somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অতি হলিডিও ছবির ফর্মুলা

০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মারাত্মক রকমের অতি হলিডিও ছবির একটা ফর্মুলা দিচ্ছি,দেখুন পছন্দ হয় কিনা। প্রথমেই একটা লম্বা চওড়া নায়ক লাগবে। যাকে দেখলেই যেন মনে হয় এ পারবে, এই একমাত্র পারবে। এই মনে লাগাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, মাথায় রাখতে হবে। একটা প্লে বয় মার্কা নায়ক কে দিয়ে আড়াই মণই ভিলেন কে শায়েস্তা হয়ত আপনি পরিচালক হিসেবে করে দিবেন কিন্তু চক্ষে বড্ড লাগবে, এমন কি অতি হলিডিও ছবিতেও। একটা নায়িকা লাগবে,যখন যেমন ট্রেন্ড চলে তেমন। নায়কের বয়সের সাথে তাল দিয়ে নিতে হবে নায়িকা কে। নায়িকার জন্য সুবিধা হলো শুধু চেহারা থাকলেই চলবে অভিনয় না জানলেও চলবে। এরপর ভিলেন। ভিলেন কে ভিলেনের মত হতে হবে,কোন কথা হবে না। দেখেই যেন মনে হয় কাম সারছে!!
আপনার কাস্টিং হয়ে গেলে প্রচুর টাকা নিয়ে নেমে পড়ুন। কাহিনী খুব একটা জরুরি কিছু না। শুরুতে একটা আমেরিকান দেশাত্মবোধের কড়া ফ্লেভার দিয়ে নিন। খুব খায় পাব্লিক।এক্স মেরিন,এক্স সিআইএ, যা মনে চায় বানিয়ে দিন। নায়িকা কে ঘরে রেখে যেতে পারেন বা স্পটে নায়িকাকে পেতে পারেন। নায়িকাকে ঘরে রেখে গেলে একটা অন্যরকম ফ্লেভার পাবেন। প্রচুর ফুটেজ খেতে পারবেন অনায়াসে। নায়ক এই মরে তো সেই মরে অবস্থায় ফ্ল্যাশ ব্যাকে নায়িকার সাথে মধুর সময়ের ছবি কিংবা নায়িকার বর্তমান অবস্থাও দেখাতে পারেন। সে রান্না ঘরে আলুর সালুন রান্না করছে বা শাবানার মত বটি দিয়া লাও কাটছে!! পাবলিক ইমোশনাল হয়ে যাবে। এবার যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা যেখানে এই হাট্টাকাট্টা নায়ক ছাড়া এই পৃথিবীকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। পৃথিবী হুদাই বললাম, আমেরিকাকে বাঁচানোর কেউ নাই দুনিয়ায় এমন একটা পরিস্থিতি। কি হতে পারে চিন্তা করে সময় নষ্ট করার দরকার নাই। জাস্ট যা ইচ্ছা তাই করে ফেলুন। প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্টের বউ,বাচ্চা যে কোন একটা কে বা সবগুলাকেই ভিলেনের হাতে তুলে দিন। কোন এক অজ্ঞাত কারনে ভিলেন আমেরিকার উপরে ভীষণ ক্ষেপা, আর তাই তার এই স্থুল ভাবে অতি সুচারু প্লান। কিভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বউ পুলাপান কে বা প্রেসিডেন্টকে ধরবে তা নিয়ে এত চিন্তার কিছুই নাই। কয়েকটা আধুনিক কম্পিউটার নিয়ে সমানে কী বোর্ড আঙ্গুল চালানো দেখাতে হবে, তারপর দেখা যাবে সব সিকিউরিটি সিস্টেম জ্যাম। গাড়ি দিয়ে জাস্ট আটার বস্তার মত তুলে নিয়ে চলে যাবে ভিলেন। এখানে একটা কথা আছে, যদি প্রেসিডেন্ট কে কিডন্যাপ করার তাহলে আরেকটা বুড়া ঝানু টাইপ অভিনেতা লাগবে। যে আসলে কিছুই করবে না কিন্তু ভাব দেখাবে সেই উদ্ধার করে আনছে প্রেসিডেন্ট কে। এর মধ্যে কেউ কেউ এই বুড়াকে কান পড়া দিতে পারে প্রেসিডেন্ট কে গাপ করে দিয়েই ও নিজেই এই সুযোগে সাদা বিল্ডিঙের মালিক বনে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বুড়া কে হতে অতি নিতিবান। বুড়ার আর কোন কাম নাই শুধু শেষ দৃশ্যে যখন প্রেসিডেন্ট উদ্ধার হবে তখন চোখে পানি নিয়ে একটা হাসি দিতে হবে,ব্যাস আর কিছু না।
আর যদি প্রেসিডেন্ট কে কিডন্যাপ না করান তাহলে এই দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট নিজেই পালন করবে সমস্যা নাই। সিচুয়েশন কন্ট্রোল রুমে এই বড় বড় টিভি থাকবে, সমানে আপডেট নিয়ে মেয়ে ছেলে দৌড়া দৌড়ই করবে। আসলে করবে ছাতার মাথা, উদ্ধার করবে একা নায়ক নিজে। এরপর সব কিছু সোজা। নায়ক হেটে যাবে। গুলির ফ্যাক্টরির সাথে সরাসরি কানেক্ট থাকবে নায়কের বন্দুকের।গাড়ি ট্যাঙ্ক কামান, বিমান আপনার বাজেট অনুযায়ী উড়াতে থাকুন। একের পর এক বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলে দিন গ্রাফিক্সের সাহায্যে। এক প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে এ রকম হাজারো বিল্ডিং কুরবান দেখাতে হবে আপনাকে। ভিলেন কে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে বড় বড় ডায়লগ মারতে হবে, আর ভিলেনের মূল টার্গেট হচ্ছে সে সারা দুনিয়া শাসন। শেষ মুহূর্তে নায়কের ফ্যাক্টরি লাইন কেটে দিন, ম্যালা গুলি ফুটাইছে এবার হাতে মাইর হবে। মূল ভিলেন কে নায়ক অবশ্যই খালি হাতে পিটাইয়া মারবে। বেসিক রুলের ভিতরে এটা অন্যতম। ভিলেনের একটা চ্যালা থাকবে যে ভিলেন হলেও ঈমানদার ভিলেন, সে বসের সাথে বেঈমানি করে না। ওইটারে আগে মেরে তারপর ভিলেন কে খতম। এরমাঝে টুইস্ট হিসেবে সিচুয়েশন রুমের ভিতরে একটা ডাবল এজেন্ট ঢুকাতে পারেন। আপনার স্ক্রিপ্ট পোক্তা হবে আর কি।

এই তো! এইই ঠিক ঠাক দেখাতে হবে শুধু আপনাকে। কিছু জরুরি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন উদ্ধার হইছে নিশ্চিত হতেই সিচুয়েশন রুমের ভিতরে যারা এতক্ষন হুদাই ভাব দেখাইল ম্যালা কাম করছে তাদের একটা সম্মিলিত চিৎকার। এরপর এক এক করে হোমরা চোমরা জেনারেল বা মোটা কাডা যতগুলা ফেস আছে সব গুলাকে ক্লোজ শট নেওয়া। আরেকটা জরুরি জিনিস হচ্ছে লাস্টে অবশ্যই আমেরিকান আবেগ দেখাতে হবে আপনাকে। এমনি আবেগ দেখাতে হবে যে আপনি যে একটা ভেতো বাঙালি আপনিও যেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মুক্তিতে হাঁপছেড়ে বাঁচলেন,যেন মনে হয় যাক আমেরিকা বেঁচে গেল মানে দুনিয়া বেঁচে গেল এ যাত্রায়। শেষ দৃশ্যে নায়িকা কে অবশ্যই নায়কের সাথে আলিঙ্গনে শেষ করবেন, ম্যালা সিকিউরিটির ফাঁক গলে নায়িককে ঠিক নায়কের বুকের উপরে ঝাপিয়ে পরতে হবে। এখানেই শেষ করতে পারেন বা মেডেল টেডেল পরাচ্ছে প্রেসিডেন্ট সেখানেও শেষ করতে পারেন, আপনার ইচ্ছা।

ভাবছেন মানুষ দেখেবে কিনা? না এই ছবি মোটেও মানুষ দেখেবে না।( আবার পুরষ্কার টুরুস্কার আশা করবেন না যেন, তার ফর্মুলা আলাদা। )যাই হোক মানুষ ছবি দেখবে না তাহলে ছবি কেন বানাবেন? ব্যবসার জন্য বানবেন। সিচুয়েশন রুমের যত ল্যাপটপ আর মনিটর থাকবে সব গুলার নাম বারে বারে দেখান, দুই একটা সাংবাদিক মার্কা সিন রেখে তাদের ক্যামেরা গুলার ব্র্যান্ডটা দেখান। খুজে খুজে এ রকম আরও কিছু বের করে আপনার মূল এবং লাভ ছবি মুক্তির আগেই পকেটে তুলে ফেলুন। এই তো, আর কি চাই!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:১৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×