আমার প্রেমিকারা আমাকে ছেড়ে গেছে। এই শীরোনামে আমি একটি সিরিজ লিখছি।
প্রিয় প্রেমিকারা আমার
আজ আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। কেবলি ইচ্ছে করে পাখির মত উড়ে উড়ে চলে যাই পার্সপোর্ট আর ইমিগ্রেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তেপান্তরের দেশে দেশে। তবে দিন শেষে আর পাখি হওয়া হয়ে উঠেনা। শীতাতাপ অফিস ঘর থেকে বেরোলে দোজকের ওম আমাকে ঠেসে ধরে। আমি তড়পাই। শহরের জণ্ডিস বাতিরা আমাকে স্বাগত জানায়। তারপর ক্রমশ রাত দীর্ঘ হয়, তখন আমার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় রাত জেগে পাশের বাসার মৌসুমীর কাছে ভুল বানানে লেখা চিঠির কথা। আহ! মৌসুমী এখন কোথায় আছে? শুনেছি স্বামীর সাথে গ্রামে থাকে। স্বামী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। লাল রঙের একটি মোটর সাইকেল আছে। মৌসুমীকে সেই বাইকে নিয়ে তার দাত উচু পেটমোটা স্বামী প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তুতো একদিন চিত্রা মধুমতির পাড়ে নিয়ে যায় ঘুরতে। তখন তারা কী কথা বলে, আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে। তখন কী মৌসুমী তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে, ‘তোমার হাসিটা খুব সুন্দর। হাসলে পুরুষ মানুষের গালে যে টোল পড়ে তাতো তোমাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।’ আমি তখন আরও খিল খিল করে হেসে উঠি। সে তখন বলে ‘এই হাসি তুমি কারোর সামনে গিয়ে কখনো হাসবে না।’ আমি তখন তাকে বুকের মধ্যে নিয়ে নেই। মনে হয় শিমুল তোলার মত নরম। আমার তখন ঘুম পেয়ে যায়।
জানি মৌসুমীর স্বামী হাসলে গালে টোল পড়ে না। তবু মৌসুমী তার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কী কথা বলে? আমার ভিশন জানতে ইচ্ছে করে তাহাদের কথোপকথোন। এর মধ্যেই মৌসুমীর মসৃন পেট উচু হতে থাকে, তাঁর হাটা চলাও কমে যায়। বুঝতে পারি বছর ঘোরার আগেই তার বুক আরেকজন দখল করবে।
মৌসুমীকে আমার কখনো বলা হয়নি, ‘এইরকম স্বচ্ছ মুখ আমি আর কোথাও দেখবো না।’ তাঁকে আমার অনেক কিছুই বলা হয়নি। আমার কোনো প্রেমিকাকেই আমার কিছু বলা হয়নি। আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম ভিশনভাবে আমার মধ্যে। কিন্তু শেষতক আমি বেঁচে আছি অন্যদের সময়। সেই সময়ের কোনো কিছুই আমার হাতের মধ্যে নেই। আমি শুধু ঘটে যাওয়া সময় নিয়ে হাপিত্যেশ করি।
মৌসুমীর সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। বছরান্তে একবার বাড়ি যাই। আমার আসার খবর শুনে সে ও তাঁর বাবার বাড়ি আসে। আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়না। আমার ভাঙা দো’তলা বাড়ির দক্ষিণার জানালা দিয়ে দেখি মৌসুমী তাদের উঠানে দাঁড়িয়ে তাঁর মেয়েকে খুব আদর করছে। আর ঠিক তখন কোথা থেকে উড়ে আসে এক দঙ্গল বাতাস। বাতাসতো নয় যেনো আগুনের হল্কা। যেনো দোজকের জানালা দরজা খুলে গেছে। আমি তাকাতে পারি না। তবু আমার চোখ চলে যায়। দেখি একজন মা সন্তানকে গভির মমতা নিয়ে জড়িয়ে ধরেছে বুকে।
বিকাল বেলা তারা দাত উচু পেটমোটা স্বামী শব্দ বরে লাল মোটর সাইকেল নিয়ে আসে। মৌসুমীর মেয়েটি মোটর সাইকেলের সামনে গুটিশুটি মেরে বসে। মৌসুমী তার স্বামীর কোমর জড়িয়ে ধরে। মৌসুমীর স্বামী তখন অহংকারী ভঙ্গিতে শব্দ করে মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে যায়। আমার দিকে তারা কেউ ফিরেও তাকায় না।
আমার মা তার বয়সের চেয়ে বড় দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। আমি আমার মাকে বুঝতে দেই না আমার মধ্যেও দীর্ঘশ্বাস হাপিত্যেশ করছে।
আমার প্রেমিকারাই এমন। আমি যাদের এক সময় অবহেলা করেছি, ভেবেছি আমি ছাড়া আর কে পাবে তাহাদের অধিকার। তারা যখন ছিলো তাদের থাকাটাই স্বাভাবিক স্বতসিদ্ধ ধরে আমি চলে গেছি আমার আপন ভুবনে। আমি আমার মত বাঁচতে চেয়েছি। কিন্তু এই দূরান্ত সময় যখন একজন নারী শুধু যৌনতার সঙ্গি নয়, আমার দাবী তাদের কাছে আরও বেশি ঢের। আমার মন্দ লাগা ভালো লাগা আর তার সব বিষয় আমি যেনো অতলান্তে ডুব দিয়ে স্পর্শ করবো। তখন দেখি আমার সব প্রেমিকা আমাকে একে একে ছেড়ে গেছে। হায় প্রেম, এখন আমাকে শুধু বিদ্ধ করে। ভালোবাসে না। স্মৃতি বড় অভিশপ্ত পুরানকথা।
(চলবে)