somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অক্ষরে অক্ষরে মিলছে! আইনস্টাইনের সূত্র ধরেই ব্রহ্মাণ্ডে মহারাক্ষসদের সন্তানের হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :









আলোর গতিতে ছুটলে একটা প্রায় ৭০ কোটি বছর আগেকার ঘটনা। আর একটি প্রায় ২৪০ কোটি বছরের আগের। কিন্তু টের পাওয়া গেল বছর খানেক আগে।

প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দিয়েছিলেন, তার সূত্র ধরেই সেই ঘটনার কথা জানা গেল। বিজ্ঞানীরা শুধু তা চাক্ষুষই করলেন না, তাঁদের প্রাপ্তি আরও অনেক কিছুই। ব্রহ্মাণ্ডে যে সব মহারাক্ষস ঘুরে বেড়ায়, তাদের সন্তানেরও হদিস দিয়ে গেল আইনস্টাইনের ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো সেই ধারণা।

বিশাল বড় একটা পুকুরের মাঝখানে কেউ খুব বড় একটা ঢিল ফেললে ঢেউ যে ভাবে ছড়াতে ছড়াতে পাড়ে এসে পৌঁছোয়, সে ভাবেই মহাশূন্যে কোনও ঘটনা ঘটলে, তার অভিঘাত ঢেউয়ের আকারে পৃথিবীতে পৌঁছোয়। কিন্তু তার জন্য কোটি কোটি বছর লেগে যায়। এ রকম দু’টি ঘটনার হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা। তা হল— দু’টি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষ। একটি প্রায় ৭০ কোটি বছর আগে। আর একটি প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে।

আসলে পুকুরে যেটা ঢেউ, আদিগন্ত, অতলান্ত ব্রহ্মাণ্ডে সেটাই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ। যা অনেক দূরের, বহু বহু কোটি বছরের পুরনো খবরাখবর বয়ে নিয়ে আসে। বার্তা বয়ে বেড়ায় ব্রহ্মাণ্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। পৃথিবীর ‘ঘাটে’ও এ রকম ঢেউ এসে ভিড়েছিল ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর এবং ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর। এই দুই তারিখ দিয়েই দুই ঘটনার নামকরণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ’ শব্দ দু’টির আদ্যক্ষর ‘G’ আর ‘W’-র সঙ্গে যথাক্রমে ১১ অক্টোবর এবং ১০ নভেম্বর তারিখটাকে জুড়ে নাম দেওয়া হয়েছে- ‘GW241011’ এবং ‘GW241110’ । এই আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।

ব্রহ্মাণ্ডে যে এমন ‘ঢেউ’ আছে, ঠিক এক শতাব্দী আগে সেই খবরটা দিয়েছিলেন আইনস্টাইন। তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে। ‘ঢেউ’ তার অনেক পরে এসে আছড়ে পড়েছে পৃথিবীর ‘ঘাটে’! তাই পূর্বাভাস মিলিয়ে দিয়ে সন্দেহ, সংশয়ের পরীক্ষায় আরও এক বার পাশ করে গেলেন আইনস্টাইন। আমেরিকার দু’টি জায়গা- ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ড আর লুইজিয়ানার লিভিংস্টোনে বসানো ‘লাইগো’, ইতালির ‘ভার্গো’ আর জাপানের ‘কাগরা’ ডিটেক্টরের চোখে ধরা দিয়ে ওই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দু’টি রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংঘর্ষের কথা জানিয়েছে। রাক্ষুসে কারণ, তারা নক্ষত্র থেকে শুরু করে ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই নাগালে পেলে টেনে এনে গিলে খায়। এমনকি আলোও তার নাগপাশ এড়াতে পারে না। বেরিয়ে আসতে পারে না গ্রাস থেকে।দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা দেখলেন, একটি ব্ল্যাক হোল আকারে বড়। আর একটি আকারে ছোট। গত বছর ১১ অক্টোবর যে ঘটনাটি ধরা পড়েছিল, সেটির ক্ষেত্রে একটি ব্ল্যাক হোলের আকার সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি। আর অন্যটি প্রায় ছ’গুণ। এই দুই ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি বছর আগে। ঠিক তার এক মাস পর অর্থাৎ, ১০ নভেম্বর যে ঘটনাটি ধরা পড়েছিল, সেটির ক্ষেত্রে একটি ব্ল্যাক হোলের আকার সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি। আর অন্যটি প্রায় আট গুণ। এই ব্ল্যাক হোল দু’টির সংঘর্ষ হয়েছিল প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই দু’টি তুলনায় বড় ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়েছিল এ রকমই কোনও এক সংঘর্ষ থেকে। কারণ দু’টির ঘূর্ণনেই অদ্ভুত স্বভাব লক্ষ করা গিয়েছে। একটি অস্বাভাবিক গতিতে ঘুরে চলেছে। আর অন্যটি ঘুরছে নিজের কক্ষপথে উল্টো দিকে, যা বিজ্ঞানীদের চোখে ‘বিরল’। তাঁদের দাবি, এ রকম তখনই হয়, যখন দু’টি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষে বিশাল ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়। তাই বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বড় ব্ল্যাক হোল দু’টি আসলে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্ল্যাক হোল।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আইনস্টাইনকে একাধিক বার পরীক্ষায় পাশ করিয়েছে যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, তা একই সঙ্গে যেমন ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, ভবিষ্যৎ জানার জন্য আমাদের সামনে সম্পূর্ণ নতুন একটা জানলা (উইন্ডো) খুলে দিয়েছে।

এত দিন আলোকতরঙ্গকে (দৃশ্যমান, অতিবেগনি ও ইনফ্রারেড, এদেরই মধ্যে পড়ে এক্স-রে ও গামা রে) ‘হাতিয়ার’ করেই ব্রহ্মাণ্ডের অজানা, অচেনা বস্তু খুঁজে বেড়ানো হত। কোন উৎস থেকে সেই আলো বেরিয়ে আসছে, তারই পথ ধরে খুঁজে নেওয়া হত, তা ব্রহ্মাণ্ডের ঠিক কতটা দূরত্বে ঘটছে, বিগ ব্যাং-এর ঠিক কত দিন পর সেই সব ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্রের মতো মহাজাগতিক বস্তুগুলি কবে, কখন তৈরি হয়েছে, কত কোটি বছর আগে তাদের শরীর কী ভাবে গড়ে উঠেছিল, তার কিছুই খুব সঠিক ভাবে বলা যেত না। কারণ, অসম্ভব জোরালো অভিকর্ষ বলের জন্য ব্ল্যাকহোল থেকে তেমন ভাবে কোনও আলোই বেরিয়ে আসে না। যেটুকু আলো বেরিয়ে আসে, তা আসে ব্ল্যাক হোলের অ্যাক্রিশন ডিস্ক থেকে। আমরা যেমন থালার কানায়, কোণায় এঁটোকাঁটা ফেলে রাখি সব কিছু গিলে খাওয়ার পর, তেমনই কিছু ‘এঁটোকাঁটা’ ওই অ্যাক্রিশন ডিস্কে ফেলে, ছড়িয়ে রাখে ব্ল্যাকহোল। তাদের থেকে বেরিয়ে আসে আলোকতরঙ্গ। তারই সূত্র ধরে মেলে ব্ল্যাক হোলের হদিস।

কিন্তু এ বার হাতে এসেছে ব্রহ্মাণ্ডে নতুন নতুন বস্তু খুঁজে বার করার নতুন ‘হাতিয়ার’। যার নাম- মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। যা দু’টো ব্ল্যাক হোল বা একটা ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে একটা নিউট্রন নক্ষত্র বা দু’টো নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়। সেই সংঘর্ষের ‘ঢেউ’ (মহাকর্ষীয় তরঙ্গ) পৃথিবীতে এসে পৌঁছোলেই জানা যাবে, ঠিক কোথায় সেটা ঘটেছে বা ঠিক কত কোটি বছর আগে সেটা ঘটেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×