somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:| শিক্ষিত সমাজ এবার জেগে উঠুন: অশান্ত বেরোবি ক্যাম্পাস; শনিবারের মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করলে আমরন অনশন

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিসি’র অপসারণের দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম। সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে গতকাল সোমবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশসহ ভিসির কার্যালয়ের সামনে দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ তৈরী করে দিনভর অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে। ফলে আন্দোলনের ৪র্থ দিন গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রকার ক্লাস এবং পরীক্ষা হয়নি। ভিসি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গতকাল (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চে আন্দোলনরত শিক্ষক/শিক্ষার্থীগণ বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্বদ্যিালয়ের ভিসি আব্দুল জলিল মিয়া ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর থেকেই আত্মীয়করণ ও বাণিজ্যিকরণ শুরু করেন। তার এমন কোন আত্মীয় নেই, যাকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেননি। যোগ্যতার বালাই না করেই তিনি একক সিদ্ধান্তে ইচ্ছামাফিক একের পর এক পদে নিয়োগদান অব্যাহত রেখেছেন। মেয়ে, ভাই, ভাতিজা/ভাতিজি, ভাগ্নি এবং ভায়রাসহ নিকট ও দূরাত্মীয়দের নিয়োগ দিয়ে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেছেন। সর্বশেষ মাহবুবুর রহমান নামের এক ভাইকে তিনি ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী থেকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এই ভিসি ইতিপূর্বে একসময় বলেছিলেন, তিনি শুধু ছেলেকে মেয়ে আর মেয়েকে ছেলেতে রূপান্তরিত করতে পারেন না। এছাড়া সবকিছুই করতে পারেন’। তিনি একথাটা একেবারেই সঠিক বলেছিলেন। এখন সকলেই বুঝতে পারছি-তিনি শুধু ঐ কাজটি ছাড়া বাকি সবকিছুই করতে পারেন এবং করে দেখিয়েছেনও। বিশ্বদ্যিালয়ে এমন কোন জঘন্য কাজ নেই যা তিনি করেননি এবং করছেন না। ২শ’ এর অধিক আত্মিয়-স্বজনকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নিজে নিয়োগ বোর্ডের প্রধান হয়ে মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন- যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর বিষয়। আন্দোলনরত শিক্ষকগণ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোন অনুষদের ডিন হবেন সংশ্লিষ্ট অনুষদভুক্ত বিভাগ সমূহের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক। অধ্যাপক না থাকলে জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক। কিন্তু সেই আইনকে ভঙ্গ করে দু’জন সহযোগী অধ্যাপককে ডিঙ্গিয়ে ভিসি তার আপন ভায়রা ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ডিন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিন ভায়রা মিলে নিয়োগ বোর্ড করে নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্বদ্যিালয়ে ভিসির পক্ষে অবৈধ সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ২১(জ) ধারা অনুযায়ী ড. সৈয়দ শামছুজ্জামান (সাবেক পরিচালক আরডিআরএস-রংপুর) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। কিন্তু তিনি প্রায় ৬ মাস থেকে ওই পদে না থাকলেও তাকে সিন্ডিকেট সদস্য করে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেট প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ/বাছাই বোর্ডের সদস্য হিসাবে দায়িত্বপালন করে যাচ্ছেন তিনি। আইন ভঙ্গ করে অব্যাহতভাবে শিক্ষাবাণিজ্য চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের সুপারিশকৃত না হয়েও ‘নর্থ বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিস’ (নিইডস) নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন ক্ষমতার দাপটে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক করা হয়েছে ড. সৈয়দ শামছুজ্জামানকে। সদস্য হিসাবে ভিসি আব্দুল জলিল মিয়া এবং তার মেয়ে রয়েছেন। নির্দেশিকায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন না হলেও সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করবে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ২৭(১) ধারার পরিপন্থী। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো মাস্টার্স কোর্চ চালু না হলেও নিডস নামের ওই প্রতিষ্ঠানটিতে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে শুধুমাত্র ভিসি এবং তার মেয়ে সম্পৃক্ত থাকার কারনে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বেসরকারী কলেজে সম্মান কোর্স চালু করতে হলে ৩ হাজার বই থাকা প্রয়োজন। অথচ নিডস নামের ঐ প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৯শ’ বই দেখিয়েই সম্মান ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। যেসব বিভাগে শিক্ষক/কর্মচারীর প্রয়োজন নেই, সেসব বিভাগেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়ে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৯(১) ধারা অনুযায়ী বছরে ন্যূনতম একবার করে সিনেট সভা হওয়ার কথা থাকলেও বিগত ৪ বছরে কোন সিনেট সভা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কর্তৃপক্ষকে অসচেতন করে রাখা হয়েছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চার বছরেও কোন বিধি, সংবিধি, প্রবিধি ও কোনরূপ নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। চার বছরে শিক্ষার্থীদের মেধা গঠনে ভূমিকা রাখে এমন কিছুই করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা সম্মান শ্রেণীর কোর্স শেষ করতে চলছে কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। আবাসিক হল, মসজিদের ব্যবস্থা চালু হয়নি। বাসের সংখ্যা একেবারেই কম। বক্তাগণ ভিসিকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবী জানিয়ে বলেন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে প্রায় ৭ কোটিরও অধিক টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ বেতন দেয়া হচ্ছে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে। ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত এত বিপুল পরিমাণ টাকা কোন খাতে এবং কোথায় খরচ করা হয়েছে তা তিনি ছাড়া কেউই জানেন না। তারা আরও বলেন, শোনা গেছে ভিসি এবং তার পরিবারের সকলের পাসপোর্ট করা হয়েছে কানাডায় যাওয়ার জন্য। এটা তার পালাবার প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে টাকার পাহাড় গড়ে তিনি এখন পালাবার ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু সে সুযোগ তারা দেবেন না বলে হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করে তার অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন শিক্ষকদের মধ্যে ড. মতিউর রহমান, ড. আরএম হাফিজুর রহমান সেলিম, ড. তুহিন ওয়াদুদ, আপেল মাহমুদ, গোলাম রব্বানী, আশরাফুল আলমসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হযরত বেলাল, সাইফুর রহমান লিমন, তাজিমুল ইসলাম, রাকিবুল হাসন রিপন, সালেহীন আল ইসলাম প্রমুখ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শনিবারের মধ্যে পদত্যাগ না করলে রবিবার থেকে ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ গণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

এদিকে মঙ্গলবার ভিসি অপসারণের দাবিতে করা গণ-অনশনে ককটেল ফুটিয়েছে দুর্বৃত্তরা ।

সকাল ১০ টার সময় থেকে ঘোষিত কর্মসূচি শুরু হয় । প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট ও ১২টার সময় থেকে গণ-অনশন করে সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা । গণ-অনশন চলাকালে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করে দুর্বৃত্তরা । এতে ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্র আহত হয় ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, সকাল ১১ টার সময় কারমাইকেল কলেজের কিছু ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল করে । তারা বিভিন্ন স্লোগান ও উস্কানি মূলক কাজ করে ।

আন্দোলনকারী প্রশ্ন করে বলেন, ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে যেখানে পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে সেখানে কিভাবে কারমাইকেল কলেজের ছাত্রলীগ কিভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং কার অনুমতিতে মিছিল করে । তাদের কে লালিয়ে দিয়েছে, তাদের স্বার্থই বা কি ?

দুপুর ২টার সময় আগামী দিনের কার্যক্রম ঘোষণা করে আন্দেলনকারীরা। সরকারী ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও বুধবারও ১০ টার সময় থেকে গণ অনশণ এবং ১২ টার সময় ভিসির কুশ-পুত্তলিকা দাহ কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়া হয়।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×