somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চামড়া ও চামড়া শিল্পের কেন আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি!! পর্ব-৫

০৯ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
২০২০ সালের আগস্ট মাস- এই পর্বটা যখন পোস্ট করতে যাচ্ছিলাম তখন কষ্টের একটা সংবাদ শুনে পর্বটা অন্যভাবে লিখব বলে আর পোস্ট দেইনি। আকিজ সাহেবের মেঝ সন্তান জনাব শেখ মমিনুদ্দিন যিনি আকিজ ফুটওয়্যার ও সাফ লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি সে বছরের ২৪শে আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান! খবরটা মিডিয়ায় তেমন ফলাও করে প্রচার না হলেও তার মৃত্যতে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়া শিল্পের যা বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল সেটা মনে হয় কেউ অনুধাবন করতে পারছে না। লেদার সেক্টরের ডাই হার্ট এই ব্যবসায়ীকে নিয়ে আমি এক পর্বে আলোচনা করব(ব্যক্তির থেকে তার কর্ম বড়)। শুধু একটা ছোট্ট তথ্য দেই; সাফ ইন্ডাষ্ট্রিজ বছরে ৫০ লক্ষ কাঁচা চামড়া ট্যানিং করত যা, বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত কাঁচা চামড়ার চারের এক ভাগ। (তথ্যগত ভুল মার্জনীয়)।
এই পর্বটা আর পরিবর্তন করিনি। প্রথমে কিছু তত্ত্ব কথা আছে কেউ মুল তথ্য জানতে চাইলে সেগুলো স্কিপ করতে পারেন
-------------------------------------------------
বাংলাদেশ সরকার চামড়া খাতকে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সম্ভাব্য হিসাবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ মানসম্পন্ন মহিষ এবং গরু; ভেড়া ও ছাগল চামড়া উৎপাদন এবং রফতানি করে যা সূক্ষ্ম টেক্সচার্ড এর জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে। তবে পুরো চামড়া খাত বিশ্বের ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চামড়া বাণিজ্যের মাত্র ০.৫% পূরণ করে।
বাংলাদেশে প্রায় ১১৩ টি ট্যানারি রয়েছে যা প্রতি বছর ১৮০ মিলিয়ন বর্গফুট হাইড এবং চামড়া উৎপাদন করে। এছাড়াও প্রায় ৩০ টি আধুনিক জুতো উৎপাদন কেন্দ্রগুলি উচ্চ-মানের পাদুকা তৈরিতে নিযুক্ত রয়েছে,২৫০০ এরও বেশি ছোট পাদুকা নির্মাতারাও এই খাতে উপস্থিত রয়েছে।
প্রায় ১০০ টি ছোট থেকে মাঝারি চামড়ার পণ্য প্রস্ততকারক এবং সংখ্যক কুলুঙ্গি বৃহত্তর উৎপাদনকারী রয়েছে। এই খাতটি সরাসরি প্রায় ৫৫৮০০০ লোককে নিয়োগ দেয়। বেশিরভাগ ট্যানারিগুলিতে যথাযথ তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ভিদ নেই এবং প্রতিদিন ২০০০০ লিটার ট্যানারি ফ্লুয়েন্ট এবং ২৩২ টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদন করে।
ট্যানারি তরল এবং কঠিন বর্জ্যগুলি একটি সম্ভাব্য দূষণকারী তবে এর একটি সম্ভাব্য মানও রয়েছে। বর্জ্য রূপান্তর করার জন্য নির্দিষ্ট প্রযুক্তি প্রয়োজন। এগুলি অপরিশোধিত এবং সাধারণ থেকে অত্যন্ত পরিশীলিত এবং জটিল হিসাবে পরিবর্তিত হয়। এই প্রস্তাবিত নতুন চামড়া পার্কটি চামড়া শিল্পে একটি সুস্পষ্ট রূপান্তর আনবে বলে আশা করা হচ্ছে,খাতটির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি সহ উৎপাদন,পণ্য বৈচিত্র্য এবং নতুন পণ্য লাইনগুলিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। টেকসই এবং ক্লিনার উৎপাদন পরিবেশের উপর বোঝা না রেখে উন্নয়নের মূল সমস্যা হয়ে উঠবে।
Journal- Society of Leather Technologists and Chemists 97(1):25-32 • January 2013
Banglapedia 2010
র্তমানে (২০১০) বাংলাদেশে প্রায় ২০৬ টি ট্যানারি ইউনিট রয়েছে এবং তারা স্থানীয়ভাবে পাওয়া কাঁচা আড়াল এবং স্কিন ব্যবহার করে। এর মধ্যে ১১৪ টি বৃহত্তর এবং মাঝারি ইউনিট (স্থানীয় মান অনুসারে) এবং শিল্প অধিদপ্তরে নিবন্ধিত রয়েছে। অন্যগুলি বেশিরভাগ ছোট এবং কুটির ধরণের এবং তারা সরকারের নিবন্ধে নেই। ট্যানারি শিল্পের সম্ভাব্যতার কথা বিবেচনা করে, ততক্ষণে ৩৫টি ট্যানারিগুলি আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে এই ট্যানারিগুলি আমাদের কাঁচা চামড়ার ৬০% আন্তর্জাতিক মানের আকারে রূপান্তর করতে সক্ষম। প্রায় ১৯০ টি ট্যানারি ইউনিট ঢাকা হাজারীবাগে ট্যানারি এস্টেট নামে পরিচিত মাত্র ৬০একর জমিতে অবস্থিত।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের রেকর্ড অনুসারে ট্যানিং শিল্পে প্রায় ৬০০০০ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও বিদেশি নাগরিকসহ প্রায় শতাধিক যোগ্য প্রযুক্তিবিদ রয়েছেন যারা বিভিন্ন ট্যানারিতে কাজ করছেন। ট্যানারি শিল্পে এখন পর্যন্ত মোট মূলধন বিনিয়োগ করা হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে সরকার / ব্যাংক অর্থ প্রায় ১.২ বিলিয়ন টাকা। কাঁচা আড়াল এবং স্কিন সংগ্রহ এবং ট্যানারি ইউনিটে তাদের উপলব্ধ করার প্রক্রিয়াতে প্রায় ১৫০০ জন জড়িত ,ট্যানারি শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রায় ১০০ টি সংস্থা রাসায়নিক আমদানি করে।
বাংলাদেশ প্রায় ২২০-২২০ মিলিয়ন বর্গফুট কাঁচা চামড়া উৎপাদন করে, যার প্রায় ৮৫ ভাগ ক্রাস্ট এবং সমাপ্ত আকারে রফতানি করা হয়। বাকিটি দেশীয় বাজারে সরবরাহের জন্য চামড়ার পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চামড়া বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রফতানি আইটেম। তবে এই খাত থেকে রফতানি আয় অতীতের কোনও পূর্বাভাস-যোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করতে পারেনি। যেহেতু চামড়ার উৎপাদন ও সরবরাহ মাংসের প্রাপ্যতা এবং মাংসের চাহিদার উপর নির্ভরশীল, তাই অল্প সময়ে চামড়ার মোট সরবরাহ বাড়ানো যায় না, তাই এই খাত থেকে আয় বাড়ানোর একমাত্র উপায় উচ্চ উৎপাদন এবং রফতানি চামড়া জাত পণ্যগুলির মূল্য দিন যার জন্য আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজার চামড়ার জন্য অত্যন্ত ওঠানামা করছে, তাই এর রফতানি থেকে আয় হয়। ২০০১ অবধি এই খাত থেকে বার্ষিক রফতানি প্রাপ্তি এক বিলিয়ন টাকার নিচে থেকে যায়। তবে ২০০৮-০৯ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে বার্ষিক আয় বেড়ে ৩৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের কয়েকটি নামী ট্যানারি হলেন ঢাকা লেদার,অ্যাপেক্স ট্যানারি, লেক্সকো,করিম লেদার,সমতা ট্যানারি,বে ট্যানারি,রিলায়েন্স,কালাম ব্রাদার্স,আ-মদিনা,মিল্লাত, প্রগতি,আনোয়ার,আমিন,ক্রিসেন্ট কিড লেদার ইত্যাদি।
-----------------------------------------
মুল তথ্যঃ এগুলো তো তত্ত্ব কথা-এবার আমরা আসল দৃশ্যটা দেখি;
পনি হেমায়েতপুর গিয়ে খবর নিয়ে দেখেন; সেখানে মাত্র ৬০ থেকে ৭০টা ট্যানারি আছে। তার মধ্যে বৃহৎ আকার ট্যানারির মধ্যে শুধু এপেক্স-ই পুরো-দমে উৎপাদন করছে। বাকি সবগুলি ছোট ও মাঝারী মানের ট্যানারি- যাদের মধ্যে বেশীর ভাগই জব ওয়ার্ক করে ( ভাড়া ভিত্তিতে কাজ)। কিন্তু উপরে উল্লেখিত বড় বড় ট্যানারি গুলো কোথায়??
ওদের প্রায় প্রত্যেকের নামেই ওইখানে জমি বরাদ্দ দেয়া আছে। কেউ খানিকটা কন্সট্রাকশন করে ফেলে রেখেছে, কেউ কাজই শুরু করেনি কেউবা কোনরকম একটা স্থাপনা তুলে ভাড়া দিয়ে রেখেছে।
৯০ এর দশকের ট্যানারি চামড়া ব্যবসার স্বর্ণ যুগে শাহজালাল ট্যানারি, ফিনিক্স ট্যানারি, করিম লেদার, বে ট্যানারি, লেসকো ট্যানারির, সমতা,প্রগতি, ক্রিসেন্ট এর মত বিশাল বিশাল ট্যানারি শিল্পগুলো যেভাবে ট্যানারি ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য করেছে দুই আড়াই যুগের ব্যবধানে তারা হারিয়ে গেল কেন?
এখন কাদের হাত ধরে এই ব্যবসা এগিয়ে যাবে? শুধু এপেক্স, যশোরের আকিজ, খুলনার সুপারএক্স, আর চাঁটগায়ের মদিনা আর রিফের হাত ধরে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্প?
শুধুমাত্র আকিজ বাদে বাকি সবাই ব্যাঙ্ক এর দেনায় জর্জরিত। কখন এরাও মুখ থুবড়ে পরে কে জানে!!
৯০ এর দশক ছিল ট্যানারি শিল্প বা বাণিজ্যের স্বর্ণ যুগ! সেই সময়ের হাজারীবাগের রমরমা ট্যানারি বাণিজ্য এখন শুধু স্মৃতির কঙ্কাল। জার্মান, ইতালি, স্পেন, কোরিয়া, জাপান,চীন, ভিয়েতনাম সহ অনেক বড় বড় দেশ বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়া-জাত পণ্য কেনার জন্য ভিড় করত। কিন্তু চামড়া ব্যবসায়ীদের অসাধুতা, পরিবেশ দূষণ, ব্যাঙ্ক লোণের নয়-ছয় সহ পরবর্তী প্রজন্মের ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় না রাখা, কিছু আন্তর্জাতিক কন্সপিরেসি ও সর্বোপরি সরকারের ভুল নীতির জন্য ধীরে ধীরে চামড়া বাণিজ্য নিন্মমুখী হয়ে এখন ধ্বংসের শেষ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।
এর সাথে আরও ছিল এলাকা ভিত্তিক ও রাজনৈতিক কোন্দল, সংগঠন গুলোর সমন্বয় হীনতা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অভাব।
প্রথমে আসি ব্যাঙ্ক-লোন নিয়ে; প্রতি বছর কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক গুল বিশাল আকারের লোণ দিত এইসব বড় বড় ট্যানারি মালিকদের। ব্যাংকের দুর্বল নিয়মনীতি, ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ সাথে রাজনৈতিক প্রভাব সাথে ট্যানারি মালিকদের লোণের টাকা আত্মসাতের প্রবণতায় এই শিল্পের অগ্রগতিকে মন্থর করে দেয়।
রে নেই বড় একটা ট্যানারি কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ২০০ কোটি টাকা লোণ পেল। তেনারা সেই লোণের অর্ধেক টাকাই প্রথম দফায় সরিয়ে ফেললেন। সেই টাকা দিয়ে তারা গাড়ি বাড়ি জমি সহ অন্য ব্যবসায় লগ্নি করলেন কিংবা বিদেশে পাচার করলেন। বাকি টাকা দিয়ে চামড়া কিনে আগের লোণ-তো শোধ ই করলেন না উপরন্তু ফের রপ্তানি আদেশের বিপরীতে নতুন করে লোণের আবেদন করলেন। বাংলাদেশের বেশীরভাগ ব্যবসায়ীরা ঋণ খেলাপি হলে হয় ব্যাংক কে বাধ্য করেন পুনঃ তফসিল করতে না হয় নতুন লোণ দিতে।
ব্যবসায়ীদের এই ভয়ঙ্কর ফাঁদে পা দিয়ে ফেঁসে গিয়ে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয় লোণ পুনঃ তফসিল করতে বা ফের লোণ দিতে। কিন্তু ব্যাঙ্কিং ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নতুন নতুন নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করেন। ব্যাবসায়ীরা আবার সেই আইনের ফাঁক খোঁজেন-এক সময় বের ও করে ফেলেন নতুন নতুন রাস্তা। ব্যাংকের আইন যত কঠিন হয় নতুন ও উঠতি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে চলার রাস্তা তত কঠিন কিংবা রুদ্ধ হয়। কিন্তু যারা একবার পাহাড়ের চুড়ায় উঠে বসেছেন তারা সেখানে বহাল তবীয়তে বসে ছড়ি ঘোরান।
একসময় দিশেহারা ব্যংকগুলো উপায়ান্তর না দেখে তাদের কর্মকর্তাদের মাঠে নামান। কত টাকার চামড়া কিনল কত পিস চামড়া সংগৃহীত হয়ে ফ্যাক্টরিতে আসল। কতটুকু চামড়া প্রসেস হল আর রপ্তানি বা স্তানীয়ভাবে বিক্রি কতটুকু হল এসব তদারকি করতে যখনি তারা শুভঙ্করের ফাকি পেলেন তখুনি এই শিল্পের সাথে জড়িত মালিকেরা, রাজনৈতিক প্রভাব, হুমকি-ধামকি ও অবৈধ অর্থ ঢেলে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাইলেন।
বুও কেনা চামড়ার সাথে বিক্রির সামঞ্জস্য না থাকায় ব্যাংক সেক্টর বাধ্য হল তাদের স্টোরে পাহারাদার নিযুক্ত করতে। তখন সেসব ছেড়া ফাটা জুতো আর রঙচটা উর্দি পরা আধপেট খাওয়া দারোয়ানদের ম্যানেজ করে কিংবা গভীর রাতে পেছনের দরজা দিয়ে সেই সব চামড়া পাচার হতে থাকল। কখনো বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে কখনোবা অন্য কোন ট্যানারিতে।
ধীরে ধীরে ব্যাংকের নীতিমালা আরো কঠিন হল। তারা মরিয়া হয়ে ঊঠল তাদের কর্জের টাকা ফিরে পাবার জন্য। দু’চারজনের বিরুদ্ধে তারা কোর্টে গিয়ে নালিশ ও জানাল।
পরিবেশ দুষন, চামড়ার মানের অবনতি, সময়মত ডেলিভারি না পাওয়া, বিদেশি ক্রেতাদের স্বার্থের আঘাত, অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও এক্সপার্টিজের অভাব, প্রতিযোগী আর প্রতিবেশী দেশের কুট চাল সহ বিভিন্ন কারনে বিদেশী ক্রেতারা ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করল।
ট্যানারি মালিকেরা বুঝে ফেলল, এই বানিজ্যের পতন নির্ধারিত হয়ে গেছে। মাখনটুকু খেয়ে তখন তাদের সটকে পড়ার পালা।
পুরনো লর-ঝড়ে মেশিন, পকিস্থান আমলের স্থাপনা, সরকারি লিজ নেয়া জমি আর কিছু ফিনিশড আনফিনিশড চামড়া রেখে তারা ব্যাবসায় দেঊলিয়াত্ব ঘোষোনা করে কিংবা শুধু ব্যাবসায়িক সাইনবোর্ড দেখিয়ে শুধু প্রভাব বিস্তারের ও আরো কিছু অর্থ আত্মসাদের জন্য এ্যাসোসিয়েশনের মুখ্যপদ্গুলো ধরে রেখে ধরি মাছা না ছুই পানি খেলা খেলতে থাকল।
বাংলাদেশের গর্ব করার মত বড় বড় ফ্যাক্টরি গুলো এক এক করে বন্ধ, লে অফ, দেঊলিয়াত্ব ঘোষনা করতে থাকল। প্রথমদিকে বন্ধ হল শাহজালাল গ্রুপের শাহজালাল ট্যানারি, এরপরে ফনিক্স, লেসকো, করিম লেদার, সমতা প্রগতি সহ বড় বড় ট্যানারিগুলো। কিন্তু সবারই নামে জমি বরাদ্দ আছে হেমায়েতপুরের ট্যানারি জোনে।
এই বন্ধের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন; বে ট্যানারি আর ক্রিসেন্ট।
অবশ্য ভয়াবহ ঋনভারে জর্জরিত থাকলেও এদের কেউ কেউ তাদের পরবর্তি প্রজন্ম কে বিদেশ থেকে ডিগ্রী কিনে দিয়ে চেষ্টা করেছে ব্যাবসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। কিন্তু সেসব কতিপয় স্মার্ট অতি শিক্ষিত ছেলে-পেলেরা প্রথম দফায় রনে ভংগ দিয়ে বাপ-দাদার শত শত কোটি অবৈধ টাকার আগুনে আত্মহুতি দিয়ে নামী দামী ক্লাবে গিয়ে বেহুঁশ আছে।

দের কাজ হল সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়ে কেন তাদের এই দুরবস্থা হল এই নিয়ে এই নিয়ে মায়াকান্না করে, দেশকে কত ভালবাসে এর প্রমান দেয়ার নিমিত্তে, বাকি যেটুকু তলানিতে আছে সেটুকু ছেঁকে খাওয়ার লোভে সরকারের নীতিনির্ধারকদের চোখে রঙ্গিন চশমা পরিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতের তকমা লাগিয়ে সরকারের কোষাগার খালি করার ধান্দায় মেতে উঠল।
এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসল তখন চামড়া শিল্পের আদপে শুধু খোলস আছে কিন্তু অন্তঃসারশূন্য!তখন বাংলাদেশ প্রায় শুধু চায়নিজ বায়ারদের কাছে জিম্মি। যদিও তখনো কোরিয়া, স্পেন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান পুরোপুরি ব্যবসা গুটিয়ে নেয়নি। জাপানিজ বায়াররা চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তাদের সব রকমের প্রচেষ্টা দিয়ে চামড়া না হোক এদেশের চামড়া-জাত পণ্যের কারখানাগুলোকে সচল রাখতে।
কি কারণে কেন যেন কোরিয়া স্পেন তাইওয়ান সরে পড়ল এর উত্তর আমার জানা নেই। ২০১০ এর পরে বাংলাদেশের চামড়ার বাজার একচেটিয়া দখল করে ফেলল চায়নিজ বায়াররা।
গত শেঠ, মীর মদন, মীর কাসেমের মত মত লোকেরা বাংলাদেশে সব যুগে সব সময়ের মতই আছে বা থাকবে। শুরু হল বাংলাদেশের অসাধু কিছু অতি বুদ্ধিমান(!) ,অর্থ-লোলুপ বিকৃত মানসিকতার মানুষদের বুদ্ধি –পরামর্শ আর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় চৈনিক খেলা!
চাইনিজদের মনোপলি ব্যবসার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো। বিগত কয়েক বছরে ২.৬০-২.৮০ মার্কিন ডলার মূল্যের ফিনিশড লেদার এর দাম নেমে এসেছে ১.৭০-১.৮ ডলার। লাইনিং আর ক্রাস্ট চামড়া যেখানে আগে বিক্রি হত ১.২০ থেকে ১.৫০ ডলার – সেতার মূল্য নেমে এসেছে .৭৫-.৯৫ ডলারে। চিন্তার কোন কারণ নেই- দাম আরও কমছে।
ট্যানারি মালিকেরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিকল্প পথ না পেয়ে- বাধ্য হচ্ছিল ওই দামে চামড়া দিতে। কিন্তু তখন শুরু হল আরেক খেলা; চামড়া ব্যবসায়ীরা যে, দু পয়সা কামানোর জন্য ছল চাতুরী করছে না তা নয়। সুযোগ পেলে তারা বেশ সততার সাথে সে কাজ করছে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই- তবে চায়নিজরা অতি ধূর্ততার সাথে অর্ডার দিয়ে প্রোডাক্ট রেডি হবার পরে কয়ালিটি চেকিং এর নামে অল্প সংখ্যক ভাল কিছু চামড়া সিলেক্ট করে বাকিগুলো রিজেক্ট করে রেখে যাচ্ছে। আরেক গ্রুপ আরও এক কাঠি সরেস; তারা শুরু থেকেই তালবাহানা করে পুরো চামড়াটাই টেকনিক্যাল রিজেক্ট করে ফেলে রেখে যাচ্ছে।
ড়ল গিলে চামড়া ব্যবসায়ীর মুখে তখন ফ্যানা এসে গেছে! কোটি কোটি টাকার টি আর মাল নিয়ে কি করবে এই ভেবে তার কুত্তা পাগল দশা। তখন দেবদূতের মত অন্য দল; তারা সেই বায়ারেরই বাংলাদেশের প্রতিনিধি বা অন্য কোন কোম্পানির নামে চায়নিজ গ্রুপ।
চামড়ার মূল্য যদি আমি বাদ ও দেই তাহলেও এক স্কয়ার ফুট চামড়া চায়নিজ ও ইউরোপিয়ান কেমিক্যাল দিয়ে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির প্রসেস করতে লাগে ৬৫-৭০ টাকা। প্রায় সেই দামেই বা তার থেকেও কম দামে সেটা বিক্রি করতে হয় তখন!!!
কাঁচা চামড়ার দাম আপনি পাবেন কোত্থেকে। যাদের ২০-৫০ কোটি টাকার স্টক লটের ধকল সামলানোর ক্ষমতা ছিল। তারা তাদের আখের গুছিয়ে কেটে পড়েছে। পড়ে থাকা এই ভুখা নাঙ্গা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা চামড়া বাজারের আর কি উন্নতি আশা করতে পারি।
এই পর্যায়ে আমি যে কথাটা বলে নিশ্চিত অনেকের বিরাগভাজন হব সেটা হচ্ছে; প্রতি বছর কোরবানি ঈদ আসলে সব মিডিয়ায় কতিপয় মানুষ গরিবের হক মারার কথা বলে যে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয় তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ভাইরে ১ কোটি গরিব বাঙ্গালী এখনো হয়তো কম বেশী ৫০০/১০০০ টাকা পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থা বেশী দিন চলতে থাকলে সামনে দেড় দুই কোটি কাঁচা চামড়ার পঁচা গন্ধে দেশ ছেড়ে ভাগতে না হয়?
ভারত আমাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া বৈধ উপায়ে নিবে না কারণটা রাজনৈতিক ও ধর্মীয়! ওরা গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে সেটা কখনই তথ্যগত-ভাবে স্বীকার করে না। বলে মহিষ অথবা ডোমেস্টিক ক্যাটল। তবে ব্লু ওয়েট মহিষের চামড়ার ছদ্মনামে রপ্তানি হলেও হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:১৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×