somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজিমপুর এফ.সি.- এর বৈকালিক কথন

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধরা যাক, কোনো এক শুক্রবারের বিকেলে আপনি ফুটবল খেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে যথা সময়ে পৌছে গেলেন আজিমপুরের অগ্রনী স্কুলের সামনে। এবং যথারীতি আপনি আবিস্কার করবেন আপনি ছাড়া সেখানে আর কেউ উপস্থিত নেই। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, আলেকজান্দার গ্রাহামবেল সাহেব-কে শতকোটি ধন্যবাদ জানিয়ে আপনি আপনার মোবাইলের সাহায্য নেয়া শুরু করে দিতে পারেন।

প্রায় দশ মিনিট পরে সার্কিট-হাউস মসজিদের দিক থেকে ঘুম ঘুম চোখে আগমন ঘটবে এক লিকলিকে গড়নের যুবকের; যথারীতি তার কানে থাকবে মোবাইল। আপনার হাত নাড়ানোর পর-ও সে আপনাকে অগ্রাহ্য করে আরো কিছু সময় কানে ফোন ঠেকিয়ে রাখবে। তারপর আপনার পাশে বসে বলবে,"আমি ঘুমায়ে পরসিলাম - তুই কখন আইসস ??" এরপর খানিক হাই তুলে দেরিতে নীচে নামার জন্য পোলাপানের মুন্ডুপাত করে বলবে- 'হালার বাঙালীর টাইমের ঠিক নাই রে... " নিখুঁত সময় মেনে চলা এই যুবকের ভাল নাম 'গেদু'- ঠাট্টা করে কেউ কেউ রুপক ও বলে থাকে।

রুপকের দেখা পেয়েই পাশের বিল্ডিং থেকে সুকেশী এক যুবকের আর্বিভাব ঘটবে। এই যুবকের সর্বাঙ্গ থেকে আপনি অপরিসীম ক্রোধ বিচ্ছুরিত হতে দেখবেন। মুখের কথাকে কাজে পরিনত করতে পারলে ইতিমধ্যে সে শ'পাঁচেক বার জেল খাটতো। রক্ত-গরম করা সুরে সে আপনাকে জানিয়ে দেবে তার হাতে পাশের বাসার আংকেলের আসন্ন মরনের কথা ; পাশের বস্তির সাহু-মাহুর উচ্ছেদ যে তার বাম-হাতের কাজ- এ গুরুত্বপুর্ন তথ্য ও আপনি অবগত হবেন। 'আঠারো বছর বয়স কভু মাথা নোয়াবার নয়'- এ কবিতা সীমান্তর জন্য-ই বোধহয় লেখা হয়েছিলো।

প্রায় এক-ই সাথে আগমন ঘটবে মোটু তুর্য এবং লালু তুর্যের। নেতা সুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে লালু বেরিয়ে পরবেন মোটু এবং সীমান্তকে নিয়ে, কলোনীর জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে তার এই ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে।

খানিক পর কৃশকায়- খর্বকায় একজন দশ নম্বর জার্সিধারীর আগমন ঘটবে। কয়েকটি দুর্বোধ্য ডাক্তারী শব্দ উচ্চারনের পর চারপাশের অপ্রতুল লোক-সংখ্যা দেখে রাজীব ভাই সরোষে বলে উঠবেন,"বা... , (!!!)বলসিলাম আমারে ডাকিস না, পোলাপাইন আইবো না- চ্যা... (!!) । খেলাও হইবো না- আমি বাসায় কি কাজ ফেইলা আসছি জানোস ??" এরপর তিনি জানাবেন তার ভাইরাস দোষে-দুস্ট কম্পিউটারের শিশুতোষ সমস্যার কথা। সংসারী রাজীব ভাইয়ের বিস্তারিত বিবরন ধীরে ধীরে দেব।


এরই মাঝে চলে আসবে আতিফ আর শিমুল। আতিফ বল নিয়ে এক কোনে স্কিল প্র্যাকটিস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর শিমুল ভারিক্কী সুরে বাংলাদেশের আই-সি-এল জনিত সমস্যা সমাধানে তার মতামত ব্যক্ত করবে।


তখনই হয়ত আপনি প্রথম খেয়াল করবেন যে ইতিমধ্যে কানে মোবাইল নিয়ে ধড়িবাজ চেহারার যে যুবকটি প্রায় চার-পাঁচ বার পুকুর ঘুরে এসেছে ; তিনি ও প্রকৃত পক্ষে খেলতেই এসেছেন। আপনি তখন পরিচিত হবেন ফুটবল দলটির এক-মাত্র 'পাপী' সদস্য নাফিস ভাইয়ের সাথে। তিনি এসেই নায়িকা মৌসুমীর বিভিন্ন নাচের মুদ্রা দেখিয়ে অথবা আতিফের কাছে 'জার্মানী-তে আচার পাওয়া যায় কি না' এ জাতীয় প্রশ্ন করে সকলের হাস্য-রসের উদ্রেক ঘটাবেন। নাম-করনের সার্থকতা প্রমান করতে খানিক পর তাকে অগ্রনীর দারোয়ান সম্প্রদায়ের সাথে খুনঁসুটি করতে ও দেখা যেতে পারে।হাফ-প্যান্ট পরে এরই মাঝে চলে আসবেন মারুফ ভাই। মুখ ভার করে রেখেই তিনি জানিয়ে দেবেন জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের সাম্প্রতিক সমস্ত গসিপ।


দুই তুর্য এবং সীমান্তের আগমনের সাথে সাথে সমবেত সকলে মাঠে ঢুকে পড়বে, সেখানে টিটু এবং তার বন্ধুরা ইতিমধ্যে প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছে। আপনার ভাগ্য ভালো থাকলে বার্র্ষিক ছুটি'র কোনো দিনে আলোচিত চরিত্র-গুলো ছাড়া ও আপনি দেখতে পারবেন 'ভাম্বা' অনীক; 'মজুমদার' সাদ, 'বাবা' নিবিড় ভাই, 'দ্রগবা' মিয়াঁদাদ ভাই, 'ইঞ্জিন' রাজিন ভাই ; 'বাটপাড়' আনান ,'চুঁনো' তাম্মাম-দের। ...আর ভাগ্য খারাপ থাকলে মাঠে উপস্থিত থাকবে দুই 'গপ্পী' রুম্মন এবং ফরিদ...(!!!!)- আর আপনি (সুহান স্বয়ং) তো উপস্থিত আছেনই !!
খেলা শুরু'র ঠিক এক মিনিট আগে মাঠে এসে ছোটো প্রমিত টিম গঠনে ব্যাপক সমস্যার সৃস্টি করবে। অজুহাত হিসেবে ঘাগু এই ছেলেটি আপনাদের অক্লেশে জানাবে যে সে 'ঝালকাঠি' বা 'টেকনাফ' থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছে। গপ্পো আর কাকে বলে !!!


অবশেষে আযানের ঠিক পাঁচ মিনিট আগে খেলা শুরু হবে। প্রথম মিনিট দশেক খেলায় 'জোগো বনিটো' আনবার চেষ্টা চললেও তারপর-ই আসল ফুটবল শুরু হবে। মাঝমাঠ থেকে ক্যাঁতরানি শুরু করে রাজীব ভাই বলটা হারিয়ে ফেলবেন ঠিক পোস্টের সামনে। আতিফের নেয়া শটটা গোল হয়েছে না হয়নি এই নিয়ে দুটো দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। আতিফ তার স্বভাব-সুলভ নীঁচু (!!)গলায় জানাবে যে এটা অবশ্যি গোল। অপরদিকে মারুফ ভাই "এই-টা গোল হইলে গোলের বাজারে গোলের আর দাম থাকবো না..." জাতীয় বাক্য বলে তীব্র আলোড়ন সৃস্টি করবেন। অবশেষে রুপকের মধ্যস্থতায় খেলা আবার শুরু হলে ও রাজীব ভাই-এর খেলার ধরন নিয়ে তার দলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেবে। দলীয় এই রেষারেষি আবার শুরু হবে খানিক পরেই ; এবার বিষয় আরো তুচ্ছ। নাফিস ভাই অভিযোগ করবেন যে রাজীব ভাই থ্রো হওয়ার পরে ও খেলা চালিয়ে গেছেন ; প্রতিবাদে শিমুল জানাবে যে একটু আগে নাফিস ভাই-এর দল ও একই কাজ করেছে। উদীয়মান নেতা তুর্য এর সমাধান করতে এসে চেস্টাকৃত ভারী গলায় "থাপ্পড় থাপ্পড় " বলে পরিস্থিতি আরেকটু জটিল করে তুলবে। ...


...এই রুপ নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং কয়েকটি ছোটো-খাটো ইনজুরি প্রাপ্তি'র মধ্য দিয়ে খেলা শেস হবে। এরপর আবার প্রত্যাশা সাইনবোর্ডের নীচে। আবার চলবে রাজীব ভাইয়ের ম্যাচ বিশ্লেষন ; মারুফ ভাই-এর সিগারেট ; রুপকের ফোনকল ; পাপীর অভিনয়। শিপন, 'মামা' প্রমিত বা শাহেদের উপস্থিতি আড্ডায় যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। সময় ফুরোলে আবার সবাই যে যার পথে... পরের শুক্র-বারে ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এভাবেই চলে সময়...।


... ...এদের মত অমার্জিত, অ-সংস্কৃত, দস্যি-দের সাথে থাকা যায় ??? জানি, জানি- আমার মত আপনার উত্তর ও হবে "না , কিছুতেই না"। কিন্তু কি করি বলুন ; বৃহস্পতি-বার এলেই তো মন চঞ্চল হয়ে উঠে। ভাবুন তো একবার- মারুফ ভাইয়ের গপ্পো; নাফিস ভাইয়ের অভিনয় ; রাজীব ভাইয়ের ক্যাঁতরানি ছাড়া একটি শুক্রবারের বিকেল ??? অ--স--ম্ভ--ব ! ! ! !



আজিমপুর বেঁচে থাকুক; জয়তু আজিমপুর এফ.সি !!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৮
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×