somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাচ মাষ্টার ভ্যান গঘ এবং এ্যাবসিনথি মদ

০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানিনা ডাঃ বরেন চক্রবর্তীর নাম কয়জন শুনেছেন। পেশায় একজন ডাঃ কিন্তু নেশায় একজন চিত্র ট্রাভেলগ। ছবি দেখার জন্য সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর সেগুলোর এত মনোমুগ্ধ কর বর্ননা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লিখছেন যে, আমার মত ছবি নিয়ে নাক সিটকানো মানুষকে ও চিত্র এবং চিত্রকলা নিয়ে দেখতে আর পড়তে উৎসাহিত করেছেন। অনেকেই হয়ত উনার বিভিন্ন লেখা পড়ছেন। আমি চেষ্টা করব উনার সেই সব বর্ননা থেকে মাঝে মাঝে নিজের ব্লগে সেগুলো লিখে রেখে যেতে।

এ লেখাটার অধিকাংশ ডাক্তার বরেন চক্রবর্তীর একটা লেখা থেকে নেয়া। উনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকে ডাচ মাষ্টার ভ্যান গগ এর উপর লেখাটা

ডাচ পেইন্টার ভ্যান গগ ছিলেন একজন বোহেমিয়ান টাইপের মানুষ। তার শিল্প জীবন মাত্র ১০ বছর অর্থ্যাৎ ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত। এমন পাগল মানুষ ছিলেন তিনি যত না ছবি একেছেন তার থেকে বেশী পেইন্টিং নিজ হাতে ধ্বংস করেছেন। সামান্য তম খুত পেলেই নিজের ছবি নিজে ধ্বংস করে দিতেন। তারপরো ৯০০ টি পেইন্টিং ১১০০ ড্রয়িং টিকে গেছে



ভ্যান গঘ নিজেই বলে গেছেন The Potato eaters ছবিটি তার সেরা ছবি

ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গগের জন্ম ১৮৫৩ সালের ৩০শে মার্চ হল্যান্ডের পশ্চিমে একটা ছোট গ্রামে। বাবা থিওডরাস ভ্যান গগ ছিলেন স্থানীয় চার্চের যাজক। ছোটবেলা থেকেই পড়া শুনায় অমনোযোগী ভ্যান গগ ছিলেন স্বশিক্ষিত চিত্রকর। নিজের শৈশব নিয়ে নিজেই বলেছেন Gloomy, cold and sterile. লেখা পড়ার জন্য তার পরিবারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থতায় পর্যবাসিত হয় তখন তাকে হেগের গোপিল এ্যান্ড চি আর্ট গ্যালারীতে সেলসম্যান হিসাবে কাজ দেয়া হয়। মালিক তার আর্টের ওপর জ্ঞান দেখে তাকে লন্ডনের আর্ট গ্যালারীতে বদলি করা হয় এখানেও ভ্যান গগ দক্ষতা দেখাতে থাকেন।


Sunflowers

Sunflowers সেই বিখ্যাত ছবি

এখানে এসেই ভ্যান গগের জীবনে ছন্দ পতন ঘটে। যে বাড়ীওয়ালার বাড়ীতে থাকতেন সেই বাড়ীওয়ালার মেয়ে ইউজিন কে প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। কাজে মনোযোগ হারান ফলশ্রুতিতে চাকুরী হারান। এই সময় থেকে ভ্যান গগ এর মানসিক অস্থিরতা দেখা যায় প্রায় সময়ই কাটান পতিতালয়ে, এক পর্যায়ে ধর্মের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। ধর্মবিদ্যা পড়ে চার্চেও চাকুরী নিন। কিন্তু যাজকের কাজ করার সময় অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য আবারো যাজকের চাকুরী হারান।

চাকুরী হারিয়ে ভ্যান গগ তার ভাই থিয়োর কাছে চলে আসেন। থিয়ো তাকে ছবি আকা শেখার পরামর্শ দেন। সে আমালের বিখ্যাত ডাচ শিল্পী উইলিয়াম রুলফ চিত্রকলার বিভিন্ন টিপস ভ্যান গগ কে শিখাতে থাকেন।

শিল্পী হবার উদ্দাম নিয়ে তিনি বাড়ীতে আসেন এখানে এসে আর এক বিপর্যয়। বাড়ীতে এসে দেখেন তার থেকে আট বছরের বড় মামাতো বোন কী ভস ষ্ট্রিকারকে যে কিনা বিধবা আর ৮ বছরের এক ছেলের মা। এই কী ভস কে দেখে আবার প্রেমে পড়েন ভ্যান গগ বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যান কিন্তু ওই সময় ডাচ চার্চের নিয়ম অনুযায়ী একই বংশের ভাই বোনের বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল।

ভ্যান গগ যখন কী ভস কে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন কী ভস মাত্র তিনটি কথায় উত্তর দেন Niet, Nooit, Nimmer. মানে No, Never and never. কিন্তু প্রেমে পাগল ভ্যান গগ এতে দমে যান নি। মামার বাড়ী ছুটে যান কী ভস কে দেখার জন্য কিন্তু মামা বলে দেন কী ভস তার সাথে দেখা করবে না। রাগে উন্মাদ ভ্যান গগ মোমবাতি জ্বালিয়ে তার ওপর হাত রেখে চিৎকার করেন “Let me see her for as long as I can keep my hand on flame.

ওই সময়ের পর ভ্যান গগ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েন। মানসিক আর সামাজিক দিক দিয়ে প্রায় উন্মাদ হয়ে যান। বার বার নানা রকম যৌন রোগ বাজাতে থাকেন। ১৮৮৩ সালে জটিল গনোরিয়া থেকে ভালো হয়ে নতুন উদ্দামে কাজ শুরু করেন।

ভ্যান গগের সাথে আর এক ডাচ মাষ্টার পল গগ্যার ছিল বেশ বন্ধুত্ব। কিন্তু পাগলের সাথে বন্ধুত্ব কত দিন আর টেকে। ১৮৮৮ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর বন্ধু গঁগ্যার সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে শেভ করার রেজার দিয়ে গঁগ্যাকে আক্রমন করে আহত করেন। বন্ধুকে আহত করেই পুলিশের ভয়ে ভ্যান গগ পতিতালয়ে চলে যান। ওই পতিতালয়ে ভ্যান গগ পতিতা র্যা চেলের সাথে তার কাটান। এই সময় ভ্যান গগের পকেটে কোন টাকা পয়সা থাকত না।

সকালে পকেটে হাত দিয়ে দেখেন কোন টাকা নেই, হাতে ছুরি নিয়ে নিজ হাতে নিজের কান কাটেন ভ্যান গগ এর পর একটা প্যাকেটে ভরে ওটা সরল মনা র্যা চেলের হাতে দেন আর বলেন, “keep this object carefully”। ব্যাচেল ভেবেছিলেন ওটা তার পাওনা টাকা। শুধু এই কান কাটার সাথে সম্পৃক্ত থেকে র্যা চেল নামক পতিতাও আজকে চিত্রশিল্পের ইতিহাসে অমর। এই কানা কাটার ছবি সহ নিজের সেলফ পোর্ট্রেট আকেন Self portrait with bandaged ear and pipe.



ভ্যান গগ হলুদ রঙের প্রতি মারাত্মক দূর্বল ছিল। শিল্পী নিজেও বলেছেন হলুদ মানেই সূর্য। শিল্প বোদ্ধারা বলেন “Foe Van gogh the color yellow symbolized the hope and the truth of God’s love”. এই হলুদ রং পছন্দ করা নিয়েও নানা মুনীর নানা মত আছে, কেউ কেউ বলতেন ভ্যান গঘ Absinthe নামে এক ধরনের তীব্র ঝাজওয়ালা মদ খেতেন এই এ্যাবসিনথি নামক মদে Thujone নামে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ আছে আর এই থুজন খেলে মানুষের “ইয়োলো ভীষন” হয়। শিল্পীর the yellow house দেখুন।



এই এ্যাবসিনথি মদের উৎপত্তি হলো Artimisia absinthium নামক এক প্রকার গাছ থেকে, এর নির্যাস কে থুজন বলা হয়। এই থুজনকে বলা হয় The green fairy. এই মদ খেলেই আপনার চোখের সামনে লাল পরী, নীল পরী, হলুদ পরীরা নাচতে থাকবে। এ্যাবসিনথি মদ নিয়ে বেশ কটি মাষ্টার পীস আছে পৃথিবীতে। এদ্যুয়ার মানের “The Absinthe drinker”



এডগার দেগারের “L’ Absinthe”



এ্যাবসিনথি মদে ৪৭ থেকে ৭৪ ভাগ এ্যাবসলুট এ্যালকোহল থাকে। এক সময় পৃথিবীর প্রায় সব শিল্পী কবিরা এই এ্যাবসিনথি মদে আসক্ত ছিলেন। তাই তাদের কে বলা হত “Bad men of that day who were devotees of the green fairy Absinthe” এই এ্যাবসিনথি তে আসক্ত কয়েকজন বিখ্যাত র নাম ফ্রান্সের কবি চার্লস পিয়ের বোদলেয়ার, আইরিশ লেখক অস্কার ওয়াইল্ড, ফ্রান্সের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হেনরি দ্যা লোত্রেক টলুজ। আজব ব্যাপার কি জানেন এই মদ যারা খেতেন সেই সব বিখ্যাত মানুষ গুলো কিন্তু বেশী দিন বাচে নি, কিন্তু যত দিন বেচেছেন তার মাঝে দুনিয়াকে তাদের মিধা প্রতিভা দিয়ে চমকিত করে গেছেন, বলা হয় বর্তমান বিশ্বের কবিদের ওপর বোদলেয়ারের প্রভাব সব থেকে বেশি, লোত্রেক মাত্র ৩৬ বছর বেছে ছিলেন, ওয়াইল্ড লিখে গেছেন An Ideal Husband এর মত প্লে। লোত্রেক একে গেছেন তার La Blanchisseuse.

এতে কি প্রমানিত হয় এবসিনথি খেলা মানুষ প্রতিভাবান হয়? অবশ্যই না। কারন এ্যাবসিনথি একটা সাইকোঅ্যাক্টিভ ড্র্যাগ। তবে অনেকের ই ধারনা এই থুজন ভ্যান গগ কে সব কিছু হলুদ দেখাত তাই তো তার আকায় হলুদ রং এর এত প্রভাব।

ভযান গঘের হার্ট ফেইলুর রোগ ছিল। সেসময়ের বিখ্যাত ডাঃ গ্যাসেট ভ্যান গঘ কে চিকিৎসা দেন। গ্যাসেট ভ্যান গঘকে Digitalis নামে যে অষুধ দেন তা Foxglove নামে এক ধরনের গাছের রস থেকে তৈরী। আর এই ডিজিটালিস ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিন্তু ইয়োলো ভীষন। ভ্যান গঘ তার ডাঃ গ্যাসেট কে অমর করে রেখে গেছেন তার “Portrait of Dr. Gachet” চিত্রে। ডাঃ গ্যাসেটের পোর্টেট কিন্তু পৃথিবীর সর্বাধিক মূল্যবান পোর্টেটের একটি। ১৯৯০ সালে এই পোর্টেট মাত্র ৮২.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়।



ডাচ মাষ্টার ভ্যান গঘকে নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে আছে যদি আপনাদের এই পর্ব ভালো লাগে।
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×