আমার হাত থেকে যখন টপটপ রক্ত পড়ছিলো হাসপাতালে তুমি তখন ডাক্তারকে বার বার বলছিলে, ও রক্ত দেখলে ভয় পায়! ওর রক্ত দেখলে মাথা ঘুরে..... তোমাকে অবিশ্বাস করতে চেয়েও বারবার পারি নি। হয়তো এটা আমার দূর্বলতা অথবা আমার অন্ধ আবেগ অথবা আমার ভালবাসা.....তোমার প্রতি..... আমি আজও ভুলি নি সেই সব দিনের কথা..... আজও চোখের সামনে ভাসে
তোমার সাথে আমার একই কলেজে পড়তাম এই হিসেবে পরিচয় ছিল মাত্র। ভার্সিটিতে তোমার ডিপার্টমেন্টের পিকনিকে আমাকে নিয়ে যেতে চাইলে আমি কোনকিছু না ভেবেই যেতে রাজী হলাম। আমি বরাবরই ক্যাজুয়াল.... তুমি আমার পোশাক দেখে মৃদু ঝাড়ি দিয়ে বললে, তোমার কি কোন দিনও কান্ডজ্ঞান হবে না? আমার বন্ধুদের সামনে এমনভাবে যাবে?
সেদিনই বুঝেছিলাম ভাললাগা শুধু আমারই ছিল না তোমারও আছে আমার প্রতি।
তুমি কক্সবাজারে গেলে আমার জন্য নিয়ে এলে সুন্দর একটা ফতুয়া। আমি অনেকটা অবাকই হয়েছিলাম। আমি জানি তোমার টাকাপয়সার টানাটানি তারপরও তুমি আমার জন্য অনেককিছু এনেছো ..... আমার কথা তুমি সবসময় ভাবো এটা ভেবে আমি বারবার সিক্ত হয়েছি।
তোমার কি মনে আছে কুসুম? কুসুম নামটা আমিই তোমাকে দিয়েছিলাম.... তুমি খুবই বিরক্ত হয়ে বলেছিলে কুসুম নামটা তোমার পছন্দ না। তোমার অপন্দের এক মেয়ের নাম কুসুম। আমি বারবার কুসুম ডাকতে ডাকতে ভালবাসতাম.... তুমি কুসুম নামটাও ভালবেসে ফেললে.....
তোমাকে দেখার জন্য কারণে অকারণে তোমার বাসায় যেতাম। তোমার ভাইকে পড়ানোর নাম করে তোমার হাতের এককাপ চা অথবা তোমার সাথে খুনসুটি করতে....তোমাকে একটি বার দেখার জন্য কত কাতর হয়েছি....যখন আমার এনজিও তে একটা চাকরি হল রাজশাহীতে..... প্রতি সপ্তাহে একবার ঢাকায় আসতাম শুধু তোমাকে একটি বার দেখার জন্য। আমি যা পেতাম বেতন সব শেষ করে বাবার কাছে টাকা নিয়ে কতবার গিয়েছি....তবুও একটিবারও আফসোস করি নি.... শেষতক বাবাকে বললাম এভাবে এই চাকরি করে পোষাচ্ছে না..... এটা ছেড়ে দিয়ে বিসিএস দেবার চেষ্টা করি বাসায় বসে অথবা অন্য প্রাইভেট চাকরির জন্য চেষ্টা করি....
আমরা কত স্বপ্ন দেখেছি...এক সাথে আমি একটা ভাল চাকরি পেলেই তোমাকে বিয়ে করব। হোক না আমাদের ধর্ম আলাদা.... তুমি আমাকে বলতে.... তোমার সাথে যেন নামাজ পড়ি....মাঝেমাঝে বলতে আমি যে ঘরে নামাজ পড়বো ওই ঘরে তুমি পূজা করবে না.... আমি সবই মেনে নিয়েছিলাম। একটিবারও ভাবি নি তোমার সাথে আমার এ সম্পর্ক আমার বাবা-মা কিভাবে দেখবে....আমি ভেবেছি বাবা-মা মেনে না নিলে আমি বাসা থেকে বের হয়েই না হয় তোমার সাথে ঘর বাঁধবো....
হঠাৎ তুমি বদলে কেন গেলে....তুমি কেন আমার কল ওয়েটিং দেখার পরও আমাকে একবারও কলব্যাক করো না .....এসব কি আমার মনে একবারও সন্দেহের কারণ হয় না!..... সবাই তোমার সম্পর্কে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলতো আমি সব সময়ই হেসে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুমিই আমাকে বাধ্য করেছো তোমাকে সন্দেহ করতে।
আমি নতুন চাকরিটা পেয়ে তোমাকে এতবার ফোন করলাম তোমার ফোনে কল ওয়েটিং.... আমি তোমার বাসায় চলে গেলাম....তুমি যেন একটু বিরক্ত আমাকে দেখে। আমি এক গ্লাস পানি চাইলাম, তুমি ওঘরে আনতে গেলে আমি দেখলাম তোমার ফোনটা সামনে.... তোমার এফএনএফ লিস্টে আমি আর নেই। তুমি পানির সাথে কিছু ফল আর ছুরি এনে টেবিলের উপর রাখলে... আমি তোমাকে আমার ফোন কেন ধরো না এটা জিজ্ঞেস করলাম খুবই সহজভাবে....তুমি খুবই খারাপ ভাবে জবাব দিলে। আমি রেগে গেলাম, এধরনের ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলাম, তোমার হাতটা ধরতে গেলাম....তুমি আমাকে ধাক্কা দিলে....আমি অপমানে সামনে থাকা ছুরিটা দিয়ে নিজেকে শেষ করতে হাতের রগ কাটতে গেলাম....রক্ত দেখে আমি জ্ঞান হারালাম.... হাসপাতালে কিছু ঝাপসা স্মৃতি মনে পড়ে..... তুমি বারবার বলছ, ও রক্ত দেখলে ওর মাথা ঘুরে......
আমি ৩দিন হাসপাতালে পড়ে থাকলাম। একটিবারও তুমি আর খোঁজ নিতে আসলে না.....জানি না তুমি কেমন আছ। তুমি কি একটিবারও আমাকে সোজাসুজি বলতে পারতে না..... আমাকে আর দরকার নেই.... আজও মনে হয় এই প্রশ্নটা তোমাকে করি.... পরক্ষনেই ভাবি তুমি ভাল থাক।
ইতি
(তোমার লিখে কেটে দেয়া) সাকিব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০০