somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা ল্যান্ড অফ দ্যা ক্লাউডস (মেঘের দেশে) পর্ব -৩ ( সান্দাকফু)

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই মায়াবী প্রকৃতি ছেড়ে বের হওয়া কঠিন। কিন্তু সামনে যে আমাদের ডাকছে কাঞ্ছনজংঘা। নাস্তা সেরে বের হতে হতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেল। নাস্তার টেবিলে জানতে পারলাম গতকাল রাতের অভিজ্ঞতা।

নাস্তার টেবিলে আমরা



কেউ এক কাঁধ হয়ে শুয়েছে তো কাঁধ পর্যন্ত ফিরায়নি ঠাণ্ডার ভয়ে। কেউ আবার সারাটা রাত কাঁপতে কাঁপতে কাহিল। ঠাণ্ডার ভয়ে টয়লেটে যায়নি কেউ কেউ। যাই হোক মজার বিষয় হচ্ছে কাল যারা হাঁটার পক্ষে ছিল না, আমাদের দেখাদেখি সবাই ট্র্যাক করতে চাইল। মুস্তাফিয আঙ্কেল এই ট্রিপের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। প্রায় ৬৫ ছুই ছুই করছে। তিনিও আমাদের সাথে হাঁটতে চাইলেন। শুনে পুলকিত হলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বুঝাতে সক্ষম হলাম যে আপনার পায়ে ব্যথা নিয়ে হাঁটা ঠিক হবে না। অবশেষে তিনি ছাড়া আমরা সবাই ট্র্যাকার বেশে রওনা হলাম সান্দাকফুর পথে।

সান্দাকফুর পথে আমাদের দল



কাল বিকালে এবং রাতে আমরা যে মেঘ দেখেছিলাম তা আজকে আর খুজে পাওয়া গেল না। সকালের সোনা রোদ আমাদের দেহ মন ভরিয়ে দিচ্ছে। আজ অবশ্য আমরা একা নই। কোলকাতা থেকে বিজয় দা এসেছেন টিম নিয়ে। আরও কয়েকটি টিম আজকে আমাদের সঙ্গী। বেশ মজা করতে করতে আমরা ট্র্যাক শুরু করলাম। যতোই সামনে এগোই প্রকিতি যেন আমাদের তার রুপের ডালা খুলে আমাদের বরন করতে থাকে। অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে বাহারি রঙের ফুল, পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল মেঘের আস্তরণ আর এর মাঝ দিয়ে সাপের মত আঁকাবাঁকা প্যাঁচালো রাস্তা। মন থেকে একটা গান উৎপন্ন হয়ে বের হল গলা দিয়ে “এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বল তো?” কেমন আবার হতো? ক্লান্ত হয়ে পরতাম এক সময়, পা চলতো না, এক সময় বসে পড়তে বাধ্য হতাম। কিন্তু ওই ক্লান্তির মাঝে থাকতো তৃপ্তি, এক চিলতি তৃপ্তির হাসি।

পথের কিছু ছবি



হাঁটতে হাঁটতে আমরা এক সময় পৌঁছে গেলাম বিখেভাঞ্জানে। এরই মাঝে সেখানে আমাদের গাড়ি চলে এসেছে। আমাদের ১৩ জনের ১২ জন সেখানে থাকলেও ১ জনকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সেই মুস্তাফিয আঙ্কেল। যাকে আমরা রেখে এসেছিলাম কালাপখ্রিতে। আমাদের গাড়ির সাথে তার আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি নেই। আমার মাথায় হাত। কি করবো বুঝতে পারছিনা। গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করলাম আঙ্কেল কোথায়। ড্রাইভার জানালো তাকে তারা অনেক খুঁজে কোথাও না পেয়ে চলে এসেছে। অবশ্য আসার সময় বলে এসেছে আঙ্কেলকে খুঁজে পেলে যেন কোথাও যেতে না দেয়। আমরা যাওয়ার সময় তাকে তুলে নিয়ে যাব। কিন্তু আমি নিশ্চিত তিনি চুপচাপ বসে থাকার মানুষ নন। গাড়ি না দেখে ঠিক হাঁটা শুরু করবেন। যাই হোক এখন সিদ্ধান্ত হল আমরা রওনা হচ্ছি সান্দাকফুর উদ্দেশ্যে। সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম আবার। গাড়ি রওনা হল সান্দাকফুর দিকে।

গাড়িতে সান্দাকফুর পথে



বিখেভাঞ্জান হতে সান্দাকফু পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি বেশ চড়াই। ৪৫ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় গাড়িতে যাওয়ার চেয়ে হেঁটে যাওয়াই নিরাপদ মনে হল। কিন্তু আমাদের হাতে সময় নেই তেমন একটা। আজই আমাদের যেতে হবে দার্জিলিং। হাইওায়ে টু হেভেনের রাস্তা ধরে আমরা চলেছি সান্দাকফু। মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এক সময় আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে। সান্দাকফু!! ১১৯২৯ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা। যেখানে মেঘ আর পাহাড় খেলা করে প্রতিনিয়ত। মিষ্টি মেঘের আলতো ছোঁয়া শিহরিত করে। হঠাৎ শীতে কাঁপতে থাকা শরীরে এক কাপ ধুমায়িত কফি দেহ মন চাঙ্গা করে দেয়। মন চলে যায় দূরের ওই কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে।

সান্দাকফু থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা




বা পাশে তাকালে হিমালয় রেঞ্জ। যদিও এপ্রিলে হিমালয় তেমন একটা দেখা যায় না, তারপরও অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে। হিমালয়কে খুব আপন আপন মনে হয়। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা? সে তো নিজের ঘরের মানুষ। পর্বতকে মানুষ বলা কি ঠিক হচ্ছে? না হলে নাই। আপনদের কতো কিছুই তো বলা যায়। মনটা কেমন জানি উদাস হয়ে গেল। যদি থেকে যাওয়া যেত কয়েকদিনের জন্য। যদি একটু কথা বলা যেত ওই দুধ সাদা পর্বত চূড়ার সাথে। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ শুনে মনে পড়লো আমারও একটি ক্যামেরা আছে, যেটা দিয়ে ছবি তোলা যায়। আমার ক্যামেরাও ক্লিক ক্লিক শব্দ করলো কিছুক্ষণ।

সান্দাকফুতে ফটোসেশন




কফি আগেই খেয়েছি। তাই আর দেরি করা যাবে না। সবাইকে একটু তাগাদা দিয়ে আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম। আল্লাহ্‌ মালুম আঙ্কেল কোথায় আছে এখন। ফিরতি পথে আমি যেটা ভাবছিলাম সেটাই হল। আঙ্কেলকে পাওয়া গেল বিখেভাঞ্জানে। আমাদের না পেয়ে তিনি হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন এখানে। তাকে আমরা সবাই মিলে বাহবা দিলাম। তিনি খুব খুশি। তিনি জানালেন যে তার খুব কফি খেতে ইচ্ছা করছিল। তিনি ‘ট্র্যাকার হাটে’ কফি খেয়ে ফিরে এসে দেখেন ব্যাটা বদমাশ ড্রাইভার তাকে রেখে চলে এসেছে। তিনি কিভাবে এতদূর আসলেন তা বেশ গুছিয়ে জানালেন আমাদের। ফিরতি পথে আমরা চুপচাপ গাড়িতে ঝিমাতে লাগলাম। মাঝে মাঝে ক্যামেরা ওয়ালারা দুই-একটা করে ছবি তুলছে। দেখতে দেখতে আমরা এক সময় পৌঁছে গেলাম সেই মানেভঞ্জনে। যাওয়ার সময় যে হোটেলে খেয়েছিলাম (হোটেল প্রধান) সেখানেই থামলাম। দুপুরের খাবার অর্ডার দিয়ে আমি বেড়িয়ে পড়লাম দার্জিলিং যাওয়ার গাড়ি ঠিক করতে। চটপট খেয়ে উঠে পড়লাম গাড়িতে। শুরু হল আমাদের দার্জিলিং অধ্যায়।

আরও কিছু ছবি

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×