somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহজাহান আলী
অামি শাহজাহান অালীnসবে মাত্র এমএসএস অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করলাম। ব্যাচেলার আছি। বর্তমানে ঢাকার একটি প্রাইেভট স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছি। গল্প, কবিতা, সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসি।

নারঙ্গি কন্যা-২

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃদ্ধ শাহজাদাকে বললো যতদূর তুমি এসেছো, ঠিকই এসেছো। এবার তোমাকে যেতে হবে ডান দিকে। যেতে যেতে সামনে পড়বে একটা বন। বিশাল সেই বনে হিংস্র সব জন্তু জানোয়ারের বাস। তারা তোমাকে দেখতে পাবে। চেঁচামেচি করবে। তোমার দিকে দাঁত খিঁচিয়ে এগিয়ে আসতে চাইবে। তুমি সেসব দিকে একদম তাকাবে না। তোমার পথে তুমি এগিয়ে যাবে। একটা জিনিস শুধু খেয়াল রাখবে, সেটা হলো কোনোভাবেই তুমি পেছনে তাকাবে না। বন পেরিয়ে যাবার পর অনেকটা পথ গেলে পড়বে একটা বাড়ি। ওই বাড়িতে একটা ঘরের চৌকাঠে দেখবে এক বৃদ্ধ দৈত্য বসে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করবে নারঙ্গি বন কোথায়? সে তোমাকে সুন্দর করে বাতলিয়ে দেবে।

শাহজাদা খুশি হয়ে গেল। বৃদ্ধের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুনরায় পাড়ি জমালো। যেতে যেতে বন না দেখতেই হিংস্র সব প্রাণী দাঁত বের করে এগিয়ে এলো তার দিকে। শাহজাদা বৃদ্ধের কথামতো বিন্দুমাত্র ভড়কে না গিয়ে নিজের পথে এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরই পথে সেই বন পড়লো। বনের ভেতর সেই হিংস্র জানোয়ারের হাঁকডাক। সবই নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেল শাহজাদা। এভাবে বন পার হবার পর জানোয়ারের গর্জন বন্ধ হয়ে গেল। মনে মনে সে খুশি হলো এই ভেবে যে ভয়ংকর বিপদটা তাহলে কেটে গেল। এবার তাই নিশ্চিন্তে এগিয়ে যাওয়া যাবে। যেতে যেতে দেখতে পেল বুড়োর বলে দেওয়া সেই ঘর। ওই ঘরের দরোজায় বসে আছে বৃদ্ধ দৈত্য। এগিয়ে গেল সামনে এবং সালাম করলো।

দৈত্য বললো: এই ছেলে! কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত এই দৈত্যপুরিতে আসতে পারে নি। তুই কী করে এলি? পরীদের হাত থেকে তুই যেহেতু বেঁচে আসতে পেরেছিস তার মানে তোর ভাগ্যটা ভালোই। এতোসব বিপদ পেরিয়ে এসে কোথায় যেতে চাচ্ছিস?

শাহজাদা বললো: নারঙ্গি বনে যাবো। দৈত্য বললো: এ পর্যন্ত এসেছিস যেহেতু। তাই যদি আমার কথা ঠিকমতো শুনিস এবং যদি সেসব ভুলে না যাস তাহলে অবশ্যই তুই নারঙ্গি বনে পৌঁছে যাবি। এই পথ ধরে সোজা চলে যাবি উপরে। যেতে যেতে ওই পাহাড়ে পৌঁছলে দেখতে পাবি একটা কালো ঘোড়া। ঘোড়াটির লাগাম একটা গাছের সাথে বেঁধে রাখা আছে। তুই তোর নিজের ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে গিয়ে ওই কালো ঘোড়াটার লাগাম খুলে দেবে এবং নিজের ঘোড়ার লাগাম গাছের সাথে বেঁধে রাখবে।

দৈত্যের দিকনির্দেশনা শুনছিলাম আমরা। শাহজাদাকে বলছিল কালো ঘোড়ার লাগাম খুলে দিয়ে নিজের ঘোড়ার লাগাম গাছের সাথে বেঁধে রাখবে। তারপর ওই কালো ঘোড়ায় চড়বে। কালো ঘোড়া এক বছরের পথ বিদ্যুতের মতো নিমেষেই পেরিয়ে যাবে এবং তোকে নারঙ্গি বনে নিয়ে পৌঁছিয়ে দেবে। তবে বনে পৌঁছার আগে মরুপ্রান্তরে বড় একটা প্রাণী শিকার করে নিয়ে যাবে সঙ্গে করে। বনে পৌঁছার পর দেখবে মূল দরোজায় একটা অজগর সাপ ঘুমিয়ে আছে। যেন বনরক্ষক সে। তোকে দেখলেই শিকার করা প্রাণীটা অজগরের সামনে ছুঁড়ে মারবে। অজগর যখন খেতে শুরু করবে তুই ঢুকে যাবি বনের ভেতর।

ভেতরে গিয়ে দেখবি কমলা আর মাল্টা গাছের সারি। একটার মাথা আরেকটার সাথে লাগানো। প্রত্যেক গাছের গোড়ায় একেকটা দৈত্য বসে আছে। দ্রুত গাছে উঠে যাবি এবং যে কয়টা গাছে পারিস উঠে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি। পথে যে বনটি পড়েছিল সেই বনে যেমন ভয় পাসনি তেমনি এখানেও ভয় পাবি না। যত হাঁকডাক, গর্জন তর্জনই হোক পেছনে তাকাবি না। বাইরে এসেই কালো ঘোড়ার পিঠে উঠে বসবি। ঘোড়া তোকে দ্রুত নিয়ে যাবে যেখান থেকে এসেছিলি সেখানে। তাড়াতাড়ি কালো ঘোড়াকে তার জায়গায় বেঁধে রাখবি। ঘোড়াকে গাছের সাথে বাঁধলে দৈত্যরা আর তোর নাগাল পাবে না।

শাহজাদা দৈত্যের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার দিকনির্দেশনামতো রওনা হলো নারঙ্গি বনের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ের ওপরে গিয়ে ঘোড়া পাল্টিয়ে চড়ে বসতেই সাঁই করে চলে গেল কোথায় কে জানে। এতে দ্রুত চলছিল ঘোড়া, চোখও খুলতে পারছিল না সে। ঘোড়া একটা জায়গায় গিয়ে পৌছলে শাহজাদা লাগামে টান দিলো এবং গতি থামিয়ে দেখলো সামনেই নারঙ্গি বনের প্রাচীর দেখা যাচ্ছে। নেমে একটা পাহাড়ি ছাগল শিকার করে নিলো এবং অজগরকে খেতে দিয়ে ঢুকে গেল বনে। সুন্দর সারিবদ্ধ কমলা আর মাল্টা গাছে ধরেছে কমলা রঙের প্রচুর ফল। গাছের গোঁড়ায় শুয়ে আছে একেকটা দানব। শাহজাদা দ্রুত একটা গাছে উঠে কমলা ছিঁড়তেই চীৎকার উঠলো-‘ফল ছিঁড়েছে,ফল ছিঁড়েছে’। দৈত্যরা জেগে গেল। আড়মোড়া ভেঙে ওঠার আগেই আরও কয়েকটা ফল ছিঁড়ে শাহজাদা বিদ্যুৎ গতিতে নারঙ্গি বন থেকে বেরিয়ে গেল।

বেরিয়ে যাবার সময় পেছন থেকে শব্দ ভেসে আসছিল তার কানে: ফিরে এসো নৈলে মারা যাবে....। শাহজাদার মনে পড়ে গেল বৃদ্ধ দৈত্যের পরামর্শ। সে একদম তাকালোই না পেছনে। মুহূর্তের মধ্যে কালো ঘোড়া পৌঁছে গেল সেই গাছের গোঁড়ায় যেখানে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ঘোড়া থেকে নেমে ওই গাছের সাথে আবার বেঁধে রাখলো কালো ঘোড়াকে। আর তার ঘোড়াকে খুলে নিয়ে তার পিঠে চড়লো এবং ধীরে ধীরে পৌঁছে গেল বৃদ্ধ দৈত্যের ঘরের সামনে। সেই পথ দিয়েই ফেরার পথে পড়লো ভয়ংকর বন। আবারও শুনলো ভয়ংকর সব জন্তু জানোয়ারের গর্জন। কিন্তু শাহজাদা আগের মতোই সেসবে কান দিলো না, পেছনেও তাকালো না।

বন পেরিয়ে যেতে যেতে পথে পড়লো একটা ঝর্নাধারা। কলকল ধ্বনি তুলে বয়ে যাচ্ছে পানি। দুই তীরে সবুজের মেলা। শাহজাদা বিশ্রাম নিতে সেখানে থামলো। পানিতে হাতমুখ ধুয়ে বসে পকেটে হাত দিয়ে বের করলো চমৎকার কমলাগুলো। একটা কমলার খোসা ছাড়াতেই ভীষণ সুন্দরী এক কন্যা সূর্য রশ্মির মতো বেরিয়ে এসে বললো: রুটি...! শাহজাদা তার খোরজিন থেকে রুটি এনে দিলো। ওই রুটি মুখে দিতেই নারঙ্গি কন্যা মাটিতে পড়ে গিয়ে মরে গেল। বেচারার মনটাই ভেঙে গেল। আরেকটা কমলার খোসা ছাড়ালো। এবার আগেরটার চেয়েও সুন্দরী এক কন্যা বেরিয়ে এসে বললো: পানি...! শাহজাদা পানি এনে দিলো এবং সেই পানি খাওয়ার সাথে সাথে এও মারা গেল। এভাবে যতগুলো কমলা ছিল সবগুলো থেকেই সুন্দরী কন্যারা বেরিয়ে এসে মরে গেল।

একটামাত্র কমলা বাকি থাকলো। ওই কমলাটা আর ছুলতে চাইলো না সে। সেটা পকেটে নিয়েই ফিরে গেল শহরের দিকে। শহরের কাছাকাছি পৌঁছতেই দেখা হলো সেই বুড়ির সাথে যে তাকে নারঙ্গি কন্যার যন্ত্রণা ভোগের কথা বলেছিল। বুড়ি শাহজাদাকে বললো: কী খবর! নারঙ্গি বনে গেলি...? শাহজাদা সবকথা বুড়িকে খুলে বললো এবং একটি কমলা যে বাকি আছে সেকথাও বললো। বুড়ি বললো: ‘তুই যদি চাস ওই নারঙ্গি কন্যা বেঁচে থাকুক তাহলে একটা কাজ করবি’। শাহজাদা হন্তদন্ত হয়ে জানতে চাইলো: ‘কী করবো.... বলো বলো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো’।

বুড়ি বললো: ওই কন্যা বেরিয়ে এসে যা চাইবে তুই ঠিক সেটা ছাড়া অন্য কিছু একটা দিবি। রুটি চাইলে পানি দিবি, পানি চাইলে রুটি, বুঝলি?
শাহজাদার চোখে মুখে আনন্দের ছাপ ফুটে উঠলো। মনে হলো সকল কষ্ট আর উৎকণ্ঠা কেটে গেল।# (চলবে)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×