সামাজিক অবক্ষয় সমাজ ধ্বংসের মূল কারিগর।সমাজে যখন সামাজিক বিষয়গুলোর ক্ষয়প্রাপ্তি শুরু হয় তখনই সমাজের অধঃপতন ঘটতে শুরু করে যার নাম সামাজিক অবক্ষয়।সামাজকি বিষয়গুলোর মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ হচ্ছে প্রধান।আর সমাজব্যবস্থায় এই মনুষ্যত্ববোধ লোপ পেলে কিংবা ঘাটতি থাকলে সমাজে নেমে আসে নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা।সমাজে অসামাজিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়াই হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ।বর্তমানে আমাদের সমাজে অসামাজিক কর্মকাণ্ড দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ,কমার কোন লক্ষণ নেই।এই অসামাজিক কর্মকাণ্ড এমন ধারায় হচ্ছে যেখানে থাকছে না মানবতার কোন স্থান।সামাজিক অবক্ষয়ে সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়ত হচ্ছে কলুষিত এবং কলংকিত।যার আকার এতটাই প্রবল যে সাধারণ মানুষের হৃদয়কে রক্তা্ত্ত করে স্তম্ভিত করে দেয়।
সভ্যতার এত উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে সমাজব্যবস্থা এমন একটি পর্যায় এসে পৌছেছে য়েখানে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আসলেই আমরা মানুষ না পশু?
হ্যা,আমি শিশুহত্যার কথাই বলছি।এমন পৈশাচিকতা জন্তু-জানোয়ারকেও হার মানায়।হয়তো এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ড মানুষ সভ্য হয়ে গড়ে ওঠার আগেও ঘটেনি।মানুষ কতটা পাষণ্ড হলে এমন পৈশাচিক কাজ করতে পারে তা ধারণার বহির্ভূত।
টিকন,সামিউল,আদনান এরা সবাই কোমলমতির নিষ্পাপ শিশু।কিন্তু,সবাই নির্মম হত্যার শিকার।প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে শিশু হত্যা ।কেন এ জঘণ্য পাপকাজ সমাজকে আকড়ে ধরতে চাচ্ছে,কোথায় এর শেষ!
চট্টগ্রামের চান্দগাওয়ের শিশু টিকন।মা গার্মেন্টেসের শ্রমিক।ছোট শিশুর মায়ের জন্য মন কাদে।মায়ের জন্য সময়ে অসময়ে কান্না করা কেড়ে নিল তার জীবন।শুধু মাত্র কান্না করার অপরাধে নির্দয় মামার শাসনের নামে দুঃশাসনের পিটুনীতে মৃত্যু হয় টিকনের।
সিলেটের কুমারগাওয়ে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া সামিউল কিছু বিকৃত মানুষের লালসার শিকার হয়ে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।দরিদ্র পরিবারে সন্তান সামিউল সবজি বিক্রি করে সংসারের যোগান চালাতে বাবাকে সাহায্য করত।কিছু সম্পাদশালী লোক সামিউলকে চোরের অপবাদ দিয়ে খুটির সাথে বেধে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালায়।সামিউলেল সারা শরীর খুচিয়ে খুচিয়ে মারা হয় যা মধ্যযুগীয় বর্ববরতাকেও হার মানিয়েছে।শিশুটি মৃত্যর পূর্বে পানি চেয়েছিল কিন্তু তাও পায়নি।হত্যাকারীরা পৈশাচিকতার চরম শিখরে পৌছে হত্যার দৃশ্য ধারণ করে ইন্টারনেটে দেয় যা দেখে মানুষের হৃদয় হয়েছে ক্ষতবিক্ষত।
রাজশাহীর পবা উপজেলায় স্ত্রী এর উপর রাগ করে ছয় বছরের আদনানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে এক নির্দয় পিতা।মানুষের মায়া নামক অনুভূতি কি হারিয়ে গেল না যাচ্ছে? কি নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে মানুষের হৃদয়।
শিশুদের উপর এ কেমন বর্বরতা।বাবার হাতে ,মায়ের হাতে কিংবা অন্য মানুষদের হাতে এসব কি ঘটছে?তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন লোহমর্ষক ঘটনার বৃদ্ধিতে সকলেই হতবাক!
সর্বশেষ মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ বেচে যায় আট মাসের এক নবজাতক।এগুলো কেন হচ্ছে?কোথায় মানবতা?
শিষ্টচারিতা,মাদকাসক্তি,অসুস্থ রাজনীতি,সৌজন্যবোধ,মূল্যবোধের অবক্ষয়,বেকারত্ত্ব,ইসলামিক শিক্ষার অভাব,পারিবারিক শিক্ষার অভাব,অপসংস্কৃতি,কু-সংস্কার,বিশ্বাসহীনতা,ইন্টারনেট,,মন্যুষত্ববোধ ,বিচার ব্যবস্থা সহ প্রত্যেকটি বিষয় এমন নিকৃষ্ঠতম ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সামাজিক ব্যাক্তিবর্গ গণ।
দেশের সাধারণ মানুষদের চাওয়া-
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক,দেশে শান্তি ফিরে আসুক,কোমলমতি শিশু গুলো অকালে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাক।দেশের মানুষের বিশ্বাস সরকারী হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসন ব্যবস্থা পারে মানুষের এসব আশাকে সত্য করতে।আমরা এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য আর দেখতে চাই না।