সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে কারোরই অভিযোগের শেষ নেই। তারা তাদের পছন্দের জায়গা ছাড়া যান না। তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০০ টাকা। তারপরও সরকার মিটারে তাদের ভাড়া আবার বাড়িয়েছে। (আশা করি এ পদক্ষেপ তাদের সর্বনিম্ন ভাড়ার পরিমাণ দ্বিগুণ করতে ভূমিকা রাখবে।) যাই হোক, আজকে লিখছি অন্য এক অভিজ্ঞতা নিয়ে। সেটাই বলি।
গত কিছুমাস ধরে দেখছি মহামান্য সিএনজিচালকরা প্যাসেঞ্জারসিটের দুপাশে দরজা বসিয়েছে। (খাঁচা বলাই ভালো) দুই একটি বাদে সবগুলোরই ছিটকিনি আবার সামনের দিকে। মানে যাত্রী না, চালক খুলতে পারবে। এরকম উদ্ভট একটা ব্যাপার নিয়ে কারোরই যেন মাথাব্যাথা নেই। যাই হোক সামনে ছিটকিনি রাখার ‘উপকারিতা’ বুঝলাম কয়েকদিন আগে।
সেদিন এক আত্মীয়ের জরুরী সার্জারীর জন্য বেশকিছু টাকা নিয়ে বের হলাম সকাল ৭টার দিকে। হাতে বেশি সময় ছিল না তাই একটা সিএনজি ডাক দিলাম। মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর ১ যেতে ব্যাটা চাইল ১৫০ টাকা। মাথায় আগুন ধরে গেল। কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলাম। একটু পর ব্যাটা পেছন থেকে এসে বলে- ‘১০০ টাকায় যাইবেন?’ আমি বললাম- ‘৮০’ চালক লোকটা বলল- ‘উঠেন’। তখনই আসলে সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল। তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম বলে কিছু মনে হয়নি। ওঠার পর খেয়াল করলাম তার ছিটকিনি যথারীতি সামনের দিকে। শুধু তাই না, ছিটকিনি লাগানোর পর সে আবার একটা রশি দিয়ে বেঁধে দিল। আমি প্রশ্ন করলাম এটা আবার কেন। ব্যাটা কোন উত্তর দিল না। যাই হোক, টেকনিক্যালের সামনে এসে একটা নির্জন স্থানে তার ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিল (তার ভাষ্যমতে)। সে নেমে পেছনদিকে চলে গেল। কাছে বেশকিছু টাকা ছিল। তাই মনে সন্দেহের সাথে সাথে দুশ্চিন্তাও উঁকি দিল। ৩/৪ মিনিট পার হয়ে গেলে আমি পর্দার মাঝে যে আধাস্বচ্ছ অংশটুকু আছে সেদিক দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। আবছাভাবে দেখলাম সম্মানিত সিএনজিচালক ইঞ্জিন না দেখে মোবাইলে কার সাথে যেন উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলছেন! আমি উচ্চস্বরে দেরি হবে কিনা জানতে চাইলে সে বলে এই তো হয়ে গেছে। কিন্তু তার মোবাইল লুকিয়ে ফেলা আর চোরের মত হাবভাব দেখে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল। আমি ‘খাঁচা’র ফাঁকফোকর দিয়ে আঙ্গুল ঢুকিয়ে কোনরকমে রশিটা খোলার চেষ্টা করতে থাকলাম আর নিজেকে মনে মনে গালি দিতে থাকলাম এতো সকালবেলা সিএনজিতে ওঠার জন্য। যাই হোক, অবশেষে রশির বাঁধনটা খুলতে পারলাম। তারপর কোনরকমে একটা আঙ্গুল দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে ছিটকিনিটা খুলে বের হয়ে আসলাম। পেছনে গিয়ে দেখি ব্যাটা মুখে সিগারেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; কানে মোবাইল। আমাকে দেখে হকচকিয়ে গেল। হয়তো ভাবছিল তার ছিনতাইকারী সঙ্গীরা আসার আগে আমি বের হলাম কি করে। সময় না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বদমাশটার কোন ব্যবস্থা করতে পারলাম না। একটা খালি রিকশা দেখে ডাক দিয়ে যেই মোবাইলে লাইসেন্স নম্বরটা সেভ করতে যাব, তখনই দেখলাম ব্যাটা সাঁ করে তার ‘নষ্ট’ অটোরিক্সা নিয়ে চলে গেল……..কোন ভাড়া না নিয়েই……………………………….
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




