somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা (বাংলা) তুমি কার?? (ভাষা নিয়ে আমার মত আধা মূর্খ লোকেদের ভাবনা)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*এই পোস্টটা এখন দেবার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু মডারেটররের নির্দেশে আগের পোস্টটি তুলে নেবার জন্য এটা তাড়াহুড়ো করে দিলাম।
(ত কয়েকদিন আগে আমার একটা লেখায় ব্লগার অর্ক বাবু বানান ভুলের জন্য ভীষন বকা দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বানান ভুলের সর্দার উপাধিতে ভুষিত করেছেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন আমি যেন ব্লগিং বাদ দিয়ে একমাস বানান রীতি, ব্যাকারন ও যতিচিহ্ন নিয়ে নিবিড় সাধনা করে তবে যেন সাহিত্যচর্চায় ব্রত হই। ভাল পরামর্শ। কিন্তু এই বয়সে এভাবে আর সাধনা করে আর কোন উন্নতির সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। তাই আমি ভাবলাম আমার ভাষা আমার আমার ভুল-ভাল ধারনার উপর ভিত্তি করে কিছু লেখা দেই ব্লগে। অর্ক বাবু ও তাঁর মত পন্ডিত বিজ্ঞজন ঋদ্ধ সু-সাহিত্যিক সেখানে যদি এসে কান মলে বকে দিলে ভুল ধরিয়ে নতুন করে কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায় তবে শুধু আমি নই ব্লগে আমার মত বা আমার কাছাকাছি বাংলা ভাষায় কম দক্ষ যারা আছেন তারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। তবে অর্ক বাবুদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা এখানে শিখতে এসেছি; দয়া করে মোলায়েম কন্ঠে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে যাবেন।)
****
ভাবুনতো ‘ কথ্য ভাষা- গন মানুষের কিন্তু লেখ্য ভাষা কাদের?’ অবশ্যই গনমানুষের নয়- যদি গন মানুষের হোতো তবে এটা কথ্য ভাষার মত সহজ সরল ও সাবলীল হোতো। এত জটিল ব্যাকারণের মারপ্যাঁচ, বাগধারা সমাস প্রত্যয় ণত্ব নিধান ষত্ব বিধান থাকত না। পৃথিবীর জটিলতম ভাষার একটা বাংলা ভাষা- এটা মোটেও কোন গর্বের বিষয় নয়। হ্যাঁ পন্ডিত ব্যাক্তিদের কাছে এই জটিলতা অতীব প্রয়োজনীয়, না হলে তাদের পান্ডিত্য ফলাবেন ক্যামনে? ক্যামনে জাহির করবেন – তারা আম জনতা থেকে অনেক বেশী চোস্ত সুক্ষ্ণ ও শুদ্ধভাবে যে সবকিছু জানেন? সেটা তো বোঝাতে হবে-নাকি?
বাংলা ভাষা জটিলতম একথা শুনেই কতজন কান পর্যন্ত হাসছেন- বলছেন ব্যাটা গাধা; চায়নিজ ম্যান্ডারিন, সংস্কৃতিক, তামিল আর হিব্রুর কাছে এ ভাষা নেহায়েত শিশু!!
হুমম এখন আসেন তর্কটা জমাই তবে, 'আমার আছে গুগোল, চ্যাট জিপিটি আর কিছু নিয়ম কানুন ব্যাকারণের বই পত্তর'। আমি আদপে মূর্খ হলেও ‘তারা’ আমায় শিক্ষিত করার ভার নিয়েছে।
বাংলা ভাষায় স্বরবর্ন ক’খানা?
১২ খানা, নাহ্‌ ১১ খানা ‘শুর’ সহ ৯ এর মত ‘লি’ এর মত উচ্চারণে যে বর্ণখানা ছিল সেটা অপ্রয়োজনীয় বিধায় তাকে পরিত্যাজ্য করা হয়েছে। তবে ছোটবেলায় আদর্শলিপিতে সুর দিয়ে ঢলে ঢলে যে পড়েছি ‘লি’ ঝোলে গাছের ডালে- এটা এত দেরিতে বুঝে আসল যে বর্ণ দিয়ে ভাষায় কোন শব্দ নেই সেটা কেন এতদিন শিক্ষা নবিসদের গেলানো হোল?( ৪০ বছর আগেও বাংলা ভাষায় এই স্বরবর্ণটা ছিল)
আমি যদি বলি এটা রাখা হয়েছিল অত্যাচারের জন্য। ভাষাকে অযথা কাঠিন্যতার মোড়কে ঢাকার জন্য- আমাদের ভাষা যে কুলীন ভাষা সেটা বোঝানোর জন্য। এমন আরো কুলীনের মোড়কে আরো অনেক বর্ণ আছে যার এই ভাষাতে দরকারই নেই।

১২ খানা স্বরবর্ণ আছে তামিল ভাষায়। কিন্তু ইংরেজী মাত্র ৫ খানা স্বরবর্ণ দিয়ে দিব্যি চলছে। আপনি কি জানেন কোরিয়ান ভাষায় ক’খানা স্বরবর্ণ আছে?
১০ খানা। কিন্তু মশায় ওদের ব্যাঞ্জনবর্ণ মাত্র চৌদ্দখানা! বিস্মিত হচ্ছেন- পাপুয়ানিউগিনির বোভোনাইল দ্বীপবাসীরা রোটোকাস নামে একটা ভাষায় কথা বলে সেটায় ১১ খানা স্বর বর্ণ কিন্তু ব্যাঞ্জন মাত্র ১২ টা! এরপরেও দুটো বর্ণের উচ্চারণ প্রায় এক। ওদের ‘ন’ জাতীয় নাসিকা বা নাসাল নিঃসৃত কোন বর্ণই নেই।
এটা পৃথিবীর অন্যতম সহজ ভাষা। আমার জানা নেই এত সহজতম ভাষা দিয়ে তাদের জীবন যাত্রায় ভীষন রকম বাজে প্রভাব পড়ছে কি না? আপনার জানা থাকলে জানাবেন?
আরো অল্প বর্ণের ভাষার কথা শুনবেন?
বর্তমান হাওয়াইয়ান ভাষার অফিশিয়াল বর্ণ মাত্র ১৩ খানা তাঁর মধ্যে ৫ খানা স্বর বর্ণ(A a, E e, I i, O o, and U u) আরা ব্যাঞ্জনবর্ণ (H h, K k, L l, M m, N n, P p , W w, and ʻ)
কি আশ্চর্য আমাদের মত এত্তো এত্তো স্বরবর্ণ আর ব্যাঞ্জনবর্ণ ছাড়া তারা ক্যামনে চলছে? ওদের জীবনযাত্রা তো ওরাং ওটাং এর মত

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন;
বাংলা ভাষার দুরূহতম জটিলতম ব্যাপারের মুলে আছে স্বর ও যুক্ত বর্ণ। এটা বেশ ভালভাবে উপলব্ধি করেছিলেন ‘বড়বাবু’ মানে রবি ঠাকুরের বড়দাদা। তিনি বাংলা ভাষা থেকে আ’কার ও’কার, হ্রস্ব’ই দীর্ঘ’ঈ কার তুলে ফেলতে চেয়েছিলেন। ঠিক যেমন শিক্ষিত আরবি ভাষীরা- জের, জবর, নোক্তা ছাড়া আরবি পড়ে-লিখে। কিন্তু নানাবিধ চাপে এবং সময়ের অভাবে তিনি সফলকাম হতে পারেননি। তবে ভাবুন; শত বছরের অধিক সময় আগে একজন মানুষ কতটা আধুনিক চিন্তাধারার হলে এমন দুঃসাহসী পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবতে পারে! 'বড়বাবু'কে নিয়ে গল্প হবে অন্য এক পর্বে।

আমরা আজ প্রথম পর্ব-তে আমরা ভাষার সীমাবদ্ধতা নিয়ে একটুখানি খোশ গল্প করব। যেহেতু আপনাদের সাথে আমার সরাসরি কথোপকথন হচ্ছে না সেহেতু প্রশ্ন-উত্তরের পর্বগুলোতে প্রশ্ন আমি করব ফের উত্তরও আমি দিব। আপনাদের উত্তর ভিন্ন হলে বা দ্বিমত থাকলে অবশ্যই মন্তব্যে জানাবেন?

বলুনতো বাঘ ক্যামনে গর্জন করে?
আপনি তড়িৎ উত্তর দিবেন; শিশু বাচ্চাও জানে, হালুম হালুম করে ডাকে।
এবার ভাবুনতো বাঘের গর্জন- আসলেই কি বাঘ হালুম হালুম করে গর্জন করে?
ইউটিউবে গিয়ে সত্যিকারে বাঘের গর্জনটা শুনুন তো, দেখেন ভাষার সাথে সেটা কোনভাবে মেলানো যায় কি না?
ভাষা প্রকৃতি ও প্রানের প্রায় কোন শব্দই সঠিকভাবে ধরতে পারে না। বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে এলোমেলো এই ছড়াটা শুনুন( সুকুমার রায়ের আবোলতাবোলে’র অনুপ্রেরণায়)

শব্দ জব্দ
সাপে জিভ বের করে লিক লিক
টিকটিকি কিনা ডাকে টিক টিক টিক!
ঢং ঢং করে বাজে কোন দেশী ঘন্টা
ছ্যাৎ করে উঠে বল; কার মনটা?
সুরুৎ করে ঝোল খায়
ফুরুৎ করে উড়ে যায়
থপ থপ করে চলে কি কোলা ব্যাঙ
মট করে ভেঙ্গে যায় বল কার ঠ্যাং?
ঝন ঝন করে পড়ে নাকি চাবির গোছা
হাঁউ মাউ করে কাদছ কেন তুমি বাছা?
শোঁ শোঁ করে কি বাতাস বয়
সাঁ সাঁ করে গাড়ি?
রিম ঝিম করে কভু বৃষ্টি কি পড়ে
টাপুর টুপুর শব্দে কখনো খেয়াল হলে ঝড়ে!
দড়াম করে আছাড় খেল কাদার উপড় ছোড়াটা
ফট ফট শব্দে কাঠ জালিয়ে পোড়ায় কোন মড়াটা?
হ্যাচ্চো বলে নাকি হাঁচি দেয়
খক করে কাশে?
হো হো করে হাসে নাকি হাঃ হাঃ করে হাসে!
হাম্বা করে কি গরু ডাকে
ম্যা ম্যা করে ছাগল?
চিঁ হিঁ করে যেমনি ঘোড়া চেঁচায়-জানে এটা পাগল!

ড়াখানা টেনে আরো অনেকখানি লম্বা করা যায় কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একটাই কথা ভাষার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ভাষা প্রকৃতির কোন শব্দই সঠিক উচ্চারণে ধরতে পারে না।
***
এইবার একখানা ভিডিও দিচ্ছি। ভিডিওটার মালিক আমি। আচ্ছা মেটিং এর সময়ে কখনো কাঠ বিড়ালির ডাক শুনেছেন? আপনার আবাস স্থলের আশে পাশে যদি কাঠবিড়ালি থাকে তবে নিশ্চিত শুনেছেন কিন্তু আপনি ভাবেননি সেটা কাঠ বিড়ালির ডাক। আপনি নিশ্চিত প্রথমে ভেবেছিলেন সেটা পাখির ডাক।
এবার আমি বলছি কাঠবিড়ালি কি সুরে ডাকে, চিরিক... চিরিক... চিরিক...
এবার মনে মনে কল্পনা করুনতো এই চিরিক চিরিক ডাকের শব্দটা আসলে সত্যিকারে কেমন? কল্পনা করুন কাঠ বিড়ালির ডাক- তারপরে ভিডিওটা দেখুন ও শব্দটা শুনুন;
সঙ্গীর খোঁজে কাঠবিড়ালির ডাক]

মিলল কি আমার ভাষা ও আপনার ভাবনার সাথে?
আমার উত্তর; আপনি যদি ডাকটা আগে থেকে না শুনে থাকেন তবে সম্ভাবনা খুবই কম।
এবার আপনি বলুন; যে শোনেনি কখনো তাকে কাঠ বিড়ালির ডাকের শব্দটা আপনি কিভাবে বয়ান করবেন?sb
?




* প্রথম পর্ব শেষ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:০৮
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×