ন্যাট জিও থেকে নেওয়া
হর্স শু ক্র্যাব যা সামুদ্রিক কাঁকড়া নামেই পরিচিত বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে । এই কাঁকড়ার রক্ত যা সাদাটে নীল রঙের তা ব্যাবহার করা হয় ভ্যাক্সিন তৈরিতে । ১৯৭৭ সালে মার্কিনী অসুধ সংস্থা এই কাঁকড়ার রক্ত ওষুধে ব্যাবহারের অনুমতি দেয় । ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলি এখন মহা দুশ্চিন্তায় । মার্কিনী তিন কোম্পানি এবং সুইস একটি কোম্পানি কোভিড ১৯ এর ভ্যাক্সিন প্রস্তুতের শুরুর দিকে আছে । এর মুল কাচামাল horse shoe crab এর রক্ত । মার্চ এপ্রিলে আটলান্টিক উপকুলে এই কাঁকড়া ডিম দেয় যা কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে সমুদ্রগামী হয় । এসময় সবচে বিপদ পাখিরা এই ডিম বা শিশু কাঁকড়া খেয়ে ফেলে । সুইস বিজ্ঞানীরা আগেই হ্যাচারিতে মা কাঁকড়া লালন করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটলে তা কিছুকাল পরে নিরাপদ সমুদ্রে ছেড়ে দিতেন । এবারের ভ্যাক্সিন চাহিদা বিপুল এবং বিশাল । বিকল্প রক্ত ল্যাবে তৈরি হয়েছে আগেই যা synthetic blood হিসাবেই পরিচিত কিন্তু সুইসরা চাইছে আসল কাঁকড়ার রক্ত দিয়েই তা তৈরি হোক ।
পৃথিবীর আদিতম একটি প্রাণী এই horse shoe crab যাকে কাঁকড়া গোত্রে ফেলা যায়না । এটি scorpion গোত্রের হবে হয়ত । আমার কৈশোরে দেখতাম গ্রামের খেয়াঘাটে সমুদ্র মানে বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরা জেলেদের নাওয়ের পানিতে এই অদ্ভুত জীবটি ঘুরছে । তারা বাড়িতে নিয়ে পুকুরে লালন করতেন এগুলো । একসময় এর লেজ কেটে তা শুকিয়ে বৃদ্ধ বা যুবক যার কোমরে ব্যাথা আছে তারা কোমরে তাগি দিয়ে বেধে রাখতেন । এর স্পষ্ট উপকার পাওয়া লোকেদের সাথে কথা বলেছি তখন এবং কিছুকাল আগে দুবলার চরে ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরছে এমন জেলেদের সঙ্গে । ২০০৮ সালে সুন্দরবনে ভ্রমনের সময় একজন আমায় বললেন এর রক্ত প্রতি গ্যালন ৬০ থেকে ৬৫ হাজার ডলার । বেশ উৎসুক হলাম কিন্তু বাকি তথ্য আর পেলাম না । ন্যাট জিওর সাম্প্রতিক সংখ্যায় এই কাঁকড়া আর ভ্যাক্সিনে তার ব্যাবহার নিয়ে লিখেছে। এবারের ভ্যাক্সিনে আসল ও বিকল্প দুটি রক্তেরই ব্যাবহার হবে তবে নামজাদা প্রতিষ্ঠান আসল রক্তেই ভ্যাক্সিন বানাবে । ভাল ভ্যাক্সিন সরবরাহে কিছু বিলম্ব হবে কাচামালের অভাবে । মার্চ থেকেই মাথায় ঘুরছিল ভ্যাক্সিনের কাচামাল কি ? এবার তার সমাধান পেলাম । বঙ্গোপসাগরে প্রচুর কাঁকড়া পাওয়া যায় । চরের পাখিরা কাঁকড়া পেলে খেয়ে ফেলে। প্রচণ্ড বিষাক্ত এই মাংস খাওয়ার পর পাখিদের কি হয় জানা যায়নি । দু বছর আগে মোহাম্মদপুর টাউন হলের পাশে বসে এক সাধুজন এর তেল বিক্রি করছিলেন । ছবি তুললাম এবং এক শিশি , খুবই ক্ষুদ্র , ২০০টাকা দিয়ে কিনলাম । বাড়িতে নিয়ে পায়ের ব্যাথায় মালিশ দিয়ে আশ্চর্য উপকার পেয়েছি । সাধুজন একটা খোলা বাটিতে কিছু তেল রেখেছেন দরিদ্র মানুষ যাতে ব্যাবহার করে বিনামুল্যে । অনেকেই যারা রিকশাচলক তারা পা এবং হাঁটুতে মালিশ করছিলেন । লোকটিকে আর খুজে পাইনি ।
যারা ভ্যাক্সিন নিয়ে আগ্রহী তারা জানবেন এর গুনাগুন । পৃথিবীতে অনেক দুর্বোধ্য প্রাণীর নির্যাস দিয়ে চীনদেশে ওষুধ তৈরি হয় । আমি , আমার কন্যা তখন খুবই ছোট বিবিধ প্রাণীর সমাহারে ওষুধ খেয়ে খুবই উপকার পেয়েছি । মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থে একটি আয়াত আমি পড়েছি “তোমাদের মধ্যেই সকল মঙ্গল নিহিত”। আমিও তাই জানি এবং বিশ্বাস করি । ধন্যবাদ সেসব বিজ্ঞানীদের যারা মানুষের কল্যানে আকাশ হতে পানির নিচে সব জায়গাতে নিরলস শ্রম দিয়ে নিরাময় খুজে মানুষকে দিচ্ছেন ।
আমার তোলা ছবি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:০২