১.
'গীতাঞ্জলি'র ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন নোবেল জয়ী আইরিশ কবি উইলিয়াম বাট্লার ইয়েটস। এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই প্রথম বাঙালী হিসাবে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পান।
রবীন্দ্রনাথের এই নোবেল প্রাপ্তি অনেক পশ্চিমারই সহ্য হচ্ছিল না। গাত্রদাহ হচ্ছিল। একবার এক পশ্চিমা সাহেব বলেই বসলেন, 'গীতাঞ্জলি বইটি দারুণ হয়েছে। কিন্তু টেগোর, ওটা তোমাকে কে লিখে দিয়েছে?'
কবিগুরু তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন,' তুমি তার আগে বল, তোমাকে গীতাঞ্জলি'র মতো কাব্য কে পড়ে দিয়েছে?'
২.
বাঙালির সময় জ্ঞান কম। সেজন্যই প্রচলিত আছে, 'ন'টার গাড়ি ক'টায় যায়?'
কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য নয়। বরীন্দ্রনাথ তাদের একজন। তার একেবারে বিলেতি টাইম।
একবার কোলকাতার এক সভায় রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সভার সময় দেয়া হয়েছে বিকেল সাড়ে পাঁচটা। উদ্যোক্তরা বলে গেছেন, কবি যেন নিজের গাড়িতে করেই যথাস্থানে পৌছে যান।
রবীন্দ্রনাথ ঠিক সাড়ে পাঁচটায় সভাস্থলে উপস্থিত হলেন। উদ্যোক্তরা তখনো সভাস্থলে এসে পৌছাননি। রবীন্দ্রনাথ সেখানে বসেই দু'লাইন কবিতা লিখে উপস্থিত একজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
লাইন দু'টো হচ্ছে-
এসেছিলেম, বসেছিলেম, দেখলেম কেউ নেই;
আমার সাড়ে পাঁচটা জেনো পাঁচটা তিরিশেই।
৩.
পরিণত বয়সে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ঋষি তুল্য ব্যক্তিত্ব। লম্বা দাড়ি ও লম্বা আলখাল্লা পরে তিনি যখন বিশ্বভারতীতে ঘুরে বেড়াতেন, তখন সত্যি-সত্যিই তাকে ধাধু-সন্ন্যাসী মনে হতো।
একবার মারাঠা থেকে এক হিন্দু ছেলে এসেছে বিশ্ব-ভারতীতে লেখাপড়া করতে। আসার পূর্বে ওর মা ওকে একটি আধুলি দিয়ে বলে দিয়েছেন, বিশ্ব-ভারতীতে পৌঁছে কোন সাধু-সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ ঘটলে তাঁকে যেন আধুলিটা দিয়ে দেয়। শান্তিনিকেতনে সে পৌছেছে শীত মওসুমে রাতের বেলায়। পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই নজরে পড়ল লম্বা দাড়ি ও আলখাল্লা পরিহিত দরবেশমত একজন মাঠের মধ্যে পায়চারি করছেন। আর যায় কোথায়! ছেলেটি সযত্নে রক্ষিত আধুলিটা বের করে এক দৌড়ে ওঁর কাছে গিয়ে জোর করে ওটা হাতে গুঁজে দিয়ে স্বস্থানে ফিরে এল।
কবিগুরু বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইলেন।
৪.
গোপেশ্বর ব্যানার্জি তখন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে এক দিকপাল। তাঁর জন্য আয়োজন করা হয়েছে এক গানের অনুষ্ঠানের।
অন্যদের সাথে দাওয়াত করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকেও।
গোপেশ্বর ব্যানার্জির গানের অপূর্ব সুর-মূর্ছনায় মুগ্ধ হলেন শ্রোতারা। তাঁর গান শেষ হলে পর এক গভীর শূন্যতা যেন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল। রবীন্দ্রনাথও তদ্দিনে প্রতিষ্ঠিত গীতিকার ও গায়ক, যদিও তাঁর গানের গলা তেমন ভালো ছিল না। তাঁর নিজস্ব গানের এক ঘরানা তৈরি হয়ে গেছে, সেটার নাম 'রবীন্দ্রসঙ্গীত'।
উদ্যোক্তারা তাই অনুরোধ জানালেন, 'এবার আমরা আপনার কাছ থেকে কিছু গান শুনতে চাই, গুরুদেব।'
রবীন্দ্রনাথ তখন হাসিমুখে গোপেশ্বর ব্যানার্জির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন,'গাইতে তো পারা যায়। কিন্তু ওই গোপেশ্বরের পর এই দাড়িশ্বর এর গান ভালো লাগবে তো?'