somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চামড়া ও চামড়াশিল্পের কেন আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি?

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতি বছর এই কোরবানি আসলেই কাঁচা চামড়ার মুল্যের ভয়াবহ নিন্মমুখিতা,অব্যাবস্থাপনা,ব্যাবসায়ীদের লালসা বিশেষ করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের বিষয়, সরকার নতুন নতুন নীতি,অদক্ষতা, কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা নিয়ে মৌসুমী ব্যাবসায়ীদের ভীতি, ব্যাংকের লোন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা,চামড়া উতপাদনের সাথে জড়িত ব্যাবসায়ী নেতা ও সংগঠনগুলোর উল্টা-পাল্টা বক্তব্য নিয়ে মিডিয়া সরগরম হয়ে ওঠে।আর সেই নিয়ে শুরু হয় সারা দেশের আপামোর জনগনের ক্ষোভ-হতাশা!
কাঁচা চামড়ার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাবস্যীরা উপযুক্ত দাম না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেগুলো ছুড়ে ফেলে দেয়; ভাগারে,নর্দমায় অথবা নদীতে। আর সঠিক সংরক্ষনের অভাবে নষ্ট হয়ে যায় হাজার হাজার মুল্যবান চামড়া।ক্ষোভে দুঃখে কেউ কেউ চিরদিনের জন্য এই ব্যাবসা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়- কেউবা তার শেষ সম্বল বা পুঁজি হারিয়ে আত্ম –হননের উপায় খোঁজে।
ভয়ঙ্কর এই টালমাটাল সময়ে কেউ কেউ এর পেছনের কারসাজির কারিগর হিসেবে দায় চাপিয়ে দেয় মুল ধারার ব্যাবসায়ী আর সরকারের উপর- আর বাকি সবাই বাহবা দেয়। যেন এদের উপরে দায় চাপালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
এর পাশাপাশি সবার মনে একটাই প্রশ্ন; প্রায় বিনামুল্যে চামড়া কিনে কেন চামরাজাত পন্যের আকাশছোঁয়া দাম ধরা হয়? ভারত আমাদের থেকে কাঁচা চামড়া চোরাই পথে নেবার পরেও কেন তাদের চামড়াজাত পন্য এত সস্তা?
যেখানে ‘শ্রী’ লেদারের একজোড়া লোফারের মুল্য ৮০০ রুপি হলে আমাদের এখানে ৩/৪ হাজার টাকায় কিনতে হয়? তারপরেও সন্দেহ থেকে যায় এটা চামড়া নাকি সিনথেটিক( রেক্সিন,পি উ,ভক্স লেদার)?
এ বড় গোলমেলে ব্যাপার!
এ শতকের শুরুতে পতোন্মুখ গার্মেন্টস ব্যাবসার বিকল্প হিসেবে ভাবা হয়েছিল চামড়া শিল্পকে। সে জন্য সরকার চামড়া শিল্পকে ‘এমারজিং এক্সপোর্ট সেক্টর’ হিসেবে ঘোষনা( নেক্সট টু আর এম জি) দিয়ে- সবচেয়ে প্রায়োরিটি-দেবার পরেও বাংলাদেশের চামড়া সেক্টরের কেন এ দৈন্য দশা?
২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এই শিল্পটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত ছিল। শিল্প কর্মসংস্থান তৈরিতেও বেশ ভাল ভূমিকা পালন করেও কেন পিছিয়ে পড়ল এ খাত?
প্রতিফুট চামড়া এক্সপোর্ট করলে ক্যাশ ইনসেনটিভ ১০% আর ফ্যাক্টরি সাভার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় হলে অতিরিক্ত ৫% সাথে টিডিএস ০.৬ ভাগ মওকুফ (এই বিষয়টা নিয়ে একটু দ্বীধান্বিত আছি।যদি কোন ভুল থাকে তাহলে পরে এডিট করে দিব)। চামড়াজাত পন্য রপ্তানীর বিপরিতে ১৫% পর্যন্ত ক্যাশ ইনসেটিভ বা প্রণোদনা ঘোষনার পরেও কেন আমাদের এই শিল্পটা দিনের পর দিন চোরাবালির গহীনে তলিয়ে যাচ্ছে?
কেঊ এই সমস্যার গভীরে যেতে চায় না। সবাই তার ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে কঠিন কঠিন জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে খালাস!
এভাবে একটা করে কোরবানির ঈদ চলে যায়- মানুষ ভুলে যায় সবকিছু। ফের আবার নতুন কোরবানির ঈদের আগে শুরু হয় সেই আলোচনা। কিন্তু সমস্যার উত্তরণ তো হয়ই না বরং আরো ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম হয়।
আমি কোন বিশেষজ্ঞ বা বিজ্ঞ নই- তবুও কেন বলছি এ কথা?কেনই বা আমার এই ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে সমস্যার গভীরে যেতে চাইছি? এর কারন যারা এই নিয়ে কথা বলবেন বা যাদের বলা উচিত সেই সব বিশেষজ্ঞ বা বিজ্ঞজনের মুখে কুলূপ এঁটে রাখার প্রবণতা-তারা কারো বিরাগভাজন হতে চায়না, তারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে চায়না বলে!কিংবা দেশের কি হল না হল তাতে কার কি এসে যায়- অথবা কে শুনবে কার কথা?
(পুরো বিষয়টা গবেষনা-ধর্মী বা তথ্যমূলক পর্যালোচনা নয়! এখানে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে। ব্লগে ‘লেদার টেকনোলজি’র কোন এক্সপার্ট থাকলে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে খুশি হব।আর কেউ আরো বেশী তথ্য দিয়ে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ হব।পুরো বিষয়টা আমি খুব সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করব যাতে সবারই বুঝতে সুবিধা হয়। এখানে সবার-ই অংশগ্রহন জরুরি!)
আসুন প্রথমে আমরা জেনে নিই চামড়া প্রক্রিয়াজাতের ধাপগুলো সন্মন্ধে তাহলে পরের বিষয়গুলো বুঝতে সুবিধা হবে;
বাংলাদেশে মোটামুটি চার ধরেন পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়ঃ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া।
সবচেয়ে মুল্যবান ও বিস্তৃত পরিসরে গরুর চামড়া ব্যাবহৃত হয়। এর পরেই আছে ছাগল বা ভেড়া। ভেড়ার চামড়া বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করলে এটা বেশ মোলায়েম ও নরম হয়- যা দিয়ে মুলত; হালকা জ্যাকেট, অন্তর্বাস, গ্লভস, জুয়েলারী বক্স, মেয়েদের ফ্যাশানেবল ওয়ালেট পার্স ও ছোট ব্যাগ তৈরি করা হয়। ছাগলের চামড়াও অনুরুপ কাজে ব্যাভহৃত হয় কিন্তু তুলনামুলকভাবে একটু নিন্ম মানের ও কম দামের পন্য তৈরি করা হয়।
কিন্তু মুল সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের বেশীরভাগ বড় ট্যানারির ছাগল ভেড়ার চামড়া প্রসেসিং এ অনীহার জন্য এটা মুলত অভ্যান্তরিন উতপাদনে ব্যাবহৃত হচ্ছে।
একখন্ড ক্রাস্ট বা সেমি ক্রাস্ট ( ৩-৬ স্কঃ ফুট) ছাগল বা ভেড়ার চামড়া( মুলত ছাগলের লাইনিং বলা হয়) সাইজ ভেদে ৮০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়( ব্যাগ ,জুতা, ইনসোল, সুকতলা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়)। এবং রংবিহীন শুকনো শক্ত ভেড়া বা ছাগলের চামড়া( যাকে ভেরি’ বলা হয়) সেটা পাউন্ড(!) দরে বিক্রি হয়।( যেটাতে ইচ্ছেমত ম্যানুয়াল ডাইং- হাতে রঙ ও এনগ্রেভিং- কারুকাজ করা যায়। রেফ; আড়ং এর জুয়েলারি বক্স, কিছু মেয়েলী ব্যাগ ও ফটোফ্রেম সহ অন্যান্য কিছু)
এবার আসি, মহিষের চামড়ায়-মহিষের চামড়ায় স্থায়িত্ব ঘনত্ব ও পুরুত্ব অন্যান্য চামড়া থেকে অনেক বেশী। সেই সাথে এটা টেকসই চামড়া। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মহিষের চামড়া খুব ভারি ও পুরুত্ব বেশী হওয়ার জন্য এটা প্রক্রিয়াজাত করন বেশ সমস্যা। এবং বিস্তৃত পরিসরে এই চামড়া ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য প্রায় সব ধরনের ট্যানারি এই চামড়া প্রসেস করতে অনীহা প্রকাশ করে।
বেশীরভাগ মহিষের চামড়াই ব্লু ওয়েট অবস্থায় স্প্লিট বা চিরে ফেলা হয়( সিঙ্গেল পার্ট বেল্ট হলে চামড়া চেরা হয় না।) নীচের সেই খন্ডিত অংশকে বলে স্প্লিটেড লেদার যা মুলত; বেল্টের অভ্যান্তরে, ব্যাগ, জুতা সহ অন্যান্য পন্য উৎপাদনে অভ্যান্তরিন লাইনিং হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ্য; চায়না তাদের মাঝারি মুল্য ও মানের চামড়াজাত পন্য গরু ও মহিষের স্প্লিট চামড়ার উপরে সিনথেটিক কোটিং করে হুবুহু মুল চামড়াজাত পণ্যের মত পন্য তৈরি করে। যেটাকে পিওর চামড়া ভেবে প্রায় সবাই ভুল করে।
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরনের ধাপগুলো;
সংরক্ষন
চামড়া তৈরির প্রক্রিয়া শুরুর আগে কাঁচা চামড়ার পচন বন্ধ করতে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে সল্টিং বা লবনীকরন,চিলিং বা হিমায়ন এবং জৈব-প্রতিরোধের ব্যবহার।

ভেজানো
চামড়াগুলো থেকে লবন ও ময়লা দূর করার জন্য কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এটি সংরক্ষণজনিত প্রক্রিয়া ও পরিবহণের সময় শুকিয়ে যাওয়া চামড়াকে পুনরায় আদ্র ও মোলায়েম করা ।
পেন্টিং
পেইন্টিং এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সালফাইড মিশ্রন ব্যবহার করে চামড়া থেকে পশম সরানো যায়।

প্রথম ও দ্বীতিয় প্রক্রিয়া সাধারনত একসাথে করা হয়। চু্ন, ক্লোরিন, সালফাইড সহ অন্যান্য কেমিক্যাল ও প্রচুর পরিমান যোগ করে একসাথে বিশাল ড্রামে দীর্ঘ সময় ধরে ঘোরানো হয়। এর ফলে চামড়া থেকে পশম, ময়লা, লবন, ঝিল্লি দূর হয়ে যায়। চামড়া থাকে ভেজা মোলায়েম, অল্প গন্ধ যুক্ত, ও খানিকটা নীল বরনের। যাকে বলা হয় ব্লু ওয়েট ( ভেজা নীল) চামড়া।
আমাদের নদী দুষন এর জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী –চামড়া ব্লু ওয়েট করার জন্য ব্যাবহৃত কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য পানি।

Fleshing (ফ্লেসিং)
একটি মেশিনের মধ্য দিয়ে নীচের দিকের মাংসল টিস্যু অপসারণ করার হয়। এই পর্যায়ে কিছু চামড়া গুলোকে স্প্লিট বা বিভক্ত করা হয়।

Deliming (ডিলিমিং)
ডিলিমিংয়ের মূল কাজটি হ'ল ধীরে ধীরে চামড়ায় থাকা ক্ষারকে হ্রাস করা।এছাড়া ডিলিমিংয়ের সময়ে এর মধ্যে থাকা অন্যান্য কেমিক্যালের যৌগ, স্কুড সহ সবকিছু অপসারন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে এটালে ফাইনাল ট্যানিং এর জন্য প্রস্তুত করা হয়।
( এই পর্যায়ে আরো কিছু কঠিন প্রক্রিয়ার যেমন; (Bating, Pickling, Degreasing) মধ্যে দিয়ে চামড়ার তেল ঝরানো, গুনাগুন, স্থায়িত্ব ও মান বাড়ানো হয়।)

এরপরে
ট্যানিং ;
ট্যানিং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হতে পারে যথাঃ
খনিজ ট্যানেজঃ বেশিরভাগ চামড়া ক্রোমিয়ামের লবণের সাহায্যে ট্যানড হয়।
অ্যালডিহাইড এবং তেল ট্যানেজঃ অ্যালডিহাইড এবং তেল দিয়ে টান দেওয়ার ফলে খুব নরম চামড়া উত্পাদন করে এবং এই চামড়া পরিষ্কারযোগ্য এবং ধোয়া যায়। ফ্যাশন লেদার ইন্ডাস্ট্রিজে এই ধরনের চামড়া ব্যাবহৃত হয়।
উদ্ভিজ্জ ট্যানেজ
বিভিন্ন উদ্ভিদের নির্যাস দিয়ে এই প্রক্রিয়ায় বাদামী বর্ণের চামড়া তৈরি করে যা ঘন এবং দৃঢ় হয়। এই ধরণের চামড়া জুতার আস্তরণ,ব্যাগ এবং কেস,বেল্ট উত্পাদন করতে ব্যবহৃত হয়।( বাইরের বায়ারদের সবচেয়ে বেশী পছন্দের উদ্ভিজ বা ভেজিটেবল লেদার। কিন্তু এর উৎপাদন খরচ বেশী।)
বিদারক বা Spliting
এই পর্যায়ে চামড়া গুলোকে যতটুকু থিকনেস বা পুরুত্ব দরকার সেই হিসেবে স্প্লিট বা বিভক্ত করা হয়।
এবং এর কয়েক ধাপ পরে আসে ডাইং

বিভিন্ন ধরণের রঙের চামড়ার রঙিন ফ্যাশনের প্রয়োজনীয়তা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু চামড়া শুধু উপরি অংশ রঙ করা হয়। আবার কিছু চামড়ার রঙ ভিতরে প্রবেশ করাতে হয়।
Fatliquoring বা ফ্যাট
ফাইবার লুব্রিকেট করতে এবং চামড়া নমনীয় এবং নরম রাখতে তেল প্রয়োগ করা হয়। এই তেল ব্যাবহার না করলে চামড়া শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শক্ত হয়ে যাবে ও নমনীয়তা হারাবে।
এছাড়া বাফিং, মিলিং , কৃত্তিম ছাপ(সাপ, কুমির সহ বিভিন্ন প্রানী বা ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের চাপ দেয়া হয়) এর দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চামড়া তৈরি হয়।
মেশিন এর দ্বারা( অটোমেটিক বা হ্যান্ড গান দিয়ে), বা হাত দিয়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চামড়ার উপরিভাগে চুড়ান্ত পর্যায়ে রঙ করা হয়। এরপরে আছে প্লেটিং, পলিশিং সহ অন্য অনেক প্রক্রিয়া। কোন চামড়াকে আয়নার মত চকচকে ঝক ঝকে করা হয়- কোনটাকে করা হয় বিবর্ণ। কৃত্তিম কোটিং দিয়ে কোন চামড়াকে পানিরোধোক করা হয়।
কোন চামড়া থাকে মোলায়েম কোনটা আঁশযুক্ত – বিশেষায়িত এই চামড়াগুলো তৈরি-ই হয় ; কে কি তৈরি করতে চায়-কার কি চাহিদা তার উপরে।
গ্লভস এর চামড়া দিয়ে বেল্ট হবেনা আর বেল্টের চামড়া দিয়ে পার্স হবেনা। জুতার চামড়ায় আছে ভিন্নতা, জ্যাকেটের চামড়া অন্যরকম আবার সোফা বা গাড়ির সিট কাভারের জন্য ভিন্ন জাতের চামড়া লাগবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য এক ধরনের চামড়া আবার বাটিক বুটিকের জন্য অন্য চামড়া।
আমার পুরো সিরিজে যে বিষয়গুলো নিয়ে সহজিয়া ভাষায় সংক্ষেপে বর্ণনা করার চেষ্টা করব সেগুলোর তালিকা একটু দীর্ঘ। দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন। এই খাতকে আমি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি সুদীর্ঘ ২০ বছর ধরে। সেজন্য ধীরে ধীরে আলোচনা করতে করতে এই তালিকা আরো দীর্ঘ হলেও হতে পারে।
নীচে উল্লেখিত প্রতিটা বিষয় নিয়ে আমার আলোচনার ইচ্ছে আছে- যদি আপনারা সাথে থাকেন;

• পরিবেশ দুষনের ধোঁয়া তুলে বিশেষ মহলের প্রচারণা ও বিদেশী ক্রেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
• ব্লু-ওয়েট চামড়ার রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা ও বিদেশী ক্রেতাদের স্বার্থের আঘাত ও তাদের নেতিবাচক মনোভাব
• শুধু ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর করার মহা ভুল সিদ্ধান্ত!
• বেহুদা মেলা ও এর উপকারিতা ও অপকারিতা
• ইপিবি
• ঢাকার বাইরের মোকাম ও ট্যানারি
• কাঁচা চামড়ার আড়ত
• ভাসমান ব্যাবসায়ী
• ভাসমান কর্মী
• চামড়া প্রক্রিয়ার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
• ব্লু ওয়েট
• ব্যাঙ্ক লোন ও পরবর্তী পরিস্থিতি
• ব্যাবসায়ীদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া/ রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ
• অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের চক্রান্ত
• অব্যাবসায়ীদের এই ব্যাবসায় পুঁজি বিনিয়োগ
• স্থানীয় ও বিশেষ এলাকার লোকদের দ্বন্দ
• কারখানাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া
• এক্সপোর্ট প্রোমোশন জোন গুলোতে দেশী চামড়া প্রায় ব্যাবহার না করার প্রবণতা।
• রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ট্যানারি দখল
• সরকারের অদক্ষনীতি ও তেলবাজী
• ব্যাক ওয়ার্ড লিঙ্কেজ
• এক্সেসরিজ, কেমিক্যাল ও অন্যান্য কাঁচামালের জন্য বিদেশ নির্ভরতা
• সরকারি প্রণোদনা আত্মস্বাদের প্রবণতা
• ঢাকার বাইরের মোকাম ও ট্যানারি
• কেমিক্যাল(চামড়া প্রক্রিয়াজাত করনে বাংলাদেশ ও ভারতের কস্টিং-য়ে বিশাল ফাঁক)
• লবন-ই করন। চামড়া সংরক্ষন
• অদক্ষ কারিগর ও টেকনিক্যাল হ্যান্ড
• প্রয়োজনীয় মেশিনারিজের সল্পতা ও অত্যাধুনিক মেশিনারিজের প্রতি অনাগ্রহতা
• অল্প কিছু ব্যাবসায়ীর ব্যাবসা কুক্ষিগত করে রাখা
• যোগাযোগ স্থাপন ও কারিগরি জ্ঞান বিনিময় না করার জন্য নতুন উদ্যোক্তা সৃস্টিতে বাধা
• স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যাবসায়ীদের ভ্যাট ও আয়কর বিভাগ কত্তৃক চরম হেনস্থা!
• জুতা শিল্পে বিহারিদের দৌরাত্ব
• ভারতের আগ্রাসন
• বন্ধু চীনের অ-বন্ধু সুলভ আচরন ও চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রন
• শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভিয়েতনামের মত দেশের আবির্ভাব
• বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর আমাদের দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা
• রপ্তানীতে জালিয়াতি
• জাপানিজ ব্যাবসায়ীদের সাথে প্রতারণা
• চামড়া আমদানি
• চামড়া ও চামড়াজাত পন্যের তিনটা সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব।
• সংগঠনের নেতাদের ছোট ব্যাবসায়ীদের কোনঠাসা করে রাখার প্রবনতা ও বিদেশী ক্রেতা দখলের প্রতিযোগীতা।
• চামড়া শিল্পে সৃষ্টিশীলতার অভাব- অন্যের ডিজাইন চুরি ও কপি করার প্রবণতা।


আর সবশেষে আলোচনা করব যে সকল বিষয় নিয়ে তা হলঃ

• মি. বাউয়ার- বাংলাদেশের চামড়া ব্যাবসার ভবিষ্যত নিয়ে এক জার্মানি বিশেষজ্ঞের অভিমত।
• চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানের তুলনামুলক চিত্র( সংক্ষিপ্ত আকারে)
• বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা ও এর যোগান(সংক্ষিপ্ত)
• কেন আমাদের চামড়ার চাহিদা বিশ্ব বাজারে এখনো আছে
• বিভিন্ন শিল্পে পশুর হাড়, শিং ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট অংশের ব্যাবহার

সবশেষে- বিষয়ঃ এখনো ঘুরে দাড়ানোর সময় আছে- ব্লগারদের সাথে নিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে; আমাদের মতামত ও বিশ্লেষন
(আশা করি চামড়া শিল্পের এই ভয়াবহ দুরবস্থায় আমরা দেশের কথা ভেবে এই শিল্পের উন্নয়নে সবাই কিছু মতামত শেয়ার করব। দয়া করে সহযোগীতা করুন।)
---- চলবে
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link


-শেরজা তপন
ছবিঃ নেট
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×