সৈয়দা হুররা-এর নাম হয়তো অনেকেরই অজানা।..তিনি ছিলেন মুসলমানের ইতিহাসে একমাত্র নারী জলদস্যু!
জলদস্যু নামটি শুনলেই কেমন গা শিউরে উঠে...কিন্তু, যখন জানবেন যে, স্পেনের গ্রেনাডার শাসক পরিবারের সন্তান সৈয়দা হুররাকে কিভাবে ছোটকালে শরণার্থী হিসেবে কাটাতে হয় যা তাঁকে পরে একজন জলদস্যুতে পরিণত করে, তখন ঠিকই তাঁর পক্ষে কথা বলাটা স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
স্পেনের গ্রানাডাতে মুসলমানদের উপর যে অবর্ণনীয় অত্যাচার করা হয়, তারপরেই সৈয়দা হুররা-এর পরিবার অন্য একটি শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সৈয়দা হুররা তার উপাধি। যার অর্থ হল সার্বভৌম স্বাধীন রাণি। তার প্রকৃত নাম লাল্লা আয়েশা বিনতে আলি ইবনে রশিদ আল-আলমি। জন্ম ১৪৮৫ সালে স্পেনের তৎকালীন রাজধানী গ্রানাডায়। ১৪৯২ সালে গ্রানাডার পতন ঘটলে তার পরিবার মরোক্কোয় চলে আসেন।
সাইয়িদার বয়স যখন ১৬ বছর তখন তার বিয়ে হয় মরোক্কোর স্থানীয় তিতওয়ান প্রদেশের প্রশাসক আবুল হাসান আল-মান্দারির সঙ্গে।
১৫১৫ সালে তারস্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি উত্তর মরক্কোর তিতওয়ানের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরে তিনি উত্তর মরক্কোর সুলতান আহমেদ আল-ওয়াত্তিসিকে বিয়ে করেন। তিনি হলেন তিনি হলেন তিতওয়ানের রাণি। রাণি হিসেবে অধিষ্ঠিত হবার পর তিনি ভূমধ্যসাগরে চলাচলরত স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ বাণিজ্যিক জাহাজ লুট করার সিদ্ধান্ত নেন।
‘খ্রিষ্টান দুশমনদের’ শাস্তি দিতে তিনি তৎকালীন দুর্ধর্ষ নৌযোদ্ধা ও জলদস্যু বলে খ্যাত আলজিয়ার্সের বারবারোসা ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তার তিতওয়ানে বসবাসরত গ্রানাডার পুরোনো নাবিক ও নতুন যোদ্ধা সহযোগে তার নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে, স্পেনিয়ার্ড ও ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করেন। তাদেরকে মেডিটারিয়ান সমুদ্র জুড়ে তাড়িয়ে বেড়াতে থাকেন। তাঁর অভিযানে পর্তুগিজরা সম্মিলিত ভাবে খোদার কাছে প্রার্থনা জানতে বাধ্য হয় যাতে স্রষ্টা সৈয়দা হুররাকে জাহাজের মাস্তুলের সাথে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেন।
কিন্তু, তাদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। সৈয়দা হুররা ঠিকই সাগর জুড়ে তাঁর তান্ডব চালিয়ে যেতে সক্ষম হোন। ১৫৬১ সালের ১৪ জুলাই তিনি মরক্কোর তেতুয়ানে মৃত্যুবরণ করেন।
[লেখার কিছু অংশ ব্লগার নূর মোহাম্মদ নূরু'র কমেন্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৩৮