গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া বোমা হামলা হয়। এই হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত দেড় শতাধিক। হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৩ সেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই বোমা হামলা থেকে প্রতিয়মান হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হয়ে আবির্ভাব হয়েছে আইএস (খোরাসান)। গতকালের এই বোমা হামলা ইঙ্গিত দেয় যে আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে নাই। তালেবানের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ এই আইএস (খোরাসান)। এই বোমা হামলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। আমেরিকার আফগানিস্তান ত্যাগের প্রক্রিয়া নিয়েও দেশের ভিতরে এবং বাইরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত কয়েকদিন ধরে অনেক সমালোচিত হয়েছেন। গত কয়েকদিনের কাবুল বিমান বন্দরের দৃশ্যই সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে যে আমেরিকার প্রস্থানের অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আফগান জনগণ দিশেহারা। তালেবানের সাথে সমঝোতায় আসার কারণে যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার মতো অবস্থায় নাই। কারণ যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার জন্যই তারা তালেবানের সাথে চুক্তিতে গিয়েছিলো। এখন আবার যুদ্ধংদেহী রূপ গ্রহণ করলে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ অ্যামেরিকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভুল বার্তা পেতে পারে।
এতো ঘটা করে আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার সময় নতুন করে আক্রমনের পরিকল্পনা বাইডেন প্রশাসনকে আরও অধিক সমালোচনার মুখে ফেলবে। যদিও বাইডেন বলেছেন যে এই আক্রমনে জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরেই বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল প্রতিশোধ মূলক আক্রমনের পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নেবে। এই মুহূর্তে বাইডেন অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন কারণ পাল্টা অভিযান হবে কি হবে না এই বিষয়ে তাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অভিযান চালানো হলে তার পরিণতি কি হবে সেটাও আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। বাইডেনের সিদ্ধান্তের উপরে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া যেমন নির্ভরশীল তেমনি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের আবেগ এবং মর্যাদার সাথেও এই সিদ্ধান্ত জড়িত। ২০১১ সালের পরে এই বোমা হামলা থেকেই সব চেয়ে বেশী সংখ্যক মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। ইতিমধ্যে রিপাবলিকান দলের সদস্যরা বাইডেনের পদত্যাগ চেয়েছেন। অনেকে অভিশংসন চেয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন তালেবানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনালড ট্রাম্প। সেই ট্রাম্প সাহেবও এই ব্যাপারে বাইডেনকে সমালোচনা করে যাচ্ছেন।
মনে হচ্ছে তালেবানের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হোল এই আইএস বাহিনী। আইএস একটি অবৈধ বাহিনী যার কোন দেশ বা স্বীকৃত ভূখণ্ড নাই। তাই কোন আন্তর্জাতিক আইন-কানুন, শিষ্টাচারের তারা ধার ধারে না। এরা প্রয়োজনে সম্মুখ যুদ্ধ করে আবার প্রয়োজনে গেরিলা যুদ্ধের পথে চলে। যে কোন অনৈতিক যুদ্ধ কৌশল নিতেও তাদের বিন্দু মাত্র দ্বিধা নাই। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি এদের সমর্থন না দিলেও অনেক রাষ্ট্রে এদের প্রচুর সমর্থক আছে। বিশেষত অনেক আরব দেশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত সহ এশিয়ার অনেক দেশে এদের শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। এরা আইএসকে অর্থ, অস্ত্র এবং নৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে। গতকালের ঘটনার আগেও গত কয়েক বছরে একাধিক বার আইএস আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন পরিস্থিতি আসলে তালেবান বা যুক্তরাষ্ট্র কারও হাতেই নেই। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য শক্তিশালী ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমুহ, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মাঝখান দিয়ে রক্ত ঝরছে আফগানিস্তানের নিরীহ জনগণের। জীবনের নিরাপত্তার পাশাপাশি চরম অর্থনৈতিক কষ্টে আছে দেশটির জনগণ। জাতিসংঘ বলে একটা সমিতির মতো আছে। এরা কি করছে সেটাও পরিষ্কার না। এই অঞ্চলে দ্রুত শান্তি ফিরে আসুক এই কামনা করছি।
ছবি - aljazeera.com
সূত্র- প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:০৬