ফেইলিওর ইজ দ্যা পিলার অব সাকসেস। কথাটা বেশ কঠিন। লেগে থাকলে জীবনে সাফল্য আসবেই। কিন্তু, যতক্ষণ সাফল্য না আসে, ততক্ষণ মনের মাঝে যে চাপ পড়ে, তা অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। আমি দেখেছি, এমন অনেকেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি, দেশ ছেড়ে ভেগেছেন। আমি তাদের একজন ছিলাম।
প্রায় আড়াই বছরের সেশন জ্যাম নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে বের হই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সংগঠক হিসেবে বেশ নাম-ডাক ছিলো। শেষের দিকে একটি ইসলামী দলে নাম লিখিয়েছিলাম। তখনো সেটা নিষিদ্ধ হয়নি। আর এটাই জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো। আত্মীয়-স্বজনরা দূরে সরে গিয়েছিলেন। তাই, নিজ যোগ্যতায় চাকরী খুঁজতে হয়েছিলো। কিন্তু, বার বার ব্যর্থ হতে হয়।
দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে প্রথম ইন্টার্ভিউয়ের ডাক পাই। তবে, সেটা ছিলো মামার জোরে। ঐ কোম্পানী'র চীফ মার্কেটিং অফিসার মামার ছাত্র ছিলেন। তিনি তাই প্রথমে আমার সাথে কথা বলতে চাইলেন। নিয়ে গেলেন নিজের অফিসে। অফিসে যাওয়ার পথে লিফটে উঠেছি, তখন দেখি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই। তিনি আমাকে দেখয়ে বললেন- ''তুই এখানে কি করোস? ঐ ইসলামী দলে কি এখনো আছিস?'' আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। সি,এম,ও'র সামনে আমি বলতে পারলাম না যে- আমি সেই দলে আর নেই। তখনই বুঝেছিলাম- এখানে চাকরী হবে না।
তারপর, ৩টী ভাইভা বোর্ড পার হতে পারলাম। ভাইভা যদি ভালো হয়েছিলো, কিন্তু, মনের মাঝে খুঁতখুঁতানি, এসব যেন আমার মামার অদৃশ্য হাতের কারণেই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, ওরা আমাকে নিলো না।
এবারে আমার আম্মা আমার এক চাচাকে ধরলেন। তিনি সাথে সাথে বললেন- আমার চাকরী হওয়া ৩ দিনের ব্যাপার। কালই ফোন করে দিবেন দেশের নামকরা মিশরের এক টেলিকম কোম্পানীর মালিককে। সেই ফোন করার অপেক্ষায় আমি ১ বছর ছিলাম। কোন ডাক পড়লো না। খুব মন খারাপ হয়েছিলো।
তারপরে, আমার আরেক নানা আমাকে নিয়ে গেলেন এক ফার্মাসিউটিকেলস কোম্পানির কাছে। সেখানের এক ডিরেক্টর আমাকে বললেন- ছাত্র জীবনে রাজনীতি করেছো? আমি 'হ্যাঁ' বলে দিলাম। ব্যাস! সেখানেও কিছু হলো না।
আমি নিজেও অনেক জায়গায় চেষ্টা করতে লাগলাম। কোন দিকেই কোন গতি এলো না। শেষে ভাবলাম, এই দেশেই আর থাকবো না। তত দিনে জীবন থেকে চার চারটি বছর নেই! চলে গেলাম দেশ ছেড়ে। দেশের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি।
এখন, মাঝে মাঝে ভাবি, দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া উচিৎ ছিলো। তখন হয়তো জীবন থেকে এতোগুলো বছর গায়েব হয়ে যেতো না! তারপরো, আমি সুখী। এখন আমি যে বেতন পাই, আমার সাথে পাশ করা খুব কম সহপাঠীই তা পায়। আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন।
তবে, এই চাকরীটা পারসোনাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাওয়া। যদিও, আমাকে ইন্টার্ভিউ দিতে হয়েছিলো দুইটি।