somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ অপার্থিব হুইসেল।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত একটা বেজে সতের মিনিট। বনগা স্টেশানের ওভার ব্রিজ টার উপর দাড়িয়ে ধ্রুব। এই তো মিনিট খানেক হলো বহরমপুর এর উদ্দেশ্যে লোকাল টা ছেড়ে গেল।বাকি আছে আর দুটা ট্রেন। শেষ ট্রেন টা ছেড়ে যাওয়ার কথা এখন থেকে ঠিক আড়াই ঘন্টা পর। আজ আবহাওয়া টা একটু বেশি ঠান্ডা, সাথে ভয়ংকর রকমের বাতাস। পকেটের শেষ সিগ্রেট টা বের করে ধরাতে গেল ধ্রুব। ব্যান্সনের দুমড়ে মুচড়ে থাকা একটা প্যাকেট… ভিতরে একটা কম দামের সিগ্রেট। স্মোকিংটা সে শুরু করেছিল ব্যান্সন দিয়েই, ছোট থেকেই বেশ সৌখিন মানুষ সে। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে সেই সৌখিনাগুলোকে পালন করবার মত আর্থিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলল ধ্রুব। তাই দোকান থেকে কমদামী সিগ্রেট নিলে সেটাকে ব্যান্সনের প্যাকেটেই দিতে বলত সে। সিগ্রেট টা ধরাতে পরপর দুবার মিস হলো। হেসে উঠল সে, এই শেষ সিগ্রেট টাও তামাশা শুরু করেছে যেন তার সাথে। অবশ্য তামাশার সূত্রপাত যে সিগ্রেট থেকেই তা মোটেও না।

দীনবন্ধু কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সেকেন্ড ক্লাস অনার্স পাশ ধ্রুব।বনগা স্টেশানের পাশে একটা মেসে থাকে সে, বাবা মা থাকেন গ্রামে। কয়েকটা টিউশানি করে দিন চলে ধ্রুবর।আর এই টিউশনির অভিশাপেই খারাপ হয় রেজাল্ট। নিজের সামান্য কিছু রেখে বাকি টাকাটা পাঠিয়ে দেয় ধ্রুব গ্রামে।চাকরি খুজতে খুজতে যতগুলা চটি তার ক্ষয় হয়েছে তার হিসেব করতেই ভয় পায় সে । তাই আশা পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে ছোট বোনটা টার বিয়ের প্রস্তাব আসছে। আর যৌতুকের অংক টাও নেহাত কম না। ধ্রুবর বাবা মা জানে ছেলে রেলে চাকরি করে। সরকারি চাকরি। মিথ্যাটা সে নিজেই বলেছে, কেননা চার ধরে অনার্স পাশ করা লাগে জানলে কখনো হয়ত শহরেই পাঠাত না ধ্রুব কে … আর শহরে না আসলে ধ্রুবর অনেক চাওয়াই অপ্রাপ্তির খাতায় নাম লেখাত । আর ক্যানো জানি ধ্রুবর উপর এক্সপেকটেশন টা বেড়েই চলছিল তার বাবা মায়ের দিন কে দিন। তাদের দোষ নাই, এর জন্য রেলে চাকরির মিথ্যাটায় দায়ী।

আর জয়িতা জীবন থেকে গেছে সেতো বছর খানেক হলো। পরিচয় হয়েছিল একট রক্তদান শিবির থেকে। ডাকনাম জয়ি। অবশ্য জয়িতাকে দেওয়ার মত কিচ্ছুই ছিল না ধ্রুবর। আর জয়িতার ব্যাপারে সে কখনো আফসোস করেনা। ভালবাসা দিয়ে হয়ত মনের ক্ষুধা মেটানো যায় পেটের না। ধ্রুব যে মধ্যবিত্ত টাইপের গরীব এটা জয়ি বুঝত, কিন্তু ক্যানো জানি মেনে নিতে পারত না। দিনশেষে জয়ি যখন পিজ্জা টা তৃপ্তির সাথে খেত , কখনো বুঝেনি সেটা ধ্রুবর দু বেলার খাবার খরচ থেকে বাচানো টাকারই ভগ্নাংশ। অবশ্য সেই তৃপ্তি টুকু দেখেই ধ্রুবর সারা দিনের ক্ষুধারা স্বেচ্ছায় চলে যেত। আর ব্রেক আপের পিছনে ধ্রুবরই অবদান বেশি। স্বাধীন স্বপ্ন পিপাসু জয়িকে তার ছোটলোকির মধ্যবিত্ত জীবনে জড়িয়ে কখনো পরাধীন করতে চায়নি সে। আর মিনিট পাচেক বাকি। শেষ ট্রেন টার হুইসেল যদিও এখনো বাজেনি , তবে প্রস্তুতি নিচ্ছে কম বয়েসি স্টেশান মাষ্টার টা। সম্ভবত নতুন জয়েন করেছে … হেসে উঠল ধ্রুব, ভাবল নতুন জয়েন করার কারণেই হয়ত বেশ দায়িত্ত্ব সচেতন। কিন্তু পরক্ষনেই তার হাসিটা উবে গেল … সে চিন্তা করল যে তার বাবা মা ও তাকে এমন একটা স্টেশান মাষ্টারের পোশাকে কল্পনা করেই দিনের শেষে ঘুমোতে যায়।

হ্যা, কিছুক্ষন পর সত্যিই হুইসেল শোনা গেল। বহু দূর থেকে একটা শব্দ বাতাসের সাথে মিলিয়ে আসছে … শব্দটাকে আজ কেন জানি অপার্থিব মনে হচ্ছে ধ্রুবর, অন্য দিন কার মত নয়। বনগা স্টেশানে আসা সব ট্রেনের হুইসেল শুনতে পায় সে ঘরে বসেই …কিন্তু আজকের হুইসেল্টা কেমন যেন একটা অলৌকিক উপহাস মেশানো ছিল তাতে …যেন ধ্রুবর হেরে যাওয়াকে বিদ্রুপাত্তক আলিংগন করতে এগিইয়ে আসছে ট্রেনটি। ধ্রুব জানত এই ট্রেনটা গুজরাট এর উদ্দেশ্যে রওনা করেছে, ছোটখাটো এসব স্টেশানে এটা দাড়াবে না। কিন্তু এত রাতে ধ্রুব স্টেশানে কেন ?????? আসলে এটাকে আত্তহত্যা বলে কিনা ঠিক জানেনা ধ্রুব। তার সামান্য জ্ঞানে আত্তহত্যা বলতে যা বুঝি সেটা হল মৃত্যুর মুখে নিজে ঝাপ দেওয়া। কিন্তু পরিস্থিতি যখন জ্বলজ্যান্ত রক্তমাংসের শরীরকে একটা অপার্থিব জগতের দিকে ঠেলে দেয় তখন সেটাকে কি বলে ??? আচ্ছা … এই কয়টা কারন কি নিজের জীবন নিজে শেষ করে দেবার জন্য যথেষ্ঠ – প্রশ্ন করল ধ্রুব নিজেকে। পরক্ষনেই কিছু মুখ ভেসে আসল ধ্রুবর সামনে- প্রথমটি তার মায়ের, যিনি জানতের ধ্রুব রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। প্রায়শই ছেলেকে প্রোমোশোমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেন তিনি। দ্বিতীয় জন তার বাবা … যিনি কখনো জীবনে আপোষ করেননি মিথ্যার সাথে, আজ অনেকটা পংগুর মত পড়ে আছেন বিছানায়, তাকে কি জবাব দিবে ধ্রুব ? বোনটাকেই বা কি বলে স্বান্তনা দিবে সে ? জয়ীর মুখটা ভেসে আসতে চেয়েছিল তার মনে, কিছু তক্ষুনিই দ্বিতীয় ও শেষ হুইসেল্টা শোনা গেল। বেশি ভাবতে চায়না ধ্রুব, কেননা লাফ দিতে একটু দেরি হলেই সে ট্রেনের নিচে না পড়ে ছাদের উপর পড়বে। তখন হাসপাতালে পুলিশের জেরা সামলাতে হলে আরেক কেলেংকারী।

পরদিন সকালে পুলিশ একটা মৃতদেহ উদ্ধার করে, রেললাইনের উপর। দেহটা পাজর বরাবর কেটে টুকরো হয়ে গেছে। মাথাটা অক্ষত আছে… চেহারাটা বোঝা যায়। ম্যানিব্যাগ থেকে দুটো চিঠি উদ্ধার করে।প্রথমটি বাংলায় ও দ্বিতীয়টি ইংরেজি তে লেখা। ওসি সাহেব অবশ্য ভিমড়ি খেয়েছিলেন এত সুন্দর হাতের লেখা দেখে। চিঠির প্রথমটাতে তার এক চোখ আর কিডনি বিক্রির টাকার কথা ও তার ব্যাংক হিসেব নং লেখা। এবং সে এই টাকাটা তার পরিবারের জন্য দিয়ে গেছে। আর তার শেষ ইচ্ছা ছিল তার মিথ্যা চাকরিক কথাটা জানানো হলেও পরিবার কে যেন এটা না জানানো হয় এটা অর্গান ডোনেশানের টাকা। আর দ্বিতীয় চিঠিটার কোন মাথা মুন্ডু বোঝেনি ওসি সাহেব। এত হাই লেভেলের ইংরেজি বিদ্যা পঠনের মত নলেজ ছিল না মোটেও ব্যাচারা। বহু কস্টে কিছু শব্দ কোন মতে বুঝতে পারলেন তিনি,,,,,,, সেগুলো : " Joye, Circumstances, forced … Take Care


বিঃদ্র- আত্মহত্যা খুব জঘন্য অপরাধ। কারন আত্মহত্যা করলে মানুষ মরে যায়। মরে গেলে ভুত হয়ে যায়। আর ভূত হয়ে লাভ নাই ভাই… পেত্নী ওখানেও আছে, পিছু ছাড়বে না। তাই বরং আসুন… যুদ্ধ করে বাচতে শিখি। মানুষ হিসেবে জন্মনেবার স্বার্থকতা টুকু ওখানেই নিহিত।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×