এই মোনালিসাকে নিয়ে আজকে কোন আলোচনা করব না, কারন এত পরস্পর বিরোধী তথ্য আর গবেষনা এই একটি ছবিকে নিয়ে হয়েছে যে ভিঞ্চি নিজেই বেকুব হয়ে যেতেন আজকে বেচে থাকলে। মোনালিসার সামনে দাড়ালে দর্শকের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে তার চোখের মনির অবস্থানও নাকি পরিবর্তিত হয়। ।
যাই হোক আমি ছবি খুব একটা ভালো বুজিনা, তবে ভালো একটা ছবি ঘন্টার পর ঘন্টা দেখতে পারি, সে অনুভুতি থেকে আজকে কিছু ভালো চিত্রকরের কিছু দারুন ছবির পরিচয় করিয়ে দেব, যার মাঝে কিছু কিছু বিস্ময় কর তথ্যও হয়ত পাবেন।
ভ্যানগগের ছবি দেখলে বুজবেন কত নিখুত আর আশ্চর্য্য ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। তবে ভ্যানগগের ব্যাপারে সব থেকে অদ্ভুত তথ্য হল তিনি সম্ভবত এ্যাবিসিনেথ মদ খেতেন এই এ্যাবিসিনেথ মদে থুজন নামক উপাদান আছে যা খেলে ইয়োলো ভিষন হয়, সম্ভবত এই কারনে ভ্যানগগের ছবিতে হলুদ রংয়ের উপস্থিতি বেশী দেখা যায়। চলুন ভ্যানগগের কয়েকটি বিখ্যাত পেইন্টিং দেখে আসি।
এই ছবিটির নাম উইটফিল্ড উইথ ক্রো
এইবার দেখি ভ্যান গগের সেলফ পোর্টেট উইথ ব্যান্ডজ ইয়ার অ্যান্ড পাইপ। এনিয়েও এক মজার কাহিনী আছে, ভ্যান গগের সাথে ফ্রেন্ড শীপ ছিল আর এক ডাচ মাষ্টার পল গঁগ্যার। তো দুইটাই ছিল পাগল কিসিমের, পাগলের বন্ধুত্ব! বুজেনই তো একদিন দুই জনের মাঝে ঝগড়া বেজে গেল। ভ্যানগগ পল গঁগ্যাকে শেভিং রেজার দিয়ে আক্রমন করেই পলায়ন করেন। ওদিকে গগা গেল পুলিশ ষ্টেশনে আর ভ্যান গগ পালানীর জন্য গেল এক পতিতার রুমে, তো সারা রাত সেখানে কাটিয়ে সকালে যখন পতিতা যার চেলের হাতে টাকা দেবেন দেখেন টাকা নেই, অসুবিধা নেই, একটু আড়ালে গিয়ে কিছুক্ষনেরা মাঝেই ফিরে এলেন একটা প্যাকেট সহ এবং বলেন “কীপ দিস অবজেক্ট কেয়ার ফুলি” । সরল মনা পতিতা যার চেল মনে করেন এতে বুজি টাকা আছে, খুলে দেখেন সেখানে ভ্যান গগ তার এক কান কেটে তাকে দিয়েছে। এই ছিল ভ্যান গগ। চলুন দেখি সেই বিখ্যাত ছবি। ভ্যান গগ কে নিয়ে আমার একটা পোষ্ট আছে কেউ চাইলে দেখে আসতে পারেন ডাচ মাষ্টার ভ্যান গঘ এবং এ্যাবসিনথি মদ
সেলফ পোর্টেট উইথ ব্যান্ডজ ইয়ার উইথ পাইপ
১৮৮৯ সালে ভ্যানগগ তার ষ্টারি নাইট আঁকেন। এটা তারা খচিত রাতের আকাশ এর ছবি, ১৯৯০ হাবল দুরবীন দিয়ে দূর নক্ষত্রের কিছু দেখেন বিজ্ঞানীরা, তেমন এক নক্ষত্রের গ্যাস এবং সুবিশাল মেঘের টার্বুলেন্স দেখেন এর পর প্রাপ্ত টার্বুল্যান্সের ছবির সাথে জ্যামিতিক ভাবে অদ্ভুত মিল খুজে পান এই ষ্টারি নাইটের। এটা কি কাকতালীয় না অন্য কিছু? পাগলের পাগলামি এত দূর!!!
চলুন দেখি ষ্টারি নাইটের ছবি।
এইবার আসি পিকাসোতে, পিকাসো তার ছবিতে কয়েকটি সময়ে বিভক্ত করেছেন, ব্লু পিরিয়ড এই সময়ের ছবিতে নীল রংয়ের প্রাধান্য বেশী, আবার রোজ পিরিয়ডের ছবিতে পিঙ্ক, লাল, অরেঞ্জ কালারের প্রাধান্য বেশী এবং ক্রিষ্টাল পিরিয়ড । চলুন দেখি তার তিন কালের কিছু বিখ্যাত ছবি, প্রথমে ব্লু পিরিয়ডের
দ্যা ওল্ড গিটারিষ্ট
লা গুরমেত (লোভী বালিকা)
এইবার দেখি রোজ পিরিয়ডের
ফ্যামিলি অভ স্যালটিমবাংকুয়েশ
এইবার দেখি ক্রিষ্টাল পিরিয়ডের ফুটবল
এই চান্সে পল গঁগ্যা একটা মাষ্টার পীস দেখে নি, যিনি তাহিতি দ্বীপে প্রচুর ছবি আঁকছেন
হোয়ার ডু উই কাম ফ্রম? হোয়াট আর উই? হোয়ার আর উই গোয়িং
যে ছবিটি না দিলে পিকাসোর আকাআকি নিয়ে ছবি দেয়া বৃথা সেটার নাম হল গুয়ার্নিকা, গুয়ার্নিকা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি স্বরূপ, যুদ্ধ বিয়োগান্তক এবং বিশেষ করে নিরপরাধ বেসামরিক জনগনের উপর বর্বরতা যন্ত্রণা প্রকাশ করে। এই চিত্রকর্মটি একটি স্মারক অবস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বিয়োগান্তক চিরস্থায়ী অনুস্মারক, যুদ্ধ বিরোধী প্রতীক, এবং শান্তির প্রতিমূর্তি হয়ে উঠছে।
গুয়ার্নিকা
রেনেসা যুগে ইতালির দু তিন জনের ছবি দেখি যার মধ্যে বিখ্যাত আছেন, তিনতোরাত্তো, তিসিয়ান, রেমব্রান্ট।
তিনতোরাত্তোর দ্যা ওরশীপ অফ গোল্ডেন কাফ
তিসিয়ানের ভেনাস অভ উরবিনো
রেম ব্রান্টের দ্য নাইট ওয়াচ
এই বার চলুন মাইকেল এ্যাঞ্জোলোর ক্রিয়েশান অভ এ্যাডাম কে দেখে আসি তার আগে একটু বিস্ময় দিয়ে দেই আপানাদের। সিসটিন চ্যাপেলের সিলিংয়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি আঁকা আছে ক্রিয়েশান অভ এ্যাডাম , যেটা কিনা চিত্রকলার জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি আর সবচেয়ে বেশিবার আঁকা একটা চিত্রকর্ম। এই চিত্রে বাইবেলের জেনেসিস বা সৃষ্টিতত্ত্বের ঘটনা অনুসারে পৃথিবীর প্রথম পুরুষ আদম এবং ঈশ্বরকে দেখা যাচ্ছে। তারা মুখোমুখি হয়ে আছে, দুইজনের হাত পরস্পরের প্রতি আগানো, এবং তর্জনী প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে। ঈশ্বরের চারপাশে স্বর্গদূতেরা ভিড় করে আছে আর স্বর্গদূতসহ ঈশ্বরের অবয়বের পেছনে দেখা যাচ্ছে লাল রঙের একটি চাদর বা পর্দা। শত শত বছর ধরে মানুষ ভেবে এসেছে, এই ছবিতে ঈশ্বর আদমকে জীবনীশক্তি দিতে যাচ্ছেন বা দিচ্ছেন। এ ভাবনাই বলে দেয়, কেন এই ছবিকে সিলিংয়ের কেন্দ্রের কাছে রাখা হয়েছে। কারণ এই ছবিতে চিত্রিত হয়েছে মানবজাতি সৃষ্টির মুহূর্ত। কিন্তু… কিন্তু শতবর্ষ পর এই ধারণাকে দুমড়ে মুচড়ে দিলেন এক চিকিৎসক।
১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সেন্ট জন’স মেডিক্যাল সেন্টারের গাইনেকোলজিস্ট কাম শল্য চিকিৎসক ‘ফ্র্যাংক লিন মেশবার্গার’ মিকেলাঞ্জেলোর ‘Creation of Adam’ ফ্রেস্কো সম্পর্কে তার মতামত প্রকাশ করেন। মেশবার্গার বললেন, এই লাল রঙের বস্তুটি আসলে পর্দা বা চাদর নয়, এটি মানুষের মস্তিষ্ক! কিন্তু মিকেলাঞ্জেলো কেন মস্তিষ্ককে এমনভাবে আঁকবেন, যেন সেটা মানুষের চোখে মস্তিষ্ক হিসেবে নয়, বরং পর্দা হিসেবেই আবির্ভূত হয়? একটা মতবাদ হলো, ধর্মীয় চিত্রের মধ্যে হুট করে খুলি ছাড়া মস্তিষ্ক ঢুকিয়ে দিলে সেটা কোনো অর্থ প্রকাশ করে না, বরং চিত্রে বিদ্যমান ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট হওয়ার জন্য ধর্মগুরুদের নাখোশ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই তৎকালীন পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস এবং ধর্মনেতাদের চোখ এড়ানোর জন্য মিকেলাঞ্জেলো চতুরতার সাথে মস্তিষ্ককে এভাবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু ধর্ম প্রচারকদের পাশাপাশি গত পাঁচশো বছর ধরে এই ব্যাপারটা শত শত শিল্পপ্রেমী, আঁকিয়ে, ইতিহাসবিদের চোখের আড়ালেও রয়ে গিয়েছিলো। লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন শিল্পীকে এই চিত্রের মধ্যে মস্তিষ্ক নিয়ে আসতে হলো?
ক্রিয়েশান অভ এ্যাডাম
এইবার একটু ভিন্ন ধরনের একটা ছবি হাঙ্গেরির টিভাডার কতসার আঁকা ওল্ড ফিশারম্যান ছবিটি দেখুন।কিছু কি অদ্ভুত লাগছে?
আসলে এই ছবির মাঝে দুজন আলাদা মানুষ লুকিয়ে আছে আপনি যদি এই এই বুড়ো মানুষটির মুখের ঠিক মাঝামাঝি একটা আয়না রাখেন তবে দেখবেন দুজন আলাদা মানুষ যা নীচের ছবিটিতে দেয়া হল
এডোয়ার্ড মাঞ্চ একজন নরওয়েজিয়ান শিল্পীর আঁকা এই "দ্য স্ক্রীম" মানব মনের বিভীষিকা তুলে ধরেছেন।বলা হয়ে থাকে মাঞ্চ নিজেও একজন মানসিক রোগী ছিলেন। মজার ব্যাপার মাঞ্চ যেদিন এই ছবিটি প্রদর্শনী করেন সেদিন একই সাথে টমাস আলভা এডিশনের নতুন আবিস্কার ২০ হাজার ছোট ছোট বাতি নিয়ে এক বিশাল বাতি তৈরী করা হয়েছিল, যার সাথে এই স্ক্রীম এর অনেক মিল আছে, এটাও বলা হয়ে থাকে মানবজাতির প্রযুক্তির ভবিষ্যতের ছবি দ্যা স্ক্রীমে তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন।
দ্যা স্ক্রীম
ফরাসী আঁকিয়ে ক্লদ মনে বড় বড় ছবি আকতেন ষ্টুডিওর বাইরে বসে, প্রকৃতির আলো ছায়ার খেলা ধরার জন্য। শুধু আলোর রং এর ভিন্নতা অনুভবের জন্য তিনি একবার পনেরটি খড়ের গাদার ছবি একেছিলেন। তার ওয়াটার লিলি সিরিজের ২৫০ টি ছবি আছে, প্রতিটির আলো ভিন্ন।
চলুন দেখি ক্লদ মনের একটি ওয়াটার লিলি
এখন একজন অখ্যাত আকিয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেব, আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তার আঁকার দিকে, রং এবং অনুপাত এত নিখুত ভাবে তুলে ধরা কিছুটা দুঃসাধ্যই বটে, কোন রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া মাত্র কয়েকটা ছবি একেছিল এই ভদ্র মহিলা কিন্তু ভ্যাগাবন্ড স্বামীর কারনে হাতে গোনা ৫/৭ টা ছবি ছাড়া আর কোন ছবি সে আঁকে নি। আমার বিশ্বাস সে যদি আকত অনেক ভালো করত।
কাপল উইথ আমব্রেলা তারই অল্প কয়েকটা আঁকার মাঝে একটা। ইনি আমার সন্তানদের মা। অনেকটা আমার উদাসিন্যে সে আকাআঁকি করে নি। খুব ইচ্ছা করে বলি তুমি আঁক আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি, কিন্তু কেন যেন আমি বলতে পারি না এ কথাটা। কাঠ খোট্টা মানুষ দের মুখে ভালোবাসার কথাও কাঠখোট্টা লাগে, তাই ভয়েও অনেক কিছু বলিনা।
আর একজন আছে এই ব্লগেই নাম রাফাত নুর ওরফে গুড্ডির পাইলট, কি যে অসাধারন আঁকে বুজাতে পারব না, মানুষের পোর্টেট যে এত নিখুত আঁকা যায় ওকে না দেখলে আমি বুজতাম না। এখানে ওর একটা ছবি দিয়ে দিলাম।
ভবিষ্যতে পেইন্টিংস নিয়ে আরো পোষ্ট দেবার ইচ্ছা আছে। আজকের মত এখানেই ইতি।
কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল এবং নিজের ঘর।। বিভিন্ন জায়গায় লিঙ্ক দিয়ে দিয়েছি, চাইলে দেখে আসতে পারেন নীল হাইলাইটেড লেখাগুলোয় চাপ দিলেই লিঙ্কে চলে যাবেন।।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৯