ফেসবুক সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই দিন যাবত একরাম হত্যাকান্ডের প্রকাশিত অডিও নিয়ে মানুষ হতাশামূলক স্টাটাস প্রসব করছেন। বিশ্বাস করুন আমি একবার মাত্র অডিওটা শুনেছি। দ্বিতীয়বার শুনারমত ধৈর্য আমার ছিলোনা। কেউ হয়ত এমন অডিও দ্বিতীয় বার শুনতে চাইবেনা। কখনো না।
অডিওটা শুনে অনেকের ভিতর নানা প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এমন কিছু প্রতিক্রিয়া হয়েছে যা সবার সাথে এক বিন্দুতে মিলে যায়। কিছু প্রতিক্রিয়া:
একরামের দিক থেকে:
(ক) একরাম জানত নিশ্চিত সে ক্রুশ (ক্রস)! ফায়ায়ে মারা যাবে।
(খ) একজন বাবা হিসেবে সন্তানদের কে মৃত্যুর আগ মহুর্ত পর্যন্ত আগলে রাখতে চেয়েছেন। সন্তানরা যাতে কষ্ট না পান সেজন্য মৃত্যুর কথা অতি কষ্টে গোপন রেখেছেন! তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় কথা বলেছেন। তার গলা ধরে.. আসছিলো।
আকরামের ভাগ্য ভালো... পরিবারের সাথে শেষ বারের মত কথা বলতে পেরেছেন! (এমন কথা উচ্চারণ করার জন্য মাফ চেয়ে নিচ্ছি)। কিন্তু এমন হাজারো একরাম ক্রস ফায়ায়ে মরেছেন যারা পরিবারের সাথে শেষ বারের মত কথা বলতে পারেনি! সেদিক দিয়ে একরাম ভাগ্যমান!
(খ) সে হয়ত জানত বাসার ফোনে অটো কল রেকডিং হয়। সেজন্য লাইন বিছিন্ন করেনি।
অথবা, সে নিশ্চিত মৃত্যুজনিত চাপের কারণে ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করতে ভুলে গেছেন।
অথবা, ঘাতক বাহিনী চেয়েছে তার মৃত্যুটা যেন পরিবার কে সাক্ষী রেখে করা হয়।
আকরামের পরিবার দিক থেকে:
অফ নো....... আমারো দুইটি মেয়ে আছে........। পরিবার আছে......। এমন অনুভূতি বলার ভাষা আমার জানা নেই। সব কিছু বলার ভাষা থাকতে নেই। এদেশে অনেকে ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছে, তাদের পরিবার, সন্তানদের দিকে শুধু একটিবার নিজের পরিবার মনে করে তাকালেই সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।
র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে:
(ক) ক্লাইম্যাক্স ঠিক মতই চলছিলো। শিকার ধরতে কষ্ট হয়নি। শিকার এখন খাঁচায় বন্ধি। শিকার নিয়ে দুই চারজন লুতুপুতু খেলছিলো। শিকার ধরে লুতুপুতু খেলা তাদের কাছে মোয়া ভাত। শিকার ধরে লুতুপুতু খেলা কারো কারো সখ।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ গেডির রগ দেখে নিচ্ছে। রগ যদি ফুলে উঠে তাহলে শিকার কে কষ্ট দিয়ে মারার দরকার নেই, জাষ্ট ফায়ারিং - এই নীতি মেনে চলেন নতুন মেজর স্যার।। আজকে শিকারের রগ একটা দেখা যাচ্ছে, আরেকটা লাফাচ্ছে । একজন সদস্য সে রগে বেয়ানট স্পর্শ করে রক্তের গরম মাপার চেষ্টা করছেন। শিকারের ভিতর থেকে জোড়ে জোড়ে বাতাস বের হচ্ছে। অপর একজন মন্তব্য করল, সে মনে হয় এম্নিতেই বেশি কষ্ট পাচ্ছে। কি দরকার এতো কষ্ট পাওয়ার! আল্লাহ্র মাল আল্লাহর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি -এই যা। পাশে অপর জনের হাত নিশপিশ করছে, তার হাত বারবার টিগারে চলে যাচ্ছে। কাছে বসা একজন বুকে হাত দিয়ে ছাতি মাপছেন। তার হাতে চায়না অটোমেটিক রাইফেল। এই রাইফেল দিয়ে বুকের ছাতি ভেদ করা কোন ব্যাপারই না। তিনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলেন, আগেকার বাহিনীদের কতই না কষ্ট করতে হতো। তাদের থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে কাজ সাড়তে হতো! থ্রি নট থ্রি কোন রাইফেল হলো? আজকাল চায়না দিয়ে কাম সাড়া কত সোজা! সরকার যদি রাশিয়ান তৈরী ওরিজিনাল একে ৪৭ দিতো তাহলে কাজে আরো গতি বাড়তো।
যিনি ট্রিগারে হাত দিয়েছেন তার আর দেরি সহ্য হচ্ছেনা। আজকের স্পটটা কেন যে দূরে পড়ল! এর আগে সে অনেক ক্রস ফায়ারে অংশ গ্রহণ করলেও কাউকে সরাসরি ফায়ারিং করেনি। আজকে মেজর স্যার কে বলে সে দায়িত্বটা নিয়েছে। কে জানে কাজটা ঠিক মত করতে পারলে প্রমোশন হবে কিনা? এর আগে এই লাইনে এসে অনেকের প্রমোশন হয়েছে!
খাঁচা সহ শিকার গাড়ির ভিতর..... গাড়ি চলছে। শিকারের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, তার এক ঢোক পানি পেলে ঢোকের নড়াচড়া হয়ত কমত।। কিছুক্ষণ পর পাশে বসা থাকা একজন আরেকজন কে ফিস ফিস করে বললো, কাছাকাছি আইসা পড়ছি, রিহার্সেল মনে আছে তো? অপর জন উত্তর দিলো, এই লাইনে দীর্ঘ দিন যাবৎ আছি। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর নাটকের সব দৃশ্য, সংলাপ নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। তুই এখন চুপ কর। স্যার আবহ সংগীত তৈরী করার জন্য ইশারা দিয়েছেন।
এমন সময় একরামের মেয়ের ফোন, হ্যালো.... বাবা......।.............। না আর কল্পণা করতে পারছিনা। শুধু বলব, অনিচ্ছাসত্ত্বেও অডিওটা ভালো করে শুনে নিবেন।
হয়ত দু'এক দিন পর একরাম ধামাচাপা পড়ে যাবে! নতুন কোন একরাম বা নুরু'র মৃত্যু আমাদের মনের ভিতর দাগ ফেলবে! কথা হলো.......... হোয়াট নেক্সট?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ৩:৪৪