে লাগলো। ছেলে যেহেতু যাবেই, তাই বাদশাহ বললো: ঠিক আছে, যাও! তবে তোমার সাথে কয়েকজন গোলামও নিয়ে যাও..।

কিন্তু ছেলে মানলো না। বললো একাই যাবে এবং নারঙ্গি কন্যাকে নিয়েই ফিরে আসবে।
বাদশাহ শেষ পর্যন্ত আস্তাবলরক্ষককে বললো দ্রুতগামী এবং সুঠামদেহী একটা ঘোড়া যেন ছেলেকে দেয়। একটা খোরজিন নিয়ে সফরে যা যা প্রয়োজন সবই দিলো তার ভেতর। সবকিছু ঠিকঠাকমতো নেওয়ার পর শাহজাদা রওনা হলো।
যেতে যেতে তাদের শহরের বাইরে অনেকটা দূরে যাবার পর শাহজাদা দেখতে পেল এক বৃদ্ধ লোককে। লোকটা তার সামনে এসে আবির্ভূত হলো। তাঁর চেহারা সুরত এককথায় নুরানি। শাহজাদা অবাক হয়ে গেল কী করে এই বৃদ্ধ সামনে এসে হাজির হলো। বৃদ্ধ শাহজাদার সামনে এসে বললো: যুবক! ভালো থেকো! কোথায় যাও!

শাহজাদা বললো: যাচ্ছি নারঙ্গি বাগানে। সেখানকার নারঙ্গি কন্যাকে নিয়ে আসবো।
বৃদ্ধ বললো: ভালো হয় তুমি এখান থেকেই ফিরে যাও নিজের কাজকর্মে। এই পথে বিপদের পর বিপদ আছে। জীবনটা ধ্বংস না করে ফিরে যাওয়াটাই ভালো।
শাহজাদা বললো: একথা অনেকেই বলেছে আমাকে। কিন্তু আমি যাবোই।
বৃদ্ধ বললো: ‘ঠিক আছে। আমার কথা যেহেতু শুনবেই না, তোমার সিদ্ধান্ত যেহেতু পাল্টাবেই না, তাহলে শোনো’।
এরপর বৃদ্ধ যা যা বললো শাহজাদাকে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওই বনে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কী সেসব কথা।#
চলবে........।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×