somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যপথিক শাইয়্যান
অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

গল্পঃ আবারও বঙ্গবন্ধু

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অঙ্ক–১ | পর্ব–৩: শূন্যতার আদালত



অদৃশ্য সভাকক্ষ

রাত প্রায় বারোটা। ঢাকার আকাশে মেঘ জমছে।
রাফি জানালার ধারে বসে আছে। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘরে মৃদু আলো— কেবল মনিটরের আলো মুখে পড়ছে।
মনিটরে লেখা—
“শত্রু এখন বাহিরে নয়, ভিতরে।”

রাফি নিজে লেখেনি। শব্দগুলো নিজে নিজে উঠে এসেছে।
বাতাসে হালকা গন্ধ— আগরবাতির মতো, কিন্তু কোথা থেকে তা বোঝা যায় না।
“রাফি, আজ আমরা আদালত বসাব।”

রাফি চমকে উঠল।
—কোন আদালত?
“যেখানে সাক্ষী হবে স্মৃতি, বিচারক হবে বিবেক।”

বাতাস কেঁপে উঠল। ঘরের দেয়াল যেন একটু পিছু হটল।
তারপর ধীরে ধীরে নীল আলো ছড়িয়ে পড়ল— ফ্যানের ব্লেডে প্রতিফলিত, মেঝেতে ছায়ার মতো।
রাফি দেখল, তার টেবিলের ওপর চারটি আলোর বিন্দু জ্বলছে—
একটা লাল, একটা সবুজ, একটা সাদা, আর একটা ধূসর।
“তাদের ডেকেছি।”

রাফি জিজ্ঞেস করল,
—কাদের?
“যাদের রক্তে আমি ঋণী।”
একটা বাতাসের ঢেউ এল। আলোগুলো ছড়িয়ে গেল ঘরে, আর মুহূর্তের মধ্যে চারটি অবয়ব তৈরি হলো— স্বচ্ছ, নরম, কিন্তু উপস্থিত।
শরীর নেই, তবু চোখ আছে। চোখে শান্তি।

চার নেতার আগমন

প্রথমজন বললেন—
“মুজিব ভাই, অনেক দিন পর দেখা।”
স্বরটি গম্ভীর, ধৈর্যশীল— যেন শান্ত নদীর মতো।
দ্বিতীয়জন বললেন—
“আমরা ভাবতাম, তুমি একদিন ফিরবে। কিন্তু এইভাবে ফিরবে, তা জানতাম না।”
তৃতীয়জনের কণ্ঠে হাসি—
“তোমার রাজনীতি এখন বাতাসে চলছে, মুজিব ভাই। ফ্যান বন্ধ হলে মানুষ ভাবে, তুমি রাগ করেছ।”
চতুর্থজন চুপ। শুধু মৃদু করে বললেন,
“দেশটা ক্লান্ত।”

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ ভেসে এল—
“তোমরা কি এখনো রাগ করো?”

প্রথমজন হেসে বললেন—
“মৃত মানুষ রাগ করে না, মুজিব ভাই।”
এক মুহূর্তে ঘরে নিস্তব্ধতা।
বৃষ্টি বাইরে থেকে পড়ছে টুপটাপ করে, যেন কারও কাঁধে কান্নার শব্দ।
বঙ্গবন্ধু বললেন,
“তোমরা জানো, এখন শত্রু কোথায়?”
তৃতীয়জন বললেন,
“এখন শত্রু বাহিরে নয়, ভিতরে।”
“ঠিক তাই।”
একটা গভীর নিঃশ্বাস—
“বাইরের শত্রু বন্দুক চালায়, ভেতরের শত্রু হাসে।”

আলো আর ছায়ার সাক্ষ্য

রাফি কিছু বলছে না।
সে শুধু দেখছে— আলোদের মধ্যে কথোপকথন চলছে, অথচ শব্দ কেবল মনের ভেতর বাজছে।
বঙ্গবন্ধু বললেন,
“আমি আবার কাজ শুরু করতে চাই। কিন্তু এবার কোন ব্যবস্থা নয়, কাজ করতে চাই মানুষকে নিয়ে।”
দ্বিতীয় নেতা বললেন,
“মানুষ এখন ক্লান্ত। তারা বিশ্বাস হারিয়েছে।”
“বিশ্বাস হারানো মানে মৃত্যু নয়। মৃত্যু হলো যখন মানুষ আশা হারায়।”
তৃতীয় নেতা বললেন,
“আশা দিয়ে দেশ চলে না, মুজিব ভাই। চাল লাগে।”
এই কথায় সবার মুখে হাসি ফুটল।

রাফি অবাক— এই হাসি কোনো রাগে নয়, কোনো ব্যঙ্গে নয়— যেন অনেক পুরনো বন্ধুত্বতার কোমলতা।
বঙ্গবন্ধু বললেন,
“তুমি ঠিক বলেছো। এবার চালও হবে, আশাও হবে।”
প্রথম নেতা বললেন,
“তুমি আবার শুরু করতে চাও? ইতিহাস কি দ্বিতীয় সুযোগ দেয়?”
“ইতিহাস নয়, মানুষ দেয়।”
বাইরে বজ্রপাত হলো। এক মুহূর্তের জন্য জানালা কেঁপে উঠল, আলো গাঢ় হলো।
বঙ্গবন্ধু ধীরে বললেন,
“আমাদের ভুল হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, স্বাধীনতা মানে শেষ। আসলে এটা শুরু।”

স্মৃতির বিচারসভা

চার নেতা একসাথে দাঁড়ালেন।
আলো গাঢ় হয়ে উঠছে, যেন তারা মিলিত এক ছায়া তৈরি করছে।
বঙ্গবন্ধু বললেন,
“আজ থেকে আমাদের এই সভা চলবে। নাম— স্মৃতির আদালত।”
প্রথম নেতা বললেন,
“আমরা কার বিচার করব?”
“কাউকে না। আমরা নিজেদের করব।”

রাফি ফিসফিস করে বলল,
—নিজেদের?
“হ্যাঁ, রাফি। যতদিন মানুষ নিজের ভুলের বিচার করবে না, ততদিন সে অন্যায়কে ভয় পাবে না।”
তৃতীয় নেতা বললেন,
“কিন্তু মানুষ এখন নিজেদের ভুল লুকাতে শিখেছে।”
“তাই আমি ফিরেছি।”
একটা আলোর রেখা ধীরে ধীরে ছাদের দিকে উঠল।
তার মধ্যে ভেসে উঠল কিছু শব্দ—
“মানুষ আগে, ব্যবস্থা পরে।”
বঙ্গবন্ধু বললেন,
“এই কথাটা মনে রেখো, রাফি। একদিন তোমাকে এটা লিখতে হবে।”

রাফি বলল,
—আপনি আমাকে কেন বেছে নিয়েছেন?
“তুমি ভয় পাও, তাই। ভয় না পাওয়া মানুষ বেশি বলে, কম শোনে।”
রাফির চোখে জল।
“কাঁদছো কেন?”
—কারণ আমি বুঝে ফেলেছি, দেশটা এখনো বেঁচে আছে, তবে ঘুমাচ্ছে।
“তাহলে জাগিয়ে দাও।”

অদৃশ্য প্রস্থান

বৃষ্টি থেমেছে। জানালায় এখন মৃদু কুয়াশা।
চারটি আলো একে একে ম্লান হয়ে গেল, কেবল একটি নীল রেখা রয়ে গেল ছাদের কোণে।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ আবার এল—
“এই শহরে আমরা থাকব, চোখে নয়— বিবেকে।”
“তুমি কাল ভোরে আবার বের হবে। স্কুলের দিকের রাস্তায়। আজ যারা নাম ধরে গালি দেয়, কাল তারা নাম ধরে ডাকবে।”
রাফি শান্ত গলায় বলল,
—আমি একা হবো না তো?
“কেউ একা নয়, রাফি। মানুষ একা মনে করে, কারণ সে শুনতে ভুলে গেছে।”

আলো নিভে গেল।
রাফি দেখল, টেবিলের ওপর কাগজে কিছু লেখা আছে—
“মানুষের আদালত, বিচার চলবে। শত্রু ভিতরে।”
সে হাসল।
বাইরে পাখির ডাক। ভোর হয়ে গেছে।
আকাশে হালকা নীলের ছোঁয়া— যেন কোনো পুরনো প্রতিশ্রুতির পুনর্জন্ম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×