সূচনা পর্ব:
আরিয়ানার অবাধ্য চুলগুলো এলোমেলো বাতাসে তার মুখের ওপর পরছে, সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ গুলো তার পায়ের ওপর আছরে পরছে ঢেউগুলো যখন সরে যাচ্ছে সাথে নিয়ে যাচ্ছে পায়ের নিচের কিছু বালু মনে হচ্ছে পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে ........
পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ার ভয়ঙ্কর অনুভুতিটির সাথে আরিয়ানার পরিচয় আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে। আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে এই দিনে অরিত্র কে সিলিকন ভ্যালিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুনতে খুব হাস্যকর শোনালেও কৈশরের সেই আবেগ আজো সে মুছে ফেলতে পারেনি। সে একজন প্রথম শ্রেনীর নাগরিক, বিজ্ঞান একাডেমির তিন তারকা খচিত বিজ্ঞানি, তার জন্য প্রেম-ভালোবাসা-যৌনতা কোন কিছুর জন্যই একজন রক্ত মাংসের মানুষের দরকার নেই সে সরাসরি
মস্তিষ্কে এই অনুভুতি গুলো নিতে পারে আরো তীব্র ভাবে। এছারা বিজ্ঞান একাডেমির ৫ তারকা খচিত বিজ্ঞানী অনিশের সঙ্গে সে বেশ কয়েকবার মঙ্গলের চাঁদ থেকে ঘুরে এসেছে। কিন্তু তারপরো সে অরিত্রর জন্য এক ধরনের শুন্যতা অনুভব করে আবার এই শুন্যতাটুকুকেই তার বেচে থাকার প্রেরনা মনে হয়।
আজ থেকে দশ বছর আগে এই দিনে প্রতিপালন কেন্দ্রের রুটিন ব্রেন টেস্টে ধরা পরে যে অরিত্রর ব্রেইন ঠিকমত ডেভলপ হয়নি, সে একজন ক্যাটাগরি সি বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ন মানুষ, ক্যাটাগরি সি বুদ্ধিমত্বা আর বানরের বুদ্ধিমত্বার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। ক্যাটাগরি সি দের সিলিকন ভ্যালিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারপর সাধারনত একটা মহাকাশ যাত্রায় পাঠিয়ে দেয়া হয় বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধানে। অনন্ত কাল ধরে যে মহাকাশ যান চলতে থাকে বুদ্ধিমত্তার সন্ধানে নির্বোধ মানব আর অতি উন্নত লজিকের যন্ত্র মানব নিয়ে।
আরিয়ানা অরিত্রের জন্য তার শুন্যতা টুকু কখনো কারো সাথে শেয়ার করতে পারেনি। ভার্চুয়াল চ্যাট রূমগুলোর কোন ভার্চুয়াল চরিত্রের প্রেমে পরে আপনি উদাস হতে পারেন, বিজ্ঞান একাডেমির মাথানষ্ট পরিচালক রনের প্রেমে পরে পাগল হতেও কোন দোষ নেই এমন কী কয়েক হাজার বছর আগের টমক্রুজের প্রেমে পরে কেন ঐ সময় জন্মালাম না সেই আক্ষেপ করাটাও দোষের না। কিন্তি তিন তারকা খচিত একজন বিজ্ঞানী সি ক্যাটাগরির এক মানুষের জন্য শুন্যতা অনুভব করবে এটা খুবি হাস্যকর। সে কারো হাসির পাত্র হতে চায় ন..........
অতীতে ফেরা
আজ থেকে সুরু হয়েছে ৩ দিন ব্যাপী অতীত ফিরে দেখার আয়োজন। নাহ সময় পরিভ্রমন যানে করে কেউ অতীতে গিয়ে অতীত অনুভব করে আসে না বরং কাইটি দ্বিপে এই সময় অতীতের বিভিন্ন সময়ের আদলে বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান করা হয়। যেমন যাত্রা, নাটক, সিনেমা, হলোগ্রাফিক প্রোজেকশন, সাপের খেলা, বানরের নৃত্য, ডলফিন শো,......., জিপসি সেজে ভাগ্য গণনা, ম্যাজিক ইত্যাদি। এছাড়া পুরোনো দিনের মতন ঝুপড়ি দোকান, টং দোকানের চা, কফি, কাগজের পোটলায় মুরি মাখানো, আম আমড়া, তরল-কঠিন পাণীয়, বারবি কিউ উৎসব থেকে সাম্বা ড্যান্স, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ........
বিনোদনের নিত্যনতুন আবিষ্কার স্বত্তেও এই প্রাচীন পৃথিবীতে ফিরে যাবার আয়োজনটার জন্য মানুষ গভীর আগ্রহে সারা বছর অপেক্ষা করে। এমনকী বিজ্ঞান একাডেমির ৫ তারকা খচিত বিজ্ঞানী অনীশও অপেক্ষা করে ছিলো। গত বছর আরিয়ানার সাথে সেই তিন দিন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ তিন দিন বলা যায়। তারা এ্যাভাটার নামের একটা ত্রিমাত্রিক প্রেজেন্টেশন উপভোগ করেছিলো। তবে আরিয়ানার মাথায় গেথে গিয়েছিলো ধুম মাচালে এরপর কিছু হলেই সে ধুম ধুম বলে চিৎকার করে উঠতো......
ট্রেন স্টেশনের গেটে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ানা আর অনীশ (এই সময়টায় পরিবহন ব্যাবস্থাও পুরোনো কোন সময়ে নিয়ে যাওয়া হয় এর আগের বার যাতায়েতে ব্যাবহৃত হয়েছিলো উড়োজাহাজ, তার আগে বাইভার্বাল এবার হচ্ছে পাতাল ট্রেন তবে সবচেয়ে মজা হয়েছিলো যেবার টমটম ও ঘোড়ার গাড়ি ব্যাবহার করা হয়েছিলো)। আরিয়ানা তার টিকেট খুঁজছে । কাউন্টার দিয়ে বেরোতেই এক সুদর্শন যুবক তাদের হাতে ধরিয়ে দিলো পুরো আয়োজনের ব্রোশিয়ার।ইতঃস্তত ঘুরতে ঘুরতে তারা একটা কনসার্টে ঢুকে পরলো, এ জাতিয় কনসার্টে সাধারনত পুরোনো গান গাওয়া হয় কিন্তু এই ছেলেটা গত বছর এক অপ্রতিরোধ্য ভাইরাসের আক্রমনে ধ্বংশ হয়ে যাওয়া ম্রিকা সিটি নিয়ে গান গাইছে। গানটা শুনতে শুনতে আরিয়ানার চোখ ছল ছল করে উঠলো।
চল আরিয়ানা ত্রাতুলের জগৎ দেখে আসি বলে উঠলো অনিশ
আরিয়ানা: কী দেখবে?
অনিশ: ত্রাতুলের জগৎ, একটা ত্রিমাত্রিক এনিমেশন প্রেজেন্টেশন।
আরিয়ানা: আমার এনিমেশনে কোন আগ্রহ নেই তুমি জানো, এই মাত্র রিয়ান্ডা এস এম এস করেছে তারা "বেদের মেয়ে জোছনা" দেখেছে, সে সাজেস্ট করেছে ওটা দেখতে, ওটার একটা শো আছে ১০ মিনিট পর চলো দেখে আসি। আমি মানুষ দেখতে চাই।
অনিশ: ত্রাতুলের জগৎ এর লেখক জাফর ইকবাল।
আরিয়ানা: সে কে? নিউরোলোজিস্ট? নাম তো শুনিনি
অনিশ: নাহ। সে একজন সাইফাই লেখক। আমার প্যারেন্টস ট্রি তে তার নাম আছে মানে আমার পূর্ব পুরুষ আর কি । তার চিন্তার প্যাটার্ন টা জানতে ইচ্ছে করছে।
আরিয়ানা: চলো
আরিয়ানা এক প্যাকেট পপকর্ন ও দু কাপ কফি নিলো হলে ঢোকার প্রস্তুতি হিসেবে এবং এক রোবট ফেরিওয়ালার ঘ্যানর ঘ্যানরে অতিষ্ট হয়ে তারকাছ থেকে এক পোটলা চীনা বাদাম কিনলো, এবং শো এর ১৫ মিনিট দেরি থাকায় বাদাম চিবোতে আরম্ভ করলো। উনিশ শতকের প্রেমিকের মতন অনীশ বাদাম ছিলে দিতে লাগলো। বাদাম শেষ করে কাগজটা ফেলতে গিয়ে আরিয়ানা দেখলো সেখানে শিরোনামে বড় বড় করে লিখা বৈজ্ঞানিক কল্পগল্প আইনস্টাইন : মো: জাফর ইকবাল। কি মনে করে কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে আরিয়ানা অনিশের সাথে ত্রাতুলের জগৎ দেখতে ঢুকে গেল।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:২৯