-১-
ময়েজ উদ্দিন কাজ করে সুবাং জায়ার একটি কারখানায়।
সুবাং জায়া রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। এখানে বেশ অনেক গুলো কারখানা আছে।
ময়েজ উদ্দিনের কাজ রাতের শিফটে। দিনের শিফটে কাজ চেয়েও পায়নি।
সন্ধ্যা ৭ টায় তার শিফট শুরু হয়। সারা রাত কাজ করে সকাল ৭ দিকের সে হোস্টেলে ফিরে। হোস্টেলে তার মতো কয়েক শ লোক থাকে। তারা যে খাটিয়াতে ঘুমায় সেগুলো তিন তলা। ময়েজ উদ্দিন ঘুমায় খাটের তিন তলায়। পাশের এক রেস্টুরেন্টে থেকে তাদের সকালে নাস্তা আসে। এটাকে বলে রুটি চানাই। রুটির সাথে ঝোল সহযোগে ডাল । এই অখাদ্য তার কাছে অমৃতের মতো লাগে। গপ গপ করে খেয়ে ফেলে । তারপর তার দুই চোখে নেমে আসে দুনিয়ার ঘুম।
-২-
করিমন এর এক সন্তান। ছেলে আর শাশুড়ি নিয়ে তার সংসার। রাজুর বাবা ময়েজ উদ্দিন মালয়েশিয়াতে থাকে । বছর পাচেক আগে জমি জমা বেঁচে গিয়েছে । আগে ২ মাসে প্রায় ২৫/২৬ হাজার টাকা পাঠাতো। এক পাঠায় ১৯/২০ হাজার টাকা। তবে সব সময় পাঠাতে পারে না।
সেই দেশে তার বেতন কমেনি। কিন্তু টাকার দাম কমে গেছে বলে এখন সে আগের মতো বেশী টাকা পাঠাতে পারে না। আগে ১ হাজার রিঙ্গিত পাঠাতো। এখনো তাই পাঠায়। কিন্তু দেশে এসে টাকার পরিমাণ ৭/৮ হাজার কমে যায়। সংসার চালানো তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেছে। প্রতি দিনই টাকার দরকার। জমি জমা থাকলেও তো চাল ডালের চিন্তা থাকতো না। এখন সব কিনতে হয়। করিমন বড় কষ্ট করে সংসার চালায়।
তাদের বাড়িতে কোন টিভি নেই। কারেন্টও নেই। রাজু আর তার দাদী খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়। করিমন এর ঘুম আসে না। বিছানায় এপাশ ও পাশ করতে থাকে। তার পাশে মানুষটার অভাব বোধ করে সে। আহা মানুষটা কোথায় থাকে কি ভাবে থাকে কে জানে। এক রাশ শূণ্যতা আর হাহাকার ভর করে তাকে। রাত বাড়তে থাকে। করিমনের ঘুম আর আসে না। আসে না। আসে না।
এক সময় পাশের গ্রামের মসজিদ থেকে ফজরের আজানের শব্দ ভেসে আসে। তখনো করিমনের চোখে ঘুম নেই। চোখ জ্বালাপোড়া করে।
-৩-
করিমন যখন ঘুমের জন্য এপাশ ও পাশ করছিল তখন অনেক দূরের সুবাং জায়ার একটি কারখানায় শেষ রাতে মেশিন চালাচ্ছিল ময়েজ উদ্দিন। আজ তার মনটা বড়ই বেচাইন। খুবই শূণ্যতা বোধ করছিল সে। মাঝে মাঝে সে খুবই শূণ্যতা বোধ করে। কেন এই শূণ্যতা সে বুঝতে পারে না। তার মনে হয় – সে খুবই একা। একা। তার পাশে কোন এক জন নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:১৮