somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রত্নচোর

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- " রত্নচুরি ?? বলেন কী ?? "

- " উহুহু, চুরি নয়-চুরি নয়। চুরির ব্যর্থ চেষ্টা..."

- " রহমত পাটোয়ারীর বাড়িতে চুরির চেষ্টা ?? উরেব্বাস- সাহস আছে বলতে হয় ব্যাটার...। কী যেন নাম বললেন স্যার ?"

- "নাম বলি নি।... বলার সুযোগ দিলেন কোথায় ?? পুরোটা শোনার আগেই যেরকম চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিলেন..."

- "হে হে... মাফ করবেন স্যার। মফস্বলের পত্রিকা, কেবল তো সিনেমার গসিপ আর রাজনৈতিক গ্যাঞ্জামের খবর লিখে পৃষ্ঠা ভরাতে হয়। অনেকদিন এরকম 'স্কুপ' খবর পাইনিতো- তাই স্যার মানে যাকে বলে উত্তেজিত হয়ে একেবারে..."

- "হুমম। ... বুঝেছি- এবার থামুন। কী যেন নাম বলেছিলেন আপনার ?? হুঁকো বরদার ??"

- " আমার নাম, স্যার ?? সেতো ফজু সর্দার। স্যার দেখছি- হেহে- ভুলে বসে আছেন...। তা স্যার আমরা অতি নগণ্য মানুষ- আপনাদের মতো মহীরুহেরা আমাদের ভুলে যাবেন- এটাই তো স্যার স্বাভাবিক..."

- "হয়েছে, হয়েছে। ফ্যাঁচফ্যাঁচিয়ে ম্যালা দেরি করিয়ে দিচ্ছেন...। থানায় তো আমাদের আরো কাজ আছে, আপনার মতো দুদশটা ইশটুপিডকে গপ্পো শোনানো ছাড়াও, নাকি ?? নিন- তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করুন। "

-"আমি স্যার আর কী প্রশ্ন করবো বলুন ?? নগণ্য মানুষ স্যার- কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলি- হেহে। কষ্ট করে স্যার যদি আপনিই একটু খুলে বলতেন ঘটনাটা..."

-"...রাবিশ্‌ !! শুনুন ফজু সাহেব, অত কথা বলবেন না- বেশি কথা বলা আমার দু'চোখের বিষ। ঠিক আছে, ঘটনাটা আমিই বলছি, আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকলে প্রশ্ন করে জেনে নেবেন। ওকে ?? গুড...। এবার বলুন তো রহমত পাটোয়ারী সম্পর্কে আপনি ঠিক কী কী জানেন ??"

-"রহমত পাটোয়ারী স্যার- বলতে গেলে এই নবীগঞ্জের সবচেয়ে রহস্যময় লোক। বছর দশেক আগে শহরের একপ্রান্তের বিঘা চারেক জমি কিনে বলতে গেলে শহরে জুড়েই বসলেন ভদ্রলোক। বিশাল এক পাঁচিল দিয়ে নিজের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন তিনি। বাড়ি বললাম স্যার- কিন্তু ওটা তো আদতে একটা দূর্গ। শহরের লোকেরা স্যার- তাকে নিয়ে নানা ধরণের কথা বলে নিজেদের মাঝে। সবই স্যার গুজব। কেউ বলে উনি কাউকে খুন করে এখানে পালিয়ে আছেন, কেউ বলে উনি সরকারের লোক- বাড়িতে নানারকম গোপন বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছেন। নানারকম কথা স্যার। তবে এটা সত্যি, ভদ্রলোক নিজেকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে রেখেছেন নবীগঞ্জের লোকেদের কাছ থেকে। তার সাথে একবার দেখা করতে গিয়ে আমারও ঠিক এই কথাটা মনে হয়েছে। "

-"দেখাও হয়েছে নাকি আপনার সাথে ?? ঠিক কবে বলুনতো ?? কীভাবে ?? "

-"সেও তো স্যার প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। কাগজের জন্যে একটা সংবাদ যাচাই করতে গিয়েছিলাম। সেই প্রথম আর সেই শেষবারের মতন ঐ বাড়িতে যাওয়া...। কী বলবো স্যার- অদ্ভূত !! বিরাট পাঁচিল দিয়ে ঢেকে রাখা বাউন্ডারীর ঠিক মাঝে একটা তেতলা বাড়ি আর একটা গম্বুজ !! চিন্তা করুন স্যার- ভদ্রলোকের বাড়িতে গম্বুজ থাকে কখনো ?? ...বাড়ি থেকে শ'খানের গজ দূরে একটা লম্বা টিনশেড- ওটা নাকি গার্ডরুম। বুঝুন স্যার, একজন মানুষ আর একটা বাড়ি পাহারা দেবার জন্যে দশটা গার্ডের দরকার হয় কখনো ?? তখনি বুঝেছিলুম ঝামেলা আছে কোথাও। এরপর আমায় নিয়ে স্যার বসালো একতলায়। সাজসজ্জায় বুঝলাম ওটাই ড্রয়িংরুম। কিন্তু চমকটা স্যার পেলাম যখন শুনলাম রহমত সাহেব এই বাড়িতেই থাকেন না- উনি থাকেন ঐ গম্বুজের ভেতর !! একা !!! বুঝুন কান্ড !!"

-"...হুমম। ঠিকই আছে, যা বলেছেন সবই ঠিক। কেবল বছর খানেক আগে গার্ডরুমের খানিক পাশে আরেকটা সার্ভেন্টস কোয়ার্টার বানানো হয়েছে। দুটো চব্বিশ ঘন্টার খাস চাকর আর একজন পেশাদার বাবুর্চি নিয়োগ করা হয়েছে। সে যাকগে... আপনি দেখছি রহমত সাহেব সম্পর্কে ভালোই খোঁজ রেখেছেন, ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আমাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না।"

-"... স্যারের অশেষ মেহেরবাণী- হেহে...। দয়া করে এখন যদি আটক হওয়া রত্নচোরটার কথা একটু বলেন..."

-" যে ব্যাটাকে আটক করেছি- তার নাম মোজাম্মেল হক। সেই ব্যাটা আবার পেশায় প্রাইভেট আই। ঢাকা শহরের মাস তিনেক আগে আলোচিত' মিসেস ওয়ালী বক্স' হত্যাকান্ডের কথা মনে আছে আপনার ?? আছে ?? গুড... ধারণা করা হচ্ছে ওয়ালী বক্সের হয়ে এই ব্যাটাই ভাড়া খেটে সেই ভদ্রমহিলাকে খুন করেছে...। সে যাকগে, আমাদের ধারণা- এই চুরির চেষ্টার সাথেও ওয়ালী বক্স জড়িত। "

-"সে কী স্যার ?? তা কী করে হয় ??"

-"বলছি, ব্যস্ত হবেন না। তাড়াহুড়া আমার দু'চোখের বিষ...। হুম, মোজাম্মেল হক আসলে এই শহরে এসেছে তিনদিন এবং সে অতিথি আশ্রয় নিয়েছিলো রহমত সাহেবের বাসাতেই..."

-"বলেন কী স্যার ??জেনেশুনে এরকম একটা লোককে পাটোয়ারী সাহেব আশ্রয় দিলেন??"

-"কথার মাঝখানে কথা বলেন কেনো বলুন তো ?? মোজাম্মেল হক কি স্বনামে এই বাড়িতে ছিলো নাকি ?? সে ঘাগু লোক, তৈরী হয়েই এসেছিলো। নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলো রত্ন গবেষক হেফাজুর রহমান বলে। এই পরিচয়ও যথেষ্ট ছিলো না- যদি না ঢাকা থেকে ফোন করে ওয়ালী বক্স রহমত সাহেবকে জানাতেন যে তিনি জনৈক গবেষক হেফাজুর রহমানকে পাঠাচ্ছেন- বন্ধু রহমত পাটোয়ারী সম্ভব হলে যেন তাকে গবেষণা কাজে সাহায্য করেন।"

-"কিছু মনে করবেন না স্যার, মুখখু মানুষ আমি- কিছুই বুঝতে পারছি না। ওয়ালী বক্স সাহেব কোথা হতে এলেন ?? আর রত্ন গবেষককে কেনোই বা রহমত পাটোয়ারী সাহায্য করতে যাবেন ??"

-"হুম্‌... আমারই ভুল। গোড়া থেকেই বলি। রহমত সাহেবের চরিত্রের একটি বিশেষ দিক নবীগঞ্জের সাধারণ মানুষ এখনো জানে না- সত্যি বলতে কী - কালকের আগে আমরাও জানতাম না। ... ভদ্রলোক একজন রত্ন সংগ্রাহক, দুষ্প্রাপ্য রত্ন চড়া দামে কিনে সংগ্রহ করেন। আচ্ছা, আপনি তো তার বাড়িতেও গেছেন - বলুন তো, সেখানে কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েছে আপনার ?? "

-"আমি স্যার- ছাপোষা মানুষ, কাগজ বেঁচে পেট চালাই... আমার চোখ...মানে স্যার..."

-"থাক থাক- যথেষ্ট হয়েছে, বুঝতে পেরেছি। আপনি খেয়াল করেননি। তেতলা বাড়িটার একটা বৈশিষ্ট্য হলো- তার দোতলায় কোন জানালাই নেই !!"

-"জানালা নেই ?? কী বলছেন স্যার, জানালা ছাড়া বাড়ি হয় কখনো ??"

-"সাধারণ বাড়ির ক্ষেত্রে হয় না- কিন্তু এক্ষেত্রে হয়েছে। কারণ এই বাড়ির দোতলায় একটা রত্ন যাদুঘর রয়েছে- রহমত সাহেবের নিজস্ব সংগ্রহশালা, বিদেশি যাদুঘরগুলোর অনুকরণে তাই দোতলায় কোন জানালা রাখা হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, রহমত সাহেব কিন্তু কোন এলার্মের ব্যবস্থা রাখেননি !! ভদ্রলোকের ধারণা ছিলো - এই মফস্বলে এলার্ম সিস্টেম চালু করে কোন লাভ নেই, লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে কেবল...শহরের পুলিশের উপরেও তার আস্থা ছিলো না তেমন। সব অবশ্য ঠিকঠাক মতোই চলছিলো। সারাদিন দোতলার সংগ্রহশালা বন্ধ থাকতো। বাইরে থাকতো দুটো সিকিউরিটি গার্ড। দিনে একবার একজন গার্ডের উপস্থিতিতে একটা চাকর ঝাড়ামোছা করে দিয়ে যেতো ঘরটা। রহমত সাহেবের কাছে লোকজন এমনিতেই কম আসে, কাজেই যাদুঘরেও চেনা-পরিচিত লোকেরা ছাড়া কেউ ঢুকতো না। কোন অতিথি আসলে একজন গার্ড তাকে যাদুঘরটা ঘুরিয়ে দেখাতো, আরেকজন বাইরে থাকতো পাহারায় যথারীতি...। কালরাতের আগে আসলে এই যাদুঘরের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার কোন দরকারই হয়নি কখনো। "

-"কিন্তু স্যার ওয়ালী বক্সের সাথে রহমত পাটোয়ারীর সম্পর্কটা বুঝলাম না যে ?? "

-"বলছি। ওয়ালী বক্স নিজেও একজন রত্ন সংগ্রাহক। রহমত পাটোয়ারীর সাথে তার পরিচয় এ সুবাদেই। দুজনের মাঝে অবশ্য প্রফেশনাল রেষারেষি আছেই- যে কারণে আমরা সন্দেহ করছি ওয়ালী বক্স জেনে শুনেই হেফাজুর রহমান ওরফে প্রাইভেট আই মোজাম্মেল হককে রহমত পাটোয়ারীর রত্নশালা লোপাট করে দিতে পাঠিয়েছিলেন। এসবই অনুমান অবশ্য- কিছু আমরা প্রমাণ করতে পারিনি এখনো।"

-"মোজাম্মেল হক চুরিটা কীভাবে করতে চেয়েছিলো স্যার ??"

-"মোজাম্মেল হক মানে হেফাজুর রহমান একজন রত্ন গবেষক এবং এদেশের প্রথম সারির রত্ন সংগ্রহশালাগুলো নিয়ে সে একটা বই লিখছে, এই ছুতোয় রহমত সাহেবের বাসায় কালপ্রিটটা ছিলো গত তিনদিন ধরে- আগেই বলেছি। খ্যাতির লোভ সবারই আছে, রহমত সাহেবও তার ব্যতিক্রম নন। হেফাজুর রহমান সত্যিই একজন গবেষক এবং বইতে সে রহমত সাহেবের নামোল্লেখ করবে- এই ছিলো রহমত সাহেবের বিশ্বাস। মোজাম্মেল হকের আশ্রয় হয়েছিলো তেতলা দালানের তিনতলার গেস্ট রুমে। আমাদের ধারণা মোজাম্মেল হক ওয়ালী বক্সের কাছ থেকে শুনে নিয়েছিলো যে এই বাড়ির তিনতলাতেই গেস্ট রুম- এবং তার চুরির প্ল্যান বাস্তবায়নের কাজে এটা ছিলো বিরাট একটা সুবিধা। ... অজ্ঞাত কোন শত্রুর ভয়ে সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকা রহমত পাটোয়ারী প্রায় প্রতিরাতেই দশটা নাগাদ তার গম্বুজ বাড়িতে ঢুকে পড়েন, রাতটা সেখানে কাটিয়ে সকাল আটটায় বের হন আবার। দুটো গার্ড সারারাত পাহারা দেয় গম্বুজ বাড়ির একমাত্র দরজাটা। দুটো গার্ড পাহারায় থাকে মূল সদর দরজায়। আর দুটো থাকে রত্নশালার দরজার সামনে...।বলাই বাহুল্য, প্রতিটা গার্ডই রহমত সাহেবের একান্ত বিশ্বস্ত। অর্থাৎ পুরো রাতে বাড়িতে মোজাম্মেল হক আর গার্ড দু'জন ছাড়া আর কেউই ছিলো না।"

-"কিন্তু স্যার, জানালাবিহীন ঐ রত্নশালায় মোজাম্মেল চোরা কীভাবে ঢুকতে চেয়েছিলো ?? উড়ে নয় নিশ্চয়ই ??"

-"আরে, ওইখানেই তো ছিলো মোজাম্মেলের শয়তানী কারসাজি। আগমনের প্রথম দিনেই গবেষণার নামে রত্ন যাদুঘরের পুরো নকশাটা মনে এঁকে নিয়েছিলো। সঙ্গত কারণেই হেফাজুর রহমান ওরফে মোজাম্মেলের সাথে ছিলো পাহারায় ছিলো একজন গার্ড, কিন্তু রত্নগুলোর ছবি তোলা এবং তাদের ভালোমত পর্যবেক্ষণে কোন বাঁধা দেবার নির্দেশ ছিলো না। কাজেই মোজাম্মেল হক চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলো পুরো দোতলা জুড়ে থাকা রত্ন-যাদুঘরের ঠিক কোন অংশটা তার জন্যে তেতলায় বরাদ্দ করা ঘরের নীচে। ড্রিল মেশিন দিয়ে প্রথম রাতেই সে তেতলার ঘরের ছাদের মেঝেতে নিজের জন্যে সুবিধাজনক একটা জায়গা স্থির করে ফুটো করা শুরু করে। ঐ যে বিদেশী থ্রিলার ছায়াছবিগুলোতে দেখেন না, চোরের দল এক ঘরের দেয়াল ফুটো করে পাশের ঘর থেকে চুরি করে?? ঐ একইরকম ব্যাপার আর কী...।"

-"কিন্তু স্যার, নিশুতি রাতে মোজাম্মেল হক ড্রিল করে মেঝে ফুটো করলো- আর দোতলায় পাহারায় থাকা গার্ডদুটো কিছুই টের পেলো না ?? কালা নাকি ?? "

-"বাহ, ভালো পয়েন্ট ধরেছেন তো। ... এর উত্তর হচ্ছে আমাদের নবীগঞ্জের পৌরসভা ভবনের গায়ের বিশাল ঘড়িটা, আমরা যেটাকে নবীগঞ্জের 'বিগবেন' বলি। জানেন তো- ঘড়িটা রহমত সাহেবের বাড়ী থেকে মাত্র মাইলখানেক দূরেই রয়েছে। ধুরন্ধর মোজাম্মেল হক প্রথম সন্ধ্যাতেই নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে এটা আর নিজের ঘড়ি এর সাথে মিলিয়ে নিয়েছে। মোজাম্মেল স্বীকার করেছে যে প্রথম রাতেই রাত এগারোটার ঘন্টার প্রথমটা পড়তেই সে ড্রিল দিয়ে মেঝে ফুট করার কাজ শুরু করে এবং এগারোটা ঘন্টা বাজার পূর্বেই নিজের মেঝে ফুটো করার কাজ সে অর্ধেক শেষ করে রেখেছিলো। এতে অবশ্য আমরা ধারণা করছি দোতলার যাদুঘরের কিছু অংশে কংক্রীটের গুঁড়ো পড়েছিলো- কিন্তু মোজাম্মেল হক দ্বিতীয় দিন রত্নগুলো পরিদর্শনের ছুতোয় সে প্রমাণও নিকেশ করে দিয়েছিলো। যে গার্ড দ্বিতীয় দিন মোজাম্মেলকে 'গবেষণার উপাত্ত' সংগ্রহকালে যাদুঘরে চোখে রাখছিলো- তার সাক্ষ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে সেদিন নাকী মোজাম্মেল হকের হাতের ব্যাগটা হঠাৎ করেই পড়ে যায় এবং তা থেকে প্রচুর ভাঙ্গা চকের গুঁড়ো বেরিয়ে আসে... "

-"উফফ, কী ভয়ানক দুষ্টবুদ্ধি স্যার !! কিন্তু মোজাম্মেল হক দ্বিতীয় রাতেই রত্নচুরি করে পালায়নি কেনো ??"

-" এটা অবশ্য আমরাও বুঝতে পারছি না। কারণ দ্বিতীয় রাতেই সে মেঝে ফুটো করার কাজ সম্পুর্ণ করে রেখেছিলো- এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ... একটা সম্ভাব্য কারন হতে পারে যে মোজাম্মেল হক নিশ্চিত হতে চেয়েছিলো যাদুঘরের কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ ছাপিয়ে ঘরের বাইরে পাহারায় থাকা গার্ডের কানে যাবে কী না। দ্বিতীয় রাতে পাহারায় থাকা গার্ডেরা বলছে যে - সে রাতে রাত বারোটা বাজার কিছু পরেই মোজাম্মেল হক তাদের কাছে হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে দোতলায় সে কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পেয়েছে। গার্ডেরা অবশ্য কিছুই শুনতে পায়নি কিন্তু তবু মোজাম্মেলের কথায় তারা যাদুঘরের ভেতরটা একবার দেখে নেয়- বলা বাহুল্য- কিছুই তারা দেখেনি। কিন্তু আজ সকালে ইনভেস্টিগেশনের সময় আমরা মোজাম্মেলকে যে ঘরে থাকতে দেয়া হয়েছিলো, তার সংলগ্ন বাথরুমটার জানালার কাঁচ ভাঙ্গা অবস্থায় পেয়েছি- কাজেই আন্দাজ করে নেয়া যায় সেটা মোজাম্মেল হকই ভেঙ্গেছিলো তার নিজের তাগিদে। "

-"এবার যদি স্যার একটু বলেন ঘটনার রাত্রে আসলে কী ঘটেছিলো..."

-"এ নিয়ে আসলে তেমন বলার কিছু নেই। সেদিন- মানে গতকাল- মোজাম্মেল হক গত দু'দিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি নিজের 'গবেষণার' কাজ শেষ করেছিলো। রহমত পাটোয়ারীর সে দুপুরে জানিয়েছিলো যে তার কাজ শেষ হয়েছে এবং সে নবীগঞ্জের থেকে ভোর ছয়টার লোকাল ট্রেন ধরে ঢাকায় ফিরতে চায়, মানে আজ সকালে যে ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে গেছে আর কী...। রাতে ঘুমুলে সে সকালে উঠতে পারবে না- এই দোহাই দিয়ে মোজাম্মেল হক গতকাল সন্ধ্যারাতেই শুয়ে পড়েছিলো এবং মোটা বকশিশ দিয়ে একটা গার্ডকে নির্দেশ দিয়েছিলো যেন তাকে রাত এগারোটার সময় ডেকে দেয়া হয়। সে নির্দেশ মোতাবেক তাকে এগারোটার সময় ডেকে দেয়াও হয়েছিলো। নিঃসন্দেহে মোজাম্মেলের প্ল্যান ছিলো যে সে মেঝেতে নিজের তৈরী করা ফুটো দিয়ে দোতলায় নামবে এবং রাত বারোটার ঘন্টা বাজার সাথে সাথে কাঁচ ভেঙ্গে পছন্দমত রত্নগুলো নিয়ে আবার উঠে আসবে। আগেই তো বলেছি, রত্নশালায় কোন এলার্ম নেই... কিন্তু গার্ডেরা ঘরে ঢুকেই বেচারাকে একেবারে হতবুদ্ধি অবস্থায় পাকড়াও করে ফেলে..."

-"কিন্তু তারপর ?? এমন একটা ফুলপ্রুফ প্ল্যান করেও মোজাম্মেল হক ধরা পড়লো কেনো স্যার ?? গার্ডেরা কী করে বুঝলো যে সে ভেতরে ঢুকেছে ??"

-"আরে, আপনিও তো মোজাম্মেল হকের মতই আহাম্মক দেখছি। মনে নেই, ডে লাইট সেভিং এর জন্যে গতকাল রাত এগারোটাতেই ঘড়ির কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে দেয়া হয়েছে ??... "
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×