somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুতুল কাহিনী (গল্প)

৩১ শে আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুতুল ৮ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার জন্মের সময় তার বাবা পুলিশে কনস্টেবলের চাকরি করতো। সেই আমলে শুধু নাম সই আর দুচার লাইন পড়তে জানলেই চাকরি হতো। পুতুলের দাদা বরিশালে পানসুপারির ব্যবসা করতো। পুতুলের জন্মের পর ওর বাবা চাকরি টা ছেড়ে দেয়। পুতুলের দাদার তখন ব্যবসা ভাল যাচ্ছিল না। পুতুলরা নানাবাড়ি চলে যায়। পুতুলের মা ৪ভাইয়ের একমাত্র বোন, তখন কোন মামার বিয়েও হয় নি। একমাত্র ভাগ্নে (পুতুলের বড়ভাই) আর ভাগ্নি পুতুলকে নিয়ে তাদের আদিখ্যেতার শেষ ছিল না।

সাধ্যের থেকে বেশি করা ছিল তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সকালে উঠেই পুতুলের বায়না মামা এটা খাবো ওটা দাও। যা চাইতো তার থেকেও বেশি দিতো তারা। এরই মাঝে দুই মামা বিয়ে করে, নানা মারা যায়। মামারাও আলাদা হয়ে যায়। পুতুলের মা ভাবীদের কথা সহ্য করতে না পেরে পুতুলের বাবাকে বলে আলাদা বাসা দেখতে। পুতুলের বাবা ব্যাপারটাকে বারবার এড়িয়ে যেতে থাকে। পুতুলের মার বুঝতে বাকি থাকে না এসবের পেছনের কারণ পুতুলের বাবার অলসতা। পুতুলের মা নিজের কিছু গহনা বিক্রি করে পুতুলের বাবাকে ছোটখাট একটা মুদি দোকান দিয়ে দেয়। পুতুলের ছোটভাই মনিরের জন্ম হয়। পুতুলের বাবা মা সহ সব আত্নীয়স্বজন এই নতুন শিশু তারউপর ছেলের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। পুতুল চলে যায় নজরের বাইরে.....কিন্তু পুতুলের নজর যে তারাই বড় করে দিয়েছে।

পুতুলের যখন ৭বছর বয়স ওর বাবার মুদি দোকানটা উঠে যায়। ওর মা বাকি যেটুকু গহনা ছিলো সব বিক্রি করে একটা ভ্যান কিনে দেয় তার স্বামীকে। সেটাও হারিয়ে ফেলে একদিন পুতুলের বাবা। পুতুলের মা লজ্জায় আর কাউকে এ বিষয়ে বলতে পারে না।
একদিন পাড়ার সবজিওয়ালার ভ্যান থেকে পেপে চুরি করতে গিয়ে পুতুল ধরা খায়। চুরির ব্যাপারটা হাতে নাতে ধরা পড়ার পরও পুতুলের বাবা গালিগালাজ করে মেয়েকেই সাপোর্ট করে।
পুতুলের বাবাকে ভাড়ায় রিক্সা চালাতে চায় কিন্তু কোন রিক্সামালিক তাকে রিক্সা দিতে চায় না তার দায়িত্বহীনতার জন্য । দিনমজুরি করে ২/১দিন সপ্তাহে বাকি ৪/৫দিন ঘুমিয়ে শুয়ে বসে দিন কাটায় পুতুলের বাবা। পুতুলের বোন নিলুর জন্ম হয় এই টানাটানির মধ্যে। ঘরে খাবার নেই অথচ বাড়িতে ছোট্ট শিশু....মানুষের বাসার ভাতের মাড় খেয়ে ওরা দিন পার করতে থাকে।

পুতুল পাশের বাড়ির একটা বাচ্চাকে দেখাশুনার দায়িত্ব নেয়। বাচ্চার মা চাকরি করে। ১বছরের বাচ্চা। বাচ্চার মা বাচ্চার যে খাবার দেয় তা পুতুল নিজেই খেয়ে বসে থাকে। বাচ্চা দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ে। এমন না যে পুতুলকে খেতে দেয় না। একদিন পুতুল ধরা খায়। ঐ বাসা থেকে ওকে বের করে দেয়।

বখাটে মাস্তান আকরাম পুতুলকে প্রায়ই সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাবার কথা বলে, পুতুলও না করে না। পুতুলকে আকরাম চুলের ফিতা, নেইলপালিশ, চুড়ি, লিপস্টিক এগুলো কিনে এনে দেয়। পুতুল সেগুলো পরেই বেড়াতে যায়। আকরামের সাথে পুতুল তার ছোটবেলার মত সেই দিনগুলো অনুভব করে। কোন কিছু বলার আগেই আকরাম হাজির করে। পুতুল আকরামকে জিজ্ঞেস করে সে কি করে। আকরাম বলে ব্যবসা। আকরামের এত টাকা অথচ কেন বস্তিতে থাকে পুতুল বুঝতে পারে না। কিন্তু তার যেহেতু কোন সমস্যা হচ্ছে না, সে সবই পাচ্ছে তাই সে আর কিছু বলে না। পুতুল আকরামের বিয়ে হয়ে যায়।

বিয়ের পরদিনই পাশের ঘরে পুলিশ এসেছে শুনে আকরামের বিচলিত অবস্থা দেখে পুতুল একটু আন্দাজ করতে পারে আকরাম হয়তো খারাপ কিছু করে। কয়েকদিন পর পুতুল আকরামকে দিয়েই যখন তার ব্যবসার জিনিস ফেন্সিডিল, গাজা বিক্রি করতে দেয় পুতুল প্রথমে একটু না করলেও পরে ভাবে কি দরকার এসব ভাল না খারাপ এগুলো ভেবে! তাদের তো দিব্যি ভাল চলে যাচ্ছে...... আকরাম বলেছে তারা ...একটা রঙীন টিভি.....একটা ফ্রিজ কিনবে.....আর কিছুদিন পর একটা জায়গা কিনবে....এরপর আর বস্তিতে থাকবে না।

সবেমাত্র ৩০০বোতল ফেন্সিডিল আর ২কেজি গাজা কিনে ঘরে রেখে আকরাম একটু বাইরে গেল। এরই মধ্যে পুলিশ আসলো.... অবৈধমাদকসহ ধরা খেল পুতুল। আকরাম পুলিশ দেখে সটকে পড়ে।

থানায় ২দিন ধরে আটকা পুতুল। এই বুঝি আকরাম আসলো ..... এটা ভেবে সে গত ২দিন পার করেছে। এখন সে মোটামুটি বুঝতে পেরেছে আকরাম আর আসবে না....
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×