বইমেলাতে বিদেশি লেখকদের লেখা বাংলা বই নিষিদ্ধ করা একটি অসাধারণ উদ্যোগ বলে আমার মনে হয়েছে। তার পূর্বে এই স্ট্যাটাস দেবার পিছনে যে কারণ তা বলে নেই। ফেসবুকে এবং ব্লগে এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন অনেকে। আমি তাদের সুনির্দিষ্ট করতে চাইনা তবে আমার মনে হয়েছে এর বিরোধিতাকারীরা ফেসবুকে শুধুমাত্র বিরোধিতা করার জন্যই এসেছেন অথবা এটাই তাদের পেশা। সে যাই হোক যাদের আমি এইসব স্ট্যাটাস দিতে দেখলাম তাদের প্রায় প্রত্যেকেই দিনরাত দেশ, দেশের সার্বভৌমত্ব, সাম্প্রদায়িকতা এই সমস্ত গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে জাতিকে জ্ঞান দেয়। সেটা ভালো। খারাপ না। এখন কথা হচ্ছে যারা ফেসবুকের মতো পাবলিক প্লেসে এতো জ্ঞান বিতরণ করে যাচ্ছেন তাদের কয়জন সেসব বুঝেন বা ভালো জানেন নাকি হুজুগের বান্দা? একুশের বইমেলা একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। এখানে নতুন লেখকদের উঠে আসার দারুণ সুযোগ থাকে। পরিচিত আর সেলিব্রেটি লেখক তো আছেই। এখন কথা হচ্ছে বিদেশি তথা কোলকাতার লেখকদের বই এখানে আসলে ক্ষতিটা কি? ক্ষতি হচ্ছে ওদের মধ্যে লেখার প্রবণতা বেশি। সেজন্য দ্যাখা যায় আমাদের দেশের বইমেলায় ওদের লেখকদের প্রচুর বই আসে এবং ভালো বিক্রি হয়। এমন এক সময় ছিল যখন এদেশের লেখকদের বইই চলতোনা। হুমায়ুন আহমেদের অনেকটা একক অবদানে সেই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। তারপরেও এখনো মেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই কোলকাতার লেখকদের। তাতে কি হয়, প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যায়, পাঠক এতো হাজার হাজার বই থেকে যেসব বই চেনে সেগুলোর দিকেই বেশি নজর দেয়। আর ৭০ এর আগে বাংলা সাহিত্যে এপার বাংলার অবদান খুব সীমিত। তাই রবীন্দ্র, শরত এমনকি অধুনা সুনীল, সমরেশ, সিরসেন্দু ধুমসে বিক্রি হয়। অথচ নতুন বাংলাদেশী লেখকদের মৌলিক বই চোখেই পড়েনা। গত বইমেলায় আমার এক প্রতিবেশীর ৫০০ কপি বইয়ের ১ কপিও বিক্রি হয়নি। প্রথম বই তার, ভদ্রলোক এতোই দুঃখ পেয়েছেন যে লেখা ছেড়েই দিয়েছেন। তো এমন ঘটনা ঘটছে। বইমেলার যে উদ্দেশ্য আমাদের দেশের লেখকদের , বিশেষ করে নবীন লেখকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা সেটা আজ অবধি করা যায়নি তার মূল কারণ বিদেশি বই। আমি একথা বলছি না আমাদের দেশের লেখকদের লেখা মানসম্পন্ন নয়, তবে কোলকাতার বই না আসলে আমাদের লেখকরা যারা সারা বছর বা কয়েক বছর পরিশ্রম করে একটা বই সম্পূর্ণ করেন পাঠকদের নজর কিছুটা হলেও তাদের দিকে ফিরবে। প্রকাশকরা বিদেশি বস্তাপচা পুরান বই বেঁচে দুটাকা কামাতে চায়, নতুন লেখকদের লেখা পড়েই দেখেন না (হুমায়ুন আহমেদ নিজে এই ঘটনার স্বীকার। তাঁর লেখা কি মানসম্পন্ন ছিলোনা?) এখন তারা এসব লেখা পড়তে ও ছাপাতে বাধ্য হবে। তাহলে আমাদের ফেসবুকের কবি, ব্লগের হাজার হাজার হিট খাওয়া ব্লগাররা বই লিখতে পারবেন। আমাদের সাহিত্যের কিছু উপকার হবে। আর হ্যাঁ। আপনার যেকোনো লেখা পড়ার অধিকার আছে। সুনীলের বই পড়বেন, যান নীলক্ষেত। অহরহ পাবেন। পাবেন না এমন তো নয়। শুধুমাত্র একুশের বইমেলায় বাংলাদেশের লেখকদের একটু প্রিভিলেজ দেয়া সেটা কোন অন্যায় নয়। সেটা একটি প্রগতিশীল সিদ্ধান্ত।
একুশের বইমেলায় বিদেশি লেখকদের বই প্রবেশ করতে না দেয়া একটি অসাধারণ উদ্যোগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন
সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?
আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?
রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন