নতুন একটি মেয়ে যুক্ত হয়েছে ফেসবুক বন্ধু তালিকায়।
যুক্ত হয়েই মেসেজ দিলো,
- হাই।
আমি লিখলাম
- হ্যাঁলো।
সে লিখ্লো,
- আপনি অনেক ভাল লেখেন ভাইয়া, চেষ্টা করলে বড় লেখক হতে পারবেন।
আপনার চিন্তা ধারা সবার থেকে আলাদা।
- ফেইসবুকে নতুন?
- নাহ।
- তাহলে নিশ্চয়ই পেইজ গুলোতে ভালো ভালো আর সেলিব্রিটিদের লেখা পড়েন নাই।
- বলেছিতো, আপনার লেখা একটু ভিন্ন ধরণের।
- ওকে, ধন্যবাদ।
- ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, একটা কথা জানতে পারি কি?
- কী কথা?
- আপনার জি এফ আছে?
মেয়েটির প্রশ্ন দেখে তার আইডিটা একটু ঘুরে আসার মন করলো। তাই কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
না, আইডিতো ফেইক মনে হচ্ছে না।
এর মাঝে আরো তিনটা মেসেজ দিয়েছে মেয়েটি।
- বলেন না ভাইয়া।
প্লিজ বলেন।
থাক বলতে হবে না।
আমি লিখলাম,
- ওকে।
সে লিখ্লো,
- প্লিজ ভাইয়া।
আমি লিখলাম,
নাই। কোন সমস্যা?
সে লিখলো,
নাই তো এতো ভাব নেন কেন?
- আজব! কখন ভাব নিলাম?
- ভাব নিলেন না?
আপনি কি দেখেছেন আপনার পোস্টে কয়্টা লাইক পরে আর আমার কয়্টা পরে?
- হুম, দেখেছি, তাতে কী?
- এজন্যই আমার সাথে ভাব নেবেন না।
- আজকে কি স্কুলে মিস তোমাকে বঁকেছে পিঁচ্চি আপু?
তুমি বুঝি এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারের সূত্র বলতে পারোনি?
- এই ছেলে, আমাকে তোমার স্কুল স্টুডেন্ট মনেহয়?
আমি তোমার চেয়ে বড়।
- তাহলে বড়দের মতো কথা বলুন, বাচ্চাদের মতো বলবেন না।
- হোয়াট? আমি বাচ্চাদের মত বিহেইভ করেছি?
- হ্যাঁ।
- ওকে বাই।
তার পর মেয়েটি আমাকে ব্লক করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আনব্লক করে দেখি আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে।
এবং মেসেজ দিয়েছে,
- ভাইয়া প্লিজ, ভুল হয়ে গেছে।
আমি লিখলাম,
- কে আপনি?
- আপনি চিনতে পারেননি? একটু আগে যে ঝগড়া করে আপনাকে ব্লক করলাম।
- ও, আপনি কেমন আছেন?
তা এতোদিন পর মনে পরলো বুঝি?
- কি বলছেন ভাইয়া? একটু আগেইতো কথা হলো।
- ও তাই? ঠিক আছে আপনাকে আবার যুক্ত করে নিচ্ছি।
ছোট বাচ্চাদের ভুল ক্ষমা করা যায়।
- সত্যি বলছি ভাইয়া, আপনি আমার চেয়ে বয়সে ছোট। আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী।
- ওকে। আপনি চাইলে আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।
যেহেতু আপনি বড় তাই ছোট ভাইয়ের মতো ভাববেন আমাকে।
- ইয়ে, না, আপনাকে আপনিই বলব কারণ, আপনাকে আমি সম্মান করি।
- কারণ?
- আছে, এখন বলা যাবে না।
- ওকে।
এভাবে চলতে থাকে আপুটির সাথে কথা বার্তা।
একদিন সঁন্ধ্যার পরে বাইরে থেকে ফিরে ফোনে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে মিসড কল লেখা দেখতে পেলাম।
নাম্বারটিতে ফোন করলাম,
ফোন ধরে অপরিচিত একটি নারী কন্ঠ বললো,
- কেমন আছেন?
বললাম,
- ভাল। স্যরি! আপনাকে চিনতে পারিনি।
- আপনিকি আমার সাথে ............... তে দেখা করতে পারবেন কালকে সকাল ।এগারোটায়?
- আজব, আগে বলবেনতো কে আপনি।
- আমি আপনার ফেসবুকের সেই বড় আপু।
- ও, কেমন আছেন?
আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
- ভাল, আর নাম্বার কেন, মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায় যেমন আমি কাল এগারোটায় আপনাকে দেখতে পাবো।
- যদি না যাই?
- আপনি আসবেন ঠিক এগারোটায় ঐ জায়্গায়।
মনে রাখবেন, এগারোটা মানে এগারোটা।
এটা বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দি্লো সে।
ভাবলাম, সে কি আমার পরিচিত কারো আত্মীয় বা বন্ধু?
পরদিন সকাল এগারোটার কিছুক্ষণ আগে মনে হলো সেই যায়্গায় যাবার কথা।
আগেরদিন যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সেই নাম্বারে ট্রাই করলাম কিন্তু নারী কন্ঠে দুঃখিত শুনতে পেলাম।
আপুটি কি আমার সাথে ফাইজলামি করেছে?
না, সেরকম তো মনে হচ্ছে না।
তাই তারাতারি করে তৈরী হয়ে বের হলাম সেই জায়্গার উদ্দেশ্যে।
আমার বাসা থেকে সেই জায়্গা কাছাকাছি, তার পরেও এগারোটার দশ মিনিট পর সেখানে উপস্থিত হলাম।
এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
কাছে এসে বললো,
- কেমন আছেন?
কাছে আসার পর আর কথা বলার পর নিশ্চিত হলাম এটা ফেইসবুকের আপু।
আসলে মেয়েদের ফেসবুকের ছবি গুলো কেমন কেমন জানি হয়, তাই বাস্তবে দেখে সহজে চেনা যায় না।
যাহোক, আমি বললাম,
- ভালো, আপনি?
সে বললো,
- হ্যাঁ ভালো।
আমি আসলে আপনাকে এখানে ডেকেছি একটা উপহার দিতে।
আমি হাসি মুখে বললাম,
- ওকে দিন।
সে পিছন দিকে তাকিয়ে বোরখায় পুরো শরীর আর চোখ মুখ ঢাকা এক মেয়েকে ইশারা করলো এদিকে আসতে।
মেয়েটি কাছে আসতেই আমার কেমন যেন লাগতে শুরু করলো।
আমার হৃদপিন্ড দ্রুত কাঁপতে শুরু করলো।
আপুটি বলল,
- তোমরা কথা বল, আমি একটু ঘুরে আসি।
আপুটি চলে যাবার পর মেয়েটি নিজের ঢাকা চোখ মুখ উন্মুক্ত করলো আর সরাসরি আমার চোখের দিকে চাইলো।
মেয়েটির চোখ থেকে পানি ঝরছে, কতক্ষণ থেকে কাঁদছে কে জানে।
আমি তার চোখের দিকে তাকালাম।
ইশ, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরেও চোখের পানি থামাতে পারছি না।
ঠিক সেদিন যেভাবে চোখের পানি ঝরেছিল আজো সেভাবে ঝরছে।
সেদিন আমি ওকে প্রপোজাল দিয়েছিলাম আর ও হেড স্যারকে বলে দিয়েছিলো।
আমাদের দুজনকে অফিস রুমে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্যার।
আমাকে অনেক বঁকেছিলেন। আমি অঝোর ধারায় অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলাম সেদিন।
আমার কান্না দেখে ও কেঁদেছিলো, তখন বুঝিনি কেন।
কিন্তু পরে বুঝেছিলাম তাইতো এস এস সির পর আর দেখা না হলেও আমার জীবনে অন্য কোন মেয়েকে আসতে দিইনি।
আমার বয়সে অনেকেই অনেকগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে, বাদ দিয়েছে, করছে কিন্তু আমি করিনি কেননা, আমি জানি আল্লাহ ওর সাথে আমায় জোড়া করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
.........................................................................................................
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩