আমি লিখি সেটা আমার পরিবারের সদস্যরা জেনেছে অনেক পরে। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়া শুরু করেছে তারপর থেকে। বাবা রেগে মেগে শাসন করলেন। মা কিছু বললেন না। কিন্তু চোখ-মুখের ভঙ্গিতে বুঝালেন এটা বাদ দেয়াই ভালো। কিন্তু আমি বাদ দিতে পারলাম না। রেজাল্টও উল্টোপথে চলতে লাগলো। তবে একজন নতুন লিখিয়ের পাশে পরিবারকে না পেলেও একজন নিম্নগতির ছাত্রের পাশে পরিবারকে পেয়েছিলাম । যে কারণে একাডেমিক পড়াটা শেষ করতে পেরেছিলাম। আর লেখালেখির কারণে সমাজিক ক্যারিয়ার বা ভালো ভালো রেজাল্ট না করতে পারার রাগ সম্ভবত মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হওয়ায় বাবা-মা কিছুটা হলেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। রেজাল্টের পরপর শিক্ষক নিবন্ধনে পাশ করে একটা কলেজে জয়েন করার পর হয়তো কিছুটা মনে মনে খুশিও হয়েছিলেন। কিন্তু সেই খুশিটা বেশি দিন ধরে রাখতি পারিনি। কারণ কলেজের চাকুরিটা আমি খুব অল্প সময়ই করেছিলাম। তারপর আবার সেই ছন্নছাড়া জীবন। গন্তব্যহীন দৌড় ! কিন্তু লেখাটা চলেছে। গোপনে অথবা প্রকাশ্যে। ততদিনে ২ টা কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। সেটা পরিবারের কারো কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি একমাত্র সাহিত্য সমোঝদার ছোটমামা ছাড়া। তারপর আরো একটা একটা করে বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি তাদের কাউকে বলিনি। তারাও কেউ খবর রাখেনি। এ বছর মেলায় ছোটগল্পের বইটি নিয়ে আমার ষষ্ঠ মৌলিক বই প্রকাশিত হলো। কিন্তু আমার এলাকা কিংবা পরিবারের কেউ হয়তো জানে না। কাউকে উপহার দেওয়াও হয় না। কারণ আমার ক্যারিয়ারে বাবা-মা কিংবা আত্মীয়-স্বজনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। ছোটবেলায় পড়ালেখা কিংবা ভালো রেজাল্ট দেখে আমার কাছে তাদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিলো তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। সে কারণে আমার এই জগতটাকে তাদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে রাখা ! আমার প্রথম বইটি খুঁজলে হয়তো গ্রামের বাড়ির আমার বইয়ের আলমিরায় পাওয়া যাবে। আর পাঁচটির কোনোটি বাড়িতে থাকার সম্ভবনা নেই। এখন অনলাইনের কারণে উপজেলার দু-একজন মাঝে মধ্যে নক দেয়। অনলাইনে আমার লেখা দেখেছে। কিংবা পড়েছে। কিন্তু সেটা কখনোই আমার বাবা-মার চোখের সামনে আসে না। আমিও যেমন তাদের ছেড়ে- গ্রাম ছেড়ে শতশত মাইল দূরে থাকি কিংবা খুব কাছে থাকি। আমার লেখা কিংবা বইগুলোও হয়তো তাদের কাছে না থেকেও অনেক কাছে থাকে !
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৭