somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিকেটের শচীন যুগের অবসান

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“আরে মামা!! এখন যে ক্রিকেট আরো ইন্টেরেস্টিং হইসে না? ব্যাটসম্যানদের টেকনিকও অনেক ভালো হইসে। আগের মত স্লো খেলে না আর।” কোহলি, ওয়াটসন, গুপ্তিল, ধাওয়ান আর কার কার কথা জানি বলতেছিল তারা।
“হাতে অনেক স্ট্রোক আসছে। আর টিমের রানও এখন প্রায়ই ৩০০ ছাড়ায়। পারসোনাল রেকর্ডও এজন্য বেশি হইতেছে।”
সেদিন বাসে বসে আসতে আসতে পিছনের দুটো স্কুল ড্রেস পড়ুয়া ছেলের কথা বার্তা কানে গেল।

আমি কথাটা শুনে মনে মনেই একটু হেসে উঠলাম। পিচ্চিগুলা কয় কি!!
আমরা যেই যুগে খেলা দেখে বড় হইসি, ওই সময়ে যারা ছিলেন, তাঁদের খেলা! কী আর বলব! ম্যান! That wasn’t just a game then. It was an art…

আমার ক্রিকেট খেলা দেখা শুরু ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সময় থেকে।
তখন তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা এখনকার অত ভাল ছিল না ঠিক। তবে আকরাম, বুলবুল, দুর্জয়, সুজন, নান্নু, অপি, রফিক-এরা এখন আমাদের কাছে লিজেন্ড। তবে তখন মূলত (এখনকার ফুটবলের মত) অন্য দলের খেলা দেখে মজা পেতে হত। আর তখনকার প্লেয়াররাও ছিলেন সেই রকম। বাসে বসে বসে চিন্তা করে দেখলাম। কারা ছিলেন তখন? নামগুলা একবার রিডিং দিয়ে যান দেখি...

*অস্ট্রেলিয়াঃ স্টিভ ওয়াহ, মার্ক ওয়াহ, পন্টিং, মাইকেল বেভান, ড্যারেল ল্যামেন, গিলক্রিস, হেইডেন, জাস্টিন ল্যাঙ্গার ছিল ব্যাটিং এ। বল করত ম্যাকগ্রাহ, গিলেস্পি, শেন ওয়ার্ন।
*ওয়েস্ট ইন্ডিজঃ লারা!!!(একাই ১১জন)।
পেসার ছিলেন কোর্টনি ওয়ালশ, অ্যামব্রোস, মারভিন ডিলন- লম্বু ত্রয়ী।
*শ্রীলঙ্কাঃ অর্জুনা রানাতুঙ্গা, জয়াসুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা, আতাপাত্তু। বোলিং এ ছিল চামিন্দা ভাস, মুরালিধরণ।
*সাউথ আফ্রিকাঃ প্রয়াত হ্যান্সি ক্রনিয়ে, ড্যারেল কালিনান, হার্শেল গিবস, ফিল্ডিংয়ের রাজা জন্টি রোডস, - আর বোলিং করতেন শন পোলক, ল্যান্স ক্রুজনার, অ্যালান ডোনাল্ড, মাখাইয়া এন্টিনি...
*নিউজিল্যান্ডঃ স্টিফেন ফ্লেমিং, নাথান অ্যাস্টল, ক্রিস হ্যারিস, ক্রিস কেয়ার্ন্স। বোলিং এ ছিল জিওফ অ্যালিয়ট, শেন বন্ড।
*ইংল্যান্ডঃ অ্যাডাম হলিওক, আণ্ড্রু ফ্লিনটফ, মার্কাস ট্রেসকোথিক, নাসের হুসাইন, গ্রাহাম থর্প (আমার শৈশবে বেশ কিছুদিন এই দলটা একটু ঝিমায়া গেসিল)।
*জিম্বাবুয়েঃ অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়, নীল জনসন।
*পাকিস্তানঃ সায়িদ আনোয়ার, ইজাজ আহমেদ, ইউসুফ ইয়োহানা (পরে যিনি মোহাম্মদ ইউসুফ হন), ইনজামাম উল হক। বোলিং এ ছিল ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, আকিভ জাভেদ, সাকলাইন মুশতাক...
*ইন্ডিয়াঃ সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাভিড, ভিভিএস লক্ষণ, আজহারউদ্দীন, অনিল কুম্বলে।
আর ছিলেন শচীন, শচীন টেন্ডুলকার...(যার কারণে আজ এত বড় লেখা লেখা।)

ইন্ডিয়া দলটা আমার পার্সোনালি ফেভারিট ছিল না কখনোই। কিন্তু শচীনের কথা আলাদা। শচীন শুধু ইন্ডিয়ার ছিল না। পুরো ক্রিকেটের এক যুগসন্ধিক্ষণের নায়ক ছিল।
আজ এক যুগের অবসান হল।
শচীন চলে যাচ্ছে। আমার ড্রিম টিমের সর্বশেষ প্লেয়ারও নিয়ে ফেলছেন অবসর। এত লম্বা সময় এভাবে একশ কোটি মানুষের আশার ঝুড়ি মাথায় নিয়ে আরো ২০০ কোটির মত মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ বানিয়ে একটানা খেলে দেখাক আর কেউ।
আমার মনে আছে, যখন শেবাগ আস্তে আস্তে ভালো করছিল, তখন আমার এক ফ্রেন্ড আমার সাথে তর্ক লেগেছিল। ওর কথা, শেবাগ নাকি এক সময় টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
আমি হেসে উঠেছিলাম।
আজকাল কোহলি, রায়নাদের নিয়াও অনেকে দেখি এই কথা বলে।

(অবশ্য শেবাগ ছাড়িয়েছেও এক জায়গায়। অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ আর আজাইড়া প্যাঁচাল পড়ার মাঝে।)
Form is temporary. Class is permanent.
তারা সেই লিজেন্ডদের ক্লাসরুমের মাঝেও নাই।

মিস করব ক্রিকেটকে, যেই ক্রিকেট শিল্প ছিল। আজকের মত ব্যবসা, চিয়ার গার্ল দের নাচানাচি, ব্যাটসম্যানদের প্রতি বায়াসড আর ‘ধুমধাম মাইরা রান করা’র ছিল না।

শচীন চলে যাচ্ছেন।
আমাদের বুড়ো বানিয়ে যাচ্ছেন।
I’ll miss Sachin.
I’ll miss all of my favorite players.
I’ll miss them.
I’ll miss cricket.

পুনশ্চঃ
আমার বিশ্ব একাদশঃ
*শচিন,
*জয়াসুরিয়া/ সাঈদ আনোয়ার,
*ব্রায়ান লারা,
*স্টিভ ওয়াহ,
*অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (w),
*মোহাম্মদ ইউসুফ/ মাইকেল বেভান ( পরে ব্যাট করলে লেগে থেকে খেলা ফিনিশ করার জন্য)
*শন পোলক,
*ওয়াসিম আকরাম,
*শেন ওয়ার্ণ,
*মুরালিধরন,
*ম্যাকগ্রাহ।
ক্যাপটেন্সি দেয়া যেতে পারে ওয়াহ অথবা আকরামকে।

অন্যদের মত অন্যরকম হতে পারে। যদি ভুলবশত কোন ভালো প্লেয়ার এর নাম বাদ দিয়ে থাকি, কাইন্ডলি ফিল ফ্রি টু ইনফর্ম।

Picture Courtesy - hitwicket.com
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫২
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×