somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্রষ্টার খোঁজে ও আনাল হক।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চমৎকার সূর্যোদয় দিয়ে আমাদের কর্মব্যস্ততা শুরু আর দিনের শেষের ইঙ্গিত নিয়ে আসে সূর্যাস্ত। এর কোন ব্যত্যয় নেই। পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সূর্যের চারিদিকে ঘুরে চলছে, আবার নিজ অক্ষেও নির্দিষ্ট নিয়মে ঘুরছে, চাঁদ আবার ঘুরছে পৃথিবীর চারিদিকে, এমনি করে উপগ্রহ, গ্রহ, নক্ষত্র, এমনকি পুরো গ্যালাক্সিই একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে। বছরের একটি সময়ে গাছের সব পাতা ঝরে যাচ্ছে আবার আরেকটি সময়ে পুরো গাছটিই সবুজে ভরে যাচ্ছে। প্রাণীকুলের দিকে তাকালে দেখা যায়, এরাও যেন চমৎকারভাবে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলছে। এদের জীবনও যেন একটি ছকে বাধা। প্রকৃতির সবকিছুতেই যেন একটা অর্ডার আছে ও সবকিছুই অর্ডার অনুযায়ী চলছে। গাছের একটি পাতার দিকে তাকালে, একটি ফুলের পাপড়ির দিকে তাকালে, সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকালে,পাখির পালকের দিকে তাকালে, এমনকি একটি ফাটলের দিকেও তাকালে মনে হবে যে,সবকিছুতেই একটি প্যাটার্ন, একটি নক্সা, আছে, প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে আবার তৈরি করা হয়েছে এক অপূর্ব সামগ্রিক ডিজাইন। নক্সার ইটারেশান বা পুনরাবৃত্তি নিয়েই গণিতে তৈরি হয়েছে নূতন একটি শাখা - ফ্রাক্টালস বা ফ্রাক্টাল জিওমেট্রি । এই ফ্রাক্টালস দেখা যায় ফার্নের পাতা, গাছের ডালপালা, ফুলের পাপড়ি, শামুকের খোলস, ময়ূরের পেখম, ক্যাকটাস, আকাশের মেঘ, এমনকি আকাশে বিদ্যুতের ঝিলিকের মাঝেও। মনে হয় যেন কোন এক ডিজাইনার নিখুঁতভাবে এই ডিজাইন করেছেন। অর্থাৎ আমাদের এই সমগ্র মহাবিশ্ব ও মহাবিশ্বের সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত বা ডিটারমিনিস্টিক এবং এই ডিটারমিনিস্টিক মহাবিশ্বের একজন "ডিজাইনার" আছেন। ধর্মগুলো এই ডিজাইনারকে বলে থাকে আল্লাহ/ভগবান/ইশ্বর ইত্যাদি। ধার্মিক ছাড়াও অনেকেই ডিজাইনার থিওরীর পক্ষে। তাঁদের মতে ডিজাইনার মানেই যে ধর্মের ভিত্তিতে একজন আল্লাহ/ভগবান/ইশ্বর হতে হবে, তার নির্দেশ আমাদের মেনে চলতে হবে ও তিনি আমাদের পুরস্কৃত বা তিরস্কৃত করবেন, তা নয়। তবে এই ডিজাইনার দেখতে কেমন বা এই মহাবিশ্ব ডিজাইনের উদ্দেশ্য কি বা শেষ গন্তব্য কোথায় - এসব বিষয়ে প্রমাণিতভাবে এখন পর্যন্ত পরিপূর্নভাবে জানা যায়নি । ডিজাইনার কি একজন নাকি একাধিক কিংবা ডিজাইনারের লিঙ্গ (স্ত্রী/পুরুষ/উভয়/ ক্লীব ) কি, তাও সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে ডিজাইনার থিওরির সমর্থকদের মতে ডিজাইনার অবশ্যই আছেন।

আসলেই কি তাই? সবকিছুই কি সুন্দর একটি ছকে বাধা? কোয়ান্টাম থিওরির প্রবক্তরা প্রথমে দেখতে পান যে, বাইরে থেকে সবকিছুকে একটি নিয়মের মধ্যে চলতে দেখা গেলেও অনেক ভেতরে লুকিয়ে আছে কেওস বা বিশৃঙ্খলা। র‍্যান্ডম নাম্বারের রহস্য ভেদ করতে পারলে সহজেই লটারির মিলিয়ন ডলারের জ্যাকপট জিতে ফেলা যেত। উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, অনুন্নত-উন্নত দেশে একটি নিষ্পাপ শিশুর জন্ম নেয়ার কারণই বা কি? একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার বা ডেভলাপার যখন একটি অ্যাপ্লিকেশন লিখেন, কখনোই সেটা প্রথমবারেই একেবারে নিখুঁত হয় না। লেখার পর ও অ্যাপ্লিকেশনটি রান করার পর খুঁতগুলি বা বাগস বের হয়। তারপরে খুঁতগুলি দূর করতে হয়। খুঁতগুলি দূর করা ছাড়াও প্রয়োজনের ভিত্তিতে নূতন নূতন ফিচার, ফাংশনালিটি যোগ করার মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশনটির কন্টিনিউয়াস ইম্প্রূভমেন্ট চলতে থাকে। আবার কোডগুলিরও ক্রমাগত আপডেট চলতেই থাকে। ডিজাইনার বা স্রষ্টা যদি থেকেই থাকেন, তাহলে এই স্রষ্টাও কি একজন প্রোগ্রামার নন? আমরা কি তার তৈরি করা একেকটি ত্রূটিযুক্ত অ্যাপ্লিকেশন নই? আমার নিজের কথাই বলি। আমি জন্মই হয়েছিলাম একটি ত্রূটি নিয়ে। আমার হার্টে একটি সমস্যা ছিল যাকে বলা হয় Atrial Septal Defect বা ASD. অর্থাৎ আমার হার্টের দুটি আপার চেম্বারের মধ্যে একটি হোল বা ফুটো ছিল যা দিয়ে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত অক্সিজেন-স্বল্প রক্তের সাথে মিশে যেত। এই ধরণের ডিফেক্টিভ মানুষেরা আগে ২০/২২ বছর বয়সের মধ্যেই (অনেকে আরও অনেক আগেই) মারা যেত। এটার জন্য আমার ওপেন-হার্ট সার্জারি করতে হয়েছে। এই যে আমাকে পৃথিবীতে পাঠানোই হল একটা খুঁত দিয়ে - এটাকে আমরা কি বলতে পারি? স্রষ্টা বা ডিজাইনার যদি সবকিছু জানেন ও পারেন, তাহলে তো খুঁত থাকার কথা নয়। তার তো ত্রূটিবিহীন নিখুঁত ডিজাইনের প্রাণী তৈরি করার কথা। নাকি স্রষ্টা আছেন, কিন্তু ডিজাইন ঠিকমতো করতে পারেননি, ফলে খুঁত বা বাগস থেকে গিয়েছে ? এ মূহুর্তে ভুপেন হাজারিকার গানটির কথা মনে পড়ে যায়,

"জীবন নাটকের নাট্যকার কি বিধাতা পুরুষ ?
যেই হোক , নাটক লেখার মত নেই তাঁর হাত !
এ নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে দেখি দিনকে করেছে সে রাত !"

আবার ভাবি, তিনি কি ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভুল করেছেন অর্থাৎ আমাদেরকে নিয়ে এক্সপিরিমেন্ট করছেন ? যেমন, হার্টে ফুটো থাকলে এটি ঠিকমতো কাজ করে কিনা? হার্টের ডিজাইনটি একটু পরিবর্তন করে দিলে (যেমন ফুটো করে) কেমন হয়? একটু একটু পরিবর্তন করে পরীক্ষণের মাধ্যমে নূতন ও আরও বেশি কার্যকরী হার্ট বা অন্যান্য অর্গান বানানো যায় কিনা? অর্থাৎ বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়ন। ধর্মগ্রন্থগুলো বিবর্তনের বিপক্ষে থাকলেও বেশ কিছুদিন আগে পোপ বিবর্তনকে মেনে নিয়েছেন কিন্তু বলেছেন যে, এটাও সৃষ্টিকর্তাই করছেন। স্রষ্টাকে যদি বিবর্তনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে কি তার ক্ষমতা সম্পর্কে মনে সংশয় জাগা উচিত নয়? আবার আমাদেরকে নিয়ে এই এক্সপিরিমেন্ট করার অনুমতি কি আমরা স্রষ্টাকে দিয়েছি? স্রষ্টার এই এক্সপিরিমেন্ট কিন্তু সহজ নয়। এই এক্সপিরিমেন্টের মূল্য দিতে হয় আমাদের মানব জাতিকেই। এজন্যই কি John Green তাঁর The Fault of Stars বইয়ের Hazel Grace এর সাথে একটি কনভার্সেসনে Van Houten কে দিয়ে বলিয়েছিলেন,
“You are a side a effect of an evolutionary process that cares little for individual lives. You are a failed experiment in mutation.”

তবে স্রষ্টা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে খুঁত দিয়ে আমাদেরকে পাঠালেও আমরা মানুষেরা কিন্তু ধীরে ধীরে খুঁতগুলি সারিয়ে ফেলতে পারছি। স্রষ্টা যা পারেনি, আমরা মানুষেরা তা পারছি। দরিদ্র, অশিক্ষিত ঘরে জন্ম নিয়েও অনেকেই নিজ চেষ্টায় নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলে। আবার স্রষ্টা যদি ইচ্ছাকৃতভাবেই আমাদের কাউকে কাউকে খুঁত দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে থেকে থাকেন, আমরা স্রষ্টার সৃষ্টির খুঁতগুলি সারিয়ে তুলে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। স্রষ্টা যে মানুষটিকে জন্মের পর পরই বা কয়েক বছরের মধ্যে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন, সে আরো অনেক বছর সুস্থভাবে বেঁচে থাকে। আবার একটু চিন্তা করলে দেখা যায় যে, আমরা কেউই কিন্তু পুরোপুরি পার্ফেক্টভাবে পৃথিবীতে জন্ম নেই না। সবারই কম-বেশি ত্রূটি থাকে। তাহলে কি স্রষ্টা পার্ফেক্ট একটি জীবন তৈরি করতে অপারগ? নাকি স্রষ্টা একক কেউ নন? স্রষ্টা সুপিরিওর কোন সত্ত্বা নন। আমাদের মাঝেই স্রষ্টা বেঁচে আছেন, এই মহাবিশ্বে আমরা সবাই মিলেই সম্মিলিতভাবে স্রষ্টা। আমরাই পৃথিবীতে জীবন নিয়ে আসি, আমরাই আবার এই জীবনকে বাঁচিয়ে রাখি। আমরা কখনোই মারা যাই না। আমরা আমাদের অর্জিত জ্ঞান জিনেটিক্যালি ও পুস্তকাকারে বিলিয়ে দিই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভেতরে। আমরা বেঁচে থাকি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভেতরে যেমন প্রফেসর নরম্যান "লুসি" মুভিতে লুসিকে বলেছিলেন, "... If you think about the very nature of life-I mean, on the very beginning, the development of the first cell divided into two cells-the sole purpose of life has been to pass on what was learned. There was no higher purpose. So if you're asking me what to do with all this knowledge you're accumulating, I say... Pass it on..." । এভাবেই পরবর্তী প্রজন্ম জ্ঞানবিজ্ঞানে পূর্ববর্তি প্রজন্ম থেকে একটু এগিয়ে যায়। আমরা নিজেরাই ধীরে ধীরে নিজেদেরকে আরো উন্নততর বা ভিন্ন কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। জীবনের এই যাত্রা অবিরাম চলতেই থাকবে। সুপ্রিম কোন পাওয়ারের দেখা আমি আজ পর্যন্ত পাইনি। তবে,আমরা মানুষেরাই সভ্যতা ও এই বিশ্বকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

মনসুর আল হাল্লাজ যথার্থই বলেছিলেন যে, "আনাল হক" অর্থাৎ আমিই সত্য। স্রষ্টাকে খুঁজতে গেলে মানুষ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না।

Mansur al-Hallaj recited,

“I saw my Lord with the eye of the heart

I asked, ‘Who are You?’
He replied, ‘You.’"
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:০০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×