ডেইলি স্টারে সংবাদ এসেছে যে এখনও আওয়ামীলীগ বিএনপির চেয়ে ভোটে এগিয়ে। যদিও এই সংবাদের সত্যতা ও জরিপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তারপরও এই পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করেই আমি ভোট ও আসনের রাজনীতির তুলনামূলক একটি চিত্র তুলে ধরতে প্রবৃত্ত হলাম। আওয়ামীলীগের ভোট ৪২% দেখানো হয়েছে আর ৩৯% বিএনপির। আওয়ামীলীগের ভোট ৪০% এর কাছাকাছি থাকে যেকোনো সময় আমি যতদূর জানি। যেমনঃ ২০০১ এর নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও ভোট কিন্তু ৪০.৫% ছিল। বিষয়টি লক্ষণীয়। আর বিএনপির ভোট ছিল ৪২%, যদিও তারা দুই তৃতীয়াংশ আসন লাভ করেছিলো। আর আওয়ামীলীগ মাত্র ৬০টি। অবশ্য বিএনপির সাথে জামাতের ৭% ভোট ছিল। সব মিলিয়ে ৪ দলীয় জোট মোট ৫০% ভোট পায়। আর আসন পায় সম্ভবত ২২৪ টি শেষ পর্যন্ত। তাহলে কম ভোট পেয়েও বিএনপির ক্ষমতায় আসার ভালো সুযোগ রয়েছে। এমনকি জামাত বিএনপির সাথে থাকলে ৩৯% ভোট নিয়েই ১৫০এর বেশি আসন দখল করা বিএনপির জন্য অসম্ভব নয়। কিন্তু আওয়ামীলীগের জন্য ৪২% ভোটের দখলই যথেষ্ট নয় বলে প্রমাণ হতে পারে। ২০০১ সালের নির্বাচন একটি কারণে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বাইরে ছোট দলগুলোর ভোট আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছিলো। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের ভোট অনেক বেড়েছিল, যদিও আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে ছিল। তার আগে ১৯৯৬ সালে ৩৮% ভোট পেয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে, তাদের প্রথমেই ১৪৬ আসন ছিল। অথচ ৩৩% ভোট পেয়েও বিএনপির আসন ছিল ১১৬ টি। অথচ এই ক্রুসাল ৫% ভোটের ব্যবধানে আসনের ব্যবধান হওয়া উচিৎ ছিল আরও অনেক বেশি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয়েই ৩১% ভোট পায়। কিন্তু বিএনপি পায় ১৪০ আসন আর আওয়ামীলীগ পায় মাত্র ৮৮ টি। অর্থাৎ আওয়ামীলীগের জন্য অল্প ব্যবধানে এগিয়ে থাকা মানেও আসনের রাজনীতিতে অনেক পিছিয়ে থাকা। অবশ্য ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও মহাজোট প্রায় ৬০% ভোট পায়। আওয়ামীলীগ ২৫৩ আসনে অংশ নিয়েই ৪৯% ভোট পায়। মহাজোটের মোট আসন হয় ২৬৬ টি। ব্যবধান বেশি হওয়ায় কোন তুলনাই চলেনা দুই দলে। তবুও বিএনপি ৩৩% ভোট পায়। এখন জামাতের ভোট যদি ৫-৬% ও থাকে তবুও ৪৫% এর উপরে ভোট আছে বিএনপির, এমনকি এরচে বেশি হবার সম্ভাবনাই বেশি। তাই আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসার জন্য অতি অবশ্যই জাতীয় পার্টির শরণাপন্ন হতে হবে। যদি তাই হয় আর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হয় তাহলে আশা করা যায় ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তারপরেও বিএনপিকে এগিয়ে রাখছি। সরকারের এখন দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ানো দরকার। সেখানে ১৯ তম কাউঞ্চিল একটা ভালো সুযোগ ছিল যেখানে ত্যাগী নেতাদের প্রেসিডিয়ামে স্থান দিয়ে দলকে চাঙ্গা করা যেতো এবং তাতে ভোট কিছু বাড়ত। শেখ হাসিনা সুযোগ হেলায় হারালেন। আর বিএনপির বাঁচাল, তুলনামূলক কম প্রভাবশীল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগিরকে জেলে রেখে বিএনপির ভোট ব্যাংক অযথাই বড় করার সুযোগ দিচ্ছেন। কারণ আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির সাথে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখনও অংশগ্রহণ করেনি। এমুহূর্তে আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক বড় করার জন্য কাজ করতে হবে। আওয়ামীলীগের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করলেও কমপক্ষে ৪৩-৪৫% ভোট ম্যানেজ করতে হবে। তাহলে হয়তো ১৫০ আসন পেলেও অবাক হবার কিছুই থাকবেনা। কিন্তু এমন পরিসংখ্যানে আশান্বিত হবার কিছুই নেই, ২০০১ সালে এরচে ভালো অবস্থায় থেকেও আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হয়েছিলো। অবশ্য তখন আওয়ামীলীগের একক নির্বাচনের বদলে এরশাদকে নিয়ে ইলেকশন করলে বিএনপির ক্ষমতায় আসতে বেগ পেতে হতো।
আর আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ভোট ও আসনের ব্যবধান হবার কিছু কারণ আছে। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা কম হলেও বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পয়েন্ট আকারে আমি কারণগুলি তুলে ধরছি।
১) বাংলাদেশের ৩০০ আসনেই আওয়ামীলীগ যেকোনো নির্বাচনে হয় প্রথম হবে, নাহলে দ্বিতীয় হবে। অতএব দেশের সবখানেই আওয়ামীলীগের ভোট আছে। কিন্তু বিএনপির ভোট সবখানে নেই। রংপুর ব্লক, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সিলেটের কিছু জায়গায় বিএনপি খুবই দুর্বল।
২) কিন্তু যেখানে বিএনপির ভোট আছে সেসব আসনের অধিকাংশই বিএনপির ভোটের ক্ষীণ প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগের আসনগুলো দেখলেই তা বুঝা যায়। তাই সর্বোপরি আওয়ামীলীগ ভোট বেশি পেলেও তাদের ১ম স্থানের বদলে ২য় স্থানে বেশি দেখা যায়। আর বিএনপি সর্বোপরি কম ভোট পেলেও যেখানে তাদের ভোট আছে সেখানে বেশিরভাগ তারা ১ম স্থান পায়। এটাই বিএনপির মূল শক্তি।
৩) আওয়ামীলীগের এমন কিছু আসন আছে যেখানে তারা ৯৫% এর বেশি ভোট পায়। বিএনপির এমন কোন আসন নেই। খালেদা জিয়ার বিপক্ষেও আওয়ামীলীগ প্রার্থী ২৫%+ ভোট পেয়েছে সাম্প্রতিককালে। তাই আওয়ামীলীগের ভোট বেশি, কিন্তু আসন কম।
তবে আওয়ামীলীগের জন্য আশার খবর যে এমন কিছু জায়গা থেকে এবার আওয়ামীলীগের আসন পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে যেখানে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে জেতার কথা আওয়ামীলীগ আগে কোনোদিন ভাবেনি। রংপুরে আওয়ামীলীগ এখন জাতীয় পার্টির টুটি চিপে ধরেছে। তাই বিএনপির জন্য তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হলেও ক্ষমতায় যাওয়া খুব সহজ হবে সে কথা বলার কোন অবকাশ নেই।