somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মক্কাতে আমরা-২

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ ডিসে¤¦র ২০০৬ -বৃহস্পতি বার, ৬ টায় মক্কায় পৌছালাম, রাতে ২/৩ বার চেক হলো হাইওয়েতে । পথে ২ বার বাস থামিয়ে জুস ও নাস্তা দিল। ওয়ারহাউজ থেকে এগুলো হাজীদের দেয়া হয় । রাতে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে জার্নি । এহরাম বাঁধা আছে। রুমে পৌছালাম ৭ টায় । লাগেজ আসেনি এখনো । ফজর কাজা হলো । ৯ টায় বায়তুল্লায় গেলাম । সুবহানাল্লাহ । ওমরা শেষ করতে করতে ১২ টা ১০ বেজে গেল । জোহর জামাত পড়লাম সাঈ করার যায়গায় । দোতালায় সাঈ করলাম নীচে তাওয়াফ। নামাজের পর পাঁঁচ রিয়েল দিয়ে মাথা কামালাম । অনেক বছর পর সব চুল চেঁছে ফেললাম । ১ম ওমরা শেষ আমিন । দুপুরে মাংশ, ডাল খেলাম । আছর বাসায় পড়লাম । মাগরেব ও এশা রাস্তায় পড়লাম । নুর মোঃ কাকা অনেক খাবার আনল । তার হোটেলে হেভি নাস্তা খেলাম । রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলাম বিতর ও নফল নামাজ পড়লাম । একটা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে গেলাম মক্কা টাওয়ারে । ঘুমাতে ঘুমাতে রাত বারটা বেজে গেল ।

কাবাশরীফ, মক্কা
১৫ ডিসে¤¦র ২০০৬ শুক্র বার , ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে ৫ টা ২০ মিনিটে নামাজ এর জন্য রওয়ানা হলাম । বায়তুল্লাহ মসজিদ এর চত্বরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়লাম । ১১ টায় মসজিদের দোতলায় গেলাম সেখানে জুম্মার নামাজ পড়লাম । এখান থেকে হারাম শরীফ দেখা যায় । ৫ টায় বের হলাম নুর মোঃ কাকার সাথে । মক্কা শহর ঘুরে দেখালো কারে করে। রাতে আলবাইক এর চিকেন ফ্রাই খেলাম বেশ মজা । জাবলে নুর দুর থেকে দেখালাম, ছবি তুললাম। কাকার বাসায় জুস ও চকলেট নিলাম, খেজুর এর কেক কিনলাম একটা । জুম্মা পড়লাম হারাম শরীফে। জান্নাতুল মোআল্লা যিয়ারত করলাম । তাওয়াফ করলাম রাতে । আয়েশা মসজিদের বাস কোথা থেকে ছাড়ে তা দেখে এলাম । মক্কার লোকদের ওমরার এহরাম এখান থেকে বাঁধতে হয় । এটাকে তানঈম মসজিদও বলে ।

তানঈম মসজিদ বা আয়েশা মসজিদ
১৬ ডিসে¤¦র ২০০৬ (শনি বার), তানঈম মসজিদ বা আয়েশা মসজিদ থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরার জন্য প্রস্তুত হলাম । যাওয়া আসা দুই রিয়েল করে চার রিয়েল । মাইক্রোবাস নিয়মিত চলছে এপথে । ৭ টায় বাসা থেকে রওয়ানা হলাম ১১ টা বেজে গেল ওমরা শেষ করতে । আলহামদুলিল্লাহ । রসুল (সাঃ) নামে । জোহরের নামাজ হেরেমে পড়লাম তারপর দোতালায় চক্কর দিলাম ১ টা । চারপাশ আজ প্রথম দেখলাম আমিন । আজ পায়ে একটু ব্যাথা হলো। ভালভাবে দিন কেটে গেল । মাতাফে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ । মসজিদ ও বায়তুল্লাহ এর মাঝামাঝি যে খালি জায়গা এটাকে মাতাফ বলে। এখানে তাওয়াফ করে হাজীরা । ফ্লোর ঠান্ডা সাদা মার্বেল পাথরে মোড়া কখনো গরম হয়না । এরপর ছাদেগেলাম, ছাদথেকে কাবা ঘরের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। অপূর্ব দৃশ্য । আমিন ।

হারাম শরীফ
১৭ ডিসে¤¦র ২০০৬ (রবি বার), আজ সকালে বেশ বাতাস ও ঠান্ডা । মসজিদের পাশের চত্বরে ফজরের নামাজ পড়লাম । জোহর হেরেমে, আছর বাইরে সবার সাথে । মাগরেব শহরের মসজিদে এশাও বাইরে জামাতে । রাতে হেরেমে যাওয়া হলো না । সন্ধ্যায় কিছু জিনিষ কেনা হলো । নতুন একটা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর এ গেলাম।
১৮ ডিসে¤¦র ২০০৬ (সোম বার), সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । ২য় ওমরা করলাম ছোট ভাইর নামে। ৯ টা থেকে ১১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগল । ভীড় একটু বেড়েছে । মাগরেব, এশা সবাই মিলে মসজিদে পড়লাম । রাতে পাইকারী বাজারে বেড়াতে গেলাম । তসবিহ, আতর হত্যাদি কেনা হলো । ঘুমাতে ঘুমাতে ১২ টা ১৫ মিনিট ।
১৯ ডিসে¤¦র ২০০৬ (মঙ্গল বার), সকালে হেরেম শরীফের বাইরে ফযর এর নামাজ পড়লাম । মসজিদ অনেক আগে থেকে ভরে যায় । তাই হোটেল থেকে বের হয়ে সুবিধাজনক জায়গায় জামাত হয় । রাস্তা প্রায় ভরে থাকে । যোহরের নামাজ ভিতরে পড়ার সুযোগ হলো । আছরের নামাজ ও বাইরে পড়লাম । মাগরেব ও এশা সবাই মিলে ছাদে পড়লাম । ছবি তুললাম হেরেমের বাইরে ।

রসুল ( সাঃ ) এর বাড়ী
রসুল (সাঃ) এর বাড়ী দেখলাম। আবু জেহেল এর বাড়ী বর্তমানে টয়লেট । মক্কা টাওয়ার এর পাশে ২৩ তলাতে হোটেলের ১টা স্যুটে গেলাম । ২৫ বৎসরের জন্য বাংলাদেশের কোন এক পরিবহনের মালিক কিনেছে ১০ কোটি টাকা দিয়ে । হেরেম শরীফ এর পাশে মিসফালা এলাকাতে বিশাল হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স হচ্ছে । আড়াই লাখ মুসল্লীর নামাজের ব্যবস্থা থাকবে তা ছাড়া হোটেলগুলো হবে অত্যাধুনিক ও আরামদায়ক ।
২০ ডিসে¤¦র ২০০৬ (বুধ বার), সকালে তৃতীয় ওমরা করতে গেলাম । নানু ভাইর জন্য । হে আল্লাহ কবুল করুন । দুপুরে হেরেমে নামাজ পড়লাম । আছর বেশ কষ্ট হলো পড়তে। প্রচন্ড ভীড়, যাতায়াতের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়তে হলো। রাস্তায় না পড়ে মসজিদের ভিতরে পড়তে যাওয়ার ফলে এ অবস্থা । মসজিদে যেতে হলে আরো আগে যেতে হয় । মাগরেব, এশা বাইরে পড়লাম ।
২১ ডিসে¤¦র ২০০৬ (বৃহস্পতি বার), অনেক মানুষ বেড়ে গেছে, ভীড় ঠেলে আস্তে আস্তে যেতে হয় ফযর বাইরে পড়লাম । ২২ ডিসে¤¦র ২০০৬ (শুক্র বার). সকালে রাস্তায় ফযরের নামাজ পড়লাম । হোটেলের সামনেই জামাত এসে গেছে । দুপুরে জুম্মা পড়তে ১০ টার পর রওয়ানা হলাম । হেরেমের চত্বরে জায়গা হলো । অসম্ভব ভীড়, মানুষ আসা যাওয়া করছে সমানে পিছন দিয়ে । বেশ ঝামেলা হলো। নামাজ সুষ্ঠুভাবে হলো কিনা আল্লাহ জানেন । আছর দ্বিতীয় তলায় পড়লাম । তারপর তাওয়াফ করলাম । মাগরেব বেসমেন্টে পড়লাম, আন্ডার গ্রাউন্ডে বদ্ধ আবহাওয়া, গা ঘাম ঘাম লাগল। রুমে এসে গোসল করলাম। এশার নামাজ পড়ে মক্কা টাওয়ারে গেলাম, কে এফ সি আনলাম ১৩ রিয়েল দিয়ে। আজ দুপুরে সৌদি বিরিয়ানীও ডিম ছিল সাথে কোক, ভালই লাগল।
২৩ ডিসে¤¦র ২০০৬ (শনি বার)া , সকাল মাইক্রোতে করে জেদ্দা গেলাম, ১৫ রিয়েল জনপ্রতি । ১০ টায় জেদ্দা পৌছলাম বার মক্কাতে। সেখানথেকে টেক্সিতে মানু চাচীর বাসায় এলাম । টেক্সিতে ১০ রিয়েল ভাড়া লাগল ।টেক্সি পেতে কোন সমস্যাই হয় না। মক্কা থেকে জেদ্দা ১ ঘন্টার রাস্তা প্রায় মরুভুমি । মাঝে একটা ছোট শহর আছে । ভালই লাগল জার্নি। বাসায় নাস্তা খেয়ে সারাওয়াত ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে গেলাম । জেদ্দার কিছু ছবি তুললাম । বেশ রোদ, দুপুর বেলা ১০০ রিয়েল এর জিনিষপত্র কিনলাম। বাসার পাশেই মসজিদ , নামাজ মসজিদে পড়লাম। বিকেল বেলা মামুন ভাই এর ফ্রেন্ডের গাড়ীতে গোল্ড এর বাজারে গেলাম । এরপর টেক্সি করে বলদিয়াতে গেলাম । ৯:৩০ এ টেক্সি করে বাসা। মাগরেব ও এশা লোকাল এরিয়ার মসজিদে পড়লাম । রাতে আল বাইক এর চিকেন আনলাম ১৬ রিয়েল দিয়ে। ১০ টার পর মামুন ভাইর গাড়ীতে বীচ দেখতে বের হলাম প্রায় ৩০ কিঃ মিঃ ড্রাইভ করে আরব সাগরের পাশ দিয়ে গাড়ীতে বেড়ানো হলো । কিছু ছবি তুললাম । রাতে একটা পশ রেষ্টুরেন্টএ কফি ও চিজ কেক খেলাম । ১ টায় বাসায় এসে ঘুমালাম । জেদ্দায় থাকার প্লান ছিল না , থেকে গেলাম ১ রাত । ভালই কাটল জেদ্দার দিনটা।
২৪ ডিসে¤¦র ২০০৬ (রবি বার), সকাল বেলা ফযর জামাতে পড়লাম ৬ টায় । নাস্তা করে ১০ টার দিকে মক্কার পথে রওয়ানা হলাম টেক্সিতে । পথে ২/৩ বার চেক হলো আইডি কার্ড । মক্কায় পৌছেই যোহর নামাজ পড়লাম হেরেমে । হোটেলে এসে গোসল । আছর ও মাগরেব রাস্তায় । এশার নামাজ ছাদে পড়লাম । কাবা দেখে দোয়া করে ২০৩০ এ বাসা । নতুন ফিল্ম, হাজ্জী মেট (মাদুরের মত ফোল্ড করা যায় প্লাষ্টিকের) ও টেলিফোন কার্ড কেনা হলো।
২৫ ডিসে¤¦র ২০০৬ (সোম বার), ফযরের নামাজ রাস্তায় পড়লাম । হালকা খেয়ে ওমরার জন্য বের হলাম । আজ ভাড়া ৫ রিয়েল চাচ্ছিল । গাড়ীও কম ছিল । পরে ৩ রিয়েল এ গেলাম। ইউএইতে কর্মরত বাংলাদেশী একজনের সাথে দেখা হলো চট্টগ্রামের অধিবাসি। সৌদি জীবন পদ্ধতি স¤¦ন্ধে কিছু জানলাম । আব্বার নামে ওমরা হলো আজ, অনেক মানুষ তাওয়াফে এলো । ১০৩০ এ রুমে এসে গোসল ও ইহরাম এর কাপড় ধুয়ে দিলাম। যোহর, আছর রাস্তায় পড়লাম । আছরের পর আমাদের এলাকার উল্টা দিকের হেরেম এলাকা দেখতে গেলাম। কফি খেলাম ১ কাপ । মাগরিব এর নামাজ পড়লাম সাঈ এলাকার পাশের মসজিদে । এরপর এশা পড়লাম অন্য এক জায়গায়। হজ্জ ম্যাট কিনলাম ২টা । জামাত এখন রাস্তায়, অনেক দুর পর্যন্ত যায় ।
২৬ ডিসে¤¦র ২০০৬ (মঙ্গল বার), আজ ফজরের নামাজ মক্কা টাওয়ার এর কাছাকাছি রাস্তায় পড়লাম । জোহর মক্কা টাওয়ারে পড়লাম। বেশ ভাল ব্যবস্থা । ফেনীর মহিলা পোষ্ট মাষ্টার ও কাজমী ভাইর সাথে দেখা হলো । আছর পড়ে বাংলাদেশ হজ্জ মিশনে গেলাম ঔষধ আনতে । আনা হলো না । অনেক লাইন । মাগরেব রাস্তায় পড়লাম। এশা মক্কা টাওয়ারে পড়তে পাড়লাম । ১১ টায় তাওয়াফ ও সাঈ করলাম আম্মুকে হুইল চেয়ারে করালাম । ভোর পৌনে চারটায় আসলাম রুমে ।
২৭ ডিসে¤¦র ২০০৬ (বুধ বার), ফজর রুমে পড়লাম । তারপর ঘুম । যোহর মক্কা টাওয়ার, আছর বাইরে মাগরেব মক্কা টাওয়ার । এশা বাইরে পড়ে হেরেমে গিয়ে এহরাম এর নামাজ পড়লাম । বিকেলে মোগলাই ও চা খেলাম । ৪ দিনের প্রিপারেশন নিয়ে ব্যাগ গুছাচ্ছি । রাতের বেলা মক্কা থেকে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই ও রাত ১২৩০ এ বাসে করে মীনা এলাম । । একই সময়ে সবাই যাচ্ছে তাই হইচই বেশী । মোআল্লেমরা বিভিন্নভাবে সময় ভাগ করে নিয়েছে। আমরা রওয়ানা দেওয়ার কথা ৯ টায় তবে দেরী হলো বেশ । এহরাম বাধা হয়ে গেছে । একটা ব্যাগে ৩/৪ দিনের জিনিষপত্র নিলাম । পোটলা মনে হয় বেশী হয়ে গিয়েছিল আমাদের। না নিয়েও উপায় ছিলনা । বেশ শীত । মীনায় নাকি আরো ঠান্ডা। যাক বাসে উঠলাম বেশ সময় লাগল অল্প রাস্তা অতিক্রম করতে । আস্তে আস্তে বাস চলছিল । বিশাল লাইন । রাতে তাঁবুতে পৌছালাম । ঢালাই বিছানা ২৮ জনের মত এক তাঁবুতে । তাঁবুতে একটু শীত কম । রাতে ঘুমিয়ে গেলাম । সকাল বেলা নাস্তা নিয়ে একটু ঝামেলা হলো । এখানে নাস্তা আরবের মোআল্লেম দেয় । ব্রেড, জেলি, আপেল দিল । বাইরে থেকে ২ রিয়াল দিয়ে চা কিনে আনলাম । মক্কার ডাবল দাম । মিনায় সারি সারি তাঁবু । ওয়েল অর্গানাইজড । প্রত্যেকটা দেশের জন্যও মোআল্লেম না¤¦ার অনুযায়ী তাঁবু ভাগ করা । ম্যাপ আছে। ৪০/৫০ লক্ষ লোক এভাবে তাঁবু শহরে আছে । আমরা মীনার পূর্বের সীমানার বাইরে নতুন বর্ধিত এলাকায় তাঁবু পেলাম । আমাদের তাঁবু একদম মীনার শেষ প্রান্তে এটা পূর্বের মুজদালিফা এলাকা ছিল । মীনার জায়গা বাড়তে বাড়তে মুজদালেফা এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে তা জায়গা বাড়ানোর জন্য মীনা ডিক্লিয়ার করেছে।লোহার গ্রীল দিয়ে ঘেরা এক একটা এলাকা ভেতরে ২/৩ সারিতে তাঁবু, টয়লেট, কুক হাউজ ইত্যাদি আছে। টয়লেটে পানি পাইপে আসে । তাতেই গোসল সারতে হয়। বেশ ল¤¦া লাইন হয় । তাই আগে বা পরে ওজু গোসল করতে হয় । ইহরাম এর কাপড় পরে টয়লেট করা ঝামেলা তাই কম খাওয়ার দরকার হয়। ফল মুল খেলে ভাল ।
মিনা, সৌদিআরব
২৮ ডিসে¤¦র ২০০৬ (বৃহস্পতি বার) , সকালে তাঁবুতে নামাজ সূর্য উঠার পর টেম্পারেচার বাড়ল । হেঁটে হেঁটে পূর্ব দিকে জামারত এর কাছে গেলাম এখানে শয়তানকে পাথর মারার পিলার গুলো আছে। তারপর আশপাশ ঘুরে দেখলাম । জোহর, আছর কছর পড়লাম । গোসল ও টয়লেট একটু কষ্ট । তবে করা যায় রাতে ডিনারের পর রেডি হলাম আরাফাতের জন্য । সন্ধ্যায় এশার পর আরাফাতের উদ্দেশ্যে আবার পোটলা নিয়ে রওয়ানা হলাম। আবার বাসে উঠে ঘুরতে ঘুরতে আরাফাত । রাত ১২ টা বেজে গেল ।আরাফাত ময়দানের শেষ সীমানার কাছে আফগানিদের পাশে আমাদের তাঁবু । দরিদ্র দেশের লোক আমরা তাই সবকিছুই গরীব এর মত। রাতে কোনমতে একটু জায়গা করে ঘুম দিলাম । সকালে ফজর পরতে হবে।

আরাফাত ময়দান
২৯ ডিসে¤¦র ২০০৬ (শুক্র বার), আরাফাতে ওপেন টেন্টে থাকার ব্যবস্থা । বাংলাদেশীদের জন্য আরাফাতের ময়দানের ওই নির্দিষ্ট এলাকাতে টয়লেটের সংখ্যা হাজিদের তুলনায় কম । রাতে ঘুমিয়ে গেলাম । ফজর নামাজ পড়ে একটু পাহাড়ে উঠলাম। সুবহানাল্লাহ । কি বিশাল এলাকা । দুরে বড় বড় পাহাড়, কিছু ছোট ছোট পাহাড় ও আছে । পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তা বানানো আছে । ৪০/৪৫ লাখ মানুষ আরাফাতের ময়দানে হজ্জের দিন জামায়েত হয়েছে । এবারের হজ্জ শুক্রবার দিন । একে আকবরিয়া হজ্জ বলে । রাত ১ টার দিকে আমরা আরাফাতের ময়দানে পৌছালাম । তাঁবুতে অবস্থান, বেশ অন্ধকার রাত, আলোর ব্যবস্থা নেই, কোন মতে আল্লাহর নাম নিয়ে শুয়ে গেলাম । টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা অপ্রতুল । সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে ওজু করে ফযরের নামাজ পড়লাম । এহরাম বাঁধা । ঠান্ডা আছে বেশ । সকালের আলোতে আরাফাতের ময়দান দেখলাম । বিশাল এলাকা ।

আরাফাত ময়দান
আমাদের তাঁবুর পেছনের ছোট্ট পাথুরে পাহাড়ের উপর উঠে এলাকা দেখছি । যতদুর দেখা যায় তাঁবু । দুরে জাবল এ রহমত এ অনেক মানুষ। এখানে দাঁড়িয়ে রসুল (সঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণ দিয়েছিলেন । আমাদের তাঁবু থেকে বের হলে কিছুদুর গিয়ে মেইন রাস্তা । সেখানে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি হয় চা আনলাম। শীতের সকালে বেশ ভাল লাগে চা খেতে । ডিসপোজেবল কাপ । নাস্তা মোটেও সুবিধার না । যাক দোয়া দুরুদ পড়লাম । ৯ টার দিকে খেয়াল হলো মসজিদে নমিরাতে যাব জুম্মা পড়তে । ২/৩ জন মিলে নামিরা মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম । পথে গোসল করলাম ও এহরাম এর কাপড় বদল করলাম । বহুদুর ,চলছিতো চলছি। কিছু গিফ্ট পেলাম জুস ও পানীয় । মসজিদের দিকে বেশ ভীড় এগুতে পারলাম না । মসজিদে যাবার রাস্তায় বসে গেলাম। খুতবা শুনলাম না তবে জোহর ও আছর কছর এর সাথে আদায় হলো । এবছর এটা আকবরীয়া হজ্জ ছিল। মানুষের স্রোত ও ধাক্কাতে যাওয়ার পথে বেশ কষ্ট হলো । কাপড় চোপড় ও হজ্জ ম্যাটে ময়লা লাগল, রাস্তায় না আসলেই মনে হয় ভাল ছিল । প্রচন্ড রোদ পথে মাঝে মাঝে ট্রাকে পানি জুস ও খাদ্য বিলিয়ে দিচ্ছে । কিছু নিলাম পথে খেতে । দুপুরে তাঁবুতে ফিরে এলাম । বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মেজর জেনারেল একরাম (অবঃ) হজ্জ করতে এসেছেন । দেখা হলো তাঁর সাথে । দুপুরে লাঞ্চ এর পর মোনাজাত হলো তাঁবুতে বসেই । ৪ টার দিকে আদেশ হলো বাসে বসতে হবে । সূর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করতে হয়। তবে এত ভীড় হয় যে বাসে করে যেতে যেতে রাত হয়ে যায় । বাসের কন্ডাক্টার ও ড্রাইভারদের ব্যবহার ভীষণ খারাপ । মেজাজ খারাপ হয়ে গেল । আল্লাহ মাফ করবেন । বাসে বসে বসে দোয়া পড়লাম মাথাটা গরম ছিল মোনাজাত করলাম আল্লাহর কাছে সূর্যাস্তের সময়। মুজদালফার পথে আমরা রওয়ানা হচ্ছি আরাফাত থেকে । এই ময়দানই হাসরের ময়দান হবে । আল্লাহ এ দুনিয়াতে দেখালেন । আমিন । যে রকমই হোকনা কেন ৪৫/৫০ লাখ হাজীদের এধরনের ব্যবস্থা করা সত্যিই কৃতিত¦ দাবী রাখে । আর আগে যখন পানি, তাঁবু, টয়লেট ছিল না তখনকার অবস্থা সহজে অনুমান করা যায় । পায়ে হেটে মাইলের পর মাইল যাওয়া সত্যি জেহাদের মতই ছিল এটা । সূর্যের প্রখর তাপ দিনে রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা । আল্লাই হেফাজত করেন তখন । আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের সময় ভালভাবেই কেটে গেল আল্লাহর রহমতে । বাসে রাত প্রায় ১১ টার দিকে মুজদালিফাতে থামল । রাস্তায় শুলাম, প্রচন্ড শীত । ভাত গিফ্ট পেলাম । ১২ টায় ঘুমালাম । শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছিলাম, আমি সব কাপড় চোপড় জড়িয়ে খোলা আকাশে রাত কাটালাম, অনেকে তাঁবুতে ছিল ৫০ রিয়েল দাম । এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা তবে ভবিষ্যতে আল্লাহ যদি তৌফিক দেন পোর্টেবল তাঁবুতেও থাকা যাবে ইনশায়াল্লা।
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×