somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মিরসরাই ও মোংলায় প্রস্তাবিত ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) প্রকল্প বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বহু বছর ধরে কোনো কার্যক্রম না হওয়া এবং ভারতের পক্ষে থেকে সাড়া না পাওয়ায় চট্টগ্রামের মিরসরাই ও বাগেরহাটের মোংলায় প্রস্তাবিত ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) প্রকল্প বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলকে জিটুজি কাঠামো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে আলোচনা মূলত প্রাথমিক বা ধারণাগত পর্যায়েই ছিল। অঞ্চলের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং কোন ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হতে পারে তা নিয়ে কথা হয়েছিল, কিন্তু কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।'

প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করে আশিক মাহমুদ বলেন, 'মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হয়ে গেছে এবং এর জন্য যে লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) তহবিল ছিল, তা-ও বাতিল করা হয়েছে।'

প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত জমির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, 'আমরা এই জমি অন্য কাজে ব্যবহার করব, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।'

এর আগে, প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ একাধিকবার ভারতকে চিঠি দিলেও কোনো জবাব আসেনি। ফলে প্রকল্পটি এখন কার্যকরভাবে বাতিল হয়ে গেছে।

গত সরকারের আমলে বেজার অধীনে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এবং বাগেরহাটের মোংলায় দুটি ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় জিটুজি (সরকার-টু-সরকার) ভিত্তিতে এই দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বাস্তবায়নের কথা ছিল। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার মিরসরাইয়ে ৯০০ একর এবং মোংলায় ১১০ একর জমি বরাদ্দ দেয়।

২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মিরসরাই ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এর আওতায় ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক, প্রশাসনিক ভবন এবং পরিষেবা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় ৯৬৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল, যার মধ্যে ৯১৫ কোটি টাকা ভারতের এলওসি থেকে পাওয়ার কথা ছিল।

তবে ২০২৫ সালের ৫–৬ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত এলওসি পর্যালোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, যেসব প্রকল্প অনুমোদিত হলেও বাস্তবায়নের অগ্রগতি হয়নি, সেগুলো এলওসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এর ফলেই মিরসরাই ও মংলার ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল—উভয় প্রকল্পই তালিকা থেকে বাদ পড়ে।

বেজার তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প শুরুর পর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা (মোট ব্যয়ের প্রায় ১%) খরচ হয়েছে, যার মধ্যে সরকারি অর্থ ছিল ৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

২০২৩ সালের আগস্টে বেজা দুটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান—আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড এবং ইন্টারন্যাশনাল সিপোর্ট ড্রেজিং প্রাইভেট লিমিটেড—কে দরপত্র নথি পাঠিয়েছিল, কিন্তু কেউই দরপত্র জমা দেয়নি।

ভারতের এলওসি শর্ত অনুযায়ী, ভূমি উন্নয়নের কাজ অবশ্যই কোনো ভারতীয় ঠিকাদারকে করতে হবে এবং প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ সরঞ্জাম ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। মূলত এসব শর্তের কারণেই কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২২ সালে বেজা ও আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে একটি উন্নয়ন চুক্তির খসড়া (টার্ম শিট) স্বাক্ষরিত হলেও চূড়ান্ত ডেভেলপার চুক্তি আর সম্পন্ন হয়নি। এমনকি অঞ্চল পরিচালনার জন্য কোম্পানি গঠনসহ অন্যান্য কার্যক্রমও অগ্রসর হয়নি।

এরপর ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত–বাংলাদেশ যৌথ কার্যকরী দলের (জেডব্লিউজি) ষষ্ঠ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রস্তাব দেয়, পুনরায় দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদারদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। তবে ভারত সে প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি।

প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে বিডার নির্বাহী সদস্য মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, 'তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ তার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে, কিন্তু ভারত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। কোনো ভারতীয় ঠিকাদার ভূমি উন্নয়নে আগ্রহ দেখায়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা অনুরোধ করেছিলাম যেন ভারতীয় ও বাংলাদেশি উভয় প্রতিষ্ঠানকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু ভারত রাজি হয়নি। আমরা প্রকল্পের সরঞ্জাম আরও সহজভাবে সংগ্রহের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু ভারত তা-ও প্রত্যাখ্যান করে।'

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পটি ভারতের এলওসি–এর আওতায় বাস্তবায়নের কথা ছিল, যেখানে বাংলাদেশি ঠিকাদাররা অংশ নিতে পারত না। অপরদিকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও আগ্রহ ছিল না। ফলে কোনো অগ্রগতি হয়নি, কিন্তু এত বড় জমি অব্যবহৃত রাখা যায় না।'

তবে বাংলাদেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানি ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে এশিয়ান পেইন্টস লিমিটেড ২৬ মিলিয়ন ডলার, রামকি এনভায়রো প্রাইভেট লিমিটেড ১০ মিলিয়ন ডলার এবং ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২৬.৭২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া সাকাটা ইনক্স প্রাইভেট লিমিটেড মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ২.১৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×