আমি ঋতু কে ঈর্ষা করি, ঋতু কে আমি ঈর্ষা করি, ঠিক কবে থেকে ঈর্ষা করি মনে পরেনা, সেই তবে থেকে ঈর্ষা করি, আমার মায়ের কোলে ভাগবসানোর অপরাধে ছোটভাই অথবা আমার বাবার কাধে ছোটবোনের উপস্থিতি কে ঈর্ষা করার পর থেকে আমি ঋতুকেই ঈর্ষা করি।
ঋতু পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়, আমাদের মফস্বল শহর দীর্ঘদিন পরে আরেকটা বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্রী পাবার সম্ভাবনায় মুখর হয় কিন্তু সেজন্য আমি ঋতুকে ঈর্ষা করিনা ঋতু ফার্স্ট হলেও আরো অনেকে সেকেন্ড, থার্ড হয় আমার ওসবের দরকার নেই ঋতুর গায়ের রংটা চাপার দিকে ওফার্স্ট/সেকেন্ড হোক , আমার দুধে আলতা গায়ের রং আমাকে মেধাবী, টাকা এবং টাকওয়ালা বর ঠিকি জুটিয়ে দেবে, কে জানে তখন হয়তো আমার বর ভাগ্যে ঋতুই আমাকে ঈর্ষা করবে!!!
ঋতু কবিতা আবৃত্তি করে , বিতর্ক করে, তুখোর বক্তা হয়ে মফস্বল কলেজ আলোকিত করে (এর আগে আমরা অনেকদিন পর আরেকটা বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্রী পাই)। না না এজন্যও আমি ঋতুকে ঈর্ষা করিনা, আমি গান গাই এবং বলতে নেই বেশ ভালোই গাই, আমি যখন ভালোবাসি ভালোবাসি গাই বুঝতে পারি সব তরুনশ্রোতাকুল ভাবতে ভালোবাসে আমি তাদের উদ্দেশ্যেই গান গাইছি।
তারপরো আমি ঋতুকে ঈর্ষা করি আজ বহুদিন ধরে।
আমি যখন রাস্তার মোড়ের বখাটেদের ছুড়ে দেয়া কথায় আহত হয়ে মাথা নিচুকরে বাড়ি ফিরি ঋতু তখন তাদের কাউকে চড় মারার সাহস দেখায় বলেই আমি কি ঋতুকে ঈর্ষা করি ? হয়তো বা।
আমি যখন নতুন শাড়িতে গুজরাটি কাজ টা সুতোর কারুকাজে সূক্ষ করে তোলায় ব্যাস্ত ঋতু তখন তসলিমা নাসরীন কে কেন দেশে থাকতে দেয়া হবে না, লজ্জা কেন নিষিদ্ধ করা হবে এসব নিয়ে বিতর্কে, বিদ্রোহে ব্যাস্ত তাই হয়তো আমি ঋতুকে ঈর্ষা করি।
আমি যখন হুমায়ুন আহমেদের মৃন্ময়ীর কেন মন খারাপ সেটা বোঝার চেষ্টা করি ঋতু তখন হুমায়ুন আজাদেন নারীরা কবে মানুষ হবে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয় তাই ঋতু আমার ঈর্ষার পাত্রী।
ঋতু যখন আপাত তুচ্ছ অপরাধে(আমার কাছে তুচ্ছই মনে হয়েছিলো) দীর্ঘদিনের প্রেমিকের (ওর ভাষায় কমরেড) সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে গোপন কষ্টে আমার কাছে কাঁদতে আসে আমি তখন কাজের মেয়ে সংক্রান্ত জটিলতার পর পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে আমার স্বামীর ভাবমুর্তি কিভাবে পুনরুদ্ধার করবো , ঐ ছেনালী মাগীর-ই যে সব দোষ, জাহিদ যে কত ভালো , ওকে কিভাবে ফাসানো হয়েছে সেসব চিন্তা করতে করতে ঋতুকে ঈর্ষা করি...........................
সাংসারিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ঋতুর খবর রাখা হয় না, ঋতুকে ঈর্ষা করাও হয় না তার বদলে এখন আমি আমার সেঝো জা কে ঈর্ষা করি তার বর তাকে দেড়ভড়ী সোনার নেকলেস বানিয়ে দিয়েছে বলে অথবা আমার ছোট ননদ কে ঈর্ষা করি ওর নতুন বাড়ি দেখতে দেখতে।
দীর্ঘদিন পর ঋতুর খবর পাই ও এখন ভীষন ব্যাস্ত ওর পরনারী আসক্ত স্বামীকে ঘরমুখো করতে, ঝগড়া,কাউন্সেলিং, তাবিজ-কবজ, পানি -পড়া কিছুই বাদ রাখেনি এখন বাপের বাড়ি এসেছে সুতাবাবার সুতাপড়া নিতে এই সুতা হাতে বেধে দিলে বষিকরন নিশ্চিৎ। আমার আর ঋতুকে ঈর্ষা করার কারন থাকে না, আমি বরং ঋতুকে করুণা করতে পারি- "সেই তো মল খসালি তবে কেন লোক হাসালি"।
তারপরো আমি ঋতুকে ঈর্ষা করি ঋতু আমি হওয়ার আগে অনেকদিন মানুষ হবার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি কোনদিন ঋতু হইনি, সেদিন যদি আমরা সবাই যদি ঋতু হতাম আজ হয়তো চারপাশে এত ঋতু বা আমাকে দেখতে হোতো না। তাই আমি ঋতুকে ঈর্ষা করতে করতে নিজেকে একটু একটু ঘৃনা করি।