somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেইলি স্টারের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট ও আসনের রাজনীতির একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেইলি স্টারে সংবাদ এসেছে যে এখনও আওয়ামীলীগ বিএনপির চেয়ে ভোটে এগিয়ে। যদিও এই সংবাদের সত্যতা ও জরিপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তারপরও এই পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করেই আমি ভোট ও আসনের রাজনীতির তুলনামূলক একটি চিত্র তুলে ধরতে প্রবৃত্ত হলাম। আওয়ামীলীগের ভোট ৪২% দেখানো হয়েছে আর ৩৯% বিএনপির। আওয়ামীলীগের ভোট ৪০% এর কাছাকাছি থাকে যেকোনো সময় আমি যতদূর জানি। যেমনঃ ২০০১ এর নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও ভোট কিন্তু ৪০.৫% ছিল। বিষয়টি লক্ষণীয়। আর বিএনপির ভোট ছিল ৪২%, যদিও তারা দুই তৃতীয়াংশ আসন লাভ করেছিলো। আর আওয়ামীলীগ মাত্র ৬০টি। অবশ্য বিএনপির সাথে জামাতের ৭% ভোট ছিল। সব মিলিয়ে ৪ দলীয় জোট মোট ৫০% ভোট পায়। আর আসন পায় সম্ভবত ২২৪ টি শেষ পর্যন্ত। তাহলে কম ভোট পেয়েও বিএনপির ক্ষমতায় আসার ভালো সুযোগ রয়েছে। এমনকি জামাত বিএনপির সাথে থাকলে ৩৯% ভোট নিয়েই ১৫০এর বেশি আসন দখল করা বিএনপির জন্য অসম্ভব নয়। কিন্তু আওয়ামীলীগের জন্য ৪২% ভোটের দখলই যথেষ্ট নয় বলে প্রমাণ হতে পারে। ২০০১ সালের নির্বাচন একটি কারণে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বাইরে ছোট দলগুলোর ভোট আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছিলো। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের ভোট অনেক বেড়েছিল, যদিও আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে ছিল। তার আগে ১৯৯৬ সালে ৩৮% ভোট পেয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে, তাদের প্রথমেই ১৪৬ আসন ছিল। অথচ ৩৩% ভোট পেয়েও বিএনপির আসন ছিল ১১৬ টি। অথচ এই ক্রুসাল ৫% ভোটের ব্যবধানে আসনের ব্যবধান হওয়া উচিৎ ছিল আরও অনেক বেশি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয়েই ৩১% ভোট পায়। কিন্তু বিএনপি পায় ১৪০ আসন আর আওয়ামীলীগ পায় মাত্র ৮৮ টি। অর্থাৎ আওয়ামীলীগের জন্য অল্প ব্যবধানে এগিয়ে থাকা মানেও আসনের রাজনীতিতে অনেক পিছিয়ে থাকা। অবশ্য ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও মহাজোট প্রায় ৬০% ভোট পায়। আওয়ামীলীগ ২৫৩ আসনে অংশ নিয়েই ৪৯% ভোট পায়। মহাজোটের মোট আসন হয় ২৬৬ টি। ব্যবধান বেশি হওয়ায় কোন তুলনাই চলেনা দুই দলে। তবুও বিএনপি ৩৩% ভোট পায়। এখন জামাতের ভোট যদি ৫-৬% ও থাকে তবুও ৪৫% এর উপরে ভোট আছে বিএনপির, এমনকি এরচে বেশি হবার সম্ভাবনাই বেশি। তাই আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসার জন্য অতি অবশ্যই জাতীয় পার্টির শরণাপন্ন হতে হবে। যদি তাই হয় আর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হয় তাহলে আশা করা যায় ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তারপরেও বিএনপিকে এগিয়ে রাখছি। সরকারের এখন দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ানো দরকার। সেখানে ১৯ তম কাউঞ্চিল একটা ভালো সুযোগ ছিল যেখানে ত্যাগী নেতাদের প্রেসিডিয়ামে স্থান দিয়ে দলকে চাঙ্গা করা যেতো এবং তাতে ভোট কিছু বাড়ত। শেখ হাসিনা সুযোগ হেলায় হারালেন। আর বিএনপির বাঁচাল, তুলনামূলক কম প্রভাবশীল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগিরকে জেলে রেখে বিএনপির ভোট ব্যাংক অযথাই বড় করার সুযোগ দিচ্ছেন। কারণ আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির সাথে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখনও অংশগ্রহণ করেনি। এমুহূর্তে আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক বড় করার জন্য কাজ করতে হবে। আওয়ামীলীগের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করলেও কমপক্ষে ৪৩-৪৫% ভোট ম্যানেজ করতে হবে। তাহলে হয়তো ১৫০ আসন পেলেও অবাক হবার কিছুই থাকবেনা। কিন্তু এমন পরিসংখ্যানে আশান্বিত হবার কিছুই নেই, ২০০১ সালে এরচে ভালো অবস্থায় থেকেও আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হয়েছিলো। অবশ্য তখন আওয়ামীলীগের একক নির্বাচনের বদলে এরশাদকে নিয়ে ইলেকশন করলে বিএনপির ক্ষমতায় আসতে বেগ পেতে হতো।
আর আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ভোট ও আসনের ব্যবধান হবার কিছু কারণ আছে। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা কম হলেও বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পয়েন্ট আকারে আমি কারণগুলি তুলে ধরছি।

১) বাংলাদেশের ৩০০ আসনেই আওয়ামীলীগ যেকোনো নির্বাচনে হয় প্রথম হবে, নাহলে দ্বিতীয় হবে। অতএব দেশের সবখানেই আওয়ামীলীগের ভোট আছে। কিন্তু বিএনপির ভোট সবখানে নেই। রংপুর ব্লক, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সিলেটের কিছু জায়গায় বিএনপি খুবই দুর্বল।
২) কিন্তু যেখানে বিএনপির ভোট আছে সেসব আসনের অধিকাংশই বিএনপির ভোটের ক্ষীণ প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগের আসনগুলো দেখলেই তা বুঝা যায়। তাই সর্বোপরি আওয়ামীলীগ ভোট বেশি পেলেও তাদের ১ম স্থানের বদলে ২য় স্থানে বেশি দেখা যায়। আর বিএনপি সর্বোপরি কম ভোট পেলেও যেখানে তাদের ভোট আছে সেখানে বেশিরভাগ তারা ১ম স্থান পায়। এটাই বিএনপির মূল শক্তি।
৩) আওয়ামীলীগের এমন কিছু আসন আছে যেখানে তারা ৯৫% এর বেশি ভোট পায়। বিএনপির এমন কোন আসন নেই। খালেদা জিয়ার বিপক্ষেও আওয়ামীলীগ প্রার্থী ২৫%+ ভোট পেয়েছে সাম্প্রতিককালে। তাই আওয়ামীলীগের ভোট বেশি, কিন্তু আসন কম।

তবে আওয়ামীলীগের জন্য আশার খবর যে এমন কিছু জায়গা থেকে এবার আওয়ামীলীগের আসন পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে যেখানে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে জেতার কথা আওয়ামীলীগ আগে কোনোদিন ভাবেনি। রংপুরে আওয়ামীলীগ এখন জাতীয় পার্টির টুটি চিপে ধরেছে। তাই বিএনপির জন্য তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হলেও ক্ষমতায় যাওয়া খুব সহজ হবে সে কথা বলার কোন অবকাশ নেই।
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×