সুপ্রিয়া,
কেমন কাটছে বিরহ বেলা? অবেলার অভিমান পর্ব? আমি ভালো নেই।
দেখেছো এই মাঘের রাতেও কেমন টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে? আমার মতো তোমারও বৃষ্টি বেশ পছন্দের। যদি এই রাতে এখন আমাদের কানে ফোন থাকতো, ঘুম ভুলে আলাপ জমতো- প্রেমালাপ, তুমি নিশ্চয় বলতে, 'ছাদে উঠে ভিজি?' আমি কোনোক্রমেই যেতে দিতাম না। আজ রাতেও কি তোমার মন বৃষ্টি বিলাসে ছটফটাচ্ছে? আজ কিন্তু কেউ নিষেধ করবে না!
তোমার মটকু নাদুস-নুদুস শরীরটা বেশ রোগাপটকা। আজও নিশ্চয় ভালো নেই তোমার নরম দেহটা? মাথা ব্যথা করছে না তো? নিয়মিত কাশিটা? ছোট বাচ্চার মতো পড়ে যাওয়া অভ্যাস তোমার। কতবার সতর্ক থাকতে বলেও পারো নি না পড়ে থাকতে। এ ক'দিনে পড়ো নি তো সিঁড়ি বেয়ে নামতে কিংবা বাথরুমে অথবা শুকনো ছাদে অযথা হোচোট খেয়ে? বুকে বা পায়ে কোথাও কোনো ব্যথা জমে রাখো নি তো, যে ব্যথাগুলো আমার কাছে প্রায়শই লুকাতে? ইদানীং দূরে কোথাও হেটে যাওনি? হেটে এসে পায়ে ব্যথা? আগে তুমি অনেক ওষুধ খেতে। যখন জানলে আমি সহজেই ওষুধ খাই না, ওষুধ খেতে আমার ভালো লাগে না, এরপর তুমিও ওষুধ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছ। কোথাও কোনো ব্যথা নিয়ে ওষুধ না খেয়েই কাটিয়ে দিচ্ছো না তো? জানো, তোমার যেমন নিত্যনৈমিত্তিক মাথা ব্যথা লেগেই থাকে, গত তিনদিন থেকে আমারও তাই হয়েছে। সেদিন থেকে মাঠেও যাই নি ক্রিকেটের বল ছুড়তে। তুমি নিশ্চয় খুশি হয়েছো বেশ? তুমি তো চাওনা আমি এ বয়সে মাঠে যাই।
জানি পড়াশুনায় তোমার মন নেই। আমি বিহনে এতে কোনো ব্যতিক্রম ঘটেছে বুঝি! আমি কেমন পড়াশুনা করি, তা তোমার চেয়ে হয়তো কেউ ভালো জানে না! তবে খুশির খবর ইদানীং ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটু-আধটু বই খুলে বসি। কিন্তু মাথার ভিতরে কী যেন একটা পড়তে দেয় না আমাকে, শুধুই ভাবায়। এটাকেই মানুষ মাথাব্যথা বলে কি না? তোমার নরমস্বরের শাসনহীন রাতগুলো নির্ঘুম কাটানোর ফল হয়তো এটাই!
আজ সন্ধ্যের পর তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করলো, তোমার ডজন খানেক ছবি প্রায় ঘণ্টা দুয়েক দেখলাম শুয়েশুয়ে। কোনো ছবিতেই এতটুকুও রাগ খুঁজে পাই নি। এই রাগশূন্য চেহারা নিয়ে তুমি কীভাবে রাগ করে থাকো আমার সাথে?
'কেমন আছো?', এ ক'দিনে কেউ জিজ্ঞেস করে নি। কেউ বলে নি, 'খেয়েছো?' কেউ শাসনের সুরে বললো না, 'বাসায় কথা বলো নি কেন?' আমার জীবনের প্রতি কিছু প্রশ্ন হয়তো স্বতন্ত্রভাবে শুধুই তোমার সাজানোর কথা! আমি না খেয়ে থাকলে তোমার অনেক খারাপ লাগে, তাই না? আমি কিন্তু নিয়মিত খাচ্ছি, শুধু আজ রাতে খাই নি; তোমার ছবিগুলো দেখার পর থেকে আর কিছুই ভালো লাগছে না। তোমার অনেক ক্ষুধা পায়, তুমি নিয়মিত খাচ্ছো তো?
কিছু শব্দ ক'দিন থেকেই মুখ দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, যেগুলো তোমাকে রোজ বলতাম, রোজ যেগুলো নামে আদর করে ডাকতাম। কিন্তু তুমি ছাড়া কাকে বলি? একবার কানপেতে শুনবে- বুড়ি, সোনাপাখি, জানপাখি, ময়নাপাখি...? কিংবা হালকা রাগ করে ডাকা- কুত্তা?
আগে তুমি কখনো রাগ করলে, ফোনেই কেঁদে ফেলতাম। তুমি বলতে, 'সরি, আর রাগ করবো না। ছোট বাচ্চা তুমি, এভাবে কাঁদছো? ছেলে মানুষ কাঁদতে নেই।' ধিরেধিরে বড় হলাম, ছেলে মানুষ হলাম! তুমি রাগলে ফোন কেটে একাএকা চুপ করে শুয়ে থাকতাম। কিন্তু জানো, এ ক'দিনে বেশ কয়েকবার চোখের জল ফেলেছি শুয়ে শুয়ে। চোখের জল গড়ালে হৃদপিণ্ড হালকা হয়, এ ক'দিনে বুঝেছি! তোমাকে যখনই ভাবছি, চোখে জল আসছে। তোমারও কি এমন হচ্ছে?
কয়েকটি পত্রিকায় কবিতা ইমেইল করতে হবে। নতুন কবিতা লিখতে বসলে, তোমাকে নিয়ে যত্তসব অভিমানী শব্দ আসে। কয়েকটি কবিতা লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে, এতো অভিমান নিয়ে কবিতা হতে পারে না। সেগুলো মাঝপথেই থামিয়ে দিয়েছি। তুমি যেদিন ফোন দিবে, সেদিন সেগুলোতে অভিমানের সাথে কিছু অনুরাগ মিশিয়ে পুরোটা লিখবো। জানি তুমি বলেছো, আর কখনোই কথা বলবে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস তা মানছে না কোনোভাবেই!
প্রকৃতির নিয়ম। প্রতিমাসের চব্বিশ তারিখ তোমার তলপেটে ব্যথা হয়, পাঁচ-ছ'দিনে ভালো হয়। অসুস্থ থেকেও তুমি সব করতে চাও, কিন্তু আমি বিশ্রামে থাকতে বলি। আসছে চব্বিশ তারিখ, একটু না হয় বিশ্রামেই থাকিও ক'টা দিন। মনে আছে, আমাদের প্রথম সন্তান কন্যা হবে? নাম- কথিকা মৌনতা?
পরিচয়ের দু'বছর হলো। প্রেমের হলো বাইশ মাস। দু'জনেরই প্রথম ও একমাত্র প্রেম। এমন রাগ করে কী লাভ বলো?
তোমার রাতজেগে সিনেমা দেখা অভ্যাস, এখনো কি জেগে সিনেমা দেখছো? নাকি ঘুমাচ্ছো? আমারও ঘুমাতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। তুমি এতক্ষণে আমাকে ঘুমিয়ে ছাড়তে! একবার ফোন দিয়ে বলো না ঘুমাতে, আমি ঘুমাই নিশ্চিন্তে তোমার ভালোবাসা নিয়ে। আমার মাথা ব্যথাটা দেখবে থাকবে না। একবার ফোন দিয়ে শুধু বলো যে তুমি আর রেগে নেই। আমার কথা না হয় থাক, আমার কবিতাগুলোর কথা ভেবে কিংবা তোমার কন্যা কথিকার কথা ভেবে বলো। অন্তত এটুকু বলো, 'কাল কথা হবে, এখন ঘুমাও।' দেখিও আমি আগের মতোই হরহর করে বলবো, 'ভালো থেকো...ভালো আছি... ভালোবাসি!'
এখনো ইলশেগুঁড়ি পড়ছে। তোমার ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করছে। চলো একদিন কোথাও বসি, তোমার মাথা আমার কাঁধেচেপে ঘুমাবে তুমি। আমি নিশ্চুপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো।
ভালো না থাকা রাতে
-কথিকার বাবা।